বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, বৈশাখ ৫ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

লাখ লাখ তরুণ-তরুণী জীবদ্দশায় থেকেও ‘মরে যাচ্ছে’

 প্রকাশিত: ০০:০৩, ৯ জানুয়ারি ২০২১

লাখ লাখ তরুণ-তরুণী জীবদ্দশায় থেকেও ‘মরে যাচ্ছে’

পৃথিবীর আর কোনো দেশে না থাকলেও দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে ধর্ষণ দুই রকম। একটা হচ্ছে অরিজিনাল ধর্ষণ। ধর্ষণ বলতে যা বুঝানো হয় এবং যা বোঝা যায় সেটাই। (এর চেয়ে বেশি শাব্দিক বর্ণনা এখানে দিচ্ছি না।)

অপরটা হচ্ছে, এমন ধর্ষণ যা অরিজিনাল ধর্ষণ নয়, ব্যভিচার। পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে সংঘটিত ‘ঘটনা’র পর পরবর্তী সময়ে পুরুষ কর্তৃক প্রত্যাশা পূরণ না হওয়া কিংবা প্রতিশ্রুতিভঙ্গ অথবা নারীর কোনো বিপদজনক ঘটনা ঘটে যাওয়ার ফলে আগের ওই সম্মত ঘটনাটিকে ধর্ষণ হিসেবে চিহ্নিত করা।

অনেকেই ধর্ষকের সঙ্গে ধর্ষিতার বিয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে বিবাদের পরিসমাপ্তির ঘটনা দেখে আশ্চর্য হয়ে যেতেন। জেলখানার গেটে ধর্ষকের সঙ্গে ধর্ষিতার বিয়ে হয়েছে এরপর ধর্ষক মুক্তি পেয়েছে এমন খবর প্রকাশ হয়েছে কিছুদিন আগে। পরে দেখা গেছে, সেটা প্রকৃত ধর্ষণের ঘটনা ছিল না, ছিল ব্যভিচারের ঘটনা, কিন্তু নারীর পক্ষ থেকে ধর্ষণের মামলা দেওয়ায় পুরুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

গত কয়েক বছর ধরে এই দ্বিতীয় প্রকার ধর্ষণের খবর গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রকাশ হচ্ছে। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কলাবাগানের ঘটনাটি সম্ভবত এরকমই।

এ কথাগুলো এখানে বলার উদ্দেশ্য হলো, আইনি মারপ্যাঁচে ধর্ষণ হিসেবে চিহ্নিত হলেও এদেশে এখন ব্যাপকভাবে শিক্ষার্থী ছেলে-মেয়ে, যুবক-যুবতীদের মাঝে ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়ছে। ব্যভিচারের কয়েক মাস পরে, এমনকি বছরখানেক পরেও নারী কোনো কারণে ‘বঞ্চিত’ বোধ করলে ধর্ষণের মামলা ঠুকে দিচ্ছে। কিন্তু যারা মামলার পথে যাচ্ছে না কিংবা বঞ্চিত বোধ করছে না- তাদের বিপথগামীতার চিত্রটা সামনে আসছে না। কলাবাগানের ঘটনা মনে করিয়ে দিয়েছে, ভেতরে ভেতরে আমাদের সমাজের তারুণ্য ভয়াবহ ধ্বসের মধ্যে আছে।

একটি মেয়ে মারা যাওয়ায়, এবং ঘটনার সঙ্গে যুক্ত একটি ছেলে ধরা পড়ায় ঘটনাটি নিয়ে অনেক চর্চা হচ্ছে। ভাবখানা এমন যে এদেশে এমন ঘটনা এখনকার দিনে খুব একটা ঘটে না। মিডিয়া সংস্কৃতি এবং নাগরিক জীবনের বাস্তবতা এমন সাধুপনার চিত্র তুলে ধরে না।

রিলেশন, ডিপ-রিলেশন, ব্রেকআপ এসব শব্দ এবং এসব শব্দের মর্মের সঙ্গে নবম-দশম শ্রেণী থেকে আরো উপরের শিক্ষার্থীদের এখন গভীর সম্পর্ক জড়িয়ে যায়। পশ্চিম-উগ্র মিডিয়ার পাশাপাশি এক ধরনের উদারপন্থী অভিভাবকরা এসব ঘটনাকেও তেমন কিছু মনে করেন না। টিনএজ বয়সের খুব সঙ্গত ও ছোটখাটো উপসর্গ হিসেবে বিবেচনা করেন। এরপর যখন কোনো ‘ঘটনা’ ঘটে যায় তখন তাদের টনক নড়ে।

একটি মুসলিম প্রধান দেশে তরুণ প্রজন্মের শালীনবোধ ও যৌনজীবন এভাবে চোরাই খাদে হারিয়ে যেতে পারে না। কলাবাগানের ঘটনায় মেয়েটি মরে গেল, কিন্তু শৃঙ্খলা জাগ্রত না হলে দেশজুড়ে লাখ লাখ তরুণ-তরুণী জীবদ্দশায় থেকেও যে ‘মরে যাচ্ছে’ এটাও তো আমাদের খেয়াল করা দরকার।

অনলাইন নিউজ পোর্টাল

মন্তব্য করুন: