শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, চৈত্র ১৫ ১৪৩০, ১৯ রমজান ১৪৪৫

ইসলাম

বিনয়ের প্রতীক প্রিয়নবী (সা.)

 প্রকাশিত: ১০:২৭, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১

বিনয়ের প্রতীক প্রিয়নবী (সা.)

একবার রাসুল (সা.)-এর কাছে এক লোক এলো। লোকটা কথা বলতে গিয়ে কাঁপছিল। তার ঘাড়ের রগও কাঁপছিল। রাসুল (সা.) তার এই দুরবস্থা দেখে বললেন, ‘তুমি শান্ত হও! আমি কোনো প্রতাপশালী বাদশাহ নই। আমি এমন এক নারীর সন্তান, যে শুকনো গোশত খেত।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৩১২)

রাসুল (সা.) ছাড়া একজন সাধারণ মানুষের পক্ষে এমন দৃষ্টিভঙ্গি লালন করা অনেক কঠিন। সব শ্রেণির মানুষের সঙ্গে মেলামেশার অনুপম আদর্শ সবাই পালন করে না। অথচ সামান্য অর্থবিত্তের অধিকারী হলে একজন মানুষ সমাজের মধ্যে শ্রেণিবৈষম্য তৈরি করে। নিজেকে উঁচু স্তরের লোক ভেবে সবার সঙ্গে মেলামেশা করা বন্ধ করে দেয়। তবে আল্লাহর রাসুল (সা.) ছিলেন পুরোপুরি ভিন্ন। কারণ তিনি ছিলেন আল্লাহর সবচেয়ে সম্মানিত নবী। তিনি আল্লাহর বান্দা হয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন। সাধারণ মানুষের সঙ্গেই হাঁটাচলা করতেন। জুতা সেলাই করতেন। কাপড়ে তালি লাগাতেন। বাজারে যেতেন। নিজের কাঁধেই বোঝা বহন করতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘তিনি নিজের পরিবারের কাজে ব্যস্ত থাকতেন। নামাজের সময় হলে বেরিয়ে যেতেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৭৬)

এমনই ছিলেন রাসুল (সা.)। সহজ ও স্বতঃস্ফূর্ত, কোমল ও নম্র, জনমানুষের কাছের ও পাশের লোক। মানুষ এসে সাহাবাদের মধ্যে রাসুল (সা.)-কে খুঁজত! তিনি এতটাই সাধারণ ছিলেন যে দশজনের মধ্যে আলাদা করে চোখে পড়ত না। মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের সময় আবু বকর (রা.) সঙ্গে ছিলেন। রাসুল (সা.)-কে অভিনন্দন জানাতে আসা আনসারি সাহাবারা নবীজিকে আগে কখনো দেখেননি। তাঁরা কিছুতেই বুঝতে পারছিলেন না কে আল্লাহর রাসুল! এই দ্বিধাগ্রস্ততার ভেতর কিছুক্ষণ কেটে যায়। সূর্যের তেজ এসে রাসুল (সা.)-এর গায়ে লাগে। তখন আবু বকর (রা.) দাঁড়িয়ে তাঁকে ছায়া দেন। তখন তাঁরা বুঝতে পারে, বসে থাকা ব্যক্তিই আমাদের কাক্ষিত ব্যক্তি মহানবী (সা.)।

এমন ঘটনা হজের প্রান্তরেও ঘটেছে। মানুষের ভিড়ের মধ্যে, তাওয়াফ করার সময়, পাথর ছুড়ে মারার সময়, সায়ি করার সময়, আরাফার ময়দানে—সব জায়গায় মানুষের ভিড় ছিল। প্রায় এক লাখ ১৪ হাজার হাজির সমাগম। সবাই রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে সামনে-পেছনে চলছে। কখনো তাঁর পেছনে উসামা ইবনে জায়েদ (রা.), আবার কখনো ফজল ইবনে আব্বাস (রা.)। রাসুল (সা.)-এর উটের চারপাশে মানুষের ভিড়। কেউ হজের বিধিবিধান, হালাল-হারাম ইত্যাদি বিষয়ে প্রশ্ন করছে। এখানেও নবীজি বিশেষ কেউ হতে চাননি। তাঁকে আলাদা করে চেনা যায় এমন কিছু পরিধানও করেননি। নিজের তাঁবুতেও সাদামাটাভাবে থাকতেন। আকার-আকৃতি, পোশাক-পরিচ্ছদ সবকিছুতেই অতি সাধারণ ছিলেন। তাই সমাজের মানুষের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করতে সবার সঙ্গে মেলামেশা করা জরুরি। যেন নির্ভয়ে সব শ্রেণি কাছে আসতে পারে। সবার অন্তরে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা তৈরি হয়। আর এটি রাসুল (সা.)-এর সুন্নতও বটে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুল (সা.) এক লোকের ঘটনা বর্ণনা করেন। লোকটা লুঙ্গি ঝুলিয়ে ঝুলিয়ে হেলেদুলে হাঁটত। সে নিজেকে নিয়ে বেশ মুগ্ধ ছিল। আল্লাহ তাকে মাটিতে ধ্বসিয়ে দেন। সে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত মাটির নিচে ধসে যেতে থাকবে।’ (বুখারি, হাদিস: ৫৭৮৯)

মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে উচ্ছলিত পানি থেকে। এই সূচনা মানুষকে কিছুতেই গর্ব ও অহংকার করতে প্রণোদনা দেয় না। গর্ব ও বড়ত্ব আল্লাহর জন্য শোভা পায়। তেমনিভাবে মানুষের সমাপ্তি অর্থাৎ মৃত্যুও মানুষকে গর্ব ও অহংকার করতে শেখায় না। কারণ মৃত্যুর মাধ্যমে মানুষের অস্তিত্ব বিলীন হয়। তাই দুনিয়ার বড় বড় রাজা-বাদশাহ, সম্রাট ও নৃপতি, একনায়ক—সবাই মৃত্যুর মুহূর্তে এসে খুবই অসহায় ও কাতর হয়ে যায়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয় সব জীবের ওপর তত্ত্বাবধায়ক আছে। তাই মানুষ ভাবুক, তাকে কী থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। তাকে সবেগে স্খলিত পানি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে।’ (সুরা তারিক, আয়াত : ৪-৬)

আমাদের কর্তব্য রাসুল (সা.)-এর অনুসরণ করে বিনয়ী হওয়া। সবার সঙ্গে নম্র আচরণ করা।

অনলাইন নিউজ পোর্টাল

মন্তব্য করুন: