বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, বৈশাখ ১০ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

মুসলিম হলে কি নতুন সংস্কৃতি ধারণ করতে হবে?

 প্রকাশিত: ১০:৩৬, ৭ জুলাই ২০২১

মুসলিম হলে কি নতুন সংস্কৃতি ধারণ করতে হবে?

মহান আল্লাহর রহমতে আমাদের উম্মাহ (কমিউনিটি) সংস্কৃতির বিভিন্ন রূপ ধারণ করে সমগ্র বিশ্বের প্রতটি জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে। 

মধ্যপ্রাচ্যের অনুর্বর মরুভূমি থেকে শুরু করে পাকিস্তানের সুশোভিত প্রাকৃতিক দৃশ্য পর্যন্ত।  আমাদের ধর্ম বিশ্বব্যাপী যে কোনও ধর্মের মাঝে সবচেয়ে বিচিত্র জনসংখ্যার গর্বের দাবীদার।

     যা আল্লাহ নিজেই মহাগ্রন্থ কুরআনে বলেছেন:

  "হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী হতে,পরে তোমাদেরকে বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অপরের সাথে পরিচিত হতে পার।তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তিই আল্লাহর নিকট অধিক মর্যাদাসম্পন্ন, যে অধিক আল্লাহ-ভীরু।আল্লাহ  সবকিছু জানেন, সব কিছুর খবর রাখেন।"

             (সূরা হুজুরাত; আয়াত: ১৩)

  একজন নতুন মুসলিম হিসেবে ইতিমধ্যেই আপনি আপনার ডান, বাম এবং কেন্দ্রে পরিবর্তন এনেছেন। আপনার ইবাদতের পদ্ধতি, খাদ্যাভ্যাস এমনকি ফরজ নামাজের সময়ানুযায়ী আপনার প্রতিদিনের রুটিনও পরিবর্তিত হয়ে গেছে। ইসলামই আপনার জীবনে এ পরিবর্তন ঘটিয়েছে।

   নতুন সংস্কৃতি গ্রহণের মাধ্যমে আরও কিছু কি পরিবর্তন করা প্রয়োজন? উত্তর হচ্ছে- 'না'।

 

আপনার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে আঁকড়ে ধরুন

 আপনি যত বেশি ইসলাম সম্পর্কে জানবেন, তত বেশিই মুসলমানদের বিভিন্ন সংস্কৃতির ব্যাপারে অবগত হবেন। রাসূল (সা) ছিলেন আরব বংশোদ্ভূত; কিন্তু তার মানে এই না যে সব মুসলমানকেই ঐ অঞ্চলের ঐতিহ্য অনুসরণ করতে হবে।

  প্রকৃতপক্ষে, ইসলামের অন্যতম সুন্দর দিক হলো জাতিগত বৈচিত্র্য। এটি অলঙ্কৃত পর্দার মতো যা বিভিন্ন রঙিন সুতা দিয়ে বোনা হয়।

 আপনি আমেরিকান অথবা বাংলাদেশী মুসলিম হোন না কেন, আমাদের উম্মতের রঙিন পর্দায় নিজের সুতা বুননের অধিকার আপনার রয়েছে।

 নিজ দেশের ঐতিহ্য অনুযায়ী কাপড় পরিধানের মাধ্যমে আপনি তা করতে পারেন; তবে অবশ্যই তা শালীন হতে হবে। কিংবা, নিজের ঐতিহ্যের সাথে আপনার মুসলিম পরিচয় সমুন্নত রেখেই আপনি জামা পরতে পারেন। সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য উদযাপনের সময় অবশ্যই আপনাকে ইসলামী আদর্শের মাঝে সমতা বজায় রাখতে হবে।

 

 আপনার নিজস্ব মুসলিম পরিচয় তৈরি করুন

 অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মুসলিম হওয়ার আগে সম্ভবত আপনার অন্তত এক বা দুইজন মুসলিম বন্ধু ছিল। নওমুসলিমদের ক্ষেত্রে এটা খুবই সাধারণ ব্যাপার যে তারা তাদের বন্ধুর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বন্ধুরা তাদের সংস্কৃতি আপনার উপর খাটানোর চেষ্টা করেছে কেননা তারা বিশ্বাস করে এটা আপনার সংস্কৃতির চেয়ে উত্তম।

    এজন্যই একজন নতুন মুসলিমের নিজস্ব সাংস্কৃতিক পরিচয় রক্ষার জন্য সীমানা নির্ধারণ করা প্রয়োজন। সেরা শিষ্টাচারে পরিবেষ্টিত আপনি নিজের সাংস্কৃতিক ভিত্তি নিয়ে খুশি এবং নিজ সংস্কৃতিতে পরিবর্তনযোগ্য এমন কিছুই আপনার চোখে পড়ে না- এভাবেই আপনি নিজের পরিচয়ে দাঁড়াতে পারেন। তবে আপনি যদি অন্য কোনও সংস্কৃতি থেকে নির্দিষ্ট পোশাক বা ঐতিহ্য গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন, তবে আপনি নিজের পছন্দমতো একটি মুসলিম পরিচয় তৈরি করতে পারেন।

  নতুন কিছুর ব্যাপারে সতর্ক থাকা

যখন উম্মতের মাঝে বিভিন্ন সংস্কৃতির প্রশ্ন আসে তখন অবশ্যই একজন নওমুসলিমের মাঝে বিদাত (অথবা নতুন কিছুর উদ্ভাবন) সম্পর্কে জ্ঞান থাকা উচিত, যা হয়তো অনেক সংস্কৃতিতেই বিদ্যমান। রাসূল (সা) বলেছেন:

   "নব উদ্ভাবিত প্রত্যেক বিষয়ই বিদাত বা ভ্রষ্টতা, আর এই ভ্রষ্টতার পরিণাম হচ্ছে জাহান্নাম।"

           (মুসলিম)

 যদি আপনি কোনো অপ্রত্যাশিত বিষয়ের মুখোমুখি হন, তবে সবসময় কুরআন এবং রাসূলের (সা) সুন্নাহর দিকে ফিরুন। এভাবেই আপনি সে ব্যাপারে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা পেয়ে যাবেন৷

 নিজের চেয়ার টেনে নিন!

একটি প্রবাদ রয়েছে: "যদি টেবিলের সামনে তোমার কোনো আসন না থাকে তাহলে তার অর্থ হচ্ছে তুমি খাবার তালিকা কিংবা মেন্যুতে রয়েছ।"

  এবং আপনি দেখতে পাবেন যে কিছু সংস্কৃতি অন্যের তুলনায় আরও স্পষ্ট।

  এটি একটি দুর্ভাগ্যজনক বাস্তবতা যেটি প্রত্যেক নওমুসলিমেরই মনে রাখা; এমনকি জড়িয়ে থাকা উচিত। নিজের চেয়ার টেনে অর্থাৎ নিজের সংস্কৃতিতে আরও জড়িত হয়ে আপনি আপনার সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন।  নিজের মসজিদের কোনো দিক পরিবর্তন করার ক্ষমতাও আপনার রয়েছে।

  নিজের সময়কে প্রতিদিন এমনভাবে কাজে লাগান যাতে মসজিদের নেতৃত্ব আপনাকে চেনাজানার সুযোগ পায়। এমনকি আপনি কোনো কাজের জন্য আবেদনের পাশাপাশি একজন বিশ্বস্ত দলের সদস্য হয়ে থাকতে পারেন যার কথা সবাই শোনে।

   এমনকি যদি আপনি মসজিদে সংখ্যালঘু হন তবে সেখানকার মুসল্লিদের মাঝে সাংস্কৃতিক পরিচয়ের দিক থেকে আপনি অন্য সংস্কৃতিতে অন্তর্ভুক্ত থাকাকালীন ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণের দ্বারা প্রভাব ফেলতে পারেন।

   আল্লাহ রাব্বুল আ'লামীন আপনাকে মুসলিম হিসেবে বেছে নেয়ার জন্য আপনাকে ইসলামের অংশে নিয়ে এসেছিলেন। আপনি যা- আপনার ইসলামিক বিশ্বাস এবং সংস্কৃতি যেভাবে আপনাকে সংজ্ঞায়িত করে - সেটা নিয়েই আপনি গর্ববোধ করুন।

অনলাইন নিউজ পোর্টাল

মন্তব্য করুন: