মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, বৈশাখ ১০ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

এডিটর`স চয়েস

বাবা তুমি মহান

 প্রকাশিত: ১৬:২০, ২০ জুন ২০২১

বাবা তুমি মহান

বাবা না হয়েও একজন বাবার আর্তনাদ আমাকে ব্যথিত করেছিল।সেই বাবার কথাগুলো আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছিল।তিনি এখনও বাবাই হোন নি তবুও সন্তানের জন্য তাঁর এমন উদার চিন্তা যা আমাকে সত্যিই ভাবায়।বাবারা বুঝি সত্যিই মহৎ ও উদার হয়।তা না হলে কি একজন অপরিচিত সন্তানের প্রতি এতো সুন্দর নসিহত কেউ করতে পারে?

অজ্ঞাত বাবা তুমি সত্যিই মহান।তুমি চিন্তা চেতনায় অম্লান।আজকে বাবা দিবসকে কেন্দ্র করে সেই অজ্ঞাতনামা বাবাকে আমি উপেক্ষা করতে পারছি না।তাই সেই অজ্ঞাতনামা বাবাকে তুলে ধরার প্রচেষ্টা মাত্র।

একদিন অজ্ঞাত এক মেয়ে আর বাবাকে বাসের সিটে পাশাপাশি বসে কথা বলতে দেখেছিলাম।মেয়েটি পর্দাসীন।হয়ত অনেক্ক্ষণ যাবত তাদের কথপোকথন হচ্ছিল।আমি তাদের কথার মাঝেখানে  বাসে উঠি।শুধু বাবার কথাগুলোই আমার কানে প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল।আমি খুব মন দিয়ে শুনছিলাম। জানি না,তাদের মধ্যে সম্পর্ক কি ছিল?তবে কথা গুলো আমার হৃদয় ছুঁয়েছিল।

সেদিন ঐ মেয়েটিকে অজ্ঞাতনামা বাবা  বলেছিলেন,

তোমার ভালো-মন্দ তোমার বন্ধুরা বুঝবে না।তারা শুধু চাইবে তোমার টাইম,মজা,মাস্তি চিল করে তাদের সাথে বাজে সময় কাটাও।

কিন্তু বড় যে কোনো আপনজন অথবা তোমার শুত্রুও তোমার লাইফে ভালো চাইবে।কারন তাড়া জানে কোন পথে হাঁটলে কি হয়।তারা অভিজ্ঞতা থেকেই সব বলে থাকে।তাই বড়দের মানার ট্রাই করবে।ধরে নাও,এটা তোমারই বাবার আদেশ।বড়দের কথা শুনবে যদিও তা তিতা লাগে কিন্তু সেখানে সুফল পাবে।বুঝলে?

আমি আমার সন্তানদের যেভাবে বুঝাইতাম সেইভাবে তোমাকে  বুঝালাম।কারন আমি ছেলে-মেয়েদের অনেক ভালোবাসি।।আমার কাছে মেয়ে,ছেলে দুটোই সমান।আমার সন্তানদেরর আমি আদর্শবান করে গড়ে তুলব।ইন শা ল্লাহ।শুধু তোমার ভালো একটা প্রিয় মা জেনো আল্লাহ মিলিয়ে দেন।ভালো একটা গিন্নী পাওয়ার অপেক্ষায় আছি।

আর হ্যাঁ আমার সন্তানদেরর মতো তুমিও কিন্তু একজন।কতদিন বাঁচব জানি না।তবে নিয়ত করতে দোষ কি?বলো।তাই বিয়ে করার আগেই ত সন্তানদের নিয়ে ভাবছি। আর তোমার মতো মেয়ে পেলে আমি ত ধন্যই হবো।

কারন কি জানো? তোমাকে দেখেছি যতবার,কথা বলেছি যতবার ততবারই আল্লাহর কাছে মনে মনে দুয়া করেছি-

হে আল্লাহ আমাকে এমন একটা ভালো মেয়ে দিয়ো।তুমি সত্যিই অনেক ভালো লক্ষি মেয়ে।আমার একটি মেয়ে হোক,এটা আমি মনে প্রাণে চাই।জানো,মেয়ের নামগুলোও এখন থেকেই রেখে দিয়েছি।ওদের নিয়ে কত যে ইচ্ছা আর স্বপ্ন আমার।নিদারুণ সত্যি।

আল্লাহ জানে,পুরন হবে কিনা।এই বাবার জন্য দুয়া কইরো যেনো সুস্থ থাকি আর সৎ ও আদর্শবান হয়ে বেঁচে থাকতে পারি। 

আমি আমার ছেলে-মেয়েদের কোনোদিনো শাসন করবো না।শুধু ভালোবাসব।তবে হ্যাঁ ভালো-মন্দ টা আমি তাদের জানাবো।কারন ডিসিশন একান্তই তাদের।আমি জোড় করে কিছুই চাই না।আমি জোড়াজুড়ি মোটেই পছন্দ করি না। 

আমার অধীনস্থদের  কখনো চাপ দিয়ে কিছুই করাই নি । কারন আমার বাবা-মা আমাকে জোড় করে,মার-পিট করে আমাকে মানুষ করে নি।যা হয়েছি নিজ থেকেই হয়েছি।তাই আমার প্রতি বাবা-মা সহ সবারই ভালোবাসা অনেক। কেনো জানি এসব কথা তোমাকে বলতে অনেক ভালো লাগছে ।তাই তোমাকে বলছি।প্লিজ কিছু মনে করো না।প্লিজ অনেক ভালো লাগছে এসব বলে।

ডিফিনিটলি আমি অন্যরকম মানুষ।এটা আমি বলবই।গর্ব করে বা অহংকার করে বলি না।আমি নিজেকে নিরপেক্ষভাবেই দেখেছি আমি সত্যি অন্যরকম।আমার চিন্তাধারা গুলোও অনেক ভালো লাগে আমার কাছে। কারন লাইফে খারাপ,চিন্তা ভাবনা কোনোদিনো ভাবিও নি বা করেও নি।যদিও মানুষ হিসেবে পাপাচার অনেক করেছি।জানি না আল্লাহ এই পাপিষ্টকে ক্ষমা করবে কিনা?তবুও আল্লাহর কাছে আমার অনেক শুকরিয়া।এ পর্যন্ত যা চেয়েছি আমার আল্লাহ আমাকে সবই দিয়েছেন।  

জানো?আমি খুব গর্ব করি যে আমি মুসলমান,আমি আল্লাহর প্রিয় একজন বান্দা,প্রিয় নবিজির উম্মত।সহজ-সরল বাবা-মা পেয়েছি। আমার আশেপাশে অনেক অনেক ভালো মানুষ পেয়েছি।আমার মতো সুখি কে বলো?আমার সবই আছে। শুধু মাঝে মাঝে অর্থের অভাবে টেনশন করি।তবুও ত আল্লাহ কখনো আমাকে ফিরিয়ে দেন নি।আমি আমার আল্লাহ কে নিয়ে অনেক গর্ব করি।মনে মনে আল্লাহর প্রতি আমি খুব খুশি। জানো?

আমার কান্না তোমাকে দেখাতে পারবো না।কিন্তু সত্যি বলছি আমার বুক ফেটে শুধু চিৎকার করতে ইচ্ছে করছে।কিন্তু কান্না করতে পারছি না।আমি খুশিতে অনেক কান্না করছি।বুকটা আমার ফেটে যাচ্ছে।তা ধরাও যায় না ছুঁয়াও যাবে না।

তোমার মতো আমিও আমার অতীতকে খুব মিস করি।আমার চারপাশের ভালোবাসার মানুষকে অনেক মিস করি।কারন এখন ত আর তোমাদের মতো অফুরন্ত সময় পাই না।এখন শত ব্যস্ততার মধ্যেই জীবনকে পাড় করতে হচ্ছে।সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে ঘরে ফেরা।অসুস্থ মায়ের চিকিৎসা করার জন্য অর্থ উপার্জন করা।ভবিষ্যতে ঘর সংসার করার জন্য,ছেলেমেয়েদের ভরনপোষণের জন্য এখন থেকেই ছুটে চলছি শহরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত।কত যে স্বপ্ন?পূরণ করার জন্য ভাবনাচিন্তাহীন অক্লান্ত পরিশ্রমেই আমি মগ্ন।

শুধু বলব,সময়গুলোকে ভালো কাজে ব্যয় করবে। সৎ ও ভালো বন্ধুদের সাথে সঙ্গ দিবে।মন দিয়ে পড়াশোনা করবে।উঠন্ত ও উড়ন্ত এই বয়সে যদি সময়কে সঠিকভাবে ব্যয় করতে পারো তাহলে জীবনে অনেক দূর যেতে পারবে।অনেক বড় হতে পারবে।তোমরা আগামীর প্রজন্ম,দেশের ভবিষ্যৎ।তোমরা পৃথিবীকে সুন্দর করার কর্ণধার।

আমরা ত কোনো একদিন থাকব না।হয়ত এই পৃথিবীকেও কোনো একদিন খুব মিস করবো।পৃথিবী ত সুন্দর ছিলো শুধু সুন্দর নই আমরা মানুষ জাতি। আমরাই আসল অপরাধি ।আমরাই ত আল্লাহকে খুশি রাখতে পারি নি।আল্লাহর উপর বিশ্বাস রাখি না। আল্লাহ'র উপর বিশ্বাসে অটল থাকবে সবসময়।কখনও আল্লাহকে ভুলে যেও না।তোমার বন্ধুরা তোমাকে ভুলে যাবে কিন্তু আল্লাহ কখনও ভুলবেন না।চলো মা, নেমে যাই।এই বলে তারা দু'জনেই নেমে গেলেন।

লোকটির চিন্তাভাবনা দেখে আমিই বিস্মিত হয়ে যাই।লোকটির বয়স যথেষ্ট।অথচ এখনো তিনি বিয়ে করেন নি।কিন্তু কেন?যাই হোক,এসব ভাবনা বাদ দিয়ে বসে বসে ভাবতি থাকি পৃথিবীর বাবাগুলো বুঝি এমনি হয়।বাবা হওয়ার স্বপ্ন বুঝি সন্তানকে ঘিরেই অটুট থাকে।তারা খেয়ে না খেয়ে,শত পরিশ্রম করে সন্তানের জন্য কতকিছুই না করে।কোনোদিন বুঝতেই দেয় না তাদের জরাজীর্ণ গ্লানি।

অথচ আমরা সন্তানেরা তাদের কতটুকুই বা মর্যাদা দিচ্ছি।তাদেরকে কতটুকুই ভালোবাসা দিচ্ছি।বাবা যখন সারাদিন পরিশ্রম করে ঘরে ফিরে আসে নিজের বায়না গুলো একে একে বলেই যাচ্ছি।অথচ সন্তানের আবদার পূরন করতে বাবার যে কত কষ্ট করতে হয় তা আমরা চিন্তাই করি নি।

বাবারা এতো সৎ ও মহান হতে পারে?এটা আমরা জেনেও বুঝি নি।

বেঁচে থাক এমন সৎ ও মহান বাবা।পৃথিবীকে দিয়ে যাক অনেক কিছুই।

"বাবা তুমি মহান,তুমি চির অম্লান।

তুমি পরিশ্রমেই থাকো বলিয়ান।

তোমার পদধূলিকে জানাই সম্মান।"

 

 

লেখকঃ রাসেল আহামেদ।

অনলাইন নিউজ পোর্টাল

মন্তব্য করুন: