মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, চৈত্র ৫ ১৪৩০, ০৯ রমজান ১৪৪৫

ইসলাম

এক জান্নাতী সাহাবী ও তাঁর অনন্য আমল

 প্রকাশিত: ১৮:০১, ৩ মে ২০২০

এক জান্নাতী সাহাবী ও তাঁর অনন্য আমল

হযরত আবু বকর ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে আবি জাহাম আদাবী হতে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘স্বপ্নে আমি জান্নাতে প্রবেশ করলাম, সেখানে নুয়াইমের কাশির শব্দ শুনতে পেলাম।-জামেউল মাসানীদ, হাদীস : ৯৫৭৫; তবকাতে ইবনে সা’দ ৪/১০২; মারিফাতুস সাহাবা, ৫/২৬৬

সাহাবীর অনন্য আমল ও বৈশিষ্ট্য : তাঁর পুরো নাম নুয়াইম ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে উসাইদ। তবে তিনি নুয়াইম আন-নাহ্হাম নামেই অধিক পরিচিত। যখন আল্লাহর রাসূল তার সম্পর্কে বলেছেন ‘আমি জান্নাতে নুয়াইমের কাশির (নাহমা) শব্দ শুনতে পেয়েছি’; তখন থেকেই তিনি এ নামে প্রসিদ্ধ হয়ে যান। তিনি মক্কার কুরাইশ বংশের বিখ্যাত ‘বনু আদী’ গোত্রের একজন বিশিষ্ট সাহাবী এবং গোত্রের সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি।

মুসআব যুবায়রী রহ. বলেন, তিনি ইসলাম গ্রহণে অগ্রগামী ব্যক্তিদের একজন। হযরত ওমর রা.-এর আগে এবং প্রথম দশ জনের পরই তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছেন। কিন্তু ইসলাম গ্রহণের কথা কারো নিকট প্রকাশ করেননি। তিনি তাঁর সম্প্রদায়ের নিকট একজন মহৎ দানশীল ও মহানুভব ব্যক্তি ছিলেন। তিনি যখন হিজরত করতে প্রস্ত্তত হলেন, তাঁর গোত্র বনু আদী’র লোকেরা তাঁকে হিজরত না করার অনুরোধ করল এবং বলল, যে ধর্ম ইচ্ছে আপনি অনুসরণ  করুন, তবে আমাদেরকে ছেড়ে যাবেন না। আল্লাহর শপথ! কেউ আপনার পিছু নিবে না।

তার প্রতি গোত্রের ভক্তি ও শ্রদ্ধার কারণ, বনু আদী গোত্রের বিধবা নারী ও ইয়াতীমদেরকে তিনি আর্থিক সাহায্য করতেন।  পরে ষষ্ঠ হিজরীতে হুদায়বিয়ার সময় তার গোত্রের চল্লিশ ব্যক্তিকে নিয়ে মদীনায় হিজরত করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেলেন এবং বললেন, নুয়াইম! তোমার ব্যাপারে তোমার সম্প্রদায় আমার সম্প্রদায় হতে উত্তম। কারণ তারা তোমাকে সমর্থন করে রেখে দিয়েছে। আর আমার সম্প্রদায় আমাকে বের করে দিয়েছে। হযরত নুয়াইম রা. বলেন, বরং আপনার সম্প্রদায় আমার সম্প্রদায় হতে উত্তম। কারণ তারা আপনাকে হিজরত করার জন্য বের করে দিয়েছে। আর আমার সম্প্রদায় আমাকে বাঁধা দিয়েছে।-জামিউল মাসানীদ, হাদীস : ৯৫৭৬; উসদুল গাবা ৪/২৪৬; ইসাবা ৩/২০০৯

হযরত নুয়াইম আন-নাহহাম রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোনো এক শীতের রাতে আমি আমার লেপের মধ্যে ছিলাম, তখন রাসূলের মুয়ায্যিনকে (ফজর নামাযের) আযান দিতে শুনলাম। (প্রচ  শীতের কারণে) আমি মনে মনে কামনা করলাম, আহ! যদি বলা হত তোমরা তোমাদের ঘরে নামায পড়। মুয়াযযিন আযানের শেষ দিকে বললেন, তোমরা তোমাদের ঘরে নামায পড়। পরে তাকে আমি তার এই উক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে এ কথা বলার আদেশ করেছেন।-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৭৯৩৩; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস : ১৯২৬

অন্য বর্ণনায় রয়েছে, আমি কামনা করলাম যে, আল্লাহ তাঁর মুখ দিয়ে এ কথা বের করে দিক- তোমরা ঘরে নামায পড়লেও কোনো সমস্যা হবে না।

-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৭৯৩৪; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস : ১৯২৭

হাদীসের শিক্ষা : হযরত নুয়াইম ইবনে আবদুল্লাহ রা. ইচ্ছা ও প্রস্ত্ততি সত্ত্বেও হিজরতের মত অতি গুরুত্বপূর্ণ আমল পরিত্যাগ করেছেন ইয়াতীম ও বিধবা নারীদের সাহায্য-সহযোগিতার জন্য। ইসলামের দৃষ্টিতে এটি অত্যন্ত মাহাত্ম্যপূর্ণ ও ফযীলতপূর্ণ কাজ। কুরআন-হাদীসে ইয়াতীম, মিসকীন ও বিধবা নারীদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা, দান-সদকা ও তাদের প্রতি সদয় আচরণের খুব তাগিদ দেওয়া হয়েছে এবং অসীম পূণ্য ও উত্তম প্রতিদানের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। উক্ত সাহাবীর আমল এবং তাঁর জান্নাত লাভের

সুসংবাদ তার একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারীমের বহু আয়াতে ইয়াতীম-মিসকীনদের সাথে কোমল ব্যবহার, তাদেরকে সাহায্য-সহযোগিতার আদেশ করেছেন এবং এর বিপরীত আচরণ তথা তাদেরকে ধমক দেওয়া, কঠোরতা করা ও সাহায্য করা থেকে বিরত থাকতে নিষেধ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে- লোকে আপনাকে জিজ্ঞেস করবে, (আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য) তারা কী ব্যয় করবে? আপনি বলে দিন, তোমরা যে সম্পদই ব্যয় কর, তা পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম, মিসকীন ও মুসাফিরদের জন্য হওয়া চাই।-সূরা বাকারা (২) : ২১৫

অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, (বরং পূণ্য এই যে,) নিজ সম্পদ আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম, মিসকীন, মুসাফির ও সওয়ালকারীদের দান করবে।-সূরা বাকারা (২) : ১৭৭

আল্লাহ তাআলা জান্নাতীদের প্রশংসা ও গুণ বর্ণনা করে ইরশাদ করেছেন, তারা আল্লাহর ভালবাসায় মিসকীন, ইয়াতীম ও বন্দীদেরকে খাবার দান করে। (এবং তাদেরকে বলে,) আমরা তো তোমাদেরকে খাওয়াই কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য। আমরা তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চাই না এবং কৃতজ্ঞতাও না।-সূরা দাহর (৯৮) : ৮-৯

ইয়াতীম, মিসকীন ও বিধবাদের প্রয়োজন পূরণে সহযোগিতা করা হাদীসের ভাষায় জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহ এবং দিনের বেলায় রোযা রাখা ও রাত্রিবেলায় নফল নামায আদায়ের সমতুল্য।

হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি স্বামীহীন নারী ও মিসকীনদের সহযোগিতার জন্য পরিশ্রম করে সে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীর মতো এবং সেই ব্যক্তির সমতুল্য যে দিনের বেলায় রোযা রাখে এবং রাত্রিবেলায় নফল নামায আদায় করে।-সহীহ বুখারী, হাদীস : ৫৩৫৩, ৬০০৬-৭

মুসলিম শরীফের বর্ণনায় রয়েছে, যে নিরবচ্ছিন্ন রোযা রাখে এবং নিরলস নফল নামায পড়ে তার সমতুল্য।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ২৯৮২

হযরত সাহল ইবনে সা’দ হতে বর্ণিত অন্য এক হাদীসে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আমি এবং ইয়াতীমের ভরণপোষণকারী জান্নাতে এভাবেই থাকব। এ কথা বলে তিনি তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুলী একত্র করে ইঙ্গিত করলেন।-সহীহ বুখারী, হাদীস : ৬০০৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ২৯৮৩ 

অনলাইন নিউজ পোর্টাল

মন্তব্য করুন: