শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, বৈশাখ ৭ ১৪৩১, ১১ শাওয়াল ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

বাইপোলার ডিজওর্ডার কি? এই রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা করাবেন যেভাবে

 প্রকাশিত: ১০:০৪, ১৬ জানুয়ারি ২০২১

বাইপোলার ডিজওর্ডার কি? এই রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা করাবেন যেভাবে

আমাদের জীবনে এমন সময় আসে যখন কোন কিছু ভালো লাগে না। আবার নিজে নিজেই সব ঠিক হয়ে যায়। মাঝ্যেমধ্যে এমন হতেই পারে। তবে যদি নিয়মিত মুড সুইং হয় তাকে সাধারণত বলে মুড ডিজঅর্ডার। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে ডিপ্রেসিভ ডিজ়অর্ডার বলে। এমনই এক ধরনের মুড ডিজ়অর্ডার হল বাইপোলার ডিজঅর্ডার। নামটি পরিচিতি হলেও এই রোগটি আমাদের অনেকের অজানা।

একই মানুষের মধ্যে যদি কখনও ডিপ্রেশন, আবার কখনও ম্যানিয়া বা হাইপোম্যানিয়ার পর্ব চলতে থাকে, তাকে বলা হয় বাইপোলার ডিজঅর্ডার । মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলেন, ডিপ্রেশন হলে সাধারণত কোনও কাজে উৎসাহ পাওয়া যায় না। আগে যে কাজের মধ্যে সে আনন্দ খুঁজে পেত, এখন সেই কাজই আর ভাল লাগে না। সব সময় একটা ক্লান্তি ভাব জড়িয়ে থাকে। এর সঙ্গে ঘুম কমে যাওয়া ,ক্ষুধা চলে যাওয়া, একা থাকতে পচ্ছন্দ করা, কারো সাথে  কথা বলতে পচ্ছন্দ না করা এসব সমস্যা দেখা দেয়। এ সময়ে অনেকের নিজেকে অপরাধী বলে মনে হতে পারে। আত্মবিশ্বাস কমে যায় এবং একসময় মানুষের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা দেয়।

ম্যানিয়া ঠিক এর বিপরীত অবস্থা। এ সময়ে এনার্জি লেভেল প্রচণ্ড বেড়ে যায়। এতটাই যে, ঘুমের সে ভাবে প্রয়োজনই পড়ে না। রোগীর মধ্যে সব সময় খুশি খুশি ভাব থাকে, সে অতিরিক্ত কথা বলতে শুরু করে, আত্মবিশ্বাস হঠাৎই প্রচণ্ড বেড়ে যায়, নিজের সম্পর্কে বিরাট ধারণা পোষণ করতে থাকে, এবং সাধারণ যে কাজ, সেগুলোও বেশি বেশি করে করতে শুরু করে। যেমন কেউ অতিরিক্ত খেয়ে ফেলে, কেউ অতিরিক্ত এক্সারসাইজ় করতে থাকে। একে ম্যানিয়াক এপিসোড বলে। আর এতটা চরম পর্যায়ে না গিয়ে আচরণগুলো কিছুটা মাঝামাঝি জায়গায় থাকলে, তাকে হাইপোম্যানিয়াক এপিসোড বলে। আর এই সমগ্র অসুখটাকেই বলে বাইপোলার ডিজঅর্ডার।

রোগ নির্ণয়:

এই রোগ অনেক জটিল। তাই নির্ণয়ের কাজটিও সহজ নয়। ম্যানিয়াক এপিসোড তাড়াতাড়ি ধরা পড়ে। এজন্য লক্ষণ প্রকাশ পেলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসককে একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে রোগীকে পর্যবেক্ষণ করতে হয়। কারণ, ওষুধের তারতম্য আছে। ডিপ্রেশন হলে এক রকম ওষুধ, বাইপোলারের ক্ষেত্রে অন্য তার পুরনো রোগগুলি সম্পর্কে জানতে হয়। 

এই রোগ কি সারে?

বাইপোলার ডিজঅর্ডার দীর্ঘ সময় ধরে চলতে পারে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, এই রোগে আক্রান্ত হলেই সব শেষ হয়ে গেল, আর সারবে না। অনেকের ক্ষেত্রেই নিয়মিত ওষুধ খেলে রোগকে ভালমতো নিয়ন্ত্রণ করা যায়। স্বাভাবিক জীবনযাপনেও কোনও সমস্যা থাকে না। তবে, নিয়মিত চিকিৎসা এই ক্ষেত্রে খুব জরুরি। নিয়মিত চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে। ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দিলেই সমস্যা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে।

কাদের এই অসুখ বেশি হয়?

বাইপোলার ডিজঅর্ডার মূলত কমবয়সিদের অসুখ। ডিপ্রেশন দিয়েই এর শুরু। আবার বয়স্কদেরও হতে পারে এই রোগ। পরিবারের কেউ এই রোগে আক্রান্ত হলে পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে রোগাক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।

এই রোগে নারী-পুরুষের আক্রান্ত হওয়ার অনুপাতটি সমান। কিন্তু শুধুমাত্র ডিপ্রেশনের ক্ষেত্রে মেয়েদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় দ্বিগুণ। 

পরিবারের ভূমিকা:

ম্যানিয়াক পর্বে ওষুধ ছাড়া গতি নেই। কিন্তু বাইপোলারের মধ্যে ৭০ শতাংশ এপিসোডই ডিপ্রেশনের পর্যায়ে থাকে আর ৩০ শতাংশ ম্যানিয়াক এপিসোড। এই বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকা অপরিসীম। পরিবার যদি ভালোভাবে রোগীকে বুঝতে না পারে তবে চিকিৎসা করা অসম্ভব।

অনলাইন নিউজ পোর্টাল

মন্তব্য করুন: