বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৈশাখ ১১ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

মার্জিত ভাষায় কথা বলার নির্দেশনা

 প্রকাশিত: ১০:৩৫, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২১

মার্জিত ভাষায় কথা বলার নির্দেশনা

ভাষার বিচিত্রতা আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন : পৃথিবীতে যেমন নানা বর্ণের মানুষ আছে, তেমনি নানাবিধ ভাষা আছে। সব ভাষাই মহান আল্লাহর দান। তিনিই মানুষকে কথা বলা শিখিয়েছেন। ভাষা ও বর্ণের ভিন্নতা তাঁর অন্যতম নিদর্শন। আল্লাহ বলেন, ‘আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে আছে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য। এতে জ্ঞানীদের জন্য অবশ্যই অনেক নিদর্শন আছে।’ (সুরা : রুম, আয়াত : ২২)

সঠিক কথা বলা : আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনরা! আল্লাহকে ভয় করো এবং সঠিক কথা বলো।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৭০)

সঠিক কথার ব্যাখ্যা হলো, যে কথা চারটি বৈশিষ্ট্যে সমৃদ্ধ। (ক) বিশুদ্ধ হওয়া। (খ) সত্য হওয়া। (গ) গাম্ভীর্যপূর্ণ হওয়া; বিদ্রুপমূলক না হওয়া। (ঘ) কোমল হওয়া।

স্পষ্ট ভাষায় কথা বলা : স্পষ্ট ও প্রাঞ্জল ভাষায় এমনভাবে কথা বলতে হবে, যেন সবাই তা বুঝতে পারে। মুসা (আ.)-এর মুখে জড়তা থাকায় তিনি আল্লাহর কাছে আবেদন করেছিলেন, ‘আমার ভাই হারুন সে আমার চেয়ে প্রাঞ্জলভাষী; অতএব তাকে আমার সাহায্যকারীরূপে প্রেরণ করো, সে আমাকে সমর্থন করবে। আমি আশঙ্কা করি তারা আমাকে মিথ্যাবাদী বলবে।’ (সুরা : কাসাস, আয়াত : ৩৪)

স্পষ্ট ও প্রাঞ্জল ভাষা সবার জন্যই কাম্য বিষয়। প্রয়োজনে কোনো কথা তিনবার বলতে হবে, যেন সবাই তা বুঝতে পারে। কোরআন মজিদে অনেক কথা তিনবার করে বলা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘মহাপ্রলয়, মহাপ্রলয় কী? মহাপ্রলয় সম্পর্কে তুমি কী জান?’ (সুরা : আল-কারিয়া, আয়াত : ১-৩)

এ ছাড়া নবী (সা.) অনেক কথা তিনবার করে বলতেন। আনাস (রা.) হতে বর্ণিত, নবী (সা.) যখন কোনো কথা বলতেন তা তিনবার বলতেন, যেন তা বোঝা যায়। (বুখারি, হাদিস : ৯৫)

শালীন ভাষায় কথা বলা : সর্বদা শালীন ভাষায় কথা বলা উচিত। কাউকে ভর্ৎসনা, গালমন্দ ও অভিসম্পাতমূলক, অশ্লীল ও অশালীন কথা ঈমানদারের জন্য শোভনীয় নয়। আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, মুমিন ব্যক্তি কারো প্রতি ভর্ৎসনা ও অভিসম্পাত করে না এবং অশ্লীল ও অশালীন কথা বলে না। (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৭৭)

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, কোনো মুসলমানকে গালি দেওয়া পাপ আর তার সঙ্গে লড়াই করা কুফরি। (বুখারি, হাদিস : ৪৮; মুসলিম, হাদিস : ২৩০)

অনর্থক কথন থেকে বেঁচে থাকা : যেসব কথার দ্বারা ইহকালীন ও পরকালীন কোনো উপকার নেই, ঈমানদার ব্যক্তির এসব কথা থেকে বেঁচে থাকা খুবই দরকার। আল্লাহ তাআলা অনর্থক কথন থেকে বেঁচে থাকাকে মুমিন ব্যক্তির অন্যতম নিদর্শন হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘অবশ্যই সফলকাম হয়েছে মুমিনরা, যারা বিনয়-নম্র নিজেদের নামাজে, আর যারা অনর্থক কথন থেকে বেঁচে থাকে।’ (সুরা : আল-মুমিনুন, আয়াত : ১-৩)

হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলেন, ‘মানুষের ইসলামের সৌন্দর্য হলো সে অহেতুক কথা ও কাজ পরিহার করে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৩১৮)

ব্যঙ্গাত্মকভাবে কথা না বলা : কাউকে বিদ্রুপ, দোষারোপ, অবমাননাকর ও মন্দ নামে ডাকা কোনো ঈমানদারের ভাষা হতে পারে না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ কোরো না এবং তোমরা একে অন্যকে মন্দ নামে ডেকো না...।’ (সুরা : হুজরাত, আয়াত : ১১)

ঝগড়া ও দ্বন্দ্বমূলক ভাষা এড়িয়ে চলা : আল্লাহ তাআলা তাঁর একনিষ্ঠ বান্দার পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘রহমান-এর বান্দা তারাই যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং যখন অজ্ঞ লোকেরা তাদের সম্বোধন করে তখন তারা বলে সালাম।’ (সুরা : ফোরকান, আয়াত : ৬৩) অর্থাৎ তারা শান্তি কামনা করে এবং তর্কে জড়ায় না।

পরিশেষে বলা যায়, ভাষার ব্যবহার ও প্রয়োগে সংযত হতে হবে। বিশুদ্ধ, স্পষ্ট ও শালীন ভাষায় কথা বলতে হবে। অশ্লীল, অনর্থক, ব্যঙ্গাত্মক, ঝগড়া ও দ্বন্দ্বমূলক ভাষা পরিহার করতে হবে। সর্বোপরি বলার ক্ষেত্রেও মহান আল্লাহর কাছে জবাবদিহির বিষয়টি স্মরণ রাখতে হবে। ভাষার এই মাসে এমন সচেতনতা একান্ত কাম্য। মহান আল্লাহ সবাইকে তাওফিক দান করুন।

অনলাইন নিউজ পোর্টাল

মন্তব্য করুন: