বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৈশাখ ১২ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

রাসূল সাঃ জীবন থেকে ১০ শিক্ষা

 প্রকাশিত: ১০:৪২, ৭ জুলাই ২০২১

রাসূল সাঃ জীবন থেকে ১০ শিক্ষা

১২ই রবিউল আউয়াল, দুনিয়ার মানুষের জন্য আল্লাহর পাঠানো সর্বশেষ রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী। হিজরতের ৫৩ বছর আগে, ৫৭০ ঈসায়ী সালের ২২শে এপ্রিলের যে দিনটিতে রাসূল (সা.) জন্মগ্রহণ করেন, প্রাচীন আরবদের হিসাব অনুযায়ী দিনটি ছিলো ১২ই রবিউল আউয়াল। আবার ৬৩২ ঈসায়ী সালের ৮ই জুন মোতাবেক ১১ হিজরীর ১২ই রবিউল আউয়াল তারিখেই দুনিয়া থেকে চিরবিদায় নেন আল্লাহর রাসূল।

রাসূলের এই মিলাদ ও ওফাত (জন্ম ও মৃত্যু) বার্ষিকীতে তার জীবনাচরণ, কথা ও কাজ থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেদের জীবনে বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই আমরা যথার্থভাবে তাঁকে স্মরণ করতে পারি।

রাসূলের জীবন থেকে আমাদের জন্য শিক্ষণীয় দশটি জীবনাচরণ, কথা ও কাজ সম্পর্কে এখানে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।

১. আল্লাহকে স্মরণ
হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, “আল্লাহকে স্মরণকারী এমন কোনো দলই নেই, যাদের ফেরেশতারা ঘিরে রাখে না, তারা রহমতে পূর্ণ হয় না, তাদের ওপর প্রশান্তি বর্ষিত হয় না এবং আল্লাহ তার সামনে উপস্থিতদের কাছে তাদের স্মরণ করেন না।” (তিরমিজি)

আল্লাহকে স্মরণ মুসলমানের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ এক বিষয়। আমাদের জীবনের সর্বক্ষেত্রেই চলার জন্য আল্লাহকে স্মরণ করা একান্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাসূল (সা.) তার কথা ও কাজের মাধ্যমে আমাদের আল্লাহকে স্মরণ করার বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন।

২. কুরআনের সংষ্পর্শতা
হযরত আবু সাঈদ আল-খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) এর দীর্ঘ এক হাদীসে বলা হয়েছে, “যখন সবকিছু তোমাদের কাছে রাতের আঁধারের মত অস্পষ্ট হয়ে যাবে, তখন তোমরা কুরআনকে আঁকড়ে ধর। কেননা এটি তোমাদের জন্য শাফায়াতকারী ও বিশ্বাসযোগ্য পরিকল্পনা দানকারী। যারা একে গ্রহণ করবে, এটি তাদের জান্নাতে নিয়ে যাবে। যারা একে প্রত্যাখান করবে, জাহান্নাম হবে তাদের গন্তব্য।” (কানযুল উম্মাল)

রাসূল (সা.) এর জীবন থেকে আমরা শিক্ষা পাই, জীবনের জটিলতর সমস্যার সমাধানে কুরআনের মুখাপেক্ষী হওয়ার। কেননা আমাদের সব ধরণের বিরোধে ও সিদ্ধান্তহীনতায় আল্লাহর কিতাব থেকেই আমরা একমাত্র সঠিক সিদ্ধান্ত পেতে পারি।

৩. বিনয়
রাসূল (সা.) এর এক হাদীসে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি দারিদ্র বা অভাব ছাড়াই আল্লাহর সামনে নিজেকে বিনয়ী হিসেবে পেশ করে, সে বরকতে পূর্ণ হবে। (তানবিহ আল-কাওয়াসির)

রাসূল (সা.) ছিলেন বিনয়ের উৎকৃষ্ট উদাহরণ। পরিবার, সমাজ ও অন্যান্য সকলের সাথেই তার আচরণ ছিল বিনয়পূর্ণ। রাসূল (সা.) এর জীবন থেকে এটি আমাদের উত্তমতর শিক্ষনীয় বিষয়।

৪. সাদাকা
রাসূল (সা.) বলেছেন, “সাদাকা আদায়ে দেরি করো না, কেননা এটি দুর্দশার মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।” (তিরমিজি)

খাবার বা অন্যকোনো সামগ্রী দেওয়ার মাধ্যমে হোক অথবা বিনয়ী ব্যবহারের মাধ্যমে হোক, সাদাকা মুসলমানদের গুরুত্বপূর্ণ এক বৈশিষ্ট্য। নিজের পাশে অভাবী ভাইয়ের প্রয়োজন অপূর্ণ রেখে কোনো মুসলমান ভোগ-বিলাসে জীবন কাটাতে পারেনা। রাসূল (সা.) এর জীবন থেকে এটিও আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা।

৫. প্রতিবেশির প্রতি দয়া
হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ বিচারের দিনের উপর বিশ্বাস রাখে, তার উচিত নয় নিজের প্রতিবেশির ক্ষতি করা। আল্লাহ ও শেষ বিচারের দিনে বিশ্বাসকারী সকলের উচিত তার মেহমানের আন্তরিক খেদমত করা এবং উত্তম কথা বলা নাহয় চুপ থাকা।” (বুখারী)

রাসূল (সা.) এর জীবন থেকে এই শিক্ষা নিয়ে আমরা আমাদের সমাজকে সৌহার্দ্যপূর্ণ এক সমাজে পরিণত করতে পারি।

৬. ন্যায়বিচার
হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, “প্রতিদিনের সূর্যোদয়ে মানুষের শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ওপর (আল্লাহর নেয়ামতের জন্য) আবশ্যিক সাদাকা আছে। দুই ব্যক্তির মধ্যে ন্যায়বিচার করা সাদাকা, কোনো ব্যক্তিকে তার বাহনে উঠতে সাহায্য করা বা মালপত্র বহনে সাহায্য করা সাদাকা, উত্তম কথা বলাও সাদাকা এবং নামাজের জন্য মসজিদের দিকে প্রতি পদক্ষেপই সাদাকা এবং রাস্তা থেকে ক্ষতিকর বস্তু সরিয়ে দেওয়াও সাদাকা।” (বুখারী)

আমাদের চারপাশের লোকদের প্রতি আমরা শুধু দয়ালু ও বিনয়ীই হবো না, পাশাপাশি তাদের প্রতি ন্যায়বিচার করাও রাসূল (সা.) এর শিক্ষা। হাদীস অনুযায়ী এটি আমাদের সাদাকার অংশ।

৭. মনে রাগ না রাখা
হযরত আবু যর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, “তোমাদের কেউ যখন রাগান্বিত হয়, সে যেনো বসে পড়ে। যদি তার রাগ পড়ে যায় তাহলে ভালো, তাতেও কাজ না হলে তার উচিত শুয়ে পড়া।” (আবু দাউদ)

রাসূল (সা.) মানুষের জীবনের উত্তম আদর্শ। তার অন্যতম এক বৈশিষ্ট্য ছিল রাগকে নিয়ন্ত্রণ করা। মুসলমানদের জীবনের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ এক অনুশীলন।

৮. শারীরিক ও মানসিকভাবে বিশৃঙ্খলামুক্ত থাকা
আমরা যদি আমাদেরকে শারীরিক ও মানসিকভাবে পৃথিবীর বিশৃঙ্খলায় ব্যস্ত রাখি, তবে আল্লাহর সাথে আমাদের সংযোগের জন্য সময় বের করা কঠিন হবে। শারীরিক ও মানসিকভাবে বিশৃঙ্খলামুক্ত থাকাও আমাদের জন্য রাসূল (সা.) এর জীবন থেকে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা।

৯. কথার পূর্বে গভীর চিন্তা করা
রাসূল (সা.) এর জীবন থেকে আমরা দেখি, তিনি অপ্রয়োজনে এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত কোনো কথা বলতেন না। যা বলতেন, তার পেছনে গভীর চিন্তার প্রকাশ থাকতো। অপ্রয়োজনীয় ও অকল্যাণকর কথার থেকে বাঁচতে আমাদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা।

১০. সক্রিয় চিন্তা ও অনুশীলন
মুসলমান হিসেবে পরোক্ষ আচারসর্বস্ব অনুসারীর বদলে রাসূল (সা.) আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন দ্বীনের বিভিন্ন বিষয় প্রত্যক্ষভাবে চিন্তার মাধ্যমে উপলব্ধি করার এবং সক্রিয়ভাবে অনুশীলন করার। সক্রিয় চিন্তা ও অনুশীলনের মাধ্যমেই আমরা আমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করতে পারি।

আল্লাহ আমাদের রাসূল (সা.) এর এ শিক্ষাসমূহ কাজে লাগানোর মাধ্যমে উন্নত জীবন গঠনের সুযোগ দান করুন।

অনলাইন নিউজ পোর্টাল

মন্তব্য করুন: