মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, চৈত্র ৫ ১৪৩০, ০৯ রমজান ১৪৪৫

ইসলাম

নামাজের শারীরিক উপকারীতা

 প্রকাশিত: ১৯:০৭, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০

নামাজের শারীরিক উপকারীতা

সালাতের একাধিক শারীরিক ও শরীরবৃত্তীয় উপকারিতা রয়েছে। সালাতের সময় শরীরের অধিকাংশ পেশী এবং জয়েন্টগুলোর ব্যায়াম হয়। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো রুকু-সিজদার শারীরিক নড়াচড়া হাত-পায়ের, পিছনের এবং পেরিনিয়াম পেশীর (Perineum Muscles) ধারাবাহিক ভাবে ব্যায়াম হয়। সালাত এক ধরনের মানসিক থেরাপি যা আত্মাকে শান্ত ও সুখী রাখে এবং সেইসঙ্গে সমস্ত দুঃচিন্তা থেকে মুক্ত রাখে।

সম্প্রতি রিপোর্টে এসেছে যে, নিয়মিত সালাত আদায়কারী একজন ব্যক্তির সাধারণত বাত জাতীয় রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে, সালাতের কারণে প্রায় সব প্রধান হাড় ও জয়েন্টগুলোতে ব্যায়াম হয়ে থেকে। ডাউফেশ (Doufesh) এর একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, সয়ংক্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের (Parasympathetic) কার্যকলাপ  বৃদ্ধি পায় এবং সহানুভূতিশীল স্নায়ুতন্ত্রের (Sympathetic) কার্যকলাপ হ্রাস পায়, এইভাবে নিয়মিত সালাত আদায় মনের ভার হালকা করতে, উদ্বেগকে হ্রাস করতে এবং কার্ডিওভাসকুলার (Cardiovascular) ঝুঁকি হ্রাসে সহায়তা করে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, সালাতের দাঁড়ানো ও সিজদারত অবস্থায় যথাক্রমে সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন হৃদস্পন্দন হার (HR) তৈরি করছে। নিম্ন এইচআর (HR) একক ব্যক্তির স্বাস্থ্যের জন্য সম্ভাব্য সুবিধার হতে পারে। সালাতের সময় ও সালাতের পরে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে সিস্টোলিক (Systolic) এবং ডায়াস্টোলিক (Diastolic) রক্তচাপ (BP) হ্রাস পায় এবং যথেষ্ট পরিমানে রক্তচাপ (BP) হ্রাস পায় সালাতরত অবস্থায়। প্রকৃতপক্ষে, সালাতের প্রত্যেক কাজে আত্মিক উপকারিতার সাথে স্বাস্থ্যগত উপকারিতাও জড়িত।  প্রত্যেক মুসলমান পুরুষ ও মহিলা সালাতের আগে অজু সম্পাদন করেন যা নবী মুহাম্মদ (সা:) নির্দেশ দিয়েছেন; অজুর মধ্যে সমস্ত মুখমণ্ডল তিনবার ধোয়া একই সাথে গড়গড়ার সাথে কুলি ও নাকে পানি দেয়া তিনবার করে, কনুই পর্যন্ত হাত তিনবার ধোয়া, সমস্ত মাথা একবার মাসেহ করা, কানদ্বয় মাসেহ করা, দুই পায়ের টাখনু পর্যন্ত তিনবার ধোয়া। যখন দিনে ৫ বার অজু করা হয় তখন শরীরের গুরুত্তপূর্ণ অংশ পরিষ্কার করার পাশাপাশি ধুলা, ময়লা এবং অন্যান্য  জিনিস থেকে পরিষ্কার করে এটি শরীরকে নরম এবং সতেজ করে।

রমযান মাসে প্রত্যেক মুসলমানকে অতিরিক্ত ২০ রাকআত নামাজ আদায় করতে হয় যার প্রতি চার রাকআত পরপর ২ মিনিটের একটি বিরতি থাকে। রমযানে আসলে কি হয়? ইফতারের ঠিক আগ মুহূর্তে ক্ষুধার কারনে রক্তে গ্লুকোজ এবং ইনসুলিনের মাত্রা সবচেয়ে কম থাকে। ইফতারের পর গ্রহিত খাদ্য রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা বাড়াতে থাকে আর এর সঙ্গে প্লাজমা ইনসুলিনও। কয়েক ঘন্টার মধ্যে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা অনেক বেড়ে যায় এবং যখনই একজন নামাজ শুরু করে, সেই গ্লুকোজ মাংসপেশী, যকৃত এবং আরও অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। এই ছড়িয়ে পড়া গ্লুকোজ বিপাকের মাধ্যমে কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও পানিতে রুপাস্তর হয় যা নামাজ তথা শারীরিক নড়াচড়ার ফল। আর এটা শরীরকে সাবলীল, দুশ্চিন্তামুক্ত, মানসিক চাপ কমাতে এবং ক্যালরী পোড়াতে সাহায্য করে যা শরীরের জন্য খুবই ভালো। এছাড়াও, তারাবীহ-র নামায একজনের সহনশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে কারন তারাবীহ-র ২০ রাকআত নামায একজনকে একটানা শারীরিক নড়াচড়ার মাধ্যমে আদায় করতে হয়।

এছাড়াও, আমাদের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা একটি রোগে আক্রান্ত হই যার নাম হলো ’অষ্টিওপরোসিস’ (Ostoeporosis), যার কারনে বৃদ্ধ বয়সে আমাদের হাড়ের ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়; হাড় দূর্বল ও চিকন হয়ে যায় আর এর কারন হলো হাড়ে খনিজ উপাদান ও স্পঞ্জিনেসের (Sponginess) অভাব। যাই হোক, নিয়মিত সালাত আদায়ে এই রোগ প্রতিরোধ হয় কারন সালাতে নিয়মিত শারীরিক নড়াচড়া পুনরাবৃত্তি হয় যা টেনডন তথা রগের ক্ষমতা বাড়ায়, হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা সংরক্ষন করে এবং মাংশপেশীর শক্তি ও নমনীয়তা বাড়ায়। একটি  উদ্দীপক হরমোন আছে – এ্যাড্রেনালীন (Adrenaline), যা ছোটখাট কাজের কারনে নিঃসরন হয়। এর নিঃসরন উদ্দীপনা তথা কাজ শেষেও হতে থাকে। ‘সিমপেথেটিক নার্ভাস সিস্টেম’ (Sympathetic Nervous System) আমাদের শরীরে ‘মোটর নার্ভ’ (Motor Nerves) সরবরাহ করে যা শরীরের অভ্যন্তরীন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও হৃদযন্ত্রের পেশীকে নমনীয় করতে সাহায্য করে আর এই নার্ভাস সিস্টেমটি সক্রিয় করতে তারাবীহ-র সালাতই যথেষ্ট। তাই যখন এ্যাড্রেনালিন (Adrenaline) হরমোন নিঃসরন হয়, এটা শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে হৃদস্পন্দনের হারকেও বাড়িয়ে দেয়, হজম প্রক্রিয়া ধীর করে দেয়, রক্তচাপ বাড়ায় এবং গ্লুকোজ সরবরাহের জন্য গ্লাইকোজেনকে (Glycogen) সচল করে দেয় যা টিস্যুকে সক্রিয় করে ও কঙ্কাল-পেশীর ক্লান্তি দূর করে।

একইভাবে সালাতের আরও কিছু উপকারিতা হলো, এটা কলেষ্টেরল কমাতে পারে কারন নিয়মিত ব্যায়াম কলেষ্টেরল (Cholesterol) কমানোর সরচেয়ে ভালো উপায় আর নামাজ হলো সবচেয়ে ভাল ব্যায়ামগুলোর একটি। তাকবীর বলার সময় আমাদের হাত ও কাঁধ নাড়াতে হয় যা ধড়ে রক্ত প্রবাহ বাড়ায় এবং এটা শরীরে রক্ত সরবরাহ ভাল করে। তাশাহুদের সময় বসা অবস্থায় শরীর হালকা ও দুশ্চিন্তামুক্ত হয়। এছাড়াও সালাত শরীরকে অনেক রোগ থেকে রক্ষা করে যেমন: বাত, গিঁটে ব্যাথা, পক্ষাঘাত ইত্যাদি। সিজদাহ-র সময় যখন আমরা কপাল স্পর্শ করি তখন মস্তিষ্কে নতুন করে রক্ত সরবরাহ হয়। অনেক যোগ-ব্যায়ামে এই ধারনাটি প্রয়োগ করা হয়। সালাত ভেইন তথা শিরা ফুলে যাওয়াও প্রতিরোধ করে। বলা হয়েছে যে, নির্ভুলভাবে সালাত আদায় করলে দেখা গেছে যে তা দাঁড়ানো, রুকুতে যাওয়া, সিজদাহ করা এবং প্রতি দুই সিজদাহ-র মাঝখানে বসা ইত্যাদির মাধ্যমে শরীরের নড়াচড়ার মধ্যে একটি চমৎকার  স্বাচ্ছন্দ, সাদৃশ্য ও সমন্বয় তৈরি করে। ফলে, যারা নিয়মিত সালাত আদায় করে তাদের ভ্যারিকোজ তথা শিরা ফুলে যাওয়া রোগ আক্রমন করেনা বললেই চলে। আবার সিজদাহ হলো সালাতের সেই অংশ যেখানে মাথা হৃৎপিন্ডের নিচে অবস্থান করে। তাই, রক্তের নিম্নগতির জন্য এই সময় মাথায় রক্তের গতি বেড়ে যায় যা স্মরনশক্তি, মনোযোগ, মনোজ্ঞানের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভুমিকা রাখে।

এছাড়াও, সিজদাহ-র সময় সাইনাসে প্রবাহের সৃষ্টি হয় (যা  স্বাস্থ্যকর) যার ফলে সাইনাসের ব্যাথা কম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। একজন মানুষ যখন স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস ক্রিয়া চালায় তখন সে টেনে নেওয়া বাতাসের দুই-তৃতীয়াংশ বাতাস বের করে দেয় আর এক-তৃতীয়াংশ বাতাস ফুসফুসে রয়ে যায়। আমরা যখন সিজদাহ-য় যাই তখন পেটের নিচের অংশে চাপ পড়ে যা ডায়াফ্রেমে চাপ দেয়; ডায়াফ্রেম তখন ফুসফুসের নিচের অংশে চাপ দেয় আর আমরা যদি সিজদাহ-র সময় শ্বাস-প্রশ্বাস ক্রিয়া চালাই, সেই এক-তৃতীয়াংশ রয়ে যাওয়া বাতাসও বেড়িয়ে যায় যা একটি স্বাস্থ্যকর ফুসফুসের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এইভাবে সালাত হৃৎপিন্ডের আকৃতিকেও ঠিক রাখে। সালাতের উপকারিতা বিষয়ক এই সেশনটি আমরা শেষ করতে চাচ্ছি এই বলে যে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির (Harvard University) একজন বিশেষজ্ঞ, বেনসন (Benson), উল্লেখ করেছেন যে পবিত্র কুরআন তিলওয়াতের মধ্য দিয়ে তারাবিহ-র সালাত আদায় করতে থাকলে শরীরের উপর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। তার মতে, সালাতের এই ব্যায়াম যা গভীর চিন্তা থেকে মনকে বিরত রাখে তা এক ধরনের বিনোদনের মত কাজ করে। এর ফলে রক্তচাপ কমে এবং অক্সিজেনের শোষন কম হয় কারন হৃৎপিন্ডের ক্রিয়া ও শ্বাসপ্রশ্বাসের হার কমে যায়।

উপরের আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারলাম যে ইসলামে প্রার্থনা তথা নামাজের অগনিত উপকারিতা আছে। সালাতের আরও উপকারিতা জানতে আরও গবেষনার প্রয়োজন। নিয়মিত সালাত আদায় আমাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন নিয়ে আসবে; আমরা ভদ্র, শান্ত, সত্যবাদী এবং কর্মক্ষম থাকতে পারবো । যাই হোক, সালাত আদায়ের আগে আমাদের জানতে হবে সালাত কিভাবে আদায় করতে হয় যাতে করে মুসলিম-অমুসলিম সবাই এটা অনুশীলন করতে পারে।

সালাতের প্রধান প্রধান মুভমেন্ট বা নড়াচড়া যা স্বাস্থ্যগতভাবে উপকারী:

আত্মিক ও স্বাস্থ্যগত উপকারীতা পেতে সালাতকে অবশ্যই সঠিকভাবে এবং পূর্ণ মনোযোগের সঙ্গে পালন করতে হবে। নিচের ছবিতে সালাত আদায়ের প্রধান প্রধান ধাপগুলো এবং ক্রমান্বয়ে এদের বর্ণনা ও স্বাস্থ্যগত উপকারিতা উল্লেখ করা হলো।

দাঁড়ানো অবস্থায় পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত:

সালাত শুরু হয় নিয়্যত করার মাধ্যমে, কান পর্যন্ত দুই হাত তুলে এবং ‘আল্লাহু আকবার’ (আল্লাহ মহান) উচ্চারণের মধ্য দিয়ে। “ওয়াইল ইবনে হুজার (রাঃ) থেকে বর্নিত আছে যে তিনি দেখেছেন নবী করিম (সাঃ) ‘আল্লাহু আকবার’ বলে সালাত শুরু করতেন এবং দুই হাত কান পর্যন্ত তুলতেন। (হাম্মাম থেকে) (সহীহ মুসলিম- ১/৪০১)। মহিলাদের জন্য শুধু কাঁধ পর্যন্ত।” “ওয়াইল ইবনে হুজার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, পবিত্র নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) তাঁকে বলেছেন, “ও ইবনে হুজার, সালাত আদায়ের সময় হাত তোমার কান পর্যন্ত উত্তোলন করো আর  মহিলাদের বুক পর্যন্ত উত্তোলন করা উচিত।” (মাজমাউজ যাওয়াইদ ১/১০৩)। সানার পর উচ্চারন কর, “আউযু বিল্লাহি মিনাশ্ শাইতনির রজিম।” পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা যখন কুরআন পড় তখন বহিষ্কৃত শয়তানের হাত থেকে রক্ষার জন্য আল্লাহর কাছে নিরাপত্তা প্রার্থনা কর (১৬:৯৮)” এবং ইহার পর বল, “বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম”- প্রত্যেক রাকআতের শুরুতে, সুরা ফাতিহার আগে। নবী করিম (সাঃ) তাঁর সালাত শুরু করতেন ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম’ বলে (মারাকি আল ফালাহ ১৪৭)। এরপর সুরা ফাতিহা পাঠ করতেন। সুরা ফাতিহা পাঠের পর পবিত্র কুরআন থেকে যেকোন একটি সুরা পাঠ করতে হয়।

কুরআন তেলাওয়াতের  স্বাস্থ্যগত উপকারিতা: ইরানের দক্ষিন-পূর্বের ‘যাহেদান ইউনিভার্সিটি অব মেডিক্যাল সাইন্স’ – এর একটি গবেষনায় দেখা গেছে যে কুরআন পাঠ (তারতীলের সাথে ) শ্রবনে মানসিক শান্তি ও স্বাস্থ্যের উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটে।

রুকু: দাঁড়ানো অবস্থায় কুরআন পাঠের পরবর্তী ধাপ হলো রুকুতে যাওয়া। এই অবস্থায় দ্ইু হাত হাটুর উপর এবং আঙ্গুলগুলো ছড়িয়ে রাখতে হয়, পা দুটো সোজা এবং মাথা ও পশ্চাৎদেশ একই সমতলে থাকবে এবং কমপক্ষে তিনবার “সুবহানা রাব্বিআল আযিম” বলতে হবে। নবী করিম (সাঃ) যখন রুকুতে থাকতেন তখন তাঁর পিঠ এতটাই সমতলে থাকত যে যদি তাঁর পিঠে পানি ঢেলে দেয়া হতো তা সেখানে রয়ে যেত (ইবনে মাজাহ ৮৭২)। রুকু থেকে উঠার সময় “সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ” এবং তারপর শরীরকে সোজা রেখে বলতে হবে “রব্বানা ওয়া লাকাল হাম্দ” (বুখারী, মুসলিম)। সিজদাহ- এ যাওয়ার সময়, তাশাহুদে এবং সিজদাহ থেকে উঠার সময় পাঠ করতে হবে ‘আল্লাহু আকবার’। নবী করিম (সাঃ) প্রতিবার উঠা-বসার সময় ‘আল্লাহু আকবার’ পাঠ করতেন (মুসলিম ৩৯২)। নবী করিম (সাঃ) সিজদাহ- এর সময় তাঁর মুখমন্ডল দুই হাতের মাঝখানে রাখতেন (মুসলিম ৩৯২)।

রুকুর স্বাস্থ্যগত উপকারীতা: যেহেতু রুকু পিঠ বাঁকা করে এবং পা সোজা রেখে করতে হয় তাই শরীরের নীচের অংশের মাংশপেশীগুলোতে – পশ্চাৎদেশ, ঊরু ও পায়ের আঙ্গুলে – টান পড়ে। বারবার এইধরনের নড়াচড়ায় শরীরের এই মাংপেশীগুলো শক্তিশালী হয়। এছাড়াও, রুকুতে ধড়ের উড়রের দিকে রক্ত সঞ্চালন বেড়ে যায় যা পাকস্থলী, পেট এবং কিডনীর মাংশপেশীর মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে সাহায্য করে। রুকুর সময় পা এবং পাকস্থলীর মধ্যে সমকোন তৈরী হয় যা পাকস্থলীর মাংশপেশীর উন্নতি সাধন করে। এই অবস্থায় শরীরের সবচেয়ে উপরের অংশের মাথা, চোখ, কান, নাক এবং ফুসফুসেও রক্তসঞ্চালন অনেক বেড়ে যায়।

সিজদা: একবার রুকু সম্পন্ন করার পরের ধাপে বসে মাথা নত করে দুই হাত, কপাল, নাক মাটিতে স্পর্শ করতে হয় যা সিজদা নামে পরিচিত। এই অবস্থায় তিনবার তাসবিহ পাঠ করতে হবে । (সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা)। আবদুল্লাহ ইবনে মাসুদ (রা) থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যখন তোমাদের মধ্যে কেউ রুকু করে , তখন তার তিনবার সুবহান রাব্বিয়াল আজীম কথা বলা উচিত এবং যখন কেউ সিজদা করে তখন তার সুবহান রাব্বিয়াল আ’লা বলা উচিৎ। এটি সর্বনিম্ন সংখ্যা (আবু দাউদ ৮৮৫)। সিজদায় পেট এবং মেঝের মধ্যে দূরত্ব রাখুন এবং উভয় পাশ দিয়ে দুই হাত খুব বেশি বিস্তৃত না করে মাটির উপর রাখুন। ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট পিছন থেকে এসেছিলাম (উনি নামাজরত অবস্থায়), তাঁর বগলের সাদা রঙ দেখা যাচ্ছিলো এবং তিনি হাত দুটোকে অনেক দূরে রেখেছিলেন এবং তার পেট মাটি থেকে উত্থাপিত ছিল (আবু দাউদ ৮৯৮)। এখানে উল্লেখ্ করা আবশ্যক যে মহিলারা সিজদার সময় তাদের হাত মাটির সমতলে রাখবে। ইয়াজিদ ইবনে আবী হাবিব বর্ণনা করেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সালাত আদায়কারী দুই নারীর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি তাদের বললেন, “যখন আপনি সিজদা করবেন, তখন আপনার শরীরের অংশটি মাটিতে স্পর্শ করুন কারণ এই দিকগুলির মধ্যে একজন পুরুষের হতে একজন মহিলা ভিন্ন।” (আবু দাউদ ১১৮; সুনানুল কুবরা ২/২২৩)।

সিজদার স্বাস্থ্যগত উপকারিতা:

যেহেতু মাথা হৃদপিন্ডের চেয়ে নিম্ন অবস্থানে থাকে, এটি মাথায় রক্তের সরবরাহ বাড়ায়, যার ফলে মানসিক স্বাস্থ্য যেমন স্মৃতিশক্তি, ঘনত্ব এবং অন্যান্য মানসিক বিষয়গুলোতে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। এছাড়া, সিজদার সময় এবডোমিনাল ভিসরা (Abdominal Visra) পাতলা পর্দা (Diaphram) এর উপর চাপ প্রয়োগ করে যা ফুসফুসের নিম্ন অংশে এবং নিচের লোব (Lobe) এ চাপ দেয় যেটা ফুসফুসের জন্য স্বাস্থ্যকর।

সালাতের চূড়ান্ত পর্যায়ে অর্থাৎ শেষ রাকাতে দুই সিজদার পর বা তাশাহহুদ পাঠের সময় বসার সুন্নাত হলো, বাম পা মাটিতে রেখে তার উপর বসা এবং ডান পা এমন ভাবে রাখা যাতে গোড়ালি উপরের দিকে থাকে আর পায়ের আঙ্গুলগুলো নামাজের দিকে (সামনের দিকে) থাকে। এই হাদীসটি হযরত ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীস গ্রন্থ আন-নাসাই ১/২৪৮ নেয়া হয়েছে এবং নারীদের ক্ষেত্রে তারা তাদের বাম নিতম্বের উপর বসবে  এবং উভয় পা ডান দিকে বাহিরের দিকে রাখবেন। তাদের উভয় হাত উরুতে রাখতে হবে এবং তাদের আঙ্গুলগুলো একসঙ্গে বন্ধ রাখতে হবে।

তাশাহুদের স্বাস্থ্যগত উপকারিতা:

তাশাহুদে পায়ের আঙ্গুলের বিস্তার, হাঁটু কোমরের সাথে ঘনিষ্ঠ থাকার মতো কসরত থাকে যা কোর (Core) পেশীগুলিকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করে।
অবশেষে, দরূদ ও দোয়া পড়ার পর, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ বলে ইমামের সাথে সালাম ফিরিয়ে সালাত শেষ করতে হবে। ইতবান বিন মালিক (রাঃ) বর্ণনা করেন, “আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে সালাত আদায় করতাম এবং তাঁর সাথে সালাম ফিরিয়ে সালাত শেষ করতাম (বুখারী ৮৩৮)।

অনলাইন নিউজ পোর্টাল

মন্তব্য করুন: