বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, বৈশাখ ৫ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

সাহিত্য

সাড়ে তিন হাত এপার্টমেন্ট

 প্রকাশিত: ১০:০৪, ৪ অক্টোবর ২০২০

সাড়ে তিন হাত এপার্টমেন্ট

 

জামাতে আসরের নামাজ পড়ে মসজিদ হতে বেরিয়ে হাঁটছিলাম। পিছন হতে একজন ভদ্রলোককে বেশ পরিচিত মনে হল, দেখেছি বার কয়েক। একটু দ্রুত পা চালিয়ে ধরলাম।

 

– শরিফ ভাই, আসসালামুআলাইকুম।

 

আমাদের পাড়ায় কবে আসছেন? আপনার ফ্ল্যাট তো মনে হয় রেডি। অনেক ইনটেরিয়র এর কাজও হয়েছে মনে হয়। রাস্তা দিয়ে আসা যাওয়া করার সময় কাজের শব্দ পাই। দামী দামী সব ফিটিংস নিয়ে মিনিট্রাক, পিকআপ এসে দাঁড়ায়, দেখতে পাই। ভদ্রলোক দুবাইয়ে ব্যবসা করেন। অনেক কষ্ট করে হাসলেন। ৫৫-৫৬ বছর হবে মাত্র বয়স। দেশে আসা যাওয়ার মধ্যে থাকেন।

 

– ফ্ল্যাট রেডি হয়েছে ২ মাস আগে। এই ফ্ল্যাটে উঠা আর না উঠা এখন একই কথা আমার জন্য।

 

– কেন ভাইয়া, কোন সমস্যা?

 

– জানো, প্রায় ৭ বছর ধরে টাকা জমিয়েছিলাম এই ফ্ল্যাটটার জন্য। এরপর ৩ বছর ধরে তিল তিল করে গড়ে তোলা এই এপার্টমেন্ট। ৬ মাস ধরে ৪৩ লাখ টাকার ইনটেরিয়র, ৭ টা এসি, সেগুন কাঠের সব আলমিরা আর লেকার করা কিচেন কেবিনেট লাগানো সুপারভাইজ করলাম। শুধু আর্কিটেক্ট এর বিলই দিয়েছি ১২ লাখ টাকা। এখন সব আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি।

 

– বুঝলাম না ভাইয়া।

 

– আমার একটা কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে, অন্যটা মাত্র ১৫ ভাগ কাজ করছে। ডায়ালিসিস করে চলছি। বড়জোর ৬ থেকে ১২ মাস হয়ত চলবে এভাবে, তাও হয়ত নিশ্চিত না……বলে উপরের দিকে তাকালেন…। কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট করার জন্য চেষ্টা করেছিলাম, এখনো ম্যাচিং কিডনি পাইনি। পেলেও ৪০-৪৫ লাখ টাকার বাজেট দিয়েছে। আরো বেশী লাগাও বিচিত্র না। হাতে টাকা নেই, এত বছরের গড়ে তোলা ফ্ল্যাট, সামান্য একটা অসুখেই মুহুর্তে কাগজের মত উড়ে যাবে। কি অদ্ভুত না, আল্লাহ ছোট ছোট সমস্যা দিয়ে দেয় আর কোটিপতি রাতারাতি পথের ফকির হয়ে যায়।

 

– এত শখ করে বানালেন যখন উঠে আসেন, আমরাও একটু ভালমন্দ খাওয়ার দাওয়াত পাব। নতুন ফ্ল্যাট হতে চিকিৎসা চলুক………।

 

অশ্রুসজল চোখে শরিফ ভাই বললেন, ভাই, অবাক হয়ে ভাবি, এই ফ্ল্যাটটার জন্য জীবন দিয়ে দিলাম। কয়মাস পরেই যে সাড়ে তিন হাত ঘরে যাব তার জন্য কিছুই ভাবি নাই। কোন সঞ্চয় নাই। ভেবেছিলাম অন্তত ৭০-৮০ বছর বাঁচব। নাতি নাতনিদের সাথে খেলব। ইউরোপ, আমেরিকা ট্যুরে যাব। একটা ছোট্ট ঘরে গিয়ে কয়’শ কিংবা হাজার বছর শুয়ে থাকতে হবে, অথচ সেই ঘরের জন্য কোন ইনটেরিয়র করলাম না। কোন এসি লাগালাম না, টাইলস লাগাবার সুযোগ নাই, লেকার পলিশ করার নিয়ম নাই, বসার জন্য সোফাসেট নাই। এখন আর এগুলার জন্য হাতে সময় নাই। মাফ চেয়ে কুল পাচ্ছি না। অল্পতেই চোখে পানি আসে। একটা সময় অনেক চেষ্টা করলেও একদম আসত না। বরং অন্যদের কান্না দেখে অবাক হতাম। আমি জানি না, ওখানে গিয়ে কিভাবে শুয়ে থাকব, শিমুল তুলার বালিশ ছাড়া আমার তো ঘুম আসে না। আসি, আমার জন্য দোয়া করিও।

 

উনার কথা শুনে একটা হার্টবিট মিস করলাম। আমাদের সাথেও কি অদ্ভুত মিল!!

 

অনলাইন নিউজ পোর্টাল

মন্তব্য করুন: