শীতকাল: মুমিনের জীবনে ইবাদত বন্দেগীর শ্রেষ্ঠ সময়
প্রকাশিত: ১০:৪৪, ২২ ডিসেম্বর ২০২০
এনাম হাসান জুনাইদ ।।
বছর ঘুরে আমাদের মাঝে আবার শীতকাল উপস্থিত। অন্যান্য মওসুমের মত শীতকালে প্রকৃতির মাঝে নানান পরিবর্তন দেখা যায়। শীতকালের একটি বিশেষ পরিবর্তন হল, রাত দিনের বাড়া কমা। শীতকালে রাত বড় হয়, দিন ছোট হয়। শীতকালে সময় ও আবহাওয়ার এ পরিবর্তনকে একজন মুমিন কীভাবে গ্রহণ করবে?
হাদীস শরীফে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, শীতকাল মুমিনের জন্যে বসন্ত। বসন্তকালে যেভাবে গাছগাছালি ও প্রকৃতি পত্রপল্লবে সমৃদ্ধ থাকে। পশুপাখি যত ইচ্ছা খেয়ে তাদের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে। ঠিক তেমনি মুমিন শীতকালের দীর্ঘ রাতকে ইবাদতে কাটিয়ে এবং দিনকে রোজায় কাটিয়ে লাভ করতে পারে প্রভুত আত্মিক উন্নতি।
রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও ইরশাদ করেন, শীতকালে রোযা হল এমন গনীমত যে গনীমত যুদ্ধ ছাড়াই অর্জন করা হয়েছে। অর্থাৎ দিন ছোট হওয়ার কারণে রোজা রাখলেও টের পাওয়া যায় না।
সাহবা-তাবেঈগণের নিকট এ মৌসুমের বিশেষ গুরুত্ব ছিল। তাঁরা একে ইবাদতের ভরা বসন্ত মনে করতেন। লুফে নিতেন আল্লাহর রহমত ও সন্তুষ্টি। তাই শীতকালে আমাদের নামাজ ও রোজার প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। বিশেষত সোম ও বৃহস্পতিবার এবং চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখের রোযা।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,“শীতকালের রোযা শীতল গনিমত!” সোম ও বৃহস্পতিবার এবং চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখের রোযার বিষয়ে তো সহীহ বুখারী ও মুসলিমে হাদীস রয়েছে। এতে এক আমলে দুই সাওয়াব লাভ করা যাবে ইনশাআল্লাহ!!
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. হতে বর্ণিত, তিনি ইরশাদ করেন, ‘শীতকালকে মারহাবা! এতে বরকতের ঝরণা ধারা বয়ে যায়! রাত দীর্ঘ হয় ‘কিয়ামুল্লাইলের’ জন্য! দিন ছোট হয় সিয়ামের জন্য!’
হযরত ওমর ইবনুল খাত্তব রা. বলেন, ‘শীতকাল মুমিনের গনিমত’।
শীতকালের আরেকটি বিশেষ আমল শীত বস্ত্র পেয়ে শুকরিয়া আদায় করা। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যেহেতু শীতের প্রকোপ থেকে বাচাঁর ব্যবস্থা করে দিয়েছেন তাই তাঁর শুকরিয়া আদায় করা। অনেক প্রাণী এমনকি অনেক মানুষও শীতে কষ্ট পায়। আল্লাহ তায়ালা বিষয়টি কুরআনুল কারীমে আমাদেরকে স্মরণ করিয়েছেন। ইরশাদ হচ্ছে- “চতুষ্পদ জন্তুকে তিনি সৃষ্টি করেছেন। এতে তোমাদের জন্য রয়েছে উষ্ণতা (শীত বস্ত্রের উপকরণ)। আরো অনেক উপকার। আর কিছু সংখ্যক তোমাদের খাবার।” [সূরা নাহল : ৫]
আল্লাহর শোকরিয়ার একটি অংশ হল, শীতের মৌসুমে সামর্থ্য অনুযায়ী শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো। এটি যেমন নৈতিক কর্তব্য তেমনি ঈমানী দায়িত্ব। বিশেষ করে বাংলাদেশের মত অনুন্নত দেশে। এখানে বহু সংখ্যক লোক শীতে কষ্ট পায়। তাই এ দায়িত্ব পালন করা আমাদের উপর অপরিহার্য হয়ে পড়ে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইসলামের পরে এবং পূর্বেও নিজেকে আর্তমানবতার কাজে নিয়োগ করেছেন। তাই আমাদের প্রত্যেকেরই নিজ নিজ অবস্থান থেকে চেষ্টা করা উচিৎ।
অনলাইন নিউজ পোর্টাল
মন্তব্য করুন: