শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, বৈশাখ ৬ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বুড়িগঙ্গা-তুরাগ তীরে মিলবে মুক্ত হাওয়া

 প্রকাশিত: ২২:১৫, ১৮ নভেম্বর ২০২০

বুড়িগঙ্গা-তুরাগ তীরে মিলবে মুক্ত হাওয়া

কৃষ্ণচূড়া, কনকচূড়া, রাধাচূড়া, বকুল, নিম, নাগেশ্বর, জারুল, পলাশ, কাঠবাদাম, শিউলি, চম্পা, কদম, কামিনী- এমন অসংখ্য ফুলের গাছ শোভা ছড়াবে বুড়িগঙ্গা-তুরাগের দুই তীরে। সুগন্ধ বিলাবে তীরের মানুষের মধ্যে। আর কিছুদিন গেলেই এমন সৌন্দর্য হাতছানি দিয়ে ডাকবে বুড়িগঙ্গা-তুরাগ পাড়ের লোকজনকে। যারা একটু মুক্ত হাওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত ছটফট করছেন, একটু নির্মল বাতাস গ্রহণের জন্য যারা দিনের পর দিন পার করছেন; সেই নগরবাসীর একটি অংশ এমন সৌন্দর্যের দেখা পাবেন খুব শিগগিরই। এ সৌন্দর্য আর স্বস্তি এনে দেবে বদলে যাওয়া বুড়িগঙ্গা ও তুরাগের দুই তীর। 


সরকার রাজধানীর চারপাশে বয়ে যাওয়া বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীর দুই পাশের অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে তীর ফিরিয়ে দেয়ার যে মহাপরিকল্পনা নিয়েছিল এখন তা জোরেশোরে বাস্তবায়নের কাজ চলছে। জানা গেছে, এসব নদীর তীর স্থায়ী দখলমুক্ত রাখতে সীমানা প্রাচীর ও ডিজিটাল ওয়াকওয়ে নির্মাণের প্রকল্প হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। এছাড়া সরকারের বহুমুখী উদ্যোগে বুড়িগঙ্গা ও তুরাগের পানিতে ফিরেছে স্বচ্ছতা। সেই সঙ্গে কমেছে দূর্গন্ধও।

 

সরেজমিন দেখা যায়, রামচন্দ্রপুর মৌজার তুরাগ তীরে উদ্ধার করা জমিতে বসানো হচ্ছে ওপরে ১০ ফুট ও মাটির নিচে ১৬ ফুটের বিশাল কংক্রিটের সীমানা পিলার। একই সঙ্গে চলছে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজও। দিনরাত সমানে চলছে এ কর্মযজ্ঞ। এরই মধ্যে কামরাঙ্গীর চরসহ প্রকল্পের বিভিন্ন এলাকায় কৃষ্ণচূড়া, কনকচূড়া, রাধাচূড়া, বকুল, নিম, নাগেশ্বর, জারুল, পলাশ, কাঠবাদাম, শিউলি, পম্পা, কদম, কামিনী ফুলসহ প্রায় এক হাজার গাছ লাগানো হয়েছে। 

 

বিআইডব্লিউটিএর নির্বাহী প্রকৌশলী ও উপ-প্রকল্প পরিচালক মতিউল ইসলাম জানান, প্রকল্পের আওতায় ঢাকা নদীবন্দর এলাকায় ৩ হাজার ৮০৩টি সীমানা পিলারের ৫ হাজার ২৬৬টি পাইলের মধ্যে ২ হাজার ৫০টি পাইল ও ৫০০ পিলার নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। টঙ্গী নদীবন্দর এলাকায় ২ হাজার ৬টি সীমানা পিলারের মধ্যে ২ হাজার ৬৬২টি পিলারের ১৩০টি পাইলের কাজ শেষ হয়েছে। 

 

তিনি জানান, রামচন্দ্রপুর থেকে বসিলা ও রায়েরবাজার খাল থেকে কামরাঙ্গীর চর পর্যন্ত সাড়ে ৩ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে, কিওয়াল, ওয়াকওয়ে অন পাইল ইত্যাদি নির্মাণকাজ চলছে। এর মধ্যে এক কিলোমিটার কিওয়ালের পাইলিং ও ৬৫০ মিটার কিওয়ালের বেইজ কাস্টিং শেষ হয়েছে। ওয়াকওয়ে অন পাইলের কাজ চলমান রয়েছে। ওয়াকওয়ে অন পাইলের ৯৭০টি পাইলের মধ্যে ৪৫০টি (আড়াই কিলোমিটার) পাইলের কাজ শেষ হয়েছে।

 

প্রকল্প কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্পের মধ্যে ছয়টি পন্টুন ও তীরভূমিতে চারটি ইকো পার্ক ছাড়াও বসার বেঞ্চ, পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা, ভারী যানবাহনের জন্য ১৯টি জেটি নির্মাণ, বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ নদের তীরে উন্নয়নকাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। 

 

এদিকে, নদীগুলোর তীরভূমি দখলমুক্ত রাখতে অভিযান অব্যাহত রেখেছে বিআইডব্লিউটিএ। পুনরায় দখল ঠেকাতে সীমানা খুঁটি স্থাপন ও ওয়াকওয়েসহ নদীর তীরভূমি উন্নয়নে বিশাল প্রকল্প গ্রহণ করেছে সরকার। এ প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে নদীর সীমানা নির্ধারণে সীমানা খুঁটি স্থাপন, ৫০ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণ, ১৪টি জেটি তৈরিসহ নদী তীরভূমিকে পর্যটন স্থান হিসেবে গড়ে তোলা। প্রকল্পের অংশ হিসেবে এরই মধ্যে সীমানা খুঁটি বসানোর কাজ শেষ হয়েছে।

 

প্রকল্প পরিচালক নুরুল আলম  বলেন, বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীর দুই তীরে সীমানা খুঁটি স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। এরই মধ্যে ঢাকা উদ্যান থেকে চন্দ্রিমা মডেল টাউন পর্যন্ত অর্থাৎ তুরাগ পাড়ে সাড়ে তিন কিলোমিটার ওয়াকওয়ে তৈরির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আমরা আশা করছি, খুব শিগগিরই রাজধানীর চারপাশের সব নদীর তীরবর্তীতে ওয়াকওয়ে নির্মাণকাজ শেষ হবে। 

 

বুড়িগঙ্গা পাড়ের স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, আমরা কখনো আশা করিনি নদীতে সীমনা পিলার বসবে। এক সময় নদীর পানির যেই বেহাল দশা ছিলো, বর্তমানে নদীর দিকে তাকালে আমাদের তা স্বপ্ন বলে মনে হয়। সরকারের নেয়া এই মহৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে আমরা সিঙ্গাপুরের মতো নতুন সোন্দর্য মণ্ডিত এক রাজধানীর মুখ দেখতে পাবো। এছাড়াও নদী দখলমুক্ত করতে সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে তা প্রশংসনীয়।

 

বিআইডব্লিউটিএ’র যুগ্ম পরিচালক এ কে এম আরিফ উদ্দিন  বলেন, আমরা প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, যেকোনো মূল্যে নদীকে দখলমুক্ত করবো এবং সেটিকে অক্ষুন্ন রাখার চেষ্টা করবো। এই প্রকল্প যত দ্রুত দৃশ্যমান হবে, মানুষের আস্থার জায়গা ততই বৃদ্ধি পাবে।

 

বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তারা জানান, দখলে-দূষণে ঢাকার চারপাশের মুমূর্ষু নদ-নদীগুলোকে উদ্ধারে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে বিআইডব্লিউটিএর নেতৃত্বে গত বছর ২৯ জানুয়ারি শুরু হয়েছিল নদীমুক্ত-যুদ্ধ। আমরা এখনো মাঝদরিয়ায়। যুদ্ধ এখনো চলছে। দরিয়া পাড়ি দিয়ে তীরে পৌঁছাতেই হবে আমাদের। 

 

নদ-নদীগুলো দূষণমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন করার প্রত্যয় জানিয়ে কর্মকর্তারা বলেন, নর্দমায় পরিণত হয়ে যাওয়া ঢাকার চারপাশের নদ-নদীগুলোকে দখল-দূষণমুক্ত করা হচ্ছে। পরিচ্ছন্ন প্রবাহমান নদ-নদীতে পরিণত করে পাড়ে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ ও সবুজ বেষ্টনি গড়ে তুলে ঢাকাবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ করা হবে।

অনলাইন নিউজ পোর্টাল

মন্তব্য করুন: