শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, বৈশাখ ৬ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

সাহিত্য

ব্যক্তিগত খেরো খাতা

 প্রকাশিত: ২১:৩৪, ৯ অক্টোবর ২০২০

ব্যক্তিগত খেরো খাতা

হাতে যখন সময়ের অভাব দেখা দেয় তখনই অনুভূত হয়, জীবনের একটা দীর্ঘ দরকারি সময় কেটে গেছে অদরকারি কাজে। সকাল সকাল সময়ের হিসেব করলাম। সারাদিন দরস আর দরসের প্রয়োজনে অনিবার্য অধ্যয়নের পর লেখালেখির জন্য হাতে যা সময় থাকছে সাকুল্যে তার পরিমাণ দুই ঘণ্টা পঁয়তাল্লিশ মিনিট। সেটাও মিলবে দিনের বেলা ঘুম বিসর্জন দেওয়ার বিনিময়ে। ডাক্তারের কথা মনে পড়ে। ডাক্তার বলেছিলেন, ঘুমাতে হবে আট ঘণ্টা; কম সে কম। আট ঘণ্টা নিদ্রাবানিজ্যে বিনিয়োগ করলে হাতে সময় থাকে মোটে ত্রিশ মিনিট। ত্রিশ মিনিটে দিনলিপি লিখে শেষ করাও প্রায় অসম্ভব। অথচ মাথায় চেপে বসা কাজ শেষ করতে রোজ ন্যুনতম সাত ঘণ্টা চাই আমার। অনেককে রুষ্ট করেছি ইতোমধ্যে। সাতটা ঘণ্টার বন্দোবস্ত না হলে আরও অনেকের কাছে কৈফিয়ত দেওয়ার মত মুখ থাকবে না আমার।

 

সুফিগণ সময়কে বলেছেন ধারালো তরবারি। যদি না ভাঙো তুমি সেই তরবারি, তোমাকে কেটে টুকরো টুকরো করবে সে। কিন্তু সময় ভাঙা তো চাট্টিখানি কথা নয়। চোখ বন্ধ করে কিছু মানুষের কথা ভাবি। এই ফেসবুকেই তাদের অনেকে বাস করেন; বা বলা ভালো এই ফেসবুককে তারা নিয়মিত ব্যবহার করেন লক্ষ্যপূরণে। তাদের হাতেও দৈনিক সময় ঘণ্টা হিসেবে চব্বিশ। দরসে পড়ানোর দায় তাদেরও আছে। তবু দিনশেষে তাদের কাজের ফিরিস্তি দেখে আশ্চর্য হতে হয়; কোথা থেকে আসে এতো সময়? এদের কি দুটো হাতের বাইরে আরও আছে বাড়তি হাত? কিংবা ঘুম কি তাদের কাবু করে না আদৌ?

 

ঈর্ষা জিনিসটা খুব খারাপ কিছু নয়। দু রকম ব্যক্তিকে ঈর্ষা করার সুযোগ নবিজি দিয়ে গেছেন। একজন এমন ধনী, যিনি অকৃপণ চিত্তে খরচ করেন আল্লাহর পথে। আরেকজন এমন আলেম, যার ইলমের প্রস্রবণ থেকে নিয়ত তৃষ্ণা মেটে অজস্র তৃষিতের।

 

চাইলেও অনেক সমসাময়িককে ঈর্ষা না করে পারা যায় না। দুঃখ হলো, দিন দিন ঈর্ষা করার মত লোকের সংখ্যা বাড়ছে। এবং ঈর্ষা করে যেতে হচ্ছে নৈমিত্তিক। অনেক নাম মনে পড়ছে এখন। অগ্রজ এবং অনুজ। যাদের ঈর্ষা হয় তাদের জন্য দুআ রইল; আল্লাহ তাদের প্রতি অনুগ্রহের বারি বর্ষণ উত্তরোত্তর ভারি করে দিন।

 

মাঝে মাঝে মনে হয়; সময়ের যখন বন্দোবস্ত হচ্ছে না, লেখালেখিটা মওকুফ রেখে বলাবলি শুরু করে দিই। এখন তো ব্যক্তিগত সময়ক্রমেই বলছে লোকে খুব। সহজ আয়োজন। গো লাইভে ক্লিক করে ‘কেমন আছো বন্ধুরা’। টেবিল হাতড়ে দেখি ইয়ারফোনটা নেই। মোবাইলের ক্যামেরাটাও ঘোলা হয়ে গেছে। কিছুটা আড়ষ্ট বোধের সাথে এইসব অনাকাঙ্ক্ষিত গোলযোগ উৎসাহ দমিয়ে দেয়। পাশে উবু হয়ে থাকা বিছানায় বালিশ পাতা আছে। সিলিংয়ে বনবন করে ঘুরছে ঝুলন্ত পাখা। মেষঢাকা দিনের নরম-কোমল স্নিগ্ধ ঘুমঘুম আবহাওয়া। আধঘণ্টা বেশী ঘুমুলে ক্ষতি হবে মনে হয় না।

অনলাইন নিউজ পোর্টাল

মন্তব্য করুন: