বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৈশাখ ১২ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

বিশ্বমানবতার সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি মুহাম্মাদ সাঃ

 প্রকাশিত: ০৯:২৩, ১৯ অক্টোবর ২০২১

বিশ্বমানবতার সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি মুহাম্মাদ সাঃ

হেরা হতে হেলে দুলে নূরানী তনু ও কে আসে হায়,
সারা দুনিয়ার হেরেমের পর্দা খুলে খুলে যায় —
সে যে আমার কমলিওয়ালা — কমলিওয়ালা।।
তার ভাবে বিভোল রাঙা পায়ের তলে
পর্বত জঙ্গম টলমল টলে,
খোরমা খেজুর বাদাম জাফরানি ফুল ঝ’রে ঝ’রে যায় —
সে যে আমার কমলিওয়ালা — কমলিওয়ালা।।
আসমানে মেঘ চলে ছায়া দিতে,
পাহাড়ের আঁসু গলে ঝরনার পানিতে,
বিজলি চায় মালা হতে,
পূর্ণিমার চাঁদ তার মুকুট হতে চায় —
সে যে আমার কমলিওয়ালা — কমলিওয়ালা।।
হযরত মুহাম্মদ (সা.) বিশ্বনবী, করুণার ছবি রাহমাতুল্লিল আলামিন। ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে মক্কার বিখ্যাত কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের আগেই পিতা আব্দুল্লাহ মারা যান এবং মাত্র ছয় বছর বয়সে তিনি তাঁর মা আমিনাকেও হারান। পিতৃমাতৃহীন শিশু মুহাম্মদ (সা.) দাদা আব্দুল মুত্তালিবের তত্ত্বাবধানে বড় হতে থাকেন। তিনি নাতির নাম রাখেন মুহাম্মদ অর্থাৎ প্রশংসিত। বাল্যকাল থেকে অতিশয় সৎ, বিনয়ী ও বিশ্বাসী ছিলেন বিধায় তাঁকে আলআমিন উপাধি প্রদান করা হয়। চল্লিশ বছর বয়সে মক্কার অনতিদূরে হেরা নামক পর্বত গুহায় মহান আল্লাহর স্মরণে ধ্যানমগ্ন থাকা অবস্থায় তাঁর কাছে সৃষ্টিকর্তার বাণী নিয়ে আসেন ফেরেস্তা জিব্রাইল (আ.)। সেই যে আরম্ভ, এরপর অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের কণ্টকময় পথ অতিক্রম করে দীর্ঘ তেইশ বছরে শেষনবী, বিশ্ব রসুল মুহাম্মদ (সা.)-র মাধ্যমে আল্লাহর বাণীসমূহের পূর্ণাঙ্গ কিতাব পবিত্র কুরআন মানবজাতিকে সুপথ প্রদর্শনের জন্য এ ধরায় অবতীর্ণ হয়। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে ন্যায়, সাম্য, মৈত্রী, মানবতা ও শান্তির ধর্ম পবিত্র ইসলাম।
আজ সারা পৃথিবীর সাতশ সত্তর কোটি মানুষের চার ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ পঁচিশ শতাংশ মানুষ বিশ্বনবীর প্রচারিত শান্তির ধর্ম ইসলামের অনুসারী। পৃথিবীতে বোধহয় এমন কোনও দেশ নেই যেখানে ইসলামের বাণী পৌঁছায়নি। সঙ্গতকারণে দুনিয়াব্যাপী ইসলাম বহু চর্চিত ধর্ম। ১৯৭৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের একজন খ্রিস্টান গবেষক মাইকেল এইচ হার্ট একদল গবেষক নিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী মানুষের খোঁজ করতে গিয়ে আল্লাহর নবী পবিত্র ইসলাম ধর্মের প্রচারক হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী একশ’ ব্যক্তির তালিকার প্রথম স্থান দিয়ে বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দেন। তার রচিত ঞযব ১০০ :The 100 : A Ranking of the Most influential Persons in History বইটি ১৯৭৮ সালে প্রথম প্রকাশিত হলেও ১৯৯২-এ পুনঃপ্রকাশিত হয়। সে-বারও মাইকেল হার্ট হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে বিশ্বের একশ সবচেয়ে প্রভাবশালী মানুষের তালিকায় প্রথম স্থানে রেখেছেন। তাঁর প্রকাশিত পুস্তকের একশজনের প্রথম দশজন হলেন- (১) মুহাম্মদ, (২) আইজাক নিউটন, (৩) যিশু খ্রিস্ট, (৪) গৌতম বৌদ্ধ, (৫) কনফুসিয়াস, (৬) সেন্ট পল, (৭) স্তাই লুন, (৮) জন গোটেনবার্গ, (৯) ক্রিস্টেফার কলম্বাস, (১০) আলবার্ট আইনস্টাইন।
যে মানুষটি মরু আরবে সভ্যতার আলোবর্জিত একটি স্থানে অনাথ হিসেবে জন্মগ্রহণ করে কোনও প্রথাগত শিক্ষাদীক্ষা লাভের সুযোগ পাননি এবং ফলস্বরূপ যাকে উম্মি (নিরক্ষর) বলে অভিহিত করা হতো, সেই মানুষকে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রভাবশালী মানুষের মর্যাদা প্রদান যে বিশেষভাবে ভাবার বিষয়, তা বলাই বাহুল্য। লেখক মাইকেল হার্ট তাঁর বইয়ে লিখেছেন, বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী মানুষের তালিকায় মুহাম্মদ (সা.)-এর নাম প্রথমে রাখায় অনেকের কাছে তা আশ্চর্য মনে হতে পারে কিন্তু লেখকের মতে, ইতিহাসে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি, যিনি ধর্মীয় ও রাজনৈতিক উভয় ক্ষেত্রে সর্বাধিক সফল ব্যক্তিত্ব। আরবের মরুর দেশে অতি সাধারণ জায়গায় জন্মলাভ করে বিশ্বের অন্যতম প্রধান ধর্মের প্রচারক হয়ে বিশ্বের দিকে দিকে শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যুর চৌদ্দশ’ বছর পর আজও তিনি বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে প্রভাব বিস্তার করে আছেন। সারা পৃথিবীতে বোধহয় এমন কোনও মানুষ জন্মায়নি যার নাম প্রতিদিন কোটি কোটি মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত হয়। দুনিয়ার পূর্ব থেকে পশ্চিম আর উত্তর থেকে দক্ষিণ এমন কোনও অঞ্চল বা দেশ নেই যেখানে হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর নাম মানুষের মুখে প্রতিদিন উচ্চারিত হয় না। পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ মসজিদে রোজ পাঁচবার আজানে মুহাম্মদুর-রসুলুল্লাহ মোয়াজ্জিনের কণ্ঠে উচ্চারিত হয়।
লেখক মাইকেল হার্ট তাঁর বইতে উল্লেখ করেছেন, আরবের মক্কা শহর ছিল সমকালীন বিশ্বে একটি পশ্চাৎপদ এলাকা, যে স্থানটি থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্পকলা এবং শিক্ষাদীক্ষার কেন্দ্র অনেক দূরে ছিল। জন্মের আগে বাবাকে হারিয়ে তিনি অনেকটা অসহায় অবস্থায় দরিদ্র পরিবেশে প্রতিপালিত হন। পঁচিশ বছর বয়সে চল্লিশ বছর বয়সের খাদিজা নামের এক ধনবান বিধবা মহিলাকে বিয়ে করলে তাঁর আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। কিন্তু ধন সম্পদের প্রতি তাঁর কোনও আসক্তি ছিল না বরং নিভৃতে বিশ্বপ্রভু আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন থাকতে ভালবাসতেন। চল্লিশ বছর বয়স অবধি হেরা গুহায় স্বর্গীয় বাণী লাভের আগে তাঁর তেমন বিশেষ কোনও ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটেনি যদিও সততার জন্য স্থানীয় মানুষরা তাঁকে আলআমিন উপাধি দিয়েছিলেন।

আরবের বেদুইনরা সাহসী হলেও উপযুক্ত নেতৃত্বের অভাবে তাদের মধ্যে ঐক্য ছিল না। প্রায়শ গোত্রে গোত্রে হানাহানি লেগেই থাকত। এই প্রথম তারা হযরত মুহাম্মদের নেতৃত্বে এক এবং অদ্বিতীয় মহান আল্লাহর প্রতি অবিচল বিশ্বাস রেখে একের পর এক রাজ্য বিজয় করে আরব ও তার পাশাপাশি এলাকায় ইসলামি সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি ঘটাল। তাঁর ইন্তেকালের পর খলিফারা দ্রুতগতিতে ইসলাম প্রচার ও ইসলামি সাম্রাজ্যের প্রসার ঘটান। ৭১১ খ্রিস্টাব্দে আরব বাহিনী উত্তর আফ্রিকা পেরিয়ে আটলান্টিক মহাসাগরের পারে পৌঁছে যায়। পূর্বদিকে তাঁরা পারস্য জয় করে ভারতের প্রান্তে এসে উপস্থিত হয়। মহানবী মুহাম্মদ (সা.) শিক্ষায় অনুপ্রাণিত হয়ে সামান্য একটি বেদুইন জাতি ভারত সীমান্ত থেকে আটলান্টিক মহাসাগর পর্যন্ত বিশাল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। এরা যেখানে গেছে সেখানে দলে দলে মানুষ ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করে।

অনলাইন নিউজ পোর্টাল

মন্তব্য করুন: