বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, চৈত্র ১৪ ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ইসলাম

নিজের আত্মার হক আদায় করা

 প্রকাশিত: ১৯:০৮, ২৫ অক্টোবর ২০২০

নিজের আত্মার হক আদায় করা

উৎস:
ইসলাহী নেসাব: হায়াতুল মুসলিমীন
হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদে মিল্লাত, মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (র:)

নিজের আত্মার হক আদায় করতে হবে। কারণ, আমাদের আত্মাও আল্লাহ তাআলার মালিকানাধীন, যা তিনি আমদেরকে আমানতস্বরূপ দিয়েছেন। তাই তার নির্দেশমত এর হেফাযত করা আমাদের দায়িত্ব। এর হেফাযতের একটি বড় দিক হলো-এর স্বাস্থ্য ও সুস্থতার হেফাযত করা। দ্বিতীয়, তার শক্তির হেফাযত করা। তৃতীয়, তার একাগ্রতার হেফাযত করা। অর্থাৎ, স্বেচ্ছায় এমন কোন কাজ করবে না, যার ফলে অন্তরে পেরেশানী সৃষ্টি হয়। কারণ, এ সমস্ত বিষয়ে বিঘ্ন ঘটলে ধর্ম-কর্ম করার সাহস থাকে না। অভাবীদের সেবা ও সহযোগিতা করা যায় না। উপরন্ত্ত কখনো কখনো অকৃতজ্ঞ ও অধৈর্য হয়ে ঈমান হারিয়ে বসে। এ প্রসঙ্গে কয়েকটি আয়াত এবং হাদীস লেখা হয়েছে।

১. আল্লাহ তাআলা নেয়ামতের উল্লেখ প্রসঙ্গে হযরত ইবরাহীম (আঃ) এর এ উক্তি বর্ণনা করেন-
‘আমি যখন অসুস্থ হই, তখন তিনিই আমাকে সুস্থতা দান করেন।’ (সূরা শুয়ারা)

ফায়দা: এ আয়াত দ্বারা পরিস্কার বুঝা যায় যে, সুস্থতা একটি কাম্য বস্ত্ত।

২. আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
‘এবং তাদের (শত্রুদের) জন্য তোমাদের সামর্থ্য মত শক্তি প্রস্ত্তত করো।’ (সূরা আনফাল)

ফায়দা: এ আয়াতে শক্তির হেফাযতের নির্দেশ রয়েছে। মুসলিম বিন উকবা বিন আমের (রাযিঃ) এর বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে এর তাফসীর ‘তীর নিক্ষেপ করা’ বর্ণিত হয়েছে। একে এজন্য শক্তি বলা হয়েছে যে, এর দ্বারা দ্বীন এবং দিলে শক্তি লাভ হয় এবং এর জন্য দৌড়াদৌড়ি করতে হয়, ফলে দেহেও শক্তি লাভ হয়।‘তীর’ সে যুগের হাতিয়ার ছিলো। বর্তমান যুগের অস্ত্রসমূহ তীরের বিধানের অন্তর্ভুক্ত হবে। এ বিষয়ে অবশিষ্ট আলোচনা ১৩ নং হাদীসের অধীনে আসবে।

৩. আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
‘এবং (সম্পদের) অপব্যয় করো না।’ (বনী ইসরাঈল)

ফায়দা: সম্পদের সংকটের কারণে পেরেশানী আসে। সেই পেরেশানী থেকে বাঁচার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাই যে সমস্ত বিষয়ে এর চেয়েও অধিক পেরেশানী ও অস্থিরতা সৃষ্টি হয়, সেগুলো থেকে বাঁচার নির্দেশ অধিক জোরালো হবে। এর দ্বারা একাগ্রতা কাম্য বস্ত্ত হওয়া বুঝে আসে।
সম্মুখে হাদীসসমূহ উল্লেখ করছি-

১. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (অধিক রাত জাগা এবং নফল রোযার নিষেধাজ্ঞায়) ইরশাদ করেন-
‘তোমাদের উপর তোমাদের দেহেরও হক রয়েছে এবং তোমাদের উপর তোমাদের চোখেরও হক রয়েছে।’

ফায়দা: হাদীসের উদ্দেশ্য হলো, অধিক পরিশ্রমের ফলে এবং অধিক জাগরণের ফলে স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যাবে এবং চোখ অসুস্থ হয়ে পড়বে।

২. হযরত ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে-
‘দু’টি নেয়ামত এমন রয়েছে, যেগুলোর ব্যাপারে মানুষ খুব বেশী ধোঁকায় থাকে। (অর্থাৎ, সেগুলো দ্বারা কাজ নেয় না, অথচ কাজ নিলে অনেক ধর্মীয় উপকার হতো) ১. সুস্থতা ২. নিশ্চিন্ততা।’ (বুখারী)

ফায়দা: এ হাদীস দ্বারা সুস্থতা ও নিশ্চিন্ততা এমন নেয়ামত হওয়া জানা গেলো যে, এগুলোর দ্বারা ধর্মীয় কাজে সহযোগিতা লাভ করা যায়। আর নিশ্চিন্ততা তখনই লাভ হয়, যখন যথেষ্ট পরিমাণ সম্পদ কাছে থাকে এবং কোন পেরেশানীও না থাকে। এতে করে জানা গেলো দারিদ্রতা ও পেরেশানী থেকে বাঁচার চেষ্টা করাও কাম্য।

৩. হযরত আমর বিন মায়মূন আওদী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক ব্যক্তিকে উপদেশ দান করে ইরশাদ করেন-
‘পাঁচটি জিনিসের (আগমনের) পূর্বে পাঁচটি জিনিসকে গনীমত মনে করো। (এবং সেগুলোকে ধর্মীয় কাজের মাধ্যম বানাও) যৌবনকে বার্ধক্যের পূর্বে (গনীমত মনে করো) এবং সুস্থতাকে অসুস্থতার পূর্বে এবং ধনাঢ্যতাকে দরিদ্রতার পূর্বে এবং নিশ্চিন্ততাকে দুশ্চিন্তার পূর্বে এবং জীবনকে মৃত্যুর পূর্বে।’ (তিরমিযী)

ফায়দা: এ হাদীস দ্বারা জানা গেলো যে, যৌবনকালের শক্তি, সুস্থতা, নিশ্চিন্ততা ও আর্থিক সচ্ছলতা বড় বড় নেয়ামত।

৪. হযরত উবায়দুল্লাহ বিন মুহসিন (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আ্ছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘তোমাদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তি এমতাবস্থায় সকাল করবে যে, নিজের প্রাণের ব্যাপারে (দুশ্চিন্তা থেকে) নিরাপদে থাকে এবং নিজের দেহের ব্যাপারে (রোগ-ব্যাধি থেকে) সুস্থ থাকে এবং তার নিকট সেদিনের খাবার থাকে। (যার ফলে অনাহার থাকার আশংকা থাকে না)। তাহলে বোঝো যে, তার জন্য সমগ্র দুনিয়া জড়ো করে দেওয়া হয়েছে।’ (তিরমিযী)

ফায়দা: এ হাদীস দ্বারাও সুস্থতা, শান্তি ও নিরাপত্তা কাম্যবস্ত্ত হওয়া বুঝে আসে।

৫. হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লা্ল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘যে ব্যক্তি অন্যের নিকট চাওয়া থেকে আত্মরক্ষার জন্য হালাল দুনিয়া অন্বেষণ করে এবং নিজের পরিবার পরিজনের (হক আদায়ের জন্য) উপার্জন করে এবং নিজের প্রতিবেশীর প্রতি দৃষ্টি রাখে, সে কেয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে এমনভাবে মিলিত হবে যে, তার মুখমন্ডল পূর্ণিমার চাঁদের ন্যায় উজ্ব্বল হবে।’… (বাইহাকী, আবু নুয়াইম)

ফায়দা: এ হাদীস দ্বারা জানা গেলো যে, দ্বীন রক্ষার জন্য এবং হকসমূহ আদায় করার জন্য প্রয়োজন পরিমাণ সম্পদ উপার্জন করার অনেক ফযীলত রয়েছে। এর দ্বারা একাগ্রতা কাম্য হওয়ার বিষয়টি জানা গেলো।

৬. হযরত আবু যর (রাযিঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন-
‘দুনিয়ার প্রতি বিরাগী হওয়া হালালকে হারাম করা এবং সম্পদ নষ্ট করার নাম নয়।’

ফায়দা: এ হাদীসে সম্পদ নষ্ট করার স্পষ্ট নিন্দা এসেছে। কারণ, এতে করে একাগ্রতা নষ্ট হয়।

৭. হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘আল্লাহ তাআলা রোগ ও ঔষধ উভয়টি অবতীর্ণ (সৃষ্টি) করেছেন। প্রত্যেক রোগের তিনি ঔষধও বানিয়েছেন। তাই তোমরা চিকিৎসা করো এবং হারাম জিনিস দ্বারা চিকিৎসা করো না।’ (আবু দাউদ)

ফায়দা: এ হাদীসে সুস্থতা লাভের পরিস্কার নির্দেশ এসেছে।

৮. হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘পাকস্থলী দেহের চৌবাচ্চা। দেহের শিরাসমূহ তার নিকট (খাদ্যাহরণে) আসে। তাই পাকস্থলী সুস্থ হলে শিরাসমূহ সুস্থতা নিয়ে যায়, আর পাকস্থলী অসুস্থ হলে শিরাসমূহ অসুস্থতা নিয়ে যায়।’ (শুয়াবুল ঈমান, বাইহাকী)

ফায়দা: এ হাদীসে পাকস্থলীর যত্ন নেওয়ার প্রতি নির্দেশ এসেছে।

৯. হযরত উম্মে মুনযির (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে- তিনি বলেন, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার (আমাদের নিকট) আসেন, তাঁর সাথে হযরত আলী (রাযিঃ) ছিলেন। একটি খেজুরের গুচ্ছ ঝুলানো ছিলো। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খেজুর খেতে শুরু করলেন। হযরত আলী (রাযিঃ)ও খেতে লাগলেন। ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আলী (রাযিঃ)কে ইরশাদ করেন-‘এগুলো (খেজুর) খেয়ো না। তোমার শরীর দুর্বল। তারপর আমি সবজি ও যব তৈরী করি। তিনি ইরশাদ করলেন- হে আলী! এখান থেকে নাও। এগলো তোমার উপযোগী।
(আহমাদ, তিরমিযী, ইবনে মাজা)
ফায়দা: এ হাদীস দ্বারা রোগীর জন্য ক্ষতিকর বস্ত্ত ভক্ষণের নিষেধাজ্ঞা জানা গেলো। কারন, তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

১০. হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই দু’আ করতেন-
‘হে আল্লাহ! আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি, ক্ষুধা থেকে। কারণ, তা নিশিযাপনের মন্দ সঙ্গী।’ (আবু দাউদ, নাসায়ী, ইবনে মাজা)

ফায়দা: মিরকাত গ্রন্থে ‘তীবির’ উদ্ধৃতিতে ক্ষুধা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করার এ কারণ উদ্ধৃত করেছে যে, এতে দেহশক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। মস্তিষ্কের মনোযোগ বিক্ষিপ্ত হয়ে যায়। এ হাদীস দ্বারা দেহের শক্তি, সুস্থতা ও মনের একাগ্রতা কাম্যবস্ত্ত হওয়া প্রমাণিত হয়। কারণ, অধিক ক্ষুধার কারণে এসবে ব্যাঘাত ঘটে। তবে ক্ষুধার যে ফযীলত বর্ণিত হয়েছে, তা দ্বারা ক্ষুধা ও অসুস্থতা অবশ্য কাম্য হওয়া প্রমাণিত হয় না।

১১. হযরত উকবা বিন আমের (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে-
‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন, তীর নিক্ষেপ করো এবং অশ্বারোহণ করো।’ (তিরমিযী, ইবনে মাজা, আবু দাউদ, দারামী)

ফায়দা: অশ্বারোহণ শিক্ষা করা এক প্রকারের ব্যায়াম। এতে শক্তি বৃদ্ধি পায়।

১২. হযরত উকবা বিন আমের (রাযিঃ) থেকে আরো বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি-
‘যে ব্যক্তি তীর চালনা শিক্ষা করে তা ছেড়ে দিলো সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। অথবা এরূপ বলেছেন যে, সে নাফরমানী করলো।’ (মুসলিম)

ফায়দা: এ হাদীস দ্বারা শক্তি রক্ষার প্রতি যত্নবান হওয়ার কত গুরুত্ব জানা গেলো। আর তা নষ্ট হওয়ার অপকারিতা ৩ নম্বর আয়াতের আলোচনায় এসেছে।

১৩. হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘শক্তিশালী ঈমানদার ব্যক্তি আল্লাহর নিকট দুর্বল ঈমানদারের চেয়ে উত্তম এবং অধিক প্রিয়। তবে সবার মধ্যেই মঙ্গল রয়েছে।’ (মুসলিম)

ফায়দা: শক্তি যখন আল্লাহ তাআলার নিকট এত প্রিয় বস্ত্ত, তাহলে তা টিকিয়ে রাখা, তার বৃদ্ধি ঘটানো এবং যে সমস্ত জিনিস শক্তি হ্রাসকারী, সেগুলোর ব্যাপারে সতর্ক থাকা কাম্য বস্ত্ত হবে। এর মধ্যে আহার অত্যাধিক পরিমাণে কমিয়ে দেওয়া, নিদ্রা বেশী পরিমাণে কমিয়ে দেওয়া, সহবাসে সীমাতিরিক্ত শক্তি ব্যয় করা, এমন বস্ত্ত ভক্ষণ করা, যার দ্বারা অসুখ হয় বা নিষিদ্ধ জিনিস থেকে বিরত না থাকা, যার ফলে রোগ বেড়ে যায় বা রোগ সারতে বিলম্ব হয়- এ সবই অন্তর্ভুক্ত। এর সবগুলো থেকেই বেঁচে চলা দরকার। একইভাবে শক্তি বৃদ্ধির জন্য ব্যায়াম করা, দৌড়ঝাঁপ করা, পায়ে হাঁটার অভ্যাস করা, যে সমস্ত অস্ত্র ব্যবহারে আইনানুগ অনুমতি রয়েছে বা অনুমতি লাভ করা সম্ভব, সেগুলোর অনূশীলন করা- এ সবই অন্তর্ভুক্ত। তবে শরীয়তের সীমারেখা ও আইনের সীমারেখা লংঘন করা উচিত নয়। কারণ, এতে করে শান্তি ও একাগ্রতা-যা শরীয়তে কাম্য বস্ত্ত- বরবাদ হয়ে যায়।

১৪. হযরত আমর ইবনে শুয়াইব (রাযিঃ) স্বীয় পিতা এবং তিনি তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘এক আরোহী এক শয়তান, দুই আরোহী দুই শয়তান এবং তিন আরোহী কাফেলা।’
(মালিক, তিরমিযী, আবু দাউদ, নাসায়ী)
ফায়দা: একথা তখন ছিলো, যখন এক-দুইজন আরোহীর শত্রুর কবলে পড়ার আশংকা ছিলো। এতে প্রমাণিত হয় যে, নিজের রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া জরুরী।

১৫. হযরত আবু সা’লাবা খুশানী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে-
‘মানুষ যখন কোন গন্তব্যে উপনীত হতো, তখন উপত্যকা ও নিম্নভূমিতে বিক্ষিপ্ত হয়ে ছড়িয়ে যেতো, তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করলেন- তোমাদের উপত্যকা ও নিম্নভূমিসমূহে বিক্ষিপ্ত হয়ে যাওয়া শয়তানের পক্ষে থেকে। (কারণ, কারো কোন বিপদ ঘটলে অন্যেরা জানতেও পারবে না।) এরপর থেকে কোন গন্তব্যে উপনীত হলে তারা পরস্পরের সঙ্গে এমনভাবে (কাছাকাছি) মিলতেন যে, এমন বললে যথার্থ হবে যে, তাদের সবাইকে এক কাপড় দিয়ে ঢেকে দিলে তাতে সবারই সংকুলান হবে।’ (আবু দাউদ)

ফায়দা: এ হাদীস দ্বারাও নিজের হেফাজত করা ও সতর্কতা অবলম্বন করার গুরুত্ব প্রমাণিত হয়।

১৬. হযরত আবুস সায়িব (রাযিঃ) হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (এক বিদায়প্রার্থীকে) ইরশাদ করেন-
‘তোমার অস্ত্র সঙ্গে নাও।’
আমার বনু কুরায়যার ব্যাপারে (যারা ইহুদী এবং মুসলমানদের শত্রু ছিলো) আশংকা হয়। সুতরাং ঐ ব্যক্তি অস্ত্র সঙ্গে নিয়ে বাড়ীর উদ্দেশ্যে যাত্রা করলো। (হাদীসটি আরো দীর্ঘ)
(মুসলিম)
ফায়দা: যে ক্ষেত্রে শত্রুর ভয় থাকে সেখানে নিজের হেফাযতের জন্য বৈধ অস্ত্র নিজের সঙ্গে রাখার বৈধতা এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয়।

১৭. হযরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, বদর যুদ্ধের দিন আমরা তিন জন করে লোক একটি করে উটের উপর পালাক্রমে চলছিলাম। হযরত আবু লুবাবা (রাযিঃ) ও হযরত আলী (রাযিঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাহনের অংশীদার ছিলেন।

‘যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লা্ল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হেঁটে চলার পালা আসতো, তখন তাঁরা দু’জন নিবেদন করতেন যে, আমরা আপনার পক্ষ থেকে পায়ে হেঁটে চলবো। তিনি ইরশাদ করতেন, তোমরা আমার চেয়ে অধিক শক্তিশালী নও। আর আমি তোমাদের তুলনায় সওয়াবের কম অভাবী নই। (অর্থাৎ, পায়ে হেঁটে চলার যে সওয়াব রয়েছে, তার প্রয়োজন আমারও রয়েছে।)’ (শরহুস সুন্নাহ)

ফায়দা: এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, পায়ে হাঁটারও অভ্যাস রাখবে। অধিক আরামপ্রিয় হবে না।

১৮. হযরত ফুযালা বিন উবাইদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে-
‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে অধিক আরামপ্রিয় হতে নিষেধ করতেন। তিনি আমাদেরকে কখনো কখনো খালি পায়ে হাঁটারও হুকুম দিতেন।’
(আবু দাউদ)
ফায়দা: উপরের হাদীসের বিষয়বস্ত্ত আর এ হাদীসের বিষয়বস্ত্ত একই। তবে এ হাদীসে খালি পায়ে হাঁটার কথাটি অতিরিক্ত রয়েছে।

১৯. হযরত ইবনে আবি হাদরাদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘মিতব্যয়িতার সাথে জীবন অতিবাহিত করো। মোটা খাও, মোটা পরো এবং খালি পায়ে চলো।’ (জামউল ফাওয়াইদ)

ফায়দা: এতে অনেক উপকারিতা রয়েছে। এর দ্বারা দৈহিক শক্তি বৃদ্ধি, কষ্টসহিষ্ণুতা ও স্বাধীনতা লাভ হয়।

২০. হযরত হুযাইফা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘কোন মুমিনের জন্য সমীচিন নয় নিজেকে লাঞ্ছিত করা। জিজ্ঞাসা করা হলো- হে আল্লাহর রাসূল! এর অর্থ কি? তিনি ইরশাদ করলেন- নিজেকে লাঞ্ছিত করার অর্থ হলো, যে বিপদ সইতে পারবে না তা বহন করতে যাওয়া।’ (তাইসীর, তিরমিযী)

ফায়দা: এর কারণ পরিষ্কার, কেননা এতে করে পেরেশানী বৃদ্ধি পায়। এর মধ্যে এমন সমস্ত কাজই অন্তর্ভুক্ত, যা নিজের আয়ত্বাধীন নয়। বরং কোন বিরোধীর পক্ষ থেকেও যদি কোন উপদ্রব দেখা দেয়, তাহলে প্রশাসনের মাধ্যমে তা প্রতিহত করো। তখন প্রশাসন নিজে এর বিহিত করবে কিংবা তোমাকে প্রতিশোধ নেওয়ার অনুমতি দিবে। আর যদি খোদ সরকারের পক্ষ থেকেই কোন কষ্টকর ঘটনা ঘটে, তাহলে ভদ্রতার সঙ্গে নিজের কষ্টের বিষয়ে সরকারকে অবহিত করো। আর তার পরও যদি মনঃপূত কোন সমাধান না হয়, তাহলে ধৈর্য ধরো। কাজে-কর্মে এবং কথা বা কলম দ্বারা মোকাবেলা করো না এবং বিপদ দূর হওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে দু’আ করো।
এ প্রবন্ধে তিনটি আয়াত ও বিশটি হাদীস তুলে ধরা হলো। শেষের দু’টি হাদীস ছাড়া-যেগুলোর কিতাবের নাম হাদীসের সাথে লিখে দেওয়া হয়েছে- অবশিষ্ট সব কয়টি হাদীস মিশকাত শরীফ থেকে নেওয়া হয়েছে।

নোট-ক: উপরোক্ত আয়াত ও হাদীসসমূহ দ্বারা সুস্থতা, একাগ্রতা ও শক্তি অর্থাৎ, শান্তি ও নিরাপত্তা কাম্য বস্ত্ত হওয়ার বিষয়টি সুস্পষ্ট প্রমাণিত হয়। যার বিস্তারিত আলোচনা জায়গায় জায়গায় করা হয়েছে।

নোট-খ: যে সমস্ত কাজ উপরোক্ত উদ্দেশ্যসমূহে ব্যাঘাত সৃষ্টিকারী হবে, উদ্দেশ্যসমূহ ওয়াজিব হলে এবং ব্যাঘাত সৃষ্টি নিশ্চিত ও তীব্র হলে, সে কাজগুলো হারাম হবে অন্যথায় মাকরূহ হবে।

নোট-গ: বান্দার ইচ্ছার বাইরে কেবলমাত্র আল্লাহর পক্ষ থেকে এমন কোন ঘটনা ঘটলে-যার দ্বারা সুস্থতা, শক্তি ও প্রশান্তি ইত্যাদি নষ্ট হয়-তাহলে এসব বিপদের কারণে সওয়াব লাভ হয়, অদৃশ্যের সাহায্য পাওয়া যায় এবং অস্থিরতাও সৃষ্টি হয় না। বিধায় এ সবের জন্য ধৈর্যধারণ করবে এবং আনন্দিত থাকবে। নবীগণ এবং অলীগণ সবার সঙ্গেই এমনটি হয়েছে। তাদের এসব ঘটনা কুরআন ও হাদীসে প্রচুর পরিমাণে উল্লেখ রয়েছে।

অনলাইন নিউজ পোর্টাল

মন্তব্য করুন: