শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, বৈশাখ ৭ ১৪৩১, ১১ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

শাহাদাতের পূর্বক্ষণে খলিফাতুল মুসলিমিন উমর রাঃ

 প্রকাশিত: ১১:০৮, ১১ জুলাই ২০২১

শাহাদাতের পূর্বক্ষণে খলিফাতুল মুসলিমিন উমর রাঃ

হযরত উমর রা এর ছিলেন একজন আদর্শিক খলীফা ও উম্মাহর জন্য শক্তিশালী দুর্গের মতো। ইসলামের আগে ও পরে উভয় জীবনে তিনি নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে নিজ যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে গেছেন,। এজন্যই হয়তো আমাদের প্রিয় রাসূল সা উমরের জন্য প্রাণভরে দোয়া করেছিলেন। মুসলিম উম্মাহর অর্ধেক জাহানের প্রেসিডেন্ট উমর রা এর জীবনের শেষ দিন  গুলো কেমন ছিলো ? এই প্রশ্নের জবাবে আজকে আমাদের আলোচনা।  

১। ফেতনা নিয়ে শঙ্কিত ছিলেন
আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণীঃ সতর্ক থাক সেই ফিতনা হতে যা বিশেষভাবে তোমাদের যালিম লোকেদের মাঝেই সীমাবদ্ধ হয়ে থাকবে না – (সূরাহ আনফাল ৮/২৫)।

নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি হাউজে কাউসারের নিকট তোমাদের আগেই হাজির থাকব। তোমাদের থেকে কিছু লোককে আমার নিকট পেশ করা হবে। কিন্তু আমি যখন তাদের পান করাতে উদ্যত হব, তখন তাদেরকে আমার নিকট হতে ছিনিয়ে নেয়া হবে। আমি বলব, হে রব! এরা তো আমার সাথী। তখন তিনি বলবেন, আপনার পর তারা নতুন কী ঘটিয়েছে তা আপনি জানেন না।(আধুনিক প্রকাশনী- ৬৫৬০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৭৩)

কুর’আন ও হাদীসের এহেন ঘোষণা শুনে উমর রা খুব ভয় পেয়ে যেতো ।সাহাবীদের সাথে বারবার এই বিষয়ে আলোচনা করতেন। হুযাইফা রা এর সাথে আলোচনা টি আমরা সহীহ বুখারী তে পাই- হুযাইফা রা  বলেন, একবার আমরা উমার (রাঃ)-এর নিকট উপবিষ্ট ছিলাম। হঠাৎ তিনি বললেন, ফিত্‌না সম্পর্কে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বক্তব্য তোমাদের মধ্যে কে স্মরণ রেখেছে? হুযাইফা (রাঃ) বললেন, (নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন) মানুষ নিজের পরিবার, ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি ও প্রতিবেশীর ব্যাপারে যে ফিত্‌নায় পতিত হয়, সালাত, সদাকাহ, সৎকাজের আদেশ, অসৎ কাজের নিষেধ তার সে পাপকে মুছে ফেলে। তিনি বলেন, আমি তোমাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করিনি, এবং সে ফিত্‌নার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করছি যা সাগর লহরীর মত ঢেউ খেলবে। হুযাইফাহ (রাঃ) বললেন, হে আমীরুল মু'মিনীন! সে ফিত্‌নায় আপনার কোন অসুবিধা হবে না। কেননা, সে ফিত্‌না ও আপনার মাঝে একটি বন্ধ দরজা আছে। উমার (রাঃ) বললেন, দরজাটি কি ভেঙ্গে ফেলা হবে, না খুলে দেওয়া হবে? তিনি বললেন, না বরং ভেঙ্গে ফেলা হবে। ‘উমার (রাঃ) বললেন, তা হলে তো সেটা আর কখনো বন্ধ করা যাবে না। (হুযাইফাহ বলেন) আমি বললাম হ্যাঁ। (শাকীক বলেন) আমরা হুযাইফা (রাঃ) - কে জিজ্ঞেস করলাম, ‘উমার (রাঃ) কি দরজাটি সম্পর্কে জানতেন? উত্তরে তিনি বললেন, হ্যাঁ। যেমন আমি  সুনিশ্চিতভাবে জানি যে আগামী দিনের পর রাত আসবে। কেননা আমি তাকে এমন হাদীস বর্ণনা করেছিলাম যা ত্রুটিমুক্ত। (শাকীক বলেন) দরজাটি কে সম্পর্কে আমরা হুযাইফাহ (রাঃ) - কে জিজ্ঞেস করতে আমরা ভয় পাচ্ছিলাম, তাই আমরা মাসরুককে জিজ্ঞেস করতে বললাম। তিনি তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, দরজাটি কে? উত্তরে তিনি বললেন, ‘উমার (রাঃ) (নিজেই)। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৬০১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬১৫) 

২। শাহাদাতের পিপাসায় বিভোর ছিলেন
উমর রা দোয়া করতেন এই বলে-

হে আমার রব! আপনি আমাকে  শাহাদাতের মৃত্যু দেন, নবীর শহরে যেনো  শাহাদাত হয় আমার ! 

আউফ  ইবনে মালিক উমর রা এর শাহাদাতের পূর্বে স্বপ্নে দেখেন- আকাশ থেকে একটি রশি ঝুলে আছে, আর সব মানুষ সেটি ধরতে চাইছেন। তবে উমর কে তিনি তিন হাত উঁচুতে দেখতে পেলেন। তখন কেউ একজন বললো- উমর আল্লাহর যমীনে খলীফা হবেন, নিন্দুকের পরোয়া করবেন না ও শহীদ হবেন।

এই স্বপ্ন পরবর্তীতে উমর রা শুনে বলেছিলেন- প্রথম দুটো ঠিক হলেও আরবে থেকে কীভাবে শহীদ হবো? যেখানে কোনো জিহাদের সুযোগ নেই এখন!

আল্লাহ তায়ালা প্রিয় উমরের মনের আকুতি বুঝেছিলেন। পরবর্তীতে নবীর শহরেই তিনি শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করেন। 

৩। জীবনের শেষ খুতবাতে খলীফা নির্বাচনের তাগিদ

২১ জিলহজ্জ শুক্রবার জুময়ার শেষ খুতবা প্রদান করেন। উমর রা নিজের একটি স্বপ্ন ব্যাখ্যা করেন এবং বলেন- একটা মোরগ আমাকে দুবার ঠোকর দিচ্ছিল; আর লোকে আমাকে পরবর্তী খলীফা নির্বাচনের তাগিদ দিয়েছিলেন। 

আল্লাহ তাঁর এই দ্বীন কে কখনো ধ্বংস করবেন না । আমি যদি মারা যাই তাহলে ছয় সদস্যের একটি শূরা কমিটি করে খলীফা নির্বাচন করবে। 

উমর রা এর সময়ে আরব উপদ্বীপের আশেপাশে বেশিরভাগ এলাকায় ইসলামী হুকুমত চালু হয়। তিনি খুব কঠিন ভাবে ফেতনা ও বিদ্রোহ দমন করেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন উমর রা এর প্রতি রহম করুন এবং আমাদের তার জীবনী হতে শিক্ষা নেয়ার তাওফিক প্রদান করুন

অনলাইন নিউজ পোর্টাল

মন্তব্য করুন: