বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৈশাখ ১২ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনে করণীয়

 প্রকাশিত: ১০:৩৪, ১০ জুলাই ২০২১

জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনে করণীয়

হিজরি সনের শেষ মাস জিলহজ। এ মাসের ৯ তারিখে আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হওয়ার মাধ্যমে হজ ও ১০ তারিখ কুরবানি করবে মুসলিম উম্মাহ। ত্যাগ-তিতিক্ষার এ মাসে ধর্মপ্রাণ মুসলমান নফসের খাহেশাতকে কুরবানি করে।

এ মাসে সংঘঠিত হয়েছে দুনিয়ার সেরা আত্মত্যাগ। আল্লাহর নির্দেশ পালনে নিজের প্রাণপ্রিয় সন্তান হজরত ইসমাইল আলাইহিস সালামকে কুরবানির মাধ্যমে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম। এ মাসের প্রথম দশ দিন বছরের মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ দশ দিন৷ সূরা ফজরে আল্লাহ এই দশ দিনের শপথ করেছেন। রাসূল (সা) জিলহজ্জের এই দশ দিন সম্পর্কে বলেছেন, 

"এ সময়ে করা ভালো কাজ আল্লাহর কাছে অন্য যেকোনো সময়ের ভালো কাজ অপেক্ষা সর্বোত্তম।"
 এই কথা শুনে সাহাবীরা আল্লাহর রাসূল (সা) কে প্রশ্ন করলেন, এর সওয়াব কি আল্লাহর পথে জিহাদ করার চাইতেও বেশি? রাসূল (সা) উত্তর দিলেন,

"যে জিহাদে কোনো ব্যক্তি তার সমস্ত সম্পদ এবং নিজেকে উৎসর্গ করে এবং কর্পদকশূন্য অবস্থায় ফিরে আসে - সেটি ছাড়া আর সবকিছুর চাইতে এ দশদিনের সওয়াব বেশি৷"

যার পক্ষে এরকম ত্যাগ করার সামর্থ্য নেই তাহলে সে কি করবে? এই দশদিন তার জন্যই। কেননা এই দশদিনের সকল সৎ কাজ আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয়। এখন আমাদের কী করা উচিত? 

১. পূর্ণ মনোযোগ সহকারে ফরজ সালাত আদায় করুন। সাধারণভাবে যেসব বাধ্যগত কাজ করে থাকেন সেগুলো সম্পন্ন করুন। বাধ্যতামূলক যেকোনো কাজই হতে পারে - যেমন: দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়, পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার, তাদের প্রতি দায়িত্ব পালন....  সবকিছু সুন্দরভাবে করার চেষ্টা করুন। সবকিছুই করবেন শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য যেন তিনি আপনার উপর সন্তুষ্ট হন। যদি আগে যাকাত না পরিশোধ করে থাকেন তবে যাকাত দিন। এটা নিশ্চিত করুন যে আপনার উপর ফরজ হওয়া সব ইবাদাত আপনি ঠিকভাবে পালন করছেন। এরপর ঐচ্ছিক কাজগুলো করুন। ফরজের পাশাপাশি সুন্নাত সালাত আদায়ের দিকে নজর দিন। দিন এবং রাতের সুন্নাত সালাত আদায় করুন। প্রতিদিন একটু একটু করে কুরআন তিলাওয়াত করুন। তিলাওয়াতের পরিমাণ গতদিনের চাইতে সামান্য বাড়ান। অথবা এই দশদিনে সম্পূর্ণ কুরআন তিলাওয়াতের মিশনও হাতে নিতে পারেন। 

 ২. রোজা রাখুন। আল্লাহর রাসূল (সা) জিলহজ্জ মাসের এ সময়ে রোজা রাখতেন। শুধুমাত্র দশম দিনে আপনি রোজা রাখতে পারবেন না। নবম কিংবা আরাফা'র দিনে রোজা রাখার ব্যাপারে বেশ কিছু নির্দেশনা এসেছে। আরাফা'র দিন খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। এ দিনে আল্লাহ আরাফা'র প্রান্তরে দাঁড়িয়ে থাকা হাজীদের সম্পর্কে তাঁর ফেরেশতাদেরকে বলেন, "আমার বান্দাদের দেখো! তারা ধুলি মলিন হয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। ওহে ফেরেশতাগণ! তোমরা সাক্ষী থেকো যে আমি আমার বান্দাদের ক্ষমা করে দিলাম।" 

  এই দিনটি শয়তানের জন্য ভীষণ যন্ত্রণার কারণ এ দিনে আল্লাহ অসংখ্য আত্মাকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে দেন। আপনি যদি হাজীদের একজন না হয়ে থাকেন এবং হজে অংশগ্রহণ না করেন - তবে আপনার কাজ হচ্ছে রোজা রাখা। আরাফা'র দিনের রোজার ফলে পূর্বের আরাফা থেকে পরবর্তী আরাফা পর্যন্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। কী চমৎকার উপহার! রোজা রাখার পাশাপাশি আপনি অন্য রোজাদারকে ইফতারও করাতে পারেন। এটি হতে পারে আরেকটি ভালো কাজের উদাহরণ। 

৩. বেশি বেশি যিকির করুন। সূরা হজ্জ-এ আল্লাহ বলেছেন, 

 "যাতে তারা তাদের কল্যাণের স্থান পর্যন্ত পৌছে এবং নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম স্মরণ করে তাঁর দেয়া চতুস্পদ জন্তু যবেহ করার সময়। অতঃপর তোমরা তা থেকে আহার কর এবং দুঃস্থ-অভাবগ্রস্থকে আহার করাও।" 
  এখানে জিলহজ্জের ১০ দিনের কথাই বলা হয়েছে। এ কারণে বেশি বেশি তাসবীহ- 'সুবহান আল্লাহ', তাহমিদ- 'আলহামদুলিল্লাহ', তাহলিল- 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' এবং তাকবীর- 'আল্লাহু আকবার' পড়ুন। এ শব্দগুলো সহজ ও উচ্চারণে হাল্কা। যেকোনো স্থানে, যেকোনো পরিস্থিতিতে আপনি এ কাজ করতে পারেন। এভাবে যে কেউই আল্লাহকে স্মরণ করতে পারে। 

 ৪. সর্বশেষ বিষয় হলো আপনার আশপাশের মানুষের সাথে খুশি, আনন্দ ভাগাভাগি করুন। যদি কোনো কাজটি আল্লাহর পছন্দনীয় হয়ে থাকে তবে জিলহজ্জে সেই কাজের দরুন আল্লাহ বেশি খুশি হবেন। ভালো কাজ এবং সুন্দর কথা আপনার প্রিয়জন, পরিবারের সদস্যদের মাঝে ছড়িয়ে দিন। তাদেরকে খুশি রাখুন। 

আগামী দশদিনে আমাদের সকল আমলগুলো আল্লাহ কবুল করুন। আমীন।

অনলাইন নিউজ পোর্টাল

মন্তব্য করুন: