বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৈশাখ ১১ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

সবর ও শোকর করা

 প্রকাশিত: ১২:৪৫, ৫ জানুয়ারি ২০২১

সবর ও শোকর করা

উৎস:
ইসলাহী নেসাব: হায়াতুল মুসলিমীন
হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদে মিল্লাত, মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (র:)

মানুষের সম্মুখে যে সমস্ত পরিস্থিতি দেখা দেয়- তা তার এখতিয়ারভুক্ত হোক বা এখতিয়ার বহির্ভুত- তা দু’প্রকারের হয়ে থাকে। হয়তো সেটা তার মনের অনুকূল হয়, অখবা অনুকূল হয় না। যদি অনুকূল হয় তাহলে এ অবস্থাকে আন্তরিকভাবে আল্লাহ তাআলার নেয়ামত মনে করা, এজন্য খুশী হওয়া, নিজের যোগ্যতার চেয়ে অধিক মনে করা, মুখে এজন্য আল্লাহর প্রশংসা করা এবং এ নেয়ামতকে গুনাহের কাজে ব্যবহার না করা হলো, এ নেয়ামতের শোকর বা কৃতজ্ঞতা। আর যদি অনুকূল না হয়, বরং মন এতে অসহিষ্ণু হয়ে ওঠে এবং কষ্টবোধ করে, এ অবস্থাতে একথা মনে করা যে, আল্লাহ তাআলা এতে আমার কোন কল্যাণ রেখেছেন এবং এর বিরুদ্ধে অভিযোগ না করা এবং তা কোন কাজের নির্দেশ হলে, তাতে দৃঢ়তার সাথে অবিচল থাকা, আর তা কোন বিপদাপদ হলে, দৃঢ়তার সঙ্গে তা সহ্য করা এবং অস্থির না হওয়া, এ হলো, সবর বা ধৈর্য ধারণ। ধৈর্য ধারণ যেহেতু অধিকতর কঠিন, তাই তার আলোচনা শোকর বা কৃতজ্ঞতার পূর্বে এবং অধিক পরিমাণে করছি।

প্রথমে এতদসংক্রান্ত যেসমস্ত ক্ষেত্র অধিকতর সম্মুখে আসে, দৃষ্টান্তস্বরুপ সেগুলো তুলে ধরছি, তারপর এতদসংশ্লিষ্ট আয়াত ও হাদীসসমূহ লিপিবদ্ধ করছি। সেই দৃষ্টান্তসমূহ এই। যেমন- দ্বীনের কাজকে ভয় পায় এবং তা থেকে পালায়। গুনাহের কাজসমূহের চাহিদা হয়, যেমন- নামায, রোযা আদায় করা, বা হারাম আমদানী পরিত্যাগ করা থেকে মন পালায়। বা কারো পাওনা পরিশোধ করতে পিছপা হয়। এ সময়ে সাহস করে দ্বীনের কাজ পুরা করবে এবং গুনাহের কাজ থেকে বিরত থাকবে। যদিও এতদুভয় ক্ষেত্রে কিছু্টা কষ্টও হয়। কারণ, খুব সত্বরই এ কষ্টের অধিক শান্তি ও স্বাদ দেখতে পাবে। কিংবা দৃষ্টান্তস্বরুপ তার উপর কোন বিপদ আপতিত হলো, যেমন অভাব অনটন, রোগ ব্যাধি, কারো মৃত্যূ, কোন দুশমনের কষ্টদান, বা অর্থ সম্পদের ক্ষতি। এসব ক্ষেত্রে বিপদ-আপদের কল্যাণ ও উপকারিতাসমূহের কথা স্মরণ করবে। সবচেয়ে বড় উপকার হলো, এতে সওয়াব হবে- বিপদ-আপদের ক্ষেত্রে যার ওয়াদা করা হয়েছে।

বিনা প্রয়োজনে বিপদের কথা প্রকাশ করবে না। সবসময় অন্তরে এর কথা চিন্তা করবে না। এতে করে বিশেষ এক ধরনের প্রশান্তি লাভ হবে। তবে এ বিপদের কোন প্রতিকার থাকলে, যেমন, হালাল সম্পদ উপার্জন করা বা রোগের চিকিৎসা করা বা কোন ক্ষমতাবান ব্যক্তির সাহায্য নেওয়া বা শরীয়তের মাসআলা জেনে প্রতিশোধ নেওয়া বা দু’আ করা, এসব করায় কোন দোষ নেই। এবং দৃষ্টান্তস্বরুপ দ্বীনের কাজে কোন জালেম বাধা দিলে বা দ্বীনকে লাঞ্ছিত করলে সেখানে জানকে জান মনে করবে না। তবে জ্ঞান-বিবেক ও শরীয়তের আইন পরিপন্থী কিছু করবে না। এগুলো ধৈর্য সংক্রান্ত জরুরী কিছু দৃষ্টান্ত। সম্মুখে এতদসংক্রান্ত আয়াত ও হাদীসসমূহ তুলে ধরা হলোঃ

১. আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
‘(আর যদি ধনসম্পদ ও পদমর্যাদার ভালোবাসার প্রাবল্যের কারণে ঈমান গ্রহণ করা কঠিন হয়, তাহলে) তোমরা সবর ও নামাযের দ্বারা সাহায্য নাও।’ (সূরা বাকারা-৪৫)

ফায়দা: উক্ত অবস্থায় শরীয়ত বিরোধী কাজ পরিত্যাগ করার ক্ষেত্রে মনের বিরুদ্ধে কাজ করে সবর করতে বলা হয়েছে।

২. আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
‘এবং অবশ্যই আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করবো কিছুটা ভয় দ্বারা (যা শত্রুর চাপ ও অন্যান্য বালা-মুসিবত ও বিপদ-আপদের কারণে দেখা দিবে) ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে (যেমন, জীবজন্ত্ত মারা গেলো, বা কোন মানুষ মারা
গেলো, বা অসুস্থ হলো, বা ফল ও ফসল নষ্ট হলো) হে নবী যারা (এসব ক্ষেত্রে) ধৈর্য্ধারণকারী আপনি তাদেরকে সুসংবাদ দিন।’ (সূরা বাকারা-১৫৫)

৩. আল্লাহ তাআলা (পূর্বের যামানার নেককার বান্দাদের প্রসঙ্গে) ইরশাদ করেন-
‘তারা সাহসহারা হয়নি ঐ সমস্ত বিপদাপদের কারণে, আল্লাহর পথে যেগুলো তাদের উপর পতিত হয়েছে এবং তাদের (দেহ ও মনের) শক্তি হ্রাস পায়নি এবং তারা শত্রুর সম্মুখে অবদমিতও হয়নি (যে তাদের সাথে অক্ষমতার ও তোষামোদমূলক কথা বলবে) এবং আল্লাহ তাআলা এমন ধৈর্য্শীল (স্বভাবের লোকদের) কে ভালোবাসেন। (যারা দ্বীনের কাজে এমন অবিচল থাকে।) (সূরা আলে ইমরান-১৪৬)

৪. আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
‘এবং যে সমস্ত লোক (দ্বীনের বিধানের উপর) ধৈর্যধারণ করেছে (দৃঢ়পদ রয়েছে) আমি তাদের নেককাজসমূহের বিনিময়ে তাদেরকে অবশ্যই প্রতিদান দেবো।’ (সূরা নাহল-৯৬)

৫. আল্লাহ তাআলা (দীর্ঘ একটি আয়াতে অন্যান্য আমলের সঙ্গে এও) ইরশাদ করেন-
‘নিশ্চয় মুসলিম পুরুষ এবং মুসলিম নারী, এবং ঈমানদার পুরুষ ঈমানদার নারী এবং ধৈর্যধারণকারী পুরুষ এবং ধৈর্যধারণকারী নারী … আল্লাহ তাআলা তাদের সবার জন্য (ক্ষমা ও) মহাপ্রতিদান প্রস্ত্তত রেখেছেন।’ (সূরা আহযাব-৩৫)

ফায়দা: এর মধ্যে সবরের সব প্রকারই চলে এসেছে। যথা- ইবাদতের ক্ষেত্রে সবর, গুনাহ থেকে বাঁচার ক্ষেত্রে সবর এবং বিপদ-আপদের ক্ষেত্রে সবর।

৬. হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘আমি কি তোমাদেরকে এমন সব বিষয় বলবো না, যেগুলোর দ্বারা আল্লাহ তাআলা গুনাহ মোচন করেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করেনঃ লোকেরা নিবেদন করলো-হে আল্লাহর রাসূল! অবশ্যই বলুন। তিনি ইরশাদ করলেন-কষ্টের অবস্থায় পরিপূর্ণরুপে ওযু করা (কোন কারণে ওযু কষ্টকর হলে তারপরেও হিম্মত করা) এবং মসজিদপানে অনেক পদক্ষেপ করা (অর্থাৎ, দূর থেকে আসা বা বারবার আসা) এবং নামাযের পর অন্য নামাযের অপেক্ষায় থাকা।’
(মুসলিম, তিরমিযী)
ফায়দা: কষ্টের সময় ওযু করা ধৈর্যের একটি দৃষ্টান্ত।

৭. হযরত আবু দারদা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, আমাকে আমার অন্তরঙ্গ বন্ধু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সবিশেষ উপদেশ দান করেন-
‘আল্লাহর সঙ্গে কোন কিছুকে শরীক করবে না, যদিও তোমাকে কেটে টুকরো টুকরো করা হয় এবং তোমাকে (আগুনে) জ্বালানো হয়।’ (ইবনে মাজা)

ফায়দা: এমন মুহূর্তে ঈমানের উপর অবিচল থাকা ধৈর্যের একটি দৃষ্টান্ত। কোন জালেমের চাপের মুখে এ জাতীয় কাজ বা কথা শরীয়ত মাফ করে দিয়েছে। তা কুফর ও শিরকের অন্তর্ভুক্ত নয়। কারণ, অন্তর তো ঈমানে পরিপূর্ণ।

৮. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আবু মুসা (রাযিঃ) কে একটি সেনাবাহিনীর প্রধান বানিয়ে নৌভ্রমনে পাঠান। তারা এ অবস্থাতে অন্ধকার রাতে নৌকার পাল খুলে রেখেছিলেন। (নৌকা চলছিলো) আচমকা তাদের মাথার উপর থেকে কোন আহবানকারী আহবান করে বলে-হে নৌকার লোকেরা! থেমে যাও। আমি তোমাদেরকে আল্লাহর একটি হুকুমের সংবাদ দিচ্ছি। যা তিনি নিজের সত্তার উপর নির্ধারণ করে রেখেছেন। হযরত আবু মুসা (রাযিঃ) বললেন- তোমাদের সংবাদ দেওয়ার থাকলে আমাদেরকে দিয়ে দাও। তখন আহবানকারী বললো-মহান আল্লাহ তাআলা নিজ সত্তার উপর অবধারিত করে নিয়েছেন যে, যে ব্যক্তি গরমের দিনে রোযা রেখে নিজেদেরকে পিপাসার্ত রাখবে, আল্লাহ তাআলা তাকে পিপাসার দিন (অর্থাৎ, কিয়ামতের দিন যখন তীব্র পিপাসা হবে) পরিতৃপ্ত করবেন।’ (আইনে তারগীব, বাযযার)

ফায়দা: এটিও ধৈর্যের একটি দৃষ্টান্ত।

৯. হযরত আয়েশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘যে ব্যক্তি কৃরআন পাঠ করে এবং তাতে আটকে যায় আর তা তার জন্য কঠিন মনে হয়, সে দ্বিগুন সওয়াব লাভ করবে।’ (বুখারী ও মুসলিম)

ফায়দা: এটিও ধৈর্যের একটি দৃষ্টান্ত। তৃতীয় রূহে এ হাদীস সম্পূর্ণটি চলে গেছে।

১০. হযরত আয়েশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘সর্বাধিক ‍প্রিয় ঐ আমল, যা সর্বদা করা হয়, যদিও তা অল্প হোক। (বুখারী ও মুসলিম)

ফায়দা: বলা বাহুল্য যে, সর্বদা কোন কাজ করতে কোন না কোন সময় মনের কষ্ট হয়, তাই এটিও ধৈর্যের একটি উদাহরণ।

১১. হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘জাহান্নাম (হারাম) খাহেশাত দ্বারা পরিবেষ্টিত এবং জান্নাত কষ্টকর বস্ত্ত দ্বারা পরিবেষ্টিত।’ (মুসলিম)

ফায়দা: যেসব ইবাদত নফসের জন্য কষ্টকর এবং যে সমস্ত গুনাহ থেকে বাঁচা কঠিন তার সবই এ হাদী সের অন্তর্ভুক্ত।

১২. হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) এবং হযরত আবু সা’য়ীদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘কোন মুসলমানের যে কোন বিপদ, রোগ, দুশ্চিন্তা, দুঃখ, কষ্ট বা পেরেশানী আসে- এমনকি কাঁটা বিঁধে, আল্লাহ তায়ালা এ সবের বিনিময়ে তার গুনাহ মাফ করে দেন।’
(বুখারী ও মুসলিম)

১৩. হযরত আয়েশা (রাযিঃ) থেকে (দীর্ঘ একটি হাদীসে) বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘যে কোন ব্যক্তি প্লেগের মহামারী চলাকালে সওয়াবের নিয়তে ধৈর্য ধরে নিজ বসতি এলাকায় অবস্থান করবে এবং এ বিশ্বাস রাখবে যে, আল্লাহ তায়ালা (ভাগ্যে) যা লিখেছেন তাই হবে। এ ব্যক্তি শহীদের সমান সওয়াব লাভ করবে।’ (বুখারী)

(যদিও সে মৃত্যুবরণ না করে, আর যদি এতে মারা যায় তাহলে আরো উঁচু স্তরের শাহাদাত লাভ করবে।) (মুসলিম)

ফায়দা: তবে ঘর পরিবর্তন করা বা মহল্লা পরিবর্তন করা বা ঐ এলাকারই মাঠে চলে যাওয়া অধিকাংশ আলিমের নিকট জায়িয। তবে শর্ত হলোঃ অসুস্থ ও মৃতদের হক আদায় করতে হবে।

১৪. হযরত আনাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শুনেছি যে, আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
‘আমি যখন আমার বান্দাকে তার দুই প্রিয় বস্ত্তর (বিপদে) আক্রান্ত করি (অর্থাৎ, তার চক্ষুদ্বয় নষ্ট হয়ে গেলো যেমন, হাদীস বর্ণনাকারী নিজেই এ হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেছেন-) তারপর সে ধৈর্যধারণ করলো, আমি তাকে এতদুভয়ের বিনিময়ে বেহেশত দান করবো।’
(বুখারী)
১৫. হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- আমার মুমিন বান্দার জন্য-যখন আমি দুনিয়াতে বসবাসকারী তার কোন প্রিয়জনের জান নিয়ে নেই, আর সে একে সওয়াব মনে করে এবং ধৈর্যধারণ করে তাহলে এমন ব্যক্তির জন্য আমার নিকট জান্নাত ছাড়া অন্য কোন বদলা নেই। (বুখারী)

ফায়দা: সেই প্রিয় বস্ত্ত চাই সন্তান হোক, স্ত্রী হোক, স্বামী হোক বা অন্য কোন আত্মীয় বা বন্ধু হোক।

১৬. হযরত আবু মূসা আশআরী (রাযিঃ) থেকে বর্নিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- যখন কোন লোকের সন্তান মারা যায়, তখন আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদেরকে বলেন- তোমরা আমার বান্দার সন্তানের জান কবজ করেছো? তারা বলে, হাঁ। পুনরায় বলেন, তোমরা তার অন্তরের ফল নিয়ে নিয়েছো? তারা বলে, হাঁ। তারপর তিনি বলেন, আমার বান্দা কি বলেছে? তারা বলে, আপনার প্রশংসা করেছে এবং ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিঊন’ বলেছে। তখন আল্লাহ তাআলা বলেন, আমার বান্দার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরী করো এবং তার নাম রাখ ‘বায়তুল হামদ’ তথা ‘প্রশস্তি গৃহ’। (আহমাদ, তিরমিযী)

১৭. হযরত আবুদ দারদা (রাযিঃ) থেকে (দীর্ঘ একটি হাদীসে) বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- তিন ব্যক্তি এমন রয়েছে, যাদেরকে আল্লাহ তাআলা ভালোবাসেন এবং তাদের দেখে হাসেন। (তাঁর শান অনুসারে) এবং তাদের অবস্থার উপর খুশী হন। (সেই তিনজনের মধ্যে) একজন সেও, যে আল্লাহ তাআলার জন্য জান দিতে প্রস্ত্তত হয়েছে। (যেখানে এর শর্তাবলী পাওয়া যায়) তারপর তার জান যাক বা আল্লাহ তাকে বিজয়ী করেন এবং আল্লাহ তার পক্ষে যথেষ্ট হয়ে যান। আল্লাহ তাআলা বলেন, আমার এ বান্দাকে দেখো! আমার জন্য কিভাবে নিজের জানকে ধৈর্যধারণকারী বানিয়েছে। (তারগীব, তাবরানী)

শোকর:

এ পর্যন্ত ধৈর্যের বিবরণ ছিলো। এখন শোকর সম্পর্কে কিছু আলোচনা করছি। (এর পরিচয় এ রূহের শুরুতে লেখা হয়েছে)। শোকর বা কৃতজ্ঞতা একটি ইবাদত তো বটেই এর মধ্যে একটি বৈশিষ্ট্য এও রয়েছে যে, এতে করে অন্য একটি ইবাদত অর্থাৎ, ধৈর্যধারণ করা সহজ হয়ে যায়। বিবেকের দিক থেকেও এবং স্বভাবের দিক থেকেও।

বিবেকের দিক থেকে এভাবে যে, যখন আল্লাহ তাআলার নেয়ামতসমূহের কথা ভাবা এবং সেজন্য আনন্দিত হওয়ার (যা কিনা কৃতজ্ঞতার জন্য আবশ্যক) অভ্যাস পরিপক্ক হবে, তখন মুসীবত ইত্যাদির সময়ও একথা ভাববে যে, মহান আল্লাহর এত সীমাহীন দয়া আমার উপর, তাঁর পক্ষ থেকে আমারই কল্যাণ ও সওয়াবের জন্য (যেমন উপরের হাদীসসমূহ দ্বারা জানা গেলো) কোন কষ্টও যদি এসে যায়, তাহলে তা খুশী মনে গ্রহণ করা উচিত। যেমন ‍দুনিয়ায় নিজের কৃপাশীলদের দেওয়া কষ্টকে খুশীমনে মেনে নেওয়া হয়। বিশেষ করে যখন পরবর্তীতে পুরস্কারও পাওয়া যায়।

আর স্বভাবগত দিক থেকে এভাবে যে, নেয়ামতসমূহের কথা চিন্তা করার দ্বারা আল্লাহ তাআলার ভালোবাসা জন্মাবে। আর যার প্রতি ভালোবাসা থাকে, তার কঠোরতা অপছন্দীয় হয় না। যেমন জাগতিক নিয়মেও প্রেমিক তার প্রিয়ের কঠোরতার মধ্যে বিশেষ ধরনের মজা পেয়ে থাকে। সম্মুখে শোকর সম্পর্কিত আয়াত এবং হাদীসসমূহ লেখা হচ্ছে।

১৮. আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
‘তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমি তোমাদেরকে (আমার রহমত দ্বারা) স্মরণ করবো এবং আমার শোকর আদায় করো এবং নাশোকরী করো না।’ (সূরা বাকারা-১৫২)

১৯. আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
‘এবং আমি শোকর আদায়কারীদেরকে অতিসত্বর প্রতিদান দেবো।’ (সূরা আলে ইমরান)

২০. আল্লাহ তাআলা আরো ইরশাদ করেন-

‘যদি তোমরা (আমার নেয়ামতসমূহের) শোকর আদায় করো, আমি তোমাদেরকে নেয়ামত আরো বাড়িয়ে দেবো (দুনিয়াতেও বাড়িয়ে দিতে পারি, আর আখিরাতে তো অবশ্যই বাড়িয়ে দেবো) আর যদি তোমরা নাশোকরী করো তাহলে (একথা ভালো করে বুঝে নাও যে,) আমার আযাব বড় কঠোর। (নাশোকরী করার কারণে তার মুখোমুখি হতে পারো।)
(সূরা ইবরাহিম-৭)

২১. হযরত ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- চারটি বস্ত্ত এমন রয়েছে, যে ব্যক্তি তা লাভ করেছে, সে ইহকালীন ও পরকালীন কল্যাণসমূহ লাভ করেছে। কৃতজ্ঞ হৃদয়, যিকিররত জিহ্বা, ধৈর্যধারণকারী শরীর এবং এমন স্ত্রী, যে নিজের জান এবং স্বামীর সম্পদে তার সাথে খিয়ানত করতে চায় না। (বাইহাকী)

সারকথা: মানুষের যে কোন অবস্থাই হয় তার মনমত হয়, অথবা তার মনের বিপরীত হয়। প্রথম অবস্থায় শোকরের নির্দেশ রয়েছে, আর দ্বিতীয় অবস্থায় রয়েছে সবরের নির্দেশ। তাই সবর ও শোকর সার্বক্ষণিক কাজ।

হে মুসলমানগণ! একে বিস্মৃত হয়ো না। তারপর দেখো! সর্বক্ষণ কি এক অপার্থিব স্বাদ ও মজার জীবনযাপন করো।

হাদীসগুলো মিশকাত শরীফ থেকে সংগৃহীত। আর যেগুলো অন্য কিতাব থেকে নেওয়া হয়েছে, সেগুলোতে ‘আইন’ শব্দ লিখে দেওয়া হয়েছে।

অনলাইন নিউজ পোর্টাল

মন্তব্য করুন: