শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, বৈশাখ ৭ ১৪৩১, ১১ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

মানব সভ্যতায় মুসলিম মনীষীদের অবদান

 প্রকাশিত: ০৮:৪১, ৩০ আগস্ট ২০২১

মানব সভ্যতায় মুসলিম মনীষীদের অবদান

পাশ্চাত্য জগৎ আজ বিজ্ঞানকে উন্নতির যে চরম শিখরে পৌছিয়েছে, তার ভিত্তিই হলো মধ্যযুগীয় মুসলিম বিজ্ঞানীদের আত্মত্যাগ ও পরিশ্রম । বিজ্ঞানের এই ক্রমবিকাশে পাশ্চাত্য জগৎ তাই বহুলাংশে মধ্যযুগীয় মুসলিম বিজ্ঞানীদের কাছে ঋণী। এটা কেবল মুসলমানদের বক্তব্য নয়, পাশ্চাত্য জগৎও এটি স্বীকার করে মুক্ত কন্ঠেই। 

উইল ডুরান্ট তার বিখ্যাত গ্রন্হ "দা ষ্টোরি অব সিভিলাইজেশন" এর ৪র্থ খন্ডে অনিবার্যভাবেই মুসলিম বিজ্ঞানী, দার্শনিক এবং চিকিৎসকদের বিস্তৃত বর্ণনা দিয়েছেন । ডুরান্টের মতে

'ইবনে সিনা ছিলেন ওষুধ বিষয়ক মহত্তম লেখক, আল-রাজী ছিলেন মহত্তম চিকিৎসক, আল-বেরুণী মহত্তম ভূতত্ত্ববিদ, আল-হায়তাম ছিলেন মহত্তম চক্ষু বিশেষজ্ঞ এবং জাবির ছিলেন মধ্যযুগের সম্ভবত সেরা রসায়নবিদ ।"

মুসলিম জাতি যখন জীবনের সার্বিক ক্ষেত্রে উন্নতির চরম শিখরে পৌছে, তখন তারা ক্লান্ত হয়ে ভোগ বিলাসে মত্ত হয়ে পড়ে । ভাটা পড়তে থাকে তাদের সৃজনশীল কর্মতৎপরতায় । অন্যদিকে পাশ্চাত্য জগত মুসলিম বিজ্ঞানীদের লব্ধ জ্ঞানের পরিচর্যা করে ধাপে ধাপে উন্নতির চরম  সোপানের দিকে এগুতে থাকে । নৈতিক অধঃপতনের জন্য মুসলিম জাতি ক্রমে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাও হারাতে থাকে । ফলে জ্ঞান চর্চার প্রদীপও ম্লান হয়ে আসতে থাকে । ইউরোপীয়রা মুসিলম দেশগুলো একে একে গ্রাস করে তাদের কৃষ্টির প্রসার ঘটাতে থাকে । এমন  সময়ে সমর্থনের পরিবর্তে মুসলিম বিজ্ঞানীদের উপর নেমে আসে চরম বাধা-বিপত্তি । তাই ক্রমেই তাদের কর্মতৎপরতা বন্ধ হয়ে যেতে থাকে এবং তারা হারিয়ে যেতে থাকেন বিজ্ঞানের জগৎ থেকে । মুসলিম বিজ্ঞানীদের অসমাপ্ত কাজকে এগিয়ে নিয়ে পাশ্চাত্যের বিজ্ঞানীরা আজ বিজ্ঞানের কর্ণধার সেজেছে । তবু অকপটে তাদেরকেও স্বীকার করতেই হবে সেই সব মধ্যযুগীয় মুসলিম বিজ্ঞানীদের কথা, যারা বিজ্ঞানের এই উন্নতির জন্য চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তাদেরই কয়েকজনের কথা উল্লেখ করছি।  

১. ইবনে খালদুনঃ 
পাশ্চাত্য পন্ডিতরা যাকে প্রাচীন ঐতিহাসিকদের মধ্যে শীর্ষস্হানীয় মনে করে থাকেন, তিনি হলেন ইবনে খালদুন। "আল ইবার ওয়া দিওয়ান আল মোবতাদা ওয়াল খবর" ( The Moral and the Book of the Subject and Object ) গ্রন্হে তিনি জাতি সমূহের বিবর্তন  এবং গঠন সম্পর্কে ঐতিহাসিক সূত্রের উ্দ্ভাবন করেন । এজন্য তাকে সমাজ বিজ্ঞানের জনক বলা হয়। 

২. ইবনে রুশদঃ
ইনি হচ্ছেন সেই দার্শনিক যিনি মৃত্যুশয্যায় শুয়ে বিখ্যাত উক্তিটি করেছিলেন,

"কেবল দর্শনের মৃত্যুই আমার আত্নার মৃত্যু ঘটাতে পারে ।" 

মুসলিম দার্শনিকদের মধ্যে ইউরোপে তার বিশেষ আধিপত্য ছিল। তিনি এরিষ্টটলের দর্শনের সবচেয়ে বড় অনুবাদক ও ব্যাখ্যাকার । ইবনে রুশদই সর্বপ্রথম মুক্ত চিন্তার উদ্ভাবক। 

৩. ইবনে সিনাঃ
তিনি চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব । তিনি ১৬ বছর বয়সেই স্বীয় প্রতিভার পরিচয় দেন । তার লিখা "আল কানুন  ফিল তিব" গ্রন্হ খানা উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ পর্যন্ত ইউরোপীয় চিকিৎসকদের অন্যতম প্রধান পাঠ্য পুস্তক ছিলো। মনস্তত্ত্ব সম্পর্কিত ধারণা তিনিই প্রথম উদ্ভাবন করেন। তিনি বিভিন্ন প্রকার রোগ এবং ৭৬০ প্রকার প্রতিকার পদ্ধতি আবিষ্কার করেন । তিনি যক্ষ্মা, মস্তিস্কবিল্লির প্রদাহ  ও অনুরূপ আরো কয়েকটি সংক্রামক রোগের চিকিৎসা উদ্ভাবন করেন । ১০৩৬ খ্রিষ্টাব্দে এই মহান চিকিৎসকের জীবন অবসান হয়।    

৪. আল-বেরুনীঃ 
গণিত, ভূগোল, ইতিহাস, জোর্তিবিদ্যা এবং ভেষজ শাস্ত্রের উপর ১০০টিরও অধিক গ্রন্হ প্রণেতা আল-বেরুণী কেবল মাত্র ভারত বর্ষের উপর "কিতাবুল হিন্দ" নামক যে অমর গ্রন্হ রচনা করেন তা সভ্যতার ইতিহাসে এক অমূল্য সংযোজন। বৃত্তের ব্যাসার্ধ নির্ণয়ের জন্য তিনি যে পন্হা উদ্ভাবন করেন তা "বেরুনী পদ্ধতি" নামে খ্যাত। তিনি Sine এবং Tangent এর ছক তৈরী করেন । তরল পদার্থের চাপের প্রকৃতি নির্ণয় সম্পর্কেও তিনি ধারণা দেন। তিনি সমুদ্রের পানি থেকে লবণ উদ্ভাবনের প্রক্রিয়া আবিষ্কার করেন।  

৫. আল-খাওয়ারিজমীঃ
অংক শাস্ত্র ও জোতিষ শাস্ত্রের অগাধ পান্ডিত্যের জন্য খলিফা মামুন তাকে বায়তুল হিকমার  প্রধান নিযুক্ত করেন । তিনি লগারিদমের প্রকৃত উদ্ভাবক। গণিত শাস্ত্রের উপর লেখা তার অনেক বই লেটিন ও ইংরেজী ভাষার অনূদিত হয়ে ইউরোপে বিশেষভাবে সমাদৃত  হয়। 

অনলাইন নিউজ পোর্টাল

মন্তব্য করুন: