বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, চৈত্র ১৪ ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ব্রেকিং

জাপানে কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ খেয়ে দু’জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ১০০ ঈদের ছুটির আগে সব সেক্টরের শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দেয়ার সিদ্ধান্ত নোয়াখালীতে পানিতে ডুবে ভাই-বোনের মৃত্যু বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয়কেন্দ্রে ইসরায়েলী হামলায় নিহত ১২ মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাস সবচেয়ে বেশি বিকৃত করা হয়েছে শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে : শিক্ষামন্ত্রী ইসরায়েলের ট্যাংক গাজার নাসের হাসপাতাল ঘিরে রেখেছে গাজায় হতাহতের সংখ্যা অনেক বেশি: ইসরায়েলী প্রতিরক্ষা মন্ত্রীকে মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর গাড়ীবহরে হামলা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি ইয়াছিন যশোরে গ্রেফতার গাজার দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপক বোমাবর্ষণ; হতাহত অনেক

ইসলাম

সমাজের প্রতি ইমামের দায়িত্ব ও কর্তব্য

 প্রকাশিত: ২১:৪৪, ৬ নভেম্বর ২০২০

সমাজের প্রতি ইমামের দায়িত্ব ও কর্তব্য

ইমাম হচ্ছেন সমাজের সবচেয়ে সম্মানী ও মর্যাদাশালী ব্যক্তি। ইমাম শব্দটি কোরআনুল কারিমে বিভিন্ন অর্থে ব্যবহূত হয়েছে। সুরা বাকারার ১২৪ নম্বর আয়াতে ইমাম অর্থ ‘নেতা’ বলে উল্লেখ হয়েছে।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা বলেন, ‘যখন ইবরাহিমকে তার রব কিছু বিষয়ে আনুগত্যের পরীক্ষা নিলেন, অতঃপর তিনি তা পুরোপুরি পূরণ করলেন, আল্লাহ বললেন, হে ইবরাহিম, আমি তোমাকে জাতির জন্য নেতা বানাতে চাই।’ সুরা হুদের ১৭ নম্বর আয়াতে ইমাম অর্থ ‘পথপ্রদর্শক’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা বলেন, ‘আর পূর্ববর্তী মুসার কিতাব যা ছিল পথপ্রদর্শক ও রহমত।’

ইমাম এবং ইমামতি বিষয়টা ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। ইমামত দুই ধরনের হতে পারে, প্রথমত, ‘ইমামতে কুবরা’—বড় ইমামতি যা জনগণের সার্বিক কল্যাণে রাসূল (স)-এর প্রতিনিধি হিসেবে ইসলামি রাষ্ট্র পরিচালনাকে বোঝানো হয়ে থাকে। অবশ্য ইসলামি শরিয়ায় এর অনেক শর্ত রয়েছে। দ্বিতীয়ত, ‘ইমামতে সুগরা’—ছোট ইমামতি নামাজের ইমামত ও মসজিদকেন্দ্রিক সমাজ পরিচালনার দায়িত্ব পালন করা। আমাদের প্রিয় নবি মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (স) নবুওয়াতের মহান দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি মদিনা রাষ্ট্রের প্রধান ছিলেন, তিনি নামাজের ইমামতিও করেছেন।

ইসলামের দৃষ্টিতে ইমামতি কোনো পেশা নয়, বরং এটা হচ্ছে একটি মহান দায়িত্ব। ইমামের কাজের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে নবি করিম (স) ইমাম ও মুয়াজ্জিনের জন্য এই বলে দোয়া করেছেন, ‘ইমাম হচ্ছেন জিম্মাদার আর মুয়াজ্জিন হচ্ছেন আমানতদার। হে আল্লাহ! তুমি ইমামদের সঠিক পথ দেখাও আর মুয়াজ্জিনদের ক্ষমা করো।’

(হাদিসটি আবু দাউদ ও তিরমিজি শরিফে উল্লেখ হয়েছে) এই হাদিসের প্রথম বাক্য হচ্ছে, ‘আল-ইমামু যামিনুন’- ইমাম জিম্মাদার; ইমাম দায়িত্বশীল হচ্ছেন মুসল্লিদের। তাদের নামাজ শুদ্ধ হলো কি না, তারা শুদ্ধ রূপে কোরআন পড়তে পারছেন কি না, তাদের আচার-আচরণ দুরস্ত হলো কি না, ইসলামের হুকুম আহকাম মেনে চলতে তারা উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন কি না, মূলত এসব বিষয়ে যত্নবান হওয়াই ইমামের প্রধান দায়িত্ব। এছাড়া সমাজের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে মুসল্লিদের সম্পৃক্ত করে নেতৃত্ব দেওয়াও তার দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত।

যেহেতু ইমামতি একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব, তাই ইমামকে এ কাজের জন্য যেমন যোগ্য হতে হবে তেমনি তাকে মহত্ গুণের অধিকারীও হতে হবে। তাকে হতে হবে সত্ নিষ্ঠাবান তাকওয়াধারী আল্লাহওয়ালা আলেম। আমরা দেখে থাকি, সাধারণ মানুষ ইমামদের অনুসরণ করে থাকেন, তাদের পরামর্শ গ্রহণ করে সে অনুযায়ী চলার চেষ্টা করেন। তাই ইমামগণ জনসাধারণকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান দানের পাশাপাশি তাদের আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করবেন।

মানবসম্পদ উন্নয়নের বিভিন্ন দিক যেমন, প্রথমত, তাদের আত্মশুদ্ধির শিক্ষা দেওয়া, আত্মসমালোচনা করতে শেখানো, বেকারত্ব দূরীকরণে কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রশিক্ষণ দেবেন। এতে করে সমাজ থেকে নিরক্ষরতা দূর হবে, মাদকাসক্তি দূর হবে, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ হবে, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ নির্মূল হবে। আর এসব কিছু তখনই সম্ভব হবে যদি একজন যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তি ইমামতের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

ইমামকে নামাজের মাসআলা-মাসায়েল সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান থাকতে হবে। তিনি হাদিস ও ফেকাহের গ্রন্থসমূহ থেকে সলাত অধ্যায়টি খুব রপ্ত করে নেবেন। নামাজের মাসআলা-মাসায়েলের জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি ইসলামের সামগ্রিক বিধি-বিধান সম্পর্কেও তিনি যথেষ্ট জ্ঞানের অধিকারী হবেন। আমল-আখলাকে দৃঢ়তা আনার জন্য প্রতিদিন কোরআন তেলাওয়াত, তাহাজ্জুদ ও অন্যান্য নফল নামাজের প্রতি যত্নবান হওয়া একজন আদর্শ ইমামের বৈশিষ্ট্য।

একজন যোগ্য ইমাম হতে হলে তাফসিরের কিতাব অধ্যয়নসহ ব্যক্তিগঠন বিষয়ক বই পুস্তক বেশি বেশি অধ্যয়ন করাও জরুরি। ইমামগণের বিশেষ দায়িত্ব হচ্ছে, জুমুআর খুতবায় সমকালীন বিষয়ে কোরআন হাদিসের আলোকে আলোচনা করা। মুসল্লিদের একটি নির্দিষ্ট সময়ে নামাজের মাসআলা-মাসায়েল শেখানো, বিশুদ্ধ কোরআন তেলাওয়াত শেখানো, নামাজের শুদ্ধ পদ্ধতি দেখানো, হালাল-হারাম সম্পর্কে অবহিত করাও ইমামের অন্যতম দায়িত্ব। ইমামের ভাষাগত দক্ষতা থাকতে হবে। কোরআন হাদিস ফেকাহ্ শাস্ত্রের জ্ঞানের পাশাপাশি মাতৃভাষায়ও ইমামকে দক্ষ হতে হবে। মাতৃভাষায় তিনি দক্ষ না হলে ইসলামি জীবনদর্শন সম্পর্কে মুসল্লিদেরকে স্পষ্ট করে বোঝাতে পারবেন না। ইসলামের বাণী সঠিকভাবে পৌঁছানোর জন্য আল্লাহ প্রত্যেক নবিকে তাদের স্বজাতির কাছে পাঠিয়েছিলেন। এ থেকে আমরা বুঝতে পারি, মাতৃভাষায় দক্ষ হওয়াও আলেম সমাজের কর্তব্য।

মসজিদে নববিতে আখেরি নবি সাইয়্যেদুল মুরসালিন ইমামুল আম্বিয়া মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (স) আজীবন ইমামের দায়িত্ব পালন করে গেছেন। মসজিদে নববিকে তিনি শুধু নামাজের জন্য সীমাবদ্ধ রাখেননি, বরং সমাজ উন্নয়নের যাবতীয় কর্মকাণ্ডের জন্য তিনি তা উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন। আমরা যদি প্রতিটি মসজিদকে নবিজির দেখানো সেই মসজিদে নববির রোল মডেল রূপে গড়ে তুলতে পারি তাহলে আমাদের সমাজ শিক্ষার আলোয় আলোকিত হবে, সমাজ থেকে নিরক্ষরতা দূর হবে, সমাজে ব্যাপকভাবে জনকল্যাণমূলক কাজ পরিচালনা করা সম্ভব হবে। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন!

লেখক :জামেয়া উবাইদিয়া নানুপুর মাদ্রাসা (চট্টগ্রাম)-এর মহাপরিচালক ও পির সাহেব, নানুপুর

অনলাইন নিউজ পোর্টাল

মন্তব্য করুন: