বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৈশাখ ১১ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

সৎলোকের সংসর্গ লাভ করা

 প্রকাশিত: ০৫:০৮, ১৫ অক্টোবর ২০২০

সৎলোকের সংসর্গ লাভ করা

উৎস:
ইসলাহী নেসাব: হায়াতুল মুসলিমীন
হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদে মিল্লাত, মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (র:)

সৎলোকদের নিকট বসবে। তাঁদের থেকে ভালো কথা শুনবে। সৎ চরিত্রাবলী শিক্ষা করবে। যে সমস্ত সৎলোক অতীত হয়েছেন, তাঁদের জীবনী ও ভালো ভালো ঘটনাবলী সংক্রান্ত পুস্তকসমূহ নিজে পড়ে বা কারো দ্বারা পড়িয়ে তাঁদের অবস্থা জানবে। কারণ, এটিও তাঁদের নিকট বসে তাঁদের থেকে কথা শোনা ও ভালো গুনাবলী শিক্ষা করার মতই উপকারী।

ফায়দা: মানুষের মধ্যে আল্লাহ তাআলা এই বৈশিষ্ট্য গচ্ছিত রেখেছেন যে, সে অন্য মানুষের চিন্তা-চেতনা, জীবন-পদ্ধতি ও ঘটনাবলী দ্বারা অতি দ্রুত, অতি শক্ত এবং বিশেষ কোন পরিশ্রম ছাড়াই প্রভাবিত হয়। ভালো প্র্রভাবের ক্ষেত্রেও এবং মন্দ প্রভাবের ক্ষেত্রেও। তাই সৎ সংসর্গ খুবই উপকারী। একইভাবে অসৎ সংসর্গ খুবই ক্ষতিকর। সৎ সংসর্গ বলতে এমন ব্যক্তির সংসর্গকে বুঝায়, যে প্রয়োজনে পরিমাণ দ্বীনের বিষয়ে অবগত। যার আকীদা-বিশ্বাস সঠিক। শিরক, বিদআত ও জাগতিক প্রখাসমূহ থেকে বেঁচে থাকে। সৎকর্মশীল, নামায-রোযা ও প্রয়োজনীয় ইবাদতসমূহের অনুগামী। পরিশুদ্ধ কারবারী, পরিস্কার লেনদেনকারী, হালাল-হারামের ব্যাপারে সতর্ক, বাহ্যিক নীতি ও নৈতিকতাও তার উত্তম, বিনম্র, অহেতুক কাউকে কষ্ট দেয়না, দরিদ্র ও অভাবীদেরকে তুচ্ছ মনে করে না। আধ্যত্মিক নীতি-চরিত্রেও চরিত্রবান। আল্লাহর ভয় ও ভালবাসা অন্তরে পোষণ করে। তার অন্তর পার্থিব লালসামুক্ত। দ্বীনের ব্যাপারে সম্পদ, আরাম-আয়েশ ও মান-সম্মানের পরোয়া করে না। পরলৌকিক জীবনের তুলনায় ইহলৌকিক জীবনকে অধিকতর প্রিয় মনে করে না। সর্বাবস্থায় সবর ও শোকর করে।
যে ব্যক্তির মধ্যে এসব গুন পাওয়া যাবে, তার সাহচর্য অব্যর্থ।যে ব্যক্তি এসবসব বিষয়ের পূর্ণ পরিচয় অবগত নয় তার জন্য সৎব্যক্তির পরিচয় এই যে, সমকালীন নেককারগণ(যাদেরকে বেশীরভাগ মুসলমান নেক মনে করে, তারা) যাকে ভালো বলে এবং পাঁচ-দশবার তার নিকট বসার দ্বারা পাপ কাজ থেকে মন উঠে আসতে থাকে এবং নেককাজের দিকে মন ধাবিত হতে থাকে, তাকে নেককার বুঝবে।তার সংসর্গ অবলম্বন করবে। যে ব্যক্তির মধ্যে মন্দ চরিত্র দেখতে পাবে, একান্তই বাধ্য না হলে তার সঙ্গে মেলামেশা করবে না। এতে দ্বীন তো একেবারেই বরবাদ হয়, অনেক সময় দুনিয়ারও ক্ষতি হয়। কখনো কষ্ট ও পেরেশানীর মুখে জানের ক্ষতিও হয়, আর কখনো মালের ক্ষতি হয়। কারণ, এতে করে মন্দ জায়গায় সম্পদ ব্যয় হয় বা এমন লোক দ্বারা প্রতারিত হয়ে তাকে নিজের সম্পদ দিয়ে দেয়। কখনো ভালবাসার আবেগে এমনিই দিয়ে দেয় আবার কখনো ঋণ হিসেবে দেয়। কিন্তু পরে আর তা উসুল হয় না। কখনো মান-সম্মানের ক্ষতি হয়। মন্দ লোকের সাথে থেকে সেও লাঞ্ছিত হয় এবং তারও বদনাম হয়। আর যে ব্যক্তির ভালো গুণও জানা নাই এবং মন্দ গুনও জানা নাই, তার প্রতি সুধারণা তো পোষণ করবে, কিন্তু তার সংসর্গ লাভ করবে না।
মোটকথা, অভিজ্ঞতার আলোকে দেখা গেছে যে, দ্বীন দ্বারা নিজেকে সুসজ্জিত করা এবং অন্তরকে শক্তিশালী করার কাজে সৎলোকের সাহচর্যের শক্তিশালী ভূমিকা রয়েছে। একইভাবে দ্বীন নষ্ট করা এবং মনোবল দুবর্ল করার ক্ষেত্রে অসৎ লোকের সংসর্গের বড় দখল রয়েছে। এখন সৎলোকের সংসর্গ অবলম্বনের প্রতি উৎসাহিত করার ব্যাপারে এবং মন্দ লোকের সংসর্গের নিন্দা প্রসঙ্গে কয়েকটি আয়াত এবং কয়েকটি হাদীস লেখা হচ্ছে।
১.আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
’ হে ইমানদানরগণ! আল্লাহকে ভয় করো এবং যারা( দ্বীনের ব্যাপারে পাকা এবং) খাঁটি তাঁদের সঙ্গে থাকো।’(সূরা তাওবা-১১৯)

ফায়দা: সঙ্গে থাকার মধ্যে বাহ্যিক সংসর্গ এবং তাঁদের পথে চলা উভয়টিই অন্তর্ভক্ত।
২. আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

’ যখন আপনি তাদেরকে দেখেন, যারা আমার আয়াত(এবং বিধান)সমূহে ছিদ্রাণ্বেষণ করে, তখন তাদের নিকট(বসা) থেকে সরে যান যে পযর্ন্ত তারা অন্য কথায় প্রবৃত্ত না হয়। যদি শয়তান আপনাকে (এমন মজলিসে বসা নিষিদ্ধ হওয়ার কথা) ভুলিয়ে দেয়, তবে স্মরণ হওয়ার পর এমন জালেমদের সাথে উপবেশন করবেন না।’(বরং স্মরণ হওয়ামাত্রাই উঠে যাবেন)(সূরা আন’আম-৬৮)

এর একআয়াত পর ইরশাদ করেছেন- (যেখানে আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলে, শুধু এ ধরনের মজলিসই নয়, বরং)এমন লোকদের থেকে দূরে থাকুন,যারা নিজেদের এই দ্বীনকে(যা গ্রহণ করা তাদের জন্য ফরয ছিলো, অর্থাৎ, ইসলামকে)ক্রীড়া ও কৌতুকরূপে গ্রহণ করেছে।
৩. হযরত ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বণির্ত আছে যে, জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলো-

’ হে আল্লাহর রাসূল! আমরা যেসব লোকের নিকট বসি তাদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো লোক কে?(কেবল তার নিকট আমরা বসবো) তিনি ইরশাদ করলেন, এমন ব্যক্তি (সঙ্গ লাভের জন্য উত্তম), যাকে দেখা তোমাদেরকে আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। যার কথা তোমাদের(দ্বীনী) ইলমে উন্নতি করে এবং তার আমল তোমাদেরকে আখিরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।’(আবু ইয়ালা)

ফায়দা:উপরে আমি সৎলোকদের যে সমস্ত আলামত বণর্না করেছি, এ হাদীস শরীফে তার মধ্যকার বড় বড় কিছু আলামত উল্লেখ রয়েছে।
৪.হযরত আবু উমামা (রাযিঃ) থেকে বণির্ত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- (কথাটি আবু উমামা(রাযিঃ)এর নিজের উক্তি হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে, তখনও এটি হাদীস হবে) হযরত লোকমান(আঃ) স্বীয় পুত্রকে বলেন-
’ হে বৎস! তুমি আলিমদের সংসর্গকে নিজের উপর আবশ্যক করবে।হেকমতের অধিকারী লোকদের কথা শুনতে থাকবে। (হেকমত বলা হয়, দ্বীনের সূক্ষ্ম বিষয়সমূহকে, যেগুলো খাঁটি আল্লাহওয়ালারা বলে থাকেন)।কেননা আল্লাহ তাআলা মৃত অন্তরকে হেকমতের আলোকে এভাবে উজ্জীবিত করেন, যেমন মৃত জমিনকে প্রবল বৃষ্টি দ্বারা জীবিত করেন।’ (তাবরানী ফিল কাবীর)
৫. হযরত মুআয বিন জাবাল(রাযিঃ) থেকে বণির্ত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-

’ আল্লাহ তাবারকা ওয়া তাআলা ইরশাদ করেছেন যে, আমার ভালবাসা এমন লোকদের জন্য ওয়াজিব (অর্থাৎ, আবশ্যকীয়) যারা আমারই সম্পর্কের কারণে পরস্পরে ভালোবাসা রাখে এবং আমারই সম্পর্কের কারণে পরস্পরের নিকট বসে।’(মালিক ও ইবনু হিব্বান)

ফায়দা: হাদীসে ’আমার সম্পর্কের কারণে’ কথার অর্থ, কেবলমাত্র দ্বীনের কারণে।
৬. হযরত আবু মুসা (রাযিঃ) থেকে বণির্ত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-

’ সৎসঙ্গী আর অসৎ সঙ্গীর দৃষ্টান্ত এমন, যেমন এক ব্যক্তির নিকট মেশক রয়েছে(এটি সৎসঙ্গীর দৃষ্টান্ত), আরেক ব্যক্তি হাঁপড় দ্বারা আগুন জ্বালাচ্ছে(এটি অসৎ সঙ্গীর দৃষ্টান্ত)। অতএব ঐ মেশকওয়ালা হয় তোমাকে তা দিবে অথবা(না দিলেও) তার সুগন্দ্ধি তুমি পাবে। আর হাঁপড় দ্বারা অগ্নি প্রজ্জ্বলনকারী হয়ত তোমার কাপড় জ্বালিয়ে দিবে(যদি কোন স্ফুলিঙ্গ এসে পড়ে)অথবা (তা থেকে বাঁচলেও) তার ধোঁয়া ও গন্দ্ধ হলেও তোমার নিকট আসবে।’(বুখারী ও মুসলিম)

ফায়দা: অর্থাৎ, সৎসঙ্গ দ্বারা পূর্ণ উপকার না হলেও কিছু উপকার তো অবশ্যই হবে। আর অসৎসঙ্গ দ্বারা পূর্ণ ক্ষতি না হলেও কিছু ক্ষতি অবশ্যই হবে।
(এ হাদীসগুলো তরগীব’ থেকে সংগৃহীত)
৭. হযরত আবু সাঈদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লামকে বলতে শুনেছেন-
’ ঈমানদার ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারো সংসর্গ অবলম্বন করো না।’

ফায়দা: এর দু’টি অর্থ হতে পারে। এক এই যে, কাফেরের সংসর্গে বসো না। দ্বিতীয় এই যে, যার ঈমান পূর্ণ নয় তার নিকট বসো না। বিধায় পূর্ণ সংসর্গ লাভের যোগ্য সেই, যে মুমিন। বিশেষতঃ যে পূর্ণ মুমিন। অর্থাৎ, দ্বীনের পরিপূর্ণ অনুসারী।
৮.হযরত আবু রাযীন (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে, তাঁকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
’ আমি কি তোমাকে এমন কথা বলবো না, যা এই দ্বীনের (বড়) ভিত্তি। যার দ্বারা তুমি দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ লাভ করতে পারবে।
প্রথমত, যিকিরওয়ালাদের মজলিস মজবুতভাবে অবলম্বন করবে।(আর দ্বিতীয়ত) যখন, একা থাকবে, তখন যতদূর সম্ভব আল্লাহর যিকির দ্বারা নিজের জিহ্বাকে গতিশীল রাখবে। (তিন,) আল্লাহর জন্যই ভালবাসা রাখবে এবং আল্লাহর জন্যই বিদ্বেষ পোষণ করবে।’
(বাইহাকী ফি শুআবিল ঈমান)
ফায়দা: অভিজ্ঞতায়ও জানা যায় যে, সৎসঙ্গ দ্বীনের সবকিছুর মূল। দ্বীনের স্বরুপ, দ্বীনের মধুরতা ও দ্বীনের শক্তি লাভের যত মাধ্যম রয়েছে তার মধ্যে সর্বাধিক বড় মাধ্যম সৎলোকের সাহচর্য।
৯. হযরত আবু হুরায়রা(রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে ছিলাম। তখন তিনি বললেন-
’ জান্নাতে ইয়াকুতের অনেকগুলো স্তম্ভ রয়েছে। তার উপর যবরজাদের প্রাসাদ দাঁড়িয়ে আছে। তার মধ্যে উন্মুক্ত দরজাসমূহ রয়েছে,যেগুলো তীব্র আলোকময় নক্ষত্রের ন্যায় জ্বলজ্বল করে। লোকেরা জিজ্ঞাসা করলো, হে আল্লাহর রাসূল!(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐ সমস্ত প্রাসাদে কারা বাস করবে? তিনি বললেন, যারা আল্লাহর জন্য(অর্থাৎ, দ্বীনের জন্য) পরস্পরে ভালবাসা রাখে এবং যারা আল্লাহর জন্য পরস্পরের নিকট বসে এবং যারা আল্লাহর জন্য পরস্পরে সাক্ষাত করে।(বাইহাকী ফি শুআবিল ঈমান)
এসব হাদীস মিশকাত শরীফ থেকে সংগৃহীত।
১০. হযরত সামুরা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
’ মুশরিকদের সঙ্গে বসবাসও করো না এবং তাদের সঙ্গে একত্রিতও হয়ো না। (অর্থাৎ, তাদের মজলিসে বসো না) যে ব্যক্তি তাদের সঙ্গে বসবাস করবে বা একত্রিত হবে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।’ (তিরমিযী)
হাদীসটি ‘জামউল ফাওয়ায়িদ’ থেকে নেওয়া হয়েছে।
এসব আয়াত ও হাদীস দ্বারা সৎলোকদের নিকট বসা, যাতে করে তাদের থেকে ভালো কথা শুনতে পারার এবং ভালো স্বভাব শিখতে পারার বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো। এখন যে সমস্ত সৎলোক অতীত হয়েছেন, বই-পুস্তক পড়ে, তাদের অবস্থা জানার বিবরণ তুলে ধরা হচ্ছে কেননা এর দ্বারাও এমনই উপকার হয় যেমন তাদের নিকট বসলে উপকার হয়।
১১. আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

’ এবং নবীগণের ঘটনাসমূহ থেকে এসব (নবীর) ঘটনা (হযরত নূহ, হযরত মূসা আলাইহিমুস সাল্লামের ঘটনা) আপনার নিকট এজন্য বণর্ণা করছি, যেন তা দ্বারা আপনার দিলকে মজবুত করতে পারি।’(সূরা হুদ-১২০)

ফায়দা: সৎলোকদের ঘটনা বণর্ণা করার এটিও একটি ফায়দা যে, এর দ্বারা মন শক্তিশালী হয় এবং সান্তনা লাভ হয় যে, তারা যেভাবে হকের উপরে অবিচল থেকেছেন, আমাদেরকেও সেভাবে অবিচল থাকতে হবে এবং যেভাবে এ অবিচলতার বরকতে আল্লাহ তাআলা তাদের সাহায্য করেছেন, একইভাবে এই অবিচলতার দ্বারা আমাদের উপরও সাহায্য আসবে। যে বিষয়টি আল্লাহ তাআলা অপর একটি আয়াতে এভাবে বণর্ণা করেছেন যে, ‘আমি নবীগণকে এবং ঈমানদারদেরকে এখানে দুনিয়াতে সাহায্য করি এবং সেদিন(কিয়ামতের দিন)অবশ্যই সাহায্য করবো, যেদিন সাক্ষ্যদাতা(ফেরেশতাগণ সাক্ষ্যদানের জন্য) খাড়া হবে।’ (সূরা মুমিন)
আখেরাতের সাহায্য তো সুস্পষ্ট যে, আল্লাহর অনুগত বান্দাগণ সুস্পষ্ট সফল হবে, আর হুকুম অমান্যকারীরা বিফল হবে। আর দুনিয়ার সাহায্য কখনও তো সফলদানের মাধ্যমে হয়ে থাকে, আর কখনও অন্যভাবে হয়ে থাকে, অর্থাৎ, প্রথমে হুকুম অমান্যকারীরা হুকুম মান্যকারীদের উপর বিজয়ী হয়। কিন্তু আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন এক সময় তাদের থেকে অবশ্যই প্রতিশোধ নেওয়া হয়। সুতরাং ইতিহাসও এ কথার সাক্ষী।(তাফসীরে ইবনে কাসীর)
এ সমস্ত ঘটনা দ্বারা এভাবেও সান্তনা লাভ হয় যে, দ্বীনের উপর অবিচল থাকার দ্বারা আখিরাতে তারা আগে থাকবে-কয়েকটি ঘটনা উল্লেখের পর এ আয়াতেই যার সংবাদ প্রদান করা হয়েছে। ‘নিশ্চয়ই শুভ পরিণতি মুত্তাকিদের জন্যই অবধারিত।’(সূরা হুদ) একইভাবে আমাদের সঙ্গেও অগ্রগামী থাকার ওয়াদা রয়েছে। সুতরাং ইরশাদ হচ্ছে- ‘যে সমস্ত লোক মুত্তাকী-খোদাভীরু, তারা এসব কাফিরদের থেকে উঁচু স্তরে থাকবে। (সূরা বাকারা)
১২. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাযিঃ) বলেন-

’ যে ব্যক্তি( সব সময়ের জন্য) কোন পন্থা অবলম্বন করতে চায় তার উচিত ঐ সমস্ত লোকের পন্থা অবলম্বন করা, যারা অতীত হয়েছেন। কারণ, জীবিত মানুষের তো বিপথগামী হওয়ারও আশংকা রয়েছে।(তাই জীবিত মানুষের পন্থা ঐ সময় পযর্ন্ত অবলম্বন করা যেতে পারে, যতক্ষণ তারা সঠিক পথে থাকে। যে সমস্ত লোকের পন্থা চিরদিনের জন্য গ্রহণ করা যেতে পারে তারা হলেন আল্লাহর রাসূলের সাহাবাগণ।’(এই হাদীসের শেষে রয়েছে যে)’আর যতদূর সম্ভব তাদের নীতি ও অভ্যাসকে আঁকড়ে ধরো।’(রাযীন,জামউল ফাওয়ায়িদ)

ফায়দা: একথা পরিস্কার যে, সাহাবায়ে কেরামের নীতি-অভ্যাস তখনই অবলম্বন করা সম্ভব, যখন তাঁদের ঘটনাবলী জানা থাকবে। বিধায় এ জাতীয় বই-পুস্তক পড়া ও শ্রবণ করা জরুরী।
১৩. যেভাবে পবিত্র কুরআনে নবী, আলিম ও অলীগণের কাহিনী তাঁদের অনুসরণের স্বার্থে উল্লেখিত হয়েছে(যার নির্দেশ এ আয়াতে রয়েছে)-
’ তাদের হিদায়েতের পথ অনুসরণ করো।’(সূরা আন’আম-৯০)
এমনিভাবে হাদীসের মধ্যেও এ সমস্ত মাকবূল বান্দার কাহিনী বহুল পরিমাণে উল্লেখিত হয়েছে। সুতরাং হাদীস শাস্ত্রের অধিকাংশ গ্রন্থে ‘কিতাবুল কাসাস’কে পৃথক একটি অধ্যায় বানানো হয়েছে। এর দ্বারাও এ সমস্ত ঘটনা উপকারী এবং এগুলো পড়া এবং সে অনুপাতে চলার উপযুক্ততা প্রমাণিত হয়। এ কারণেই বুযুগর্গণ সবর্দা এ জাতীয় কাহিনীমূলক গ্রন্থ লেখার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন।
এখন আমি এমন কিছু বইয়ের নাম লিখছি, যেগুলো পড়বে বা শুনবে। শুনানোর জন্য আলেম ব্যক্তি পাওয়া গেলে তো সুবহানাল্লাহ!(খুবই ভালো), অন্যথায় যাকে পাওয়া যায় তাকে দিয়েই পড়িয়ে শুনবে।

১.তারিখে হাবীবে ইলাহ ২. নশরুত তীব ৩. মাগাযিউর রাসূল ৪. কাসাসুল আম্বিয়া ৫. মাজমুয়ায়ে ফুতুহুশ শাম ওয়াল মিসর ওয়াল আজম ৬. ফুতুহুল ইরাক ৭. ফুতুহাতে ভানসা ৮. ফিরদাউসে আসিয়া ৯. হেকায়াতুস সালিহীন ১০. তাযকিরাতুল আউলিয়া ১১. আনোয়ারুল মুহসিনীন ১২. নুযহাতুল বাসাতীন ১৩. ইমদাদুল মুশতাক ১৪. নেক বিবিয়াঁ।
নোট: এর মধ্যে ১১,১২ ও ১৩ এর কিছু বিষয় এবং ১৪ এর মালফুযাত অংশ সাধারণ লোকের হয়ত বা বুঝে আসবে না। তারা সেগুলো থেকে নিজেকে মুক্ত রাখবে।

অনলাইন নিউজ পোর্টাল

মন্তব্য করুন: