শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, বৈশাখ ৭ ১৪৩১, ১১ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

হাদিস অস্বীকারকারীর ফিতনা থেকে বাঁচুন

 প্রকাশিত: ০৯:০০, ২৫ জুন ২০২১

হাদিস অস্বীকারকারীর ফিতনা থেকে বাঁচুন

সাইয়্যেদুল মুরসালীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন, মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর হাদীস ভান্ডার সাহাবায়ে কেরামের জন্য যেমন হুজ্জত ও দলিল ছিল, তেমনি পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সকল মুসলমানের জন্য তা’ হুজ্জত ও দলিল হিসাবে প্রতিষ্ঠিত থাকবে। এর কোনো অন্যথা হবে না। সুতরাং হাদীস শুধু সাহাবাদের জন্য হুজ্জত ছিল আমাদের জন্য নয় এমন মন্তব্যকারীরা মিথ্যাবাদী ও ভ্রান্ত। কেননা, উক্তরূপ মন্তব্যের ফলাফল এই দাঁড়ায়-(নাউজুবিল্লাহ) রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নাবুওয়্যাত ও রিসালাত শুধু কেবল সাহাবায়ে কেরামের যুগ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল, পরবর্তী যুগের মানুষের জন্য নয়। তা একেবারে ডাহা মিথ্যা কথা। কারণ আল্লাহপাক স্বয়ং আল কোরআনে ঘোষণা করেছেন : (ক) ‘হে মানবজাতি! অবশ্য আমি তোমাদের (মানব জাতির) সকলের জন্য আল্লাহর রাসূল’। (সূরা আল আ’রাফ : ১৫৮)। (খ) (হে নবী) তোমাকে সকল মানুষের জন্য শুভ সংবাদ দানকারী ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি’। (সূরা সাবা : ২৮)। (গ) মহীয়ান সত্তা তাঁর প্রিয় বান্দাহর প্রতি কোরআন অবতীর্ণ করেছেন, যাতে তিনি সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য সতর্ককারী হন। (সূরা আল ফুরকান : ০১)।

(ঘ) আমাদের নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : আমার উম্মতের একটি দল আল্লাহর নির্দেশ বাস্তবায়নে সর্বদা প্রস্তুত থাকবে। যারা তাদের বিরোধীতায় বা অপমানিত করার জন্য আত্মনিয়োগ করবে, তারা তাদের কোনো ক্ষতিসাধন করতে পারবে না। এ অবস্থায় উপরই আল্লাহপাকের চরম নির্দেশ তথা কিয়ামত এসে যাবে’। (সহীহ মুসলিম :-২/ ১৪৩)।

রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর হাদীস ভান্ডার ওই নির্ভরযোগ্য মাধ্যমে অকাট্যভাবে আমাদের পর্যন্ত পৌঁছেছে, যে নির্ভরযোগ্য ও অকাট্য মাধ্যমে কোরআনুল কারীম পৌঁছেছে। সুতরাং যারা বলে হাদীস ভান্ডার আমাদের নিকট নির্ভরযোগ্য মাধ্যমে পৌঁছেনি, তাদের কথা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও মিথ্যা। এ ধরনের মন্তব্যে ও আকীদা যারা পোষণ করে তাদের কোরআনুল কারীমের উপর বিশ্বাস ও নির্ভরতা আছে কিনা তাতে প্রশ্নের উদয় হয়। (সহীহ মুসলিম : ২/১৪৩; ফাতহুলবারী শরহে বুখারী : ২/৪২)।

বস্তুত : কোরআনুল কারীম ও হাদীস ভান্ডার উভয়টিরই হেফাজতের দায়িত্ব আল্লাহতায়ালা গ্রহণ করেছেন। আল কোরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন : ‘নিশ্চয়ই কোরআন আমিই অবতীর্ণ করেছি এবং আমিই এর হেফাজত ও সংরক্ষণকারী’। (সূরা আল হিজর : ৯)। এই ঘোষণার মাধ্যমে আল্লাহপাক স্বয়ং আল কোরআনের হেফাজতের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। আর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বাণী বা হাদীস সম্পর্কে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন : ‘তোমাদের সঙ্গী (রাসূলুল্লাহ সা.) পথভ্রষ্ট হননি এবং বিপদগামীও হননি এবং তিনি প্রবৃত্তির তাড়নায় কথা বলেন না। যা তার প্রতি প্রত্যাদেশ হয়, তা’ ওহী’। (সূরা নাজম : ২-৪)।
সুতরাং রাসূলুল্লাহ (সা.) যা বলেন, তা ওহী, অর্থাৎ ওহীয়ে গায়রে ‘মাতলু’। আল কোরআন ওহীয়ে মাতলু। আল কোরআন শব্দ এবং মর্ম দুটির সমষ্টির নাম। সুতরাং হাদীস কোরআনের মর্ম। এতে সুস্পষ্টভাবে বলা যায় যে, কোরআনুল কারীম ও হাদীস দু’টিরই হেফাজতের দায়িত্ব আল্লাহ তায়ালা গ্রহণ করেছেন। কেউ যদি বলে যে, আল্লাহপাক শুধু আল কোরআনের শব্দের হেফাজতের দায়িত্ব নিয়েছেন, হাদীস ভান্ডারের হেফাজতের দায়িত্ব নেননি, এ কথা সঠিক নয়, বরং মিথ্যাচার।

এই বিশেষত্বটিকে আরো সহজ করে বলা যায় যে, আল কোরআন শব্দ ও অর্থ দুটির সমষ্টির নাম। আল্লাহ পাক আমাদেরকে আল কোরআনের শব্দ ও অর্থ দুটিই হিফজের নির্দেশ দিয়েছেন। কেননা, এটা নাবুওয়াতের দলিল। (আন নাফআতুল কুদসিয়্যাহ-৩০ ; আছারুত তানযিল : ১/২৪২)।

একবার হযরত ইমরান বিন হুসাইন (রা.) জনৈক ব্যক্তিকে বললেন : তুমি একজন নির্বোধ লোক! তুমি কি আল্লাহর কিতাব কোরআনুল কারীমের কোথাও পেয়েছে যে জোহরের ফরয সালাত চার রাকাত। এটাও কি পেয়েছে যে, তাতে কিরাআত উচ্চস্বরে পড়তে হবে না। তারপর তিনি লোকটির নিকট সালাত, যাকাত ও অনুরূপ বিভিন্ন বিষয়ের আলোচনা তুলে ধরলেন। তারপর বললেন : তুমি কি আল্লাহর কিতাব বিস্তারিত ব্যাখ্যাসহ পেয়েছ? নিশ্চয়ই আল্লাহরবাণী সংক্ষিপ্ত। আর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর হাদীস বা সুন্নাত হলো তার তাফসীর। (জামেউ বয়ানিল ইলম : ২/৩৬৫-৩৬৬)।
 

অনলাইন নিউজ পোর্টাল

মন্তব্য করুন: