শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, চৈত্র ১৫ ১৪৩০, ১৯ রমজান ১৪৪৫

ইসলাম

সফলতা আপনাকে হাতছানি দিয়ে ডাকবে

 প্রকাশিত: ০৮:৪৪, ২৫ জুন ২০২১

সফলতা আপনাকে হাতছানি দিয়ে ডাকবে

অনেক বিজ্ঞ লোক তো সময়েরও বাজেট বানানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন, সময়ের সদ্ব্যবহারের এটিও একটি পদ্ধতি যে, আপনি প্রতিটি কাজের জন্য সময়ের ডেডলাইন নির্ধারণ করবেন, আপনার নিজেকেই নির্ধারণ করতে হবে-অমুক সময়ের মধ্যে আমি এই কাজটি শেষ করব। টাইম ম্যানেজমেন্ট একটি স্বতন্ত্র বিদ্যা যা শিখে বেশির থেকে বেশি কাজ করার যোগ্যতা অর্জিত হয়।

মন থেকে ভীতি দূর করুন : কোনো কিছু করতে গিয়ে অমূলক ভয়ে তাড়িত হবেন না। মুমিন কখনো ভয় পায় না। মুমিন কখনো দুর্বল চিত্ত হয় না। ভয় জয় করাই মুমিনের বৈশিষ্ট্য। তার আর ভয় কিসের যার সব ভরসা একমাত্র আল্লাহ সর্বশক্তিমানের ওপর! যে বিশ্বাস করে ভালো বা মন্দের কিছুই হয় না আল্লাহর নির্দেশ ছাড়া। আবূ হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

« الْمُؤْمِنُ الْقَوِىُّ خَيْرٌ وَأَحَبُّ إِلَى اللَّهِ مِنَ الْمُؤْمِنِ الضَّعِيفِ وَفِى كُلٍّ خَيْرٌ احْرِصْ عَلَى مَا يَنْفَعُكَ وَاسْتَعِنْ بِاللَّهِ وَلاَ تَعْجِزْ وَإِنْ أَصَابَكَ شَىْءٌ فَلاَ تَقُلْ لَوْ أَنِّى فَعَلْتُ كَانَ كَذَا وَكَذَا. وَلَكِنْ قُلْ قَدَرُ اللَّهِ وَمَا شَاءَ فَعَلَ فَإِنَّ لَوْ تَفْتَحُ عَمَلَ الشَّيْطَانِ »

‘দুর্বল মুমিনের চেয়ে শক্তিশালী মুমিন আল্লাহর কাছে উত্তম ও বেশি প্রিয়। তবে উভয়ের মধ্যেই কল্যাণ আছে। তোমার জন্য যা উপকারী তার প্রতি আগ্রহ রাখো এবং আল্লাহর সাহায্যকে যথেষ্ট মনে কর। নিজেকে অক্ষম মনে করবে না। যদি তোমার কোনো বিপদ-আপদ আসে তাহলে এমন বলবে না যে, যদি আমি এ রকম করতাম তাহলে এরকম হত। বরং এ কথা বলবে যে, আল্লাহ তাকদীরে এটা রেখেছেন এবং তিনি যা চান তাই করেন। কেননা ‘যদি’ কথাটি শয়তানের কাজের দরজা খুলে দেয়।’ [মুসলিম : ৬৯৪৫]

অভিজ্ঞ এক মনোবিজ্ঞানী এবং লেখক বলেন, আমাদের সফলতার পথে প্রধান অন্তরায় হলো ভয়। ভয় নিজেকে নিজের দৃষ্টিতে ছোট করে দেয়। ফলে আমরা নিজেরা নিজেকে অন্যের চেয়ে তুচ্ছ ভাবি যা সফলতার পথে নানান অমূলক ও ভিত্তিহীন অন্তরায় খাড়া করে দেয়। ভয় আমাদেরকে যে কোনো পদক্ষেপ নিতে বাধা দেয়। কর্মস্পৃহা ছিনিয়ে নেয় এবং আমাদের ভেতর সৃষ্টি করে যোগ্যতা ও মেধার প্রধান শত্রু হীনম্মন্যতা। সবেগে বহমান সমুদ্রে যেমন প্রাণের অস্তিত্ব দেখা যায় তেমনি স্পন্দনহীন জড় বস্তুতে জীবনের অনুপস্থিতিও চোখে পড়ে। আত্ববিশ্বাসে বলীয়ান সপ্রাণ ব্যক্তি নিথর নিস্পন্দ দেহে বসে থাকে। অতএব যে কোনো নতুন কাজ করতে গিয়ে নিজের ওপর পূর্ণ আস্থা ও অবিচল বিশ্বাস রাখতে হবে।

আপন কর্মস্থলে কর্মকর্তা ও সহকর্মীদের ওপরও আস্থা রাখতে হবে, কেউ আপনাকে ভুল বুঝলে বসে থাকবেন না। ভুল বুঝাবুঝির অবসান ঘটান। মনে অগ্রিম কোনো কথা নিয়ে বসে থাকবেন না। একথা বললে আপনাকে ও কথা বলা হবে ইত্যাদি ভাববেন না। আপনার অবস্থান যদি সঠিক হয় তবে যে প্রশ্নের মুখেই পড়েন না কেন আপনি এর সদুত্তর নিতে পারবেন। যদি মনে করেন, আপনার সেকশনে কোনো উন্নতি হচ্ছে না অথবা মনে হচ্ছে অমুক ক্ষেত্রে আপনার সাথে বাড়াবাড়ি করা হচ্ছে, তাহলে অচিরেই এ নিয়ে কথা বলুন। একেবারে সাফল্য এনে দিতে না পারলেও খোলামেলা কথা বলার ফল এর চেয়ে ভালো হবে।

আপনার কাজের মান বাড়ান : আপনি যে কাজই করেন না কেন তা আরো ভালো করার অবকাশ রাখে। তাই সর্বদা আপনি যত ভালো পাফরমেন্স করবেন।, যত উত্তম ও মানসম্পন্ন কাজ দেখাবেন, আপনার মূল্য ও সম্মান তত বৃদ্ধি পাবে। মানসম্পন্ন কাজের ফল পেতে সময়ও লাগে কম। শুধু ৩০ দিনের মধ্যে প্রত্যেক দিন মাত্র ত্রিশ মিনিট কাজ করে একজন সাধারণ মানুষ যে টাইপিং শিখছে, আপনি টাইপিংয়ের গতি দ্বিগুণ বাড়াতে পারেন। মনে রাখবেন, ধারাবাহিকতা ও অবিচলতা সব সময় সাফল্য বয়ে আনে। কোনো কাজে যদি জমে থাকতে পারেন তাহলে অবশ্যই আপনি সফলকাম হবেন। মূল্যায়ন পর্যালোচনার অভ্যাস গড়ে তুলুন। আমরা যে বৈজ্ঞানিক উৎকর্ষের যুগে বাস করছি সেখানে প্রতিদিন প্রতিক্ষণ পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে। মানুষ পরিচিত হচ্ছে নিত্যনতুন প্রযুক্তির সাথে। আপনি যে অঙ্গনে কাজ করছেন- দ্রুত পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগছে সেখানেও। এ ক্ষেত্রে আপনি যদি উদাসীনতা দেখান তাহলে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বেন। তাই উচিত হলো বছরে অন্তত একবার হলেও নিজেকে মূল্যায়ন করুন, নিজেই নিজেকে মাপুন। এবং নিজের কাজের হিসাব নিন, নিজের দুর্বলতা ও সফলতার খতিয়ান নিন। ইসলামের দ্বিতীয় খলীফা উমর ইবন খাত্তাব রাদিআল্লাহ আনহু তাঁর খিলাফতের প্রথম খুতবায় বলেন,

حاسِبُوا أَنْفُسَكُمْ قَبْلَ أَنْ تُحَاسَبُوا وَزِنُوا أَنْفُسَكُمْ قَبْل أَنْ تُوزَنُوا ، وَتَزَيَّنُوا لِلْعَرْضِ الأَكْبَرِ ، يَوْمَ تُعْرَضُونَ لاَ تَخْفَى مِنْكُمْ خَافِيَةٌ

‘তোমাদের কাছে হিসাব চাওয়ার পূর্বে নিজেরাই নিজেদের হিসাব করে নাও, তোমাদের আমল ওজন করার পূর্বে নিজেরাই নিজেদের আমলসমূহ ওজন করে নাও, কিয়ামত দিবসে পেশ হওয়ার জন্য নিজেদেরকে প্রস্তত কর, সুসজ্জিত হও, যেদিন তোমার কাছে কোনো কিছু অস্পষ্ট থাকবে না।’ [ইবন আবী শাইবা, মুসান্নাফ : ৩৫৬০০]

কমপক্ষে একবার বিগত বছরের পারফরমেন্স মূল্যায়ন ও পর্যালোচনা করুন। ভেবে দেখুন, যা করেছেন বা করছেন তা এখানে অব্যাহত রাখবেন কি-না, এতে কোনো পরিবর্তন আনা দরকার কি-না। এভাবে গত বছরের কাজের সাফল্য-ব্যার্থতা পর্যালোচনা করে সামনের পথ নির্ধারণ করুন আর ভেবে চিন্তে কাজ করুন। কারণ, শাদ্দাদ বিন আউস রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«الْكَيِّسُ : مَنْ دَانَ نَفْسَهُ وَعَمِلَ لِمَا بَعْدَ الْمَوْتِ، وَالْعَاجِزُ: مَنِ اتْبَعَ نَفْسَهُ هَوَاهَا، وَتَمَنَّى عَلَى اللهِ»

‘যে ব্যক্তি নফসকে কন্ট্রোল করে মৃত্যু পরবর্তী জীবনের জন্য আমল করে সে-ই প্রকৃত বুদ্ধিমান। আর যে ব্যক্তি নিজের নফসের অনুসরণ করে ও আল্লাহর উপর আকাঙ্খা পোষণ করে সে-ই অক্ষম।’ [তিরমিযী : ২৬৪৬; মুসনাদ আহমদ : ১৭১২৩]

যথাসময়ে নিজের কাজ করুন : আপনি যদি চ্যালেঞ্জে জিততে চান এবং জীবনের কুরুক্ষেত্রে সদা বিজয়ী থাকতে আগ্রহী হন তাহলে আপনাকে প্রতিটি কাজ সঠিক সময়ে আঞ্জাম দেয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। বর্তমান যুগের চ্যালেঞ্জে বিজয়ী হতে হলে অতি জরুরী হলো আপনার চলার গতি এতটা দ্রুত হতে হবে যে, নির্ধারিত ডেড লাইনের মধ্যেই কাঙ্ক্ষিত যেন লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেন। অতি দ্রুত যিনি কাজ করতে পারেন তাকে যে লোক কাজে অলসতায় অধিকতর যোগ্য বিবেচনা করা হবে।

বর্তমান কালে সবাই দ্রুত গতিতে কাজ চায়। এখন মানুষের হাতে সময় খুব কম। কারও এখন লাইনে দাঁড়ানোর, অপেক্ষার প্রহর গুণবার ধৈর্য নেই। এমন কি ইন্টারনেটের গতি কমে গেলেও মানুষ বিরক্ত বোধ করে। আপনি যত দ্রুততার সাথে কাজ করবেন ততই শিখবেন, ততই অভিজ্ঞ হবেন এবং সে অনুযায়ীই বেতন পাবেন। কতই না ভালো হয় যদি এমন হয়- আপনার বন্ধু-বান্ধব ও পরিচিত জনের যখনই কোনো কাজ দ্রুততা ও দক্ষতার সাথে করার দরকার পড়ে আপনাকেই তারা স্মরণ করে।

আপনাকে সে পর্যায়ে পৌঁছাতে হলে আরো প্রয়োজন (যদি আপনার অধিকাংশ কাজ কস্পিউটারে হয়ে থাকে) সে কাজের প্রচলিত বিষয়াদী সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান রাখা। নতুন কোনো প্রোগ্রাম বা ভিশন বাজারে এলে তা নিজের কম্পিউটারে ডাউনলোড করার ক্ষমতা অর্জন করা। মেধাগত যোগ্যতা কীভাবে বাড়ানো যায় তার ফিকির রাখতে হবে সব সময়। যে কোনো কাজ যথাসময়ে দ্রুততার সাথে সম্পাদন করার জন্য নিত্যনতুন প্রযুক্তির সাথে পরিচিত হওয়া এখন এক বুনিয়াদী বিষয়ে পরিণত হয়েছে।

অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কাজ করুন : আপনাকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কাজ বাছাই করতে হবে। কিছু কাজ এমন থাকে যা এখনি করা জরুরী নয়, যখন কোনো কাজ থাকবে না তখন করলেও চলবে। সুতরাং এ কাজ পরেই করুন। আপনার জানা থাকতে হবে কোন্ কাজের উপযুক্ত সময় কোনটি। অনেক কাজের বোঝায় যখন চাপে পড়ছেন তখন মনে মনে একথা আওড়ান- আপনি যে কাজ করছেন তাই আপনার সাধ্যের মধ্যে। সাধ্যাতীত কাজে নাক গলানোর প্রয়োজন নেই। কাজের জন্য যদি আজকের দিন পছন্দ না হয় তাহলে জেনে রাখুন আগামীকাল আজকের চেয়ে ভিন্ন নয়। আগামীকালকে কর্মমুখর করার জন্য আজকের মূল্যায়নের বিকল্প নেই। কিছু লোক আগামীর স্বপ্নে বিভোর থাকে অথচ সত্য হলো আগামীকে সুন্দর করতে হলে আজকের সদ্ব্যবহার জরুরী। সফলতা এমনি এমনি ধরা দেয় না, সফলতার পথে এগিয়ে যেতে হয়। কষ্ট করে সফলতা অর্জন করতে হয়। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন,

(إِنَّ ٱللَّهَ لَا يُغَيِّرُ مَا بِقَوۡمٍ حَتَّىٰ يُغَيِّرُواْ مَا بِأَنفُسِهِمۡۗ)

‘নিশ্চয় আল্লাহ কোন কওমের অবস্থা ততক্ষণ পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে।’ {সূরা রা‘দ, আয়াত : ১১} অন্য এক আয়াতে আল্লাহ বলেন,

(ذَٰلِكَ بِأَنَّ ٱللَّهَ لَمۡ يَكُ مُغَيِّرٗا نِّعۡمَةً أَنۡعَمَهَا عَلَىٰ قَوۡمٍ حَتَّىٰ يُغَيِّرُواْ مَا بِأَنفُسِهِمۡ وَأَنَّ ٱللَّهَ سَمِيعٌ عَلِيمٞ)

‘তা এ জন্য যে, আল্লাহ কোন নিয়ামতের পরিবর্তনকারী নন, যা তিনি কোন কওমকে দিয়েছেন, যতক্ষণ না তারা পরিবর্তন করে তাদের নিজদের মধ্যে যা আছে। আর নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’ {সূরা আল-আনফাল, আয়াত : ৫৩}

দৈনন্দিন কাজে ভারসাম্য রক্ষা করুন : আমরা আয় রোজগার কেন করি? কারণ আমরা নিজের ব্যক্তি জীবন, আপন স্বাস্থ্য ও পরিবার থেকে বেশির চেয়ে বেশি আনন্দ পেতে চাই। পর্যাপ্ত পরিমাণে অর্থ উপার্জন করে আপন জীবনসঙ্গী ও সন্তানাদি নিয়ে তৃপ্তি ও প্রশান্তিময় জীবন কাটাতে চাই। আমরা নিজের মেধা ও আত্মার ক্রমোন্নতি চাই। তাই বলে ক্যারিয়ার গঠন করতে গিয়ে পরিবার-পরিজনকে ভুলে গেলে চলবে না। ক্যারিয়ারের যেয়ে জীবনের মূল্য বেশি। আপনি হয়তো খেয়াল করেন নি আপনি আসার আগে থেকে আপনার সন্তানটি শুধু আপনার সান্নিধ্যের প্রতীক্ষায় থাকে। আপনার পেশাগত দায়-দায়িত্বের চেয়ে সম্পর্ক ও আত্মীয় পরিজনের গুরুত্ব কম নয়। সম্পর্ক ও আত্মীয়তাই সব। তাদের সুখের মাঝেই আপনি সুখ খোঁজেন। মাঝেমাঝে তাদের খোঁজ-খবর নিন। আত্মীয়তার বন্ধনই যদি না থাকে তবে ক্যারিয়ার দিয়ে কী হবে? আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষা করা যে জরুরী, আত্মীয়তা-সম্পর্ক ছিন্ন করা যে হারাম আর আত্মীয়দের ভালো-মন্দের খোঁজ-খবর রাখা, বিপদাপদে তাদের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের সার্বিক কল্যাণ কামনা করার ফযীলত সম্পর্কে কুরআনে কারিমে এবং হাদীসে অনেক বাণী উল্লিখিত হয়েছে। আল্লাহ যে সম্পর্ক অটুট রাখার নির্দেশ দিয়েছেন, যারা তা অটুট রাখে তাদের প্রশংসায় তিনি ইরশাদ করেন,

(وَٱلَّذِينَ يَصِلُونَ مَآ أَمَرَ ٱللَّهُ بِهِۦٓ أَن يُوصَلَ وَيَخۡشَوۡنَ رَبَّهُمۡ وَيَخَافُونَ سُوٓءَ ٱلۡحِسَابِ)

‘আর আল্লাহ যে সম্পর্ক অটুট রাখার নির্দেশ দিয়েছেন, যারা তা অটুট রাখে এবং তাদের রবকে ভয় করে, আর মন্দ হিসাবের আশঙ্কা করে।’ {সূরা আর-রা‘দ, আয়াত : ২১}

পক্ষান্তরে যারা এ সম্পর্ক অটুট রাখে না তীব্র ভাষায় তাদের ভৎর্সনা করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(وَٱلَّذِينَ يَنقُضُونَ عَهۡدَ ٱللَّهِ مِنۢ بَعۡدِ مِيثَٰقِهِۦ وَيَقۡطَعُونَ مَآ أَمَرَ ٱللَّهُ بِهِۦٓ أَن يُوصَلَ وَيُفۡسِدُونَ فِي ٱلۡأَرۡضِ أُوْلَٰٓئِكَ لَهُمُ ٱللَّعۡنَةُ وَلَهُمۡ سُوٓءُ ٱلدَّارِ)

‘আর যারা আল্লাহর সাথে দৃঢ়ভাবে অঙ্গীকার করার পর তা ভঙ্গ করে এবং আল্লাহ যে সম্পর্ক অটুট রাখার নির্দেশ দিয়েছেন তা ছিন্ন করে এবং যমীনে ফাসাদ সৃষ্টি করে, তাদের জন্যই লা‘নত আর তাদের জন্যই রয়েছ আখিরাতের মন্দ আবাস।’ {সূরা আর-রা‘দ, আয়াত : ২৫}

হাদীসে এসেছে আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষার দ্বারা মানুষের হায়াত লম্বা হয় এবং ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পায়। আনাস বিন মালেক রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি বলতে শুনেছি, তিনি বলেন,

«مَنْ سَرَّهُ أَنْ يُبْسَطَ لَهُ فِي رِزْقِهِ أَوْ يُنْسَأَ لَهُ فِي أَثَرِهِ فَلْيَصِلْ رَحِمَهُ»

‘যে ব্যক্তি কামনা করে তার রিযক প্রশস্ত হোক এবং তার আয়ু দীর্ঘ হোক সে যেন আত্মীয়তা-সম্পর্ক বজায় রাখে।’ [বুখারী : ৫৯৮৫; মুসলিম : ৪৬৩৯]

এমন লোকের সংখ্যা কম নয় যাদের বক্তব্য হলো, আমাদের শতকরা ৭০ ভাগ সাফল্য পারিবারিক বন্ধন ও আত্মীয়তার সম্পর্কের ওপর নির্ভরশীল। এ ক্ষেত্রে পেশা ও কাজের ভূমিকা মাত্র ত্রিশ ভাগ বা তার চেয়ে কম। তাই আমাদের চেষ্টা হওয়া উচিত ভারসাম্যপূর্ণ জীবন গড়ার। নিজের সন্তান ও পরিবারের জন্যও অতটুকু সময় দেয়া দরকার যতটুকু সময় বরাদ্দ থাকে সফল ক্যারিয়ার গড়ার জন্য। চেষ্টা করবেন প্রতিটি সন্ধ্যা পরিবারের সাথে কাটাতে।

সুন্দর পারিকল্পনা অধিক সাফল্য : যে যত সুন্দর পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারবে তার উদ্ভাবনী যোগ্যতা তত বেশি বৃদ্ধি পাবে। বাড়বে সাফল্যের সম্ভাবনাও। উত্তম হলো আপনি নিজের পরিকল্পনাগুলো একাটি কাগজে লিপিবদ্ধ করবেন। পরিকল্পনা মাফিক কাজ করার জন্য কোন কোন জিনিসের প্রয়োজন পড়বে তাও চিন্হিত করুন। কোত্থেকে কোত্থেকে সহযোগিতা অথবা পরামর্শ পেতে পারেন, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করা দরকার। বাস্তবতার নিরিখে সব ভেবে দেখুন। তারপর সেই ধারাবাহিকতায় পর্যায়ক্রমে কাজ করে যান। দুরদর্শিতার সাথে উত্তম পরিকল্পনা প্রণয়ন আপনাকে অন্যের চেয়ে এগিয়ে রাখবে। সফল পদে বসা লোকের সাফল্যের পেছনে উত্তম পরিকল্পনা এবং সুন্দর কর্মকৌশলের অবদান সর্বজন বিদিত। আপনি কিছু লোকের মেধাগত যোগ্যতা ও সামর্থ্য সম্পর্কে জানেন। হতে পারে আপনি তাদের যোগ্যতার খুব একটা স্বীকৃতিও দেন না। এও সম্ভব, আপনি নিজেকে তাদের চেয়ে ওই পদের জন্য অধিক যোগ্য মনে করেন। আর বাস্তবটাও তেমনি। কিন্তু তারপরও আপনাকে তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করতে হয়। আপনার সৃজনশীল প্রতিভা তাদের চেয়ে অনেক ভাল। এতসত্ত্বেও যদি সুস্থির মস্তিষ্কে ভেবে দেখেন তাহলে নির্ঘাত জানতে পারবেন- তাদের এই সাফল্যের পেছনে ওই সুন্দর পরিকল্পনার হাত রয়েছে।

আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সকলকে প্রতিটি কাজ উত্তমরূপে, উত্তম পদ্ধতিতে, যথাসময়ে সম্পন্ন করার তাওফীক দিন। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদেরকে সাফল্য দান করুন এবং প্রতিটি কাজ তাঁর সন্তুষ্টির পথে পরিচালিত করার মাধ্যমে দুনিয়া ও আখিরাতের সার্বিক কল্যাণে ভূষিত করুন। আমীন।

সম্পাদনাঃ ড. মোহাম্মদ মানজুরে এলাহী।

লেখকঃ আলী হাসান তৈয়ব।

অনলাইন নিউজ পোর্টাল

মন্তব্য করুন: