শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, বৈশাখ ৬ ১৪৩১, ১১ শাওয়াল ১৪৪৫

আন্তর্জাতিক

থমকে যাওয়া শিক্ষা সচল করতে সতর্ক বিশ্ব

 প্রকাশিত: ১০:০৬, ২৪ জানুয়ারি ২০২১

থমকে যাওয়া শিক্ষা সচল করতে সতর্ক বিশ্ব

করোনাভাইরাস মহামারিতে বিশ্বজুড়ে এই প্রথমবারের মতো সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থায় অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এর আগে পুরো পৃথিবীতে সব অঞ্চলে একযোগে এমন অভাবনীয় পরিস্থিতি দেখা যায়নি। প্রায় সব দেশেই শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ছেদ পড়েছে করোনার কারণে। এখন বিভিন্ন দেশ ধীরে ধীরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। তবে করোনার তীব্রতাকে মাথায় রেখেই সাজাতে হচ্ছে পুরো কৌশল।

জাতিসংঘের শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মহামারির শুরুতে বিশ্বের মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ৯০ শতাংশের শিক্ষা গ্রহণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা, আফ্রিকা—সব অঞ্চলেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল সরকারগুলোকে। যদিও অপেক্ষাকৃত উন্নত দেশগুলো একপর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে বাড়ি থেকেই শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নেয়। তবে তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক সেই পড়াশোনায় শিক্ষার সামগ্রিক অর্জন সম্ভব হচ্ছে না। আবার তথ্যপ্রযুক্তিতে পিছিয়ে থাকা দেশের পক্ষে সেই সুবিধাটুকুও কাজে লাগানো সম্ভব নয়।

যুক্তরাষ্ট্রে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলছে ক্লাস। সামার স্কুল, মন্টারিরি পার্ক, ক্যালিফোর্নিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ৯ জুলাই

বিশ্বব্যাংকের ওয়েবসাইটে সম্প্রতি প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, করোনা মহামারির আগেই পুরো পৃথিবীতে প্রায় আড়াই কোটি শিশু স্কুলে যাওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত ছিল। করোনাকালে বিভিন্ন দেশে স্কুল থেকে ঝরে পড়া শিশুর সংখ্যা তাই আরও বাড়বে। এ ছাড়া উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশে এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে কন্যাশিশুদের ওপর। বেড়ে যাবে বাল্যবিবাহ ও অপরিণত বয়সে মা হওয়ার হার। এর সামগ্রিক প্রভাব পড়বে একটি অঞ্চলের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অর্থনৈতিক খাতে।

সেভ দ্য চিলড্রেনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, করোনার কারণে প্রায় ৯০ লাখ শিশু শিক্ষাব্যবস্থা থেকে ঝরে যেতে পারে।

বিশ্বব্যাংকের তথ্য বলছে, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে মোট শিশুর ৫৩ শতাংশ দারিদ্র্যের শিকার হচ্ছে মহামারির কারণে। এখনো বিশ্বজুড়ে প্রায় ৭০০ মিলিয়ন শিশু বাড়ি থেকে শিক্ষা লাভ করছে। উন্নত-অনুন্নত ভেদে বিভিন্ন দেশে স্কুল বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মূলত অনলাইনে নিজেদের কার্যক্রম চালু রেখেছে। উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে চালানো সমীক্ষায় দেখা গেছে, শিক্ষা কার্যক্রমের এই ব্যাঘাত শিক্ষার্থীদের দক্ষতায় বিশাল ঘাটতি সৃষ্টি করছে এবং সর্বোপরি শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈষম্য বাড়াচ্ছে।

তার পরও মূলত স্বাস্থ্যগত হুমকির কারণেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অন্ততপক্ষে অবকাঠামোগতভাবে বন্ধ রাখার মতো সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে বিভিন্ন দেশের সরকারগুলোকে। ইউরোপ-আমেরিকায় অবশ্য গ্রীষ্মকালীন ছুটি শেষ হওয়ার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সময়টা ছিল গত বছরের সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে। তখন ইউরোপ-আমেরিকায় করোনায় আক্রান্তের হার তুলনামূলকভাবে নিম্নমুখী ছিল। করোনায় মৃত্যুর হারও কিছুটা কমে এসেছিল। সব ধরনের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করেই ইউরোপ-আমেরিকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। বিশেষ করে মাস্ক পরিধান ও সামাজিক দূরত্বের বিষয়টি কঠোরভাবে নিশ্চিত করা হয়েছিল।

কিন্তু শীতের শুরুতে করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ ইউরোপ-আমেরিকায় আঘাত হেনেছে। আবার করোনায় শনাক্ত ও মৃত্যুর হার বেড়ে চলেছে। ফলে ইউরোপের বেশির ভাগ দেশ আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানিসহ ইউরোপের বেশির ভাগ দেশকে ফিরে যেতে হয়েছে ভার্চ্যুয়াল ক্লাসে। স্কুল বা বিশ্ববিদ্যালয়—পশ্চিমের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই এ অবস্থা এখন। যুক্তরাষ্ট্রও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনরায় খোলার বদলে বর্তমানে করোনার টিকাদান কার্যক্রম জোরদার করতে চাইছে। আমেরিকা-ইউরোপের সব দেশের সরকারগুলোর মূল ভরসা এখন করোনার টিকার ওপর। একটি নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আবার খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।

তবে স্কুল বা অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়গুলো নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন জানিয়েছে, সব ধরনের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে বিভিন্ন রাজ্যের নানা অঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে দেশের স্বাস্থ্য বিভাগ মূল ভূমিকা রাখবে। তবে শিক্ষার্থীদের শিক্ষণপ্রক্রিয়া চালু রাখতে অর্থ ঋণ প্রদানসহ নানা পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। এ-সংক্রান্ত বিবৃতি হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে

অনলাইন নিউজ পোর্টাল

মন্তব্য করুন: