বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, চৈত্র ১৪ ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫

এডিটর`স চয়েস

ধৈর্য ও নামায যাবতীয় সংকটের প্রতিকার

 প্রকাশিত: ২৩:২০, ৩০ অক্টোবর ২০২০

ধৈর্য ও নামায যাবতীয় সংকটের প্রতিকার

হে বিশ্বাস স্থাপনকারীগণ, তোমরা ধৈর্য ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলগণের সঙ্গী।
সূরা আল বাক্বারাহ, আয়াত ১৫৩।

ধৈর্য ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর,”- এ আয়াতে বলা হয়েছে যে, মানুষের দুঃখ-কষ্ট, যাবতীয় প্রয়োজন ও সমস্ত সংকটের নিশ্চিত প্রতিকার দু’টি বিষয়ের মধ্যেই নিহিত। একটি ‘সবর’ বা ধৈর্য এবং অন্যটি “নামায”। বর্ণনারীতির মধ্যে শব্দটিকে বিশেষ কোন বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট না করে ব্যাপক অর্থে ব্যবহার করার ফলে এখানে যে মর্মার্থ দাঁড়ায় তা এই যে, মানব জাতির যে কোন সংকট বা সমস্যার নিশ্চিত প্রতিকারই ধৈর্য ও নামায। যে কোন প্রয়োজনেই এ দু’টি বিষয়ের দ্বারা মানুষ সাহায্য লাভ করতে পারে। তফসীরে মায্হারীতে শব্দ দু’টির ব্যাপক অর্থে ব্যবহারের তাৎপর্য এভাবেই বর্ণিত হয়েছে। প্রসঙ্গতঃ স্বতন্ত্রভাবে দুটি বিষয়েরই তাৎপর্য অনুধাবন করা যেতে পারে।

সবর-এর তাৎপর্যঃ ‘সবর’ শব্দের অর্থ হচ্ছে সংযম অবলম্বন ও নফস্-এর উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রন লাভ।
কোরআন ও হাদীসের পরিভাষায় ‘সবর’-এর তিনটি শাখা রয়েছে। (এক) নফসকে হারাম এবং না-জায়েয বিষয়াদি থেকে বিরত রাখা (দুই) এবাদত ও আনুগত্যে বাধ্য করা এবং (তিন) যে কোন বিপদ ও সংকটে ধৈর্যধারণ করা। অর্থাৎ, যে সব বিপদ-আপদ এসে উপস্থিত হয় সেগুলোকে আল্লাহর বিধান বলে মেনে নেয়া এবং এর বিনিময়ে আল্লাহর তরফ থেকে প্রতিদান প্রাপ্তির আশা রাখা। অবশ্য কষ্টে পড়ে যদি মুখ থেকে কোন কাতর শব্দ উচ্চারিত হয়ে যায়, কিংবা অন্যের কাছে তা প্রকাশ করা হয়, তবে, তা ‘সবর’-এর পরিপন্থী নয়। -(ইবনে কাসীর, সায়ীদ ইবনে জুবায়ের থেকে)।

‘সবর’-এর উপরোক্ত তিনটি শাখাই প্রত্যেক মুসলমানের অবশ্য পালনীয় কর্তব্য। সাধারণ মানুষের ধারণায় সাধারণতঃ তৃতীয় শাখাকেই সবর হিসাবে গণ্য করা হয়। প্রথম দু’টি শাখা যে এক্ষেত্রে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ, সে ব্যাপারে মোটেও লক্ষ্য করা হয় না। এমনকি এ দু’টি বিষয়ও যে ‘সবর’-এর অন্তর্ভুক্ত এ ধারণাও যেন অনেকের নেই। কোরআন-হাদীসের পরিভাষায় ধৈর্যধারণধারী বা ‘সাবের’ সে সমস্ত লোককেই বলা হয়, যারা উপরোক্ত তিন প্রকারেই ‘সবর’ অবলম্বন করে। কোন কোন বর্ণনায় রয়েছে, হাশরের ময়দানে ঘোষণা করা হবে, “ধৈর্যধারণকারীরা কোথায়?” একথা শোনার সংগে সংগে সেসব লোক উঠে দাঁড়াবে, যারা তিন প্রকারেই সবর করে জীবন অতিবাহিত করে গেছেন। এসব লোককে প্রথমেই বিনা হিসাবে বেহেশতে প্রবেশ করার অনুমতি দেয়া হবে। ‘ইবনে-কাসীর’ এ বর্ণনা উদ্ধৃত করে মন্তব্য করেছেন যে, কোরআনের অন্যত্র-
অর্থাৎ, সবরকারী বান্দাগণকে তাদের পুরস্কার বিনা হিসাবে প্রদান করা হবে- এ আয়াতে সেদিকেই ইশারা করা হয়েছে।

নামায: মানুষের যাবতীয় সমস্যা ও সংকট দূর করা এবং যাবতীয় প্রয়োজন মেটানোর ক্ষেত্রে দ্বিতীয় পন্থাটি হচ্ছে নামায।
‘সবর’-এর তফসীর প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, প্রকৃতপক্ষে সর্বপ্রকার এবাদতই সবরের অন্তর্ভুক্ত। কিন্ত্ত এরপরেও নামাযকে পৃথকভাবে উল্লেখ করার কারণ হচ্ছে যে, নামায এমনই একটি এবাদত, যাতে ‘সবর’ তথা ধৈর্যের পরিপূর্ণ নমুনা বিদ্যমান। কেননা, নামাযের মধ্যে একাধারে যেমন নফস তথা রিপুকে আনুগত্যে বাধ্য রাখা হয়, তেমনি যাবতীয় নিষিদ্ধ কাজ, নিষিদ্ধ চিন্তা এমনকি অনেক হালাল ও মোবাহ বিষয় থেকেও সরিয়ে রাখা হয়। সেমতে নিজের ‘নফস’-এর উপর পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রন লাভ করে সর্বপ্রকার গোনাহ্ ও অশোভন আচার-আচরণ থেকে নিজেকে দুরে সরিয়ে রাখা এবং ইচ্ছার বিরুদ্ধে হলেও নিজেকে আল্লাহর এবাদতে নিয়োজিত রাখার মাধ্যমে ‘সবর’-এর যে অনুশীলন করতে হয়, নামাযের মধ্যেই তার একটা পরিপূর্ণ নমুনা ফুটে উঠে।
যাবতীয় প্রয়োজন পূর্ণ করা এবং সর্বপ্রকার বিপদাপদ থেকে মুক্তিলাভ করার ব্যাপারে নামাযের একটা বিশেষ ‘তাছীর’ বা প্রভাবও লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ বিশেষ রোগে কোন কোন অষুধী গুল্ম-লতা ও ডাল-শিকড় গলায় ধারণ করায় বা মুখে রাখায় যেমন বিশেষ ফল লক্ষ্য করা যায়, লোহার প্রতি চুম্বকের বিশেষ আকর্ষণ যেমন স্বাভাবিক, কিন্ত্ত কেন এরুপ হয়, তা যেমন সবিস্তারে ব্যাখ্যা করে বলা যায় না, তেমনি বিপদ মুক্তি এবং যাবতীয় প্রয়োজন মিটানোর ক্ষেত্রে নামাযের তাছীরও ব্যাখ্যা করা যায় না। তবে এটা পরীক্ষিত সত্য যে, যথাযথ আন্তরিকতা ও মনোযোগ সহকারে নামায আদায় করলে যেমন বিপদমুক্তি অবধারিত, তেমনি যে কোন প্রয়োজন পূরণের ব্যাপারেও এতে সুনিশ্চিত ফল লাভ হয়।
হুযূর (সাঃ)-এর পবিত্র অভ্যাস ছিল যে, যখনই তিনি কোন কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হতেন, তখনই নামায আরম্ভ করতেন। আর আল্লাহ তা’আলা সে নামাযের বরকতেই তার যাবতীয় বিপদাপদ দূর করে দিতেন। হাদীস শরীফে বর্ণিত রয়েছে-
অর্থাৎ, মহানবী (সাঃ)-কে যখনই কোন বিষয় চিন্তিত করে তুলত, তখনই তিনি নামায পড়তে শুরু করতেন।

অনলাইন নিউজ পোর্টাল

মন্তব্য করুন: