বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, চৈত্র ১৪ ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ইসলাম

যিলহজ্বের চমৎকার দিনগুলি- এ বছরের আমাদের করণীয়

 প্রকাশিত: ১০:৫৪, ১৫ জুলাই ২০২১

যিলহজ্বের চমৎকার দিনগুলি- এ বছরের আমাদের করণীয়

চমৎকার মাস যিলহজ্ব আমাদের দরজায় সমাগত। এটা হাজীদের মাস, হজ্বের মাস এবং হিজরী বছরের সর্বশেষ মাসও বটে। সেইসাথে এটি সেই চার হারাম মাসের অন্তর্ভুক্ত, যে মাস গুলোতে যুদ্ধ করা নিষেধ।

সম্ভবত আপনি যিলহজ্বের প্রথম দশ দিনের তাৎপর্য সম্পর্কে জেনেছেন। তার একটি হলো:

"এই দশ দিনের কৃত আমলের চেয়ে অন্য কোনো দিনের আমলই আল্লাহর নিকট বেশি প্রিয় নয়..."
                                (আল-বুখারী)
 কিন্তু আপনি কি এমন অনুভব করছেন যে, কী করবেন সেটাই জানেন না? হয়তো আপনি আরবীতে কুরআন পড়তে পারেন না কিংবা আল্লাহর রাসূলের (সা) অনেক হাদীসই জানেন না। এখানে কিছু সহজ কিন্তু পুরস্কারে ভারী -  এমন কয়েকটি টিপস দেয়া হলো যার মাধ্যমে আপনি যিলহজ্বের প্রথম দশ দিনের এই বরকতময় সময়কে সর্বোচ্চ কাজে লাগাতে পারবেন।

মানসিক প্রস্তুতিই আসল!
একটি সুন্দর ও ইতিবাচক মানসিকতাই সম্পূর্ণ কাজের অর্ধেক। এই দশ দিনকে নিজের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে দেখুন। চিন্তা করুন, এটি নিজের সমস্ত কালিমা ঝেড়ে ফেলে নিজেকে পরিশুদ্ধ করার একটি সুযোগ। এটা তাদের জন্য দ্বিতীয় সুযোগ, যারা নিজেদের আঙুলের ফাঁক দিয়ে রমাদানকে হারিয়ে ফেলেছে।

এখন, কল্পনা করুন আকাশ থেকে টাকার বৃষ্টি পড়ছে; আপনি দৌড়ে বাইরে গেলেন, নিজের হাত তুললেন এবং যত পারেন টাকা কুড়িয়ে নিলেন। এ সময়ে আপনি একটুও থামেননি, নিজের প্রিয় টিভি প্রোগ্রাম দেখাও শেষ করেননি; তার আগেই আপনি বাইরে বেরিয়ে গিয়েছেন।

এই দিনগুলো সেই চূড়ান্ত জ্যাকপটের মতই, টাকা কিংবা অর্থ এর প্রাপ্তি নয়; বরং অমূল্য সব পুরস্কার কুড়িয়ে নেয়ার এক মহা সুযোগ। আপনার সময়কে সর্বোচ্চ কাজে লাগান। যা করতে পারছেন না তা নিয়ে আফসোস না করে যতটুকু সাধ্যে কুলায়, ততটুকুই করুন।

১. আল্লাহকে ধন্যবাদ দিন
 শুরুটা করুন সর্বশক্তিমান আল্লাহকে ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মাধ্যমে। হৃদয়ের গভীর থেকে উৎসারিত যেকোনো ভাষায় তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। এই বরকতময় সময়ে আপনাকে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ দেয়ায়, ভালো কাজ করার তাওফীক দেয়ায়, আগুন থেকে রক্ষা করার জন্য তাঁর অপরিসীম শুকরিয়া আদায় করুন।

কেন আমরা আল্লাহকে ধন্যবাদ জানাবো?

কেননা তিনি ভীষণ সুন্দর, ভালোবাসা পূর্ণ, শ্রদ্ধাশীল এবং অনুগত চিত্তে প্রকাশিত এই হৃদয়ের আবেগকে ভালোবাসেন। এটাই ইবাদাত।

২. প্রথমেই পরিপূর্ণভাবে ফরজ আদায়ের জন্য তাঁর সাহায্য চান
যেকোনো নফল (অতিরিক্ত) কাজের ব্যাপারে কথা বলার পূর্বে নিজেকে মনে করিয়ে দিন সমস্ত ফরজের প্রতি যত্নশীল থাকতে হবে। সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছেই এ ব্যাপারে চান, যিনি আপনার একমাত্র সাহায্যকারী।

কাজের ধারা:
 - পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়ে মনোযোগী হোন; সঠিক সময়ে সেগুলো আদায় করুন, সাধ্যমতো সালাতে সর্বোচ্চ মনোনিবেশ করুন এবং তা নিখুঁত করার চেষ্টা করুন।

- সর্বোত্তম উপায়ে ফরজ আদায়ের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়ে দু'আ করুন। আল্লাহর রাসূল (সা) প্রতি সালাতের শেষে যেভাবে দু'আ করতেন সেভাবেই দু'আ করুন:

"আল্লাহুম্মা আ'ইন্নি আ'লা যিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনি ইবাদাতিকা।" (হে আল্লাহ! আমাকে তোমার জিকির ও শোকর আদায় করার তাওফিক দাও এবং উত্তমরূপে তোমার ইবাদত করার তাওফিক দান কর।)
                       (আহমাদ, আবু দাউদ, আন-নাসাঈ)

৩. যিকিরে (আল্লাহর স্মরণে) মগ্ন থাকুন
 
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা) বলেছেন:

  "এই দশ দিনের কৃত আমলের চেয়ে অন্য কোনো দিনের আমলই আল্লাহর নিকট বেশি প্রিয় নয়। তাই সবসময় তাহলিল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু), তাকবীর (আল্লাহু আকবার) এবং তাহমীদ (আলহামদুলিল্লাহ) পাঠ কর।"
                             (আহমাদ)
কাজের ধারা:
 - দেয়ালে (কিংবা গাড়ির উইন্ড স্ক্রিনে) একটি নোট রাখুন যাতে সারাক্ষণই তা আপনাকে যিকির করার কথা স্মরণ করিয়ে দেয় (বাড়িতে কিংবা কোথাও যাওয়ার পথে)।

প্রাত্যহিক জীবনে সেই শব্দগুলোর অর্থ অনুভবের চেষ্টা করুন।

 তিনটি মূল পয়েন্ট মাথায় রাখুন:

আল্লাহ সবকিছুর চেয়ে বড় (আল্লাহু আকবার); সমস্ত কিছুতে তাঁকে অগ্রাধিকার দিন।

 আপনার যা আছে তার সবকিছুই আল্লাহ দিয়েছেন (আলহামদুলিল্লাহ); অভিযোগ কম করুন।

 তিনিই একমাত্র রব (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু); যেকোনো সাহায্য কিংবা নির্ভরতায় কেবলমাত্র তাঁর দিকেই ফিরুন।

সমস্ত গৌরব আল্লাহর (সুবহানআল্লাহ); জেনে রাখুন এই দুনিয়া ত্রুটিপূর্ণ এবং আমাদের সত্যিকার সুখ কেবলমাত্র তাঁর সাথেই, জান্নাতে!

টিপস:
 শিশুদেরকেও শিক্ষা দিন এবং বাড়িতে কিংবা গাড়িতে এই তাকবীর অডিওটি প্লে করুন: https://youtu.be/UnmzTfUfVkM এবং প্রশান্তচিত্তে অনুভব করুন আল্লাহ কত মহান, একজন মুসলিম হিসেবে আপনার কতটা আনন্দিত হওয়া উচিত এবং তিনি আপনাকে যা কিছু দিয়েছেন সেসবের জন্য আপনি কতটা কৃতজ্ঞ।

৪. 'শতগুণ' যিকিরের জন্য ছুটুন!
অন্যান্য ভালো কাজ সম্পাদনে ব্যস্ত এই মুহুর্তগুলোতে হযরত মুহাম্মদ (সা) এর সুন্নাহকে পুনরুজ্জীবিত করুন এবং প্রতিদিন শতবার বলুন:
 - সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী, সুবহান্নাহিল আ'যীম
- আস্তাগফিরুল্লাহ ওয়া আ'তুবু ইলাইক

- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আ'লা কুল্লি শায়্যিন ক্বাদীর।

টিপস:
সমগ্র উম্মাহর জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। ইনশাআল্লাহ আল্লাহ আপনাকে প্রত্যেকের পক্ষ থেকে পুরস্কৃত করবেন। বলুন: আল্লাহুম্মাগফিরলিল মু'মিনিনা ওয়াল মু'মিনাত।

অনলাইন নিউজ পোর্টাল

মন্তব্য করুন: