শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, বৈশাখ ৬ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

দৈনন্দিন জীবনে রাসূল (সা.)

 প্রকাশিত: ০৭:২৫, ১৬ জুলাই ২০২১

দৈনন্দিন জীবনে রাসূল (সা.)

মানব ইতিহাসের অন্যতম প্রভাবশালী এক ব্যক্তিত্ব আল্লাহর রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সা.)। পৃথিবীর মানুষের উপর তার মত প্রভাব রাখা ব্যক্তিত্ব নেই বললেই চলে।

১৯৭৮ সালে মার্কিন গবেষক মাইকেল এইচ হার্ট বিশ্বের শীর্ষ একশত প্রভাবশালী ব্যক্তিদের জীবনী নিয়ে ‘দ্যা হান্ড্রেড’ নামে একটি বই লিখেন। এতে তিনি সকলের শীর্ষ স্থানে রাসূল (সা.) কে রেখেছেন। লেখকের মতে, আধ্যাত্মিক ও বস্তুগত উভয় দিক থেকেই রাসূল (সা.) পৃথিবীর সর্বোচ্চ সাফল্যের অধিকারী ব্যক্তিত্ব।

কেমন ছিল পৃথিবীর মানুষের উপর সবচেয়ে প্রভাবশালী এবং সর্বোচ্চ সাফল্যের অধিকারী এ মহামানুষের দৈনন্দিন জীবন?

হাদীস, সিরাত ও অন্যান্য ঐতিহাসিক সূত্র অনুযায়ী এখানে তা উল্লেখ করা হলো।

 ভোর ও সকাল
ফজরের সময় রাসূল (সা.) তাহাজ্জুদের নামাজ আদায়রত অবস্থাতে জেগেই থাকতেন। কখনো কখনো তাহাজ্জুদের শেষে ফজরের আগে একটু বিশ্রাম নিতেন। তাহাজ্জুদের নামাজ আদায়ের জন্য উঠেই তিনি ব্যক্তিগত প্রয়োজন পূরণ শেষে মিসওয়াক করে নামাজের জন্য প্রস্তুত হতেন। ফজরের আজান হলে তিনি নামাজের জন্য মসজিদে যেতেন।

ফজরের পর জামায়াতে আসা সাহাবীদের সাথে রাসূল (সা.) বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করতেন। সূর্যোদয় পর্যন্ত মসজিদেই তিনি অবস্থান করতেন। 

সূর্যোদয়ের পর মসজিদ থেকে তিনি ঘরে ফিরতেন এবং পরিবারের কাজে সময় দিতেন। এসময় কোনো লোক তার কাছে কোনো বিষয়ে পরামর্শের জন্য গেলে তিনি তার সমস্যা শুনে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতেন।

পরিবারের সঙ্গে কিছু সময় কাটানোর পর রাসূল (সা.) ঘর থেকে বের হতেন এবং বাইরে লোকজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন। কখনো কখনো তিনি এ সময় তার কন্যা হযরত ফাতেমা (রা.) এর বাড়িতে যেতেন এবং তাদের খোঁজখবর নিতেন। 

এরপর যোহরের পূর্বে ঘরে এসে রান্না করা, ছাগলের দুধ দোহানোসহ ইত্যাদি ঘরের বিভিন্ন কাজে স্ত্রীদের সাহায্য করতেন। এরপর কিছু খেয়ে যোহরের আগপর্যন্ত কিছুটা সময় তিনি বিশ্রাম নিতেন।

 দুপুর ও বিকাল
যোহরের সময় তিনি আবার মসজিদে এসে নামাজ পড়তেন। যোহরের পর উপস্থিত সাহাবীদের সঙ্গে দ্বীনি ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেন। 

এরপর তিনি আবার ঘরে আসতেন এবং পরিবারের সাথে কিছু সময় কাটাতেন। পরিবারের সাথে কিছু সময় কাটানোর পর মদীনা রাষ্ট্রের অধিপতি হিসেবে বিবিধ বিষয়ে ব্যবস্থাপনা ও সমস্যা সমাধানের জন্য তিনি তার সাহাবীদের নিয়ে বের হতেন। 

আসরের সময় তিনি মসজিদে এসে নামাজ আদায় করতেন এবং কিছু সময়ের জন্য ঘরে ফিরতেন।

 সন্ধ্যা ও রাত
মাগরিবের সময় আজান হলে রাসূল (সা.) মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করতেন। এরপর ঘরে ফিরে তিনি খেতে বসতেন।

খাবার সময় পরিবারের সকলকে নিয়ে তিনি একসাথে খেতেন। খাবার নিয়ে কখনোই রাসূল (সা.) কোনো অভিযোগ করতেন না। সকলের সাথে মিলে একত্রে আনন্দের সঙ্গে রাসূল (সা.) খাবার গ্রহণ করতেন।

কখনো কখনো সাহাবীরাও রাসূল (সা.) এর ঘরে এসে তার সাথে একত্রে খেতে বসতেন। এসময় তারা দ্বীনি ও অন্যান্য বিষয় নিয়েও আলোচনা করতেন।

ইশার সময় রাসূল (সা.) মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করতেন। নামাজের শেষে ঘরে ফিরে তিনি সরাসরি ঘুমাতে যেতেন। এসময় তিনি কোনো প্রকার আলাপ-আলোচনায় যেতে পছন্দ করতেন না।

রাতের শেষভাগে রাসূল (সা.) ঘুম থেকে উঠে প্রস্তুত হয়ে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতেন। এরপর তিনি নামাজের জন্য তার ঘরের লোকদের ডেকে দিতেন এবং ফজরের আগপর্যন্ত নামাজ আদায় করতেন বা কিছু সময় বিশ্রাম নিতেন।

এভাবে ইবাদত, পরিবারের প্রতি দায়িত্ব ও সমাজের প্রতি কর্তব্য পালনের ব্যস্ততার মধ্য দিয়েই পার হতো রাসূল (সা.) এর দৈনন্দিন জীবন। অলস হয়ে না থেকে রাসূল (সা.) প্রতিটি দিনের প্রতিটি মুহূর্তকেই কাজে লাগাতেন।

অনলাইন নিউজ পোর্টাল

মন্তব্য করুন: