বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, বৈশাখ ৫ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

সিয়াম ও রমযান : গুরুত্ব ও ফযীলত

 প্রকাশিত: ২২:৩৭, ২২ মে ২০২০

সিয়াম ও রমযান : গুরুত্ব ও ফযীলত

রমযানুল মুবারক। বছরের বার মাসের সর্বাধিক মর্যাদাশীল ও মহিমান্বিত মাস। এ মাসে আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারীম নাযিল করেছেন, যা সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানী কিতাব এবং মানবজাতির হেদায়েতের দিশারী। এ মাসে তিনি রেখেছেন  ‘লাইলাতুল কদর’, যা হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। এ মাসের দিবসে তিনি ফরয করেছেন সিয়াম, যা ইসলাম ধর্মের মূল পাঁচ ভিত্তির একটি।

আর রাতে রয়েছে তারাবীহর বিধান, যা আবদ ও মাবূদের মাঝে কিয়ামুল লাইল ও তিলাওয়াতুল কুরআনের মাধ্যমে নিগূঢ় সম্পর্ক স্থাপনের অনন্য মাধ্যম। এ মাসে সুন্নত করা হয়েছে ইতিকাফ, যাতে বান্দা তার রবের ঘরে, তাঁর একান্ত মেহমান হয়ে কিছু সময় গুযরান করে। এ মাসকে ঘিরে হুকুম করা হয়েছে সদাকাতুল ফিত্রের, যাতে গরীবের মুখেও আনন্দের হাসি ফোটে। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর পুরস্কার দিবসের বার্তা নিয়ে উদিত হয় ঈদের চাঁদ, যাতে বান্দা তার প্রভুর কাছ থেকে লাভ করতে পারে রহমত ও মাগফেরাতের ইনাম।

এ মাস কুরআন নাযিলের মাস। খায়র ও বরকতের মাস। তাকওয়া অর্জনের মাস। আমলে অগ্রগামী হওয়ার মাস। নেকী হাছিলের মাস। গুনাহ বর্জন করার মাস। ক্ষমা লাভের মাস। প্রবৃত্তির লাগাম টেনে ধরার মাস। সংযম-সাধনার মাস। ভ্রাতৃত্ব চর্চার মাস। সহানুভূতির মাস। দেহমন শুদ্ধ ও পবিত্র করার মাস।

এ মাসে জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়। আল্লাহ পাকের রহমত ও করুণা বান্দার প্রতি অধিক নিবিষ্ট হয়, নেক ও কল্যাণের দিকে ধাবিত হওয়া সহজ হয়। জাহান্নামের কপাটগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। গুনাহের তাড়না দমিত হয়। এ মাসে শয়তান শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকে। তার ওয়াসওয়াসা ও কুমন্ত্রণা নিষ্ক্রিয় হয়। এ মাসে আল্লাহ তাআলা অসংখ্য জাহান্নামীকে মুক্ত করে থাকেন জাহান্নামের আগুন থেকে। অতএব এ মাস হল আল্লাহমুখী হওয়া, তাঁর প্রিয়পাত্র হওয়া, তাকওয়া হাছিল করা এবং গুনাহ থেকে পাক-ছাফ হয়ে তাঁর নৈকট্য অর্জনের মোক্ষম সময়। আর তাই রমযানের চাঁদ উঠতেই ঘোষণা হতে থাকে:

يَا بَاغِيَ الخَيْرِ أَقْبِلْ، وَيَا بَاغِيَ الشَّرِّ أَقْصِرْ.

ওহে কল্যাণ-অন্বেষী! নেকীর পথে তুমি আরো বেগবান হও। ওহে অকল্যাণের পথিক! তুমি  নিবৃত্ত হও, নিয়ন্ত্রিত হও। জামে তিরমিযী, হাদীস ৬৮২; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৬৪২; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৮৭৯৫, ২৩৪৯১

মুমিনের জন্য এ মাস নেকী লাভ ও তাকওয়া অর্জনের বসন্ত। এ মাসে সে সংগ্রহ করে তার গোটা বছরের ঈমানী আমলী এবং আত্মিক পরিশুদ্ধির পাথেয়। সর্বোপরি এ মাস প্রস্তুতি গ্রহণের মাস, তাকওয়ায় বলীয়ান হওয়ার মাস।

পক্ষান্তরে মুবারক এ মাস লাভ করার পরও এর খায়র ও বরকত থেকে গাফেল থাকা, নিজের ঈমান ও আমলের ব্যাপারে উদাসীন থাকা, আত্মিক পরিশুদ্ধি ও উৎকর্ষের ব্যাপারে বেখবর থাকা অনেক বড় মাহরুমির কথা। আল্লাহ পানাহ, বিশেষ করে এ বরকতময় সময়গুলোতে গুনাহ ও নাফরমানিতে লিপ্ত থাকা এবং প্রবৃত্তির গোলামীতে নিমজ্জিত থাকা অনেক বড় বরবাদি এবং দুর্গতির কারণ। এক বর্ণনায় এসেছে:

মুসলমানদের জন্য এর চেয়ে উত্তম মাস আর নেই এবং মুনাফিকদের জন্য এর চেয়ে ক্ষতির মাসও আর নেই। মুসলমান এ মাসে (গোটা বছরের জন্য) ইবাদতের শক্তি ও পাথেয় সঞ্চয় করে। এ মাস মুমিনের জন্য গনীমত এবং মুনাফিকের জন্য ক্ষতির কারণ। (দ্রষ্টব্য : মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৮৩৬৮; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস ১৮৮৪; মাজমাউয যাওয়াইদ, হাদীস ৪৭৭৯)

বস্তুত মুমিনের শানই হচ্ছে, আল্লাহর দেওয়া রমযানের উপঢৌকনকে সে গনীমত মনে করবে এবং এ থেকে সে বেশি থেকে বেশি উপকৃত হতে সচেষ্ট ও তৎপর থাকবে।


নতুন চাঁদ নতুন উদ্যম : দুআ পড়ে সংকল্প করি

মুমিনমাত্রই রমযানের নিআমত লাভ করবার প্রত্যাশী। সে রমযানকে ইস্তেকবাল করতে অধীর আগ্রহে প্রহর গুনতে থাকে। অতএব যখন রমযানের চাঁদ উদিত হয় তখন নতুন চাঁদ দেখার দুআটা পড়ে নিই এবং পূর্ণ উদ্যমে নতুন সংকল্পে রমযানের কল্যাণ লাভে নিমগ্ন হই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নতুন চাঁদ দেখে এই দুআ পড়তেন:

اللهُمّ أَهِلّهُ عَلَيْنَا بِالْيُمْنِ وَالْإِيمَانِ، وَالسّلامَةِ وَالْإِسْلامِ، رَبِّي وَرَبّكَ اللهُ.

আয় আল্লাহ, আপনি এই হিলালকে আমাদের জন্য ঈমান ও ইসলাম এবং শান্তি ও বরকতের সঙ্গে উদিত করুন। (হে চাঁদ!) আমার ও তোমার রব আল্লাহ। জামে তিরমিযী, হাদীস ৩৪৫১; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৩৯৭

আর ২৯ শাবান সূর্যাস্তের পর থেকে রমযানের চাঁদ তালাশ করা ফরযে কেফায়াও বটে। (দ্রষ্টব্য : সহীহ মুসলিম, হাদীস ১০৮১; মারাকিল ফালাহ, পৃ. ২৩৯)

অনলাইন নিউজ পোর্টাল

মন্তব্য করুন: