শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, চৈত্র ১৪ ১৪৩০, ১৯ রমজান ১৪৪৫

ইসলাম

যে কারণে আল্লাহ সবকিছু জোড়ায়-জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন

 প্রকাশিত: ১০:২৩, ৫ জুলাই ২০২১

যে কারণে আল্লাহ সবকিছু জোড়ায়-জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন

মহান আল্ল্লাহর সৃষ্টি নৈপুণ্যের দিকে আঁখি মেলে তাকালে অন্তর প্রশান্ত হয়, তাকওয়া বৃদ্ধি পায়। সমস্ত কিছুই জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করা হয়েছে। যখন তিনি বলেছেন "আয যাকার ওয়ান উনসাদ"...... নারী এবং পুরুষ, দিন এবং রাত্রি, চন্দ্র এবং সূর্য, সমুদ্র এবং স্থল ভূমি, আলো এবং অন্ধকার... অর্থাৎ আল্লাহ রাব্বুল আ'লামীন সবকিছুই জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন। এ কারণেই আশ শাফে নিজেই বর্ণনা দিচ্ছেন যে, প্রত্যেক বিষয়কেই তিনি জোড় আকারে সৃষ্টি করেছেন। একমাত্র আল্লাহ নিজেই একক, তার কোনো জোড়া নেই। তিনি আস সামাদ, অমুখাপেক্ষী। লাম ইয়ালিদ ওয়ালাম ইউলাদ, তিনি কারও থেকে জন্ম নেননি এবং কাউকে জন্ম দেননি। 

অসংখ্য সাহাবা এই মতামত ব্যক্ত করেছেন যে এ কারণেই আল্লাহ তার সৃষ্ট জোড় জিনিসের যেমন শপথ করেছেন, তেমনি নিজের গুন বাচক বৈশিষ্ট্যেরও শপথ করেছেন।

মহিমান্বিত রমাদান মাসের শেষ দশককে খুব বেশি গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়৷ সেই শেষ দশকের কিছু রাত জোড় আবার কিছু রাত বিজোড়। কিন্তু পরিপূর্ণ দৃষ্টিতে দেখা হলে পুরো মাসটিই অসীম নিয়ামতে পূর্ণ।  

কাতাদা (রা) বলেছেন, আশ শাফে অর্থ হলো প্রত্যেক দিন। কেননা প্রত্যেকটি দিনই জোড়ায় জোড়ায় রয়েছে। একটি রাত এবং একটি দিন। আল ওয়াতান হচ্ছে শেষ দিন, যেটি বিজোড়। যার কোনো শেষ নেই। অন্যান্য সব দিনকে জোড় হিসেবে সৃষ্টি করা হয়েছে। কিন্তু সর্বশেষ দিনটি বিজোড়, একা। মানুষ এই শেষদিনের প্রতিই বিশ্বাস রাখে না। এক সূরায় বলা হয়েছে, মানুষ তাদের হিসাবের ব্যাপারে একেবারেই সচেতন নয়। এবং এ কারণেই আল্লাহ তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন সেই ভয়াবহ দিনের কথা। যেই দিনের পূর্বপ্রস্তুতি কীভাবে নিতে হবে তার জন্য নবী রাসূলও তিনি পাঠিয়েছেন। যাদেরকে আল্লাহ প্রতিনিয়ত সতর্ক করেছেন তারা কেউই সেসবের ছিটেফোঁটা মনে রাখেনি। এ কারণেই আল্লাহ বলেছেন, ফাযাক্কির, ইন্নামা আংতা মুযাক্কির- এটা তোমাদের জন্য শুধুমাত্র একটা রিমাইন্ডার! শুধুই একটা রিমাইন্ডার! আর কিছুই না। 

 কখনোই সেই দিনের ব্যাপারে হতাশ হওয়া যাবে না। ফলাফলের ব্যাপারে মুষড়ে পড়াও যাবে না। অনেকে আল্লাহর এই সতর্কবাণী শুনে ভয় পায়। কিন্তু সেইসাথে এটাও মনে রাখতে হবে এই দুনিয়াও একটি জোড়ার অর্ধাংশ। এই জীবনটাও তো পরবর্তী অনন্ত জীবনের সাথে যুক্ত। সেটা অন্য অর্ধাংশ৷ তার মানে এখানেও তাদেরকে জোড়া হিসেবেই তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু আমরা যদি এই অর্ধাংশের প্রতি নজর না দিই তাহলে আমরা অপর অর্ধাংশে কীভাবে ভালো থাকব? অর্থাৎ আমাদের এ জীবনের সমস্ত ভালো কাজ ওপাড়ে ভালো থাকার নিয়ামক। অর্থাৎ এই জীবনের সাথে পরবর্তী জীবন জোড়াবদ্ধ ঠিক যেভাবে দিনের সাথে রাত, সূর্যের সাথে চাঁদ সম্পর্কযুক্ত। আপনি যদি এই ব্যাপারটা বুঝে না থাকেন তাহলে এই জোড় বদ্ধ সৃষ্টির রহস্যও অনুধাবন করতে পারবেন না, এটাও বোঝা সম্ভবপর হবে না যে বাহ্যিকভাবে দুটো ভিন্ন জিনিসের মাঝেও আল্লাহ কী গভীর মিল রেখে দিয়েছেন! 

 আপনাকে এটা অবশ্যই বিশ্বাস করতে হবে যে আল্লাহই হচ্ছেন সর্বাপেক্ষা ন্যায়বিচারক। কেননা আপনি যদি বলেন- না, আল্লাহ ন্যায় বিচার করেন না তবে তার একটি গুণবাচক নাম ব্যর্থ হয়ে যাবে। তা কখনোই সম্ভব নয়। আল্লাহই সবচেয়ে পার্ফেক্ট। এবং আপনাকে আল্লাহর পারফেকশনের উপর অবশ্যই বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। এবং এ জন্যই তিনি সবকিছুই জোড়বদ্ধ আকারে সৃষ্টি করেছেন। অথচ আমরা কেবলমাত্র দুনিয়ার ক্ষেত্রে এক অর্ধাংশে ডুবে থেকে অপরটির কথা ভুলে যাই। এখানেই আমাদের দুর্বলতা।

অনলাইন নিউজ পোর্টাল

মন্তব্য করুন: