বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, চৈত্র ১৪ ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ব্রেকিং

জাপানে কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ খেয়ে দু’জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ১০০ ঈদের ছুটির আগে সব সেক্টরের শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দেয়ার সিদ্ধান্ত নোয়াখালীতে পানিতে ডুবে ভাই-বোনের মৃত্যু বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয়কেন্দ্রে ইসরায়েলী হামলায় নিহত ১২ মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাস সবচেয়ে বেশি বিকৃত করা হয়েছে শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে : শিক্ষামন্ত্রী ইসরায়েলের ট্যাংক গাজার নাসের হাসপাতাল ঘিরে রেখেছে গাজায় হতাহতের সংখ্যা অনেক বেশি: ইসরায়েলী প্রতিরক্ষা মন্ত্রীকে মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর গাড়ীবহরে হামলা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি ইয়াছিন যশোরে গ্রেফতার গাজার দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপক বোমাবর্ষণ; হতাহত অনেক

ইসলাম

আসল হল তাওয়াক্কুল এবং ঈমানী শক্তি

 প্রকাশিত: ২৩:১৩, ২৭ এপ্রিল ২০২০

আসল হল তাওয়াক্কুল এবং ঈমানী শক্তি

আমরা আল্লাহ তাআলার শোকর আদায় করছি যে আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ঈমানের নিআমত দান করেছেন; মুমিন বানিয়েছেনÑ

فالحمد لله على نعمة الإيمان، والحمد لله على نعمة الإسلام، رضيت بالله ربا وبالإسلام دينا، وبمحمد صلى الله عليه وسلم نبيا.

সকল প্রশংসা আল্লাহ্র, তিনি আমাদের ঈমানের নিআমত দান করেছেন। ইসলামের নিআমতে ধন্য করেছেন। (নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেমন বলেছেন আমরাও হৃদয়ের গভীর থেকে বলছিÑ) আমি আল্লাহকে রব হিসেবে, ইসলামকে দ্বীন হিসেবে এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নবী হিসেবে পেয়ে ধন্য ও সন্তুষ্ট।

 

বিপদাপদ ও বালা-মুসিবত মানুষের জীবনে আসতেই থাকে। মুসলিম-অমুসলিম সবার জীবনেই আসে। কিন্তু বিপদাপদে মুমিনের শানই আলাদা। হাদীস শরীফে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনÑ

عَجَبًا لِأَمْرِ الْمُؤْمِنِ، إِنَّ أَمْرَهُ كُلَّهُ خَيْرٌ، وَلَيْسَ ذَاكَ لِأَحَدٍ إِلَّا لِلْمُؤْمِنِ، إِنْ أَصَابَتْهُ سَرَّاءُ شَكَرَ، فَكَانَ خَيْرًا لَهُ، وَإِنْ أَصَابَتْهُ ضَرَّاءُ، صَبَرَ فَكَانَ خَيْرًا لَهُ.

মুমিনের অবস্থা বড়ই বিস্ময়কর! তার সবকিছুই কল্যাণকর। আর এটি শুধু মুমিনেরই বৈশিষ্ট্য, অন্য কারো নয়। সুখ-সচ্ছলতায় মুমিন শোকর আদায় করে ফলে তার কল্যাণ হয়। আবার দুঃখ-কষ্ট ও বিপদাপদের সম্মুখীন হলে ধৈর্য্য ধারণ করে। ফলে এটিও তার জন্য কল্যাণকর হয়। Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ২৯৯৯; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ২৮৬৯

যেহেতু আল্লাহ তাআলা মুমিনকে এই স্বাতন্ত্র্য দান করেছেন তাই বিপদাপদের বিষয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি এবং এসব ক্ষেত্রে তার কর্মপন্থাও স্বতন্ত্র হওয়া উচিত। বিশেষত যখন এক্ষেত্রে শরীয়তের পূর্ণাঙ্গ নির্দেশনা বিদ্যমান আছে, যার যথাযথ মূল্যায়ন করা শোকর আদায়ের অনিবার্য অংশ। মহামারি বা যেকোনো ধরনের ব্যাপক বিপদাপদ যেমনিভাবে শিক্ষা ও উপদেশ গ্রহণের মাধ্যম, তেমনিভাবে তা মুমিনের জন্য মাগফিরাত লাভের উপায়। এসব ক্ষেত্রে মুমিনের প্রথম কাজ হল, ‘আকিদায়ে তাকদীর’ অন্তরে জাগ্রত করা। এই বিশ্বাস রাখা যে, সবকিছু আল্লাহ্র হুকুমে হয়। যে কোনো মুসিবত থেকে তিনিই উদ্ধার করেন। জীবন-মরণ ও লাভ-ক্ষতির মালিক তিনিই। মৃত্যুর সময় নির্ধারিত। কারো মৃত্যু নির্ধারিত সময়ের আগেও হবে না, পরেও হবে না। আরোগ্য তাঁরই হাতে। আফিয়াত-সালামত এবং শান্তি ও নিরাপত্তার মালিক তিনিই। ইরশাদ হয়েছেÑ

مَاۤ اَصَابَ مِنْ مُّصِیْبَةٍ فِی الْاَرْضِ وَ لَا فِیْۤ اَنْفُسِكُمْ اِلَّا فِیْ كِتٰبٍ مِّنْ قَبْلِ اَنْ نَّبْرَاَهَا  اِنَّ ذٰلِكَ عَلَی اللهِ یَسِیْرٌ لِّكَیْلَا تَاْسَوْا عَلٰی مَا فَاتَكُمْ وَ لَا تَفْرَحُوْا بِمَاۤ اٰتٰىكُمْ وَ اللهُ لَا یُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُوْرِ.

পৃথিবীতে বা ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের উপর যে বিপর্যয় আসে আমি তা সংঘটিত করার পূর্বেই তা লিপিবদ্ধ থাকে। আল্লাহ্র পক্ষে এটা খুবই সহজ। এটা এজন্য যে, তোমরা যা হারিয়েছ তাতে যেন তোমরা বিমর্ষ না হও এবং যা তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন তার জন্য হর্ষোৎফুল্ল না হও। আল্লাহ উদ্ধত ও অহংকারীদের পছন্দ করেন না। Ñসূরা হাদীদ (৫৭) : ২২-২৩

قُلْ لَّنْ یُّصِیْبَنَاۤ اِلَّا مَا كَتَبَ اللهُ لَنَا هُوَ مَوْلٰىنَا وَ عَلَی اللهِ فَلْیَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُوْنَ.

হে নবী আপনি বলে দিন, আমাদের জন্য আল্লাহ যা নির্দিষ্ট করেছেন তা ব্যতীত আমাদের অন্য কিছু হবে না। তিনিই আমাদের অভিভাবক। আর আল্লাহ্র উপরই মুমিনদের নির্ভর করা উচিত। Ñসূরা তাওবা (৯) : ৫১

তাই এ ধরনের পরিস্থিতিতে মুমিন তার অন্তরে ঈমানী শক্তি জাগ্রত করবে। আর ঈমানী শক্তির উপস্থিতি ও অনুভ‚তি যেমনিভাবে ঈমানের উৎকর্ষ সাধন ও  আমল-আখলাকের সংশোধনের ক্ষেত্রে উপকারী, তেমনি তা ওয়াসওয়াসা, অমূলক চিন্তা ও আতঙ্ক রোধের সফল ঔষধও; এমতাবস্থায় যা অত্যন্ত জরুরি। রোগ প্রতিরোধে বাহ্যিক শক্তির চেয়ে ঈমানী শক্তিই অধিক ফলপ্রসূ বলে প্রমাণিত, আর ঈমান-ইসলামের বরকতে প্রত্যেক মুমিনের মাঝেই তা আছে। প্রয়োজন শুধু এ শক্তিকে জাগ্রত করা এবং কাজে লাগানো।

অতএব তাওয়াক্কুল করা, আল্লাহ্র ওপর ভরসা রাখা, আল্লাহ্র সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলা ও ঈমানী শক্তি জাগ্রত করাÑ এসব হল মুমিনের প্রথম কাজ।

দ্বিতীয় কাজ, খাঁটি দিলে তাওবা করা এবং আল্লাহমুখী হওয়া। সবাই একথা চিন্তা করা যে, এসব বিপদাপদ হয়ত আমার মন্দ আমলের পরিণতি।

وَ مَاۤ اَصَابَكُمْ مِّنْ مُّصِیْبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ اَیْدِیْكُمْ وَ یَعْفُوْا عَنْ كَثِیْرٍ.

আর তোমাদের যে বিপদাপদ ঘটে তা তো তোমাদের কৃতকর্মেরই ফল। এবং তোমাদের অনেক অপরাধ তো তিনি ক্ষমা করে দেন। Ñসূর শূরা (৪২) : ৩০

ظَهَرَ الْفَسَادُ فِی الْبَرِّ وَ الْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ اَیْدِی النَّاسِ لِیُذِیْقَهُمْ بَعْضَ الَّذِیْ عَمِلُوْا لَعَلَّهُمْ یَرْجِعُوْنَ.

মানুষের কৃতকর্মের দরুন স্থলে ও সমুদ্রে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে; যার ফলে তাদেরকে তাদের কোনো কোনো কর্মের শাস্তি তিনি আস্বাদন করান। যাতে তারা ফিরে আসে। Ñসূরা রূম (৩০) : ৪১

ব্যস, এ অবস্থায় আল্লাহ্র দিকে ফিরে আসাই প্রত্যেক মুমিনের প্রধান কর্তব্য। আল্লাহ্র দিকে ফিরে আসার অর্থ হল, শিরক ছেড়ে তাওহীদের দিকে আসা; অবাধ্যতা ছেড়ে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্যের দিকে আসা, গোনাহ ছেড়ে তাকওয়ার দিকে আসা, আল্লাহ তাআলার প্রতি উদাসীন হয়ে জীবন অতিবাহিত করা

থেকে ফিরে আল্লাহ্র স্মরণের দিকে আসা, মিসকীনের মত আল্লাহ্র দরবারে হাত তুলে কান্নাকাটি করা, মাফ চাওয়া ও আফিয়াতের যিন্দেগী প্রার্থনা করা।

প্রতিটি মানুষ এবং প্রত্যেক শ্রেণির মানুষ নিজ নিজ হিসাব নেবে যে, আমার মধ্যে কী ত্রæটি আছে, আমি আল্লাহ্র কোন্ নাফরমানিতে লিপ্ত আছি, আমি আমার খালেক ও সৃষ্টিকর্তার কী হক নষ্ট করছি এবং আল্লাহ্র মাখলূকের কী কী হক নষ্ট করছি।

বিশেষত আমাদের এভাবে হিসাব নিতে হবে যে, সেই অপরাধগুলো কী কী, যেগুলোর কারণে পূর্ববর্তী উম্মতের উপর ব্যাপক আযাব নাযিল করে তাদেরকে একদম ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিল। সেই অপরাধগুলো কী কী, যেগুলোর কারণে রহমতের জায়গায় লানত আসে। শান্তি ও নিরাপত্তার জায়গায় ভয়, শংকা ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। এরপর দেখতে হবে, আমাদের সমাজে সেগুলোর মধ্য থেকে কোন্ কোন্ অপরাধ বিদ্যমান।

সুতরাং আল্লাহ্র দিকে ফিরে আসার অর্থ হল, এসব অপরাধ থেকে আমরা নিজেরা বের হয়ে আসব এবং সমাজকে এসব অপরাধ থেকে পবিত্র করার কর্মপন্থা গ্রহণ করব।

মাপে কম দেওয়া, অশ্লীলতার বিস্তার, হত্যা, লুণ্ঠন, যুলুম ও খেয়ানতের বিস্তার, সুদ-ঘুষের লেনদেন, খাদ্য, পানীয়, বস্ত্র ও বাসস্থান হারাম উপার্জনের হওয়া, অবৈধ মজুতদারি, মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া ও তা গ্রহণ করা, দেশে কুরআন-সুন্নাহ ও শরয়ী আহকামের বিপরীত আইন বাস্তবায়ন হওয়া ও আদালতে তদনুযায়ী ফায়সালা হওয়া এবং  আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে নির্ধারিত হদ (দÐবিধি) বাস্তবায়ন না হওয়া।

এগুলো এমনসব অপরাধ, যেগুলো সকল বিপদাপদের মূল। অবশ্য তার অনুভ‚তি আমাদের তখন হয় যখন এই বিপদাপদ ও মসিবত মহামারি বা অন্য কোনো বাহ্যিক বড় বিপদের আকারে প্রকাশিত হয়। নতুবা আমরা গাফলত ও উদাসীনতার ঘুমে ডুবে থাকি। আমাদের খবরই নেই যে, সামাজিক অবক্ষয়, শান্তি ও নিরাপত্তাহীনতা এবং মুসলিম উম্মাহ্র লাঞ্ছনা ইত্যাদি বিষয়গুলো অত্যন্ত কঠিন আযাব; যে আযাবে আমরা উপরোক্ত অপরাধসমূহের কারণে তলিয়ে যাচ্ছি। এই আযাব মহামারিসহ অন্যান্য আসমানী দুর্যোগ ও বাহ্যিক ব্যাপক বিপদাপদের চেয়ে বহু গুণ ভয়ংকর। এর একমাত্র সমাধান হল, দ্বীন-শরীয়ত কবুল করা এবং সমাজে তা বাস্তবায়ন করা।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনÑ

لَمْ تَظْهَرِ الْفَاحِشَةُ فِي قَوْمٍ قَطّ، حَتّى يُعْلِنُوا بِهَا، إِلّا فَشَا فِيهِمُ الطّاعُونُ، وَالْأَوْجَاعُ الّتِي لَمْ تَكُنْ مَضَتْ فِي أَسْلَافِهِمُ الّذِينَ مَضَوْا، وَلَمْ يَنْقُصُوا الْمِكْيَالَ وَالْمِيزَانَ، إِلّا أُخِذُوا بِالسِّنِينَ، وَشِدّةِ الْمَئُونَةِ، وَجَوْرِ السّلْطَانِ عَلَيْهِمْ، وَلَمْ يَمْنَعُوا زَكَاةَ أَمْوَالِهِمْ، إِلّا مُنِعُوا الْقَطْرَ مِنَ السّمَاءِ، وَلَوْلَا الْبَهَائِمُ لَمْ يُمْطَرُوا، وَلَمْ يَنْقُضُوا عَهْدَ اللهِ، وَعَهْدَ رَسُولِهِ، إِلّا سَلّطَ اللهُ عَلَيْهِمْ عَدُوّا مِنْ غَيْرِهِمْ،  فَأَخَذُوا بَعْضَ مَا فِي أَيْدِيهِمْ وَمَا لَمْ تَحْكُمْ أَئِمّتُهُمْ بِكِتَابِ اللهِ، وَيَتَخَيّرُوا مِمّا أَنْزَلَ اللهُ، إِلّا جَعَلَ اللهُ بَأْسَهُمْ بَيْنَهُمْ.

যখন কোনো সম্প্রদায়ের মাঝে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়বে এমনকি তারা সেগুলো প্রচার করতে থাকবে, তখন তাদের মধ্যে তাউন (প্লেগ) মহামারি আকারে দেখা দেবে এবং এমন সব ব্যাধি ও কষ্ট ছড়িয়ে পড়বে, যা আগের মানুষদের মাঝে দেখা যায়নি।

যখন কোনো সম্প্রদায় ওজন ও মাপে কম দেবে তখন তাদের উপর নেমে আসবে দুর্ভিক্ষ, কঠিন অবস্থা এবং শাসকের যুলুম-অত্যাচার।

যখন কোনো কওম তাদের সম্পদের যাকাত আদায় করবে না তখন তাদের প্রতি আকাশ থেকে বৃষ্টি পড়া বন্ধ হয়ে যাবে। যদি জন্তু-জানোয়ার না থাকত তাহলে আর বৃষ্টিপাত হতো না। আর যখন কোনো জাতি আল্লাহ্র ও তাঁর রাসূলের অঙ্গীকার ভঙ্গ করবে তখন আল্লাহ তাদের উপর কোনো বহিঃশত্রæ চাপিয়ে দেবেন...

যখন কোনো সম্প্রদায়ের শাসকবর্গ আল্লাহ্র কিতাব অনুযায়ী ফায়সালা করবে না আর আল্লাহ্র নাযিলকৃত বিধানসমূহের কিছু গ্রহণ করবে আর কিছু ত্যাগ করবে তখন আল্লাহ তাদেরকে পরস্পর যুদ্ধ বিগ্রহ ও বিবাদে জড়িয়ে দেবেন। Ñসুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ৪০১৯; হাদীসটি হাসান

মোটকথা, আমাদের প্রথম কাজ : তাকদীরের আকীদা মনে জাগ্রত রাখা এবং তাকদীরের প্রতি ঈমান মজবুত করা।

দ্বিতীয় কাজ : আল্লাহ্র উপর তাওয়াক্কুল করা এবং ঈমানী শক্তি জাগ্রত করা।

তৃতীয় কাজ : তওবা করা এবং আল্লাহমুখী হওয়া।

চতুর্থ কাজ : দুআ ও যিকিরের প্রতি মনোযোগী হওয়া।

বিশেষত সেসকল দুআর প্রতি গুরুত্বারোপ করা, কুরআন-হাদীসে যেগুলোর শিক্ষা দেয়া হয়েছে এবং যেগুলোর এই বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে যে, এগুলোর মাধ্যমে মানুষ আল্লাহ্র রহমতে বিপদাপদ থেকে মুক্ত থাকে। উদাহরণস্বরূপÑ

১. সূরা ফাতেহা একবার বা সাতবার পড়ে নিজের উপর দম করা।

২. প্রত্যেক নামাযের পর কুরআনে কারীমের শেষ তিন সূরা (সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক, সূরা নাস) একবার একবার পড়া।

৩. সকাল-সন্ধ্যা এই তিন সূরা (সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক, সূরা নাস) তিন বার করে নয় বার পড়া।

৪. শোবার সময় এই সূরাগুলো এভাবে পড়বেÑ

উভয় হাত চেহারার সামনে রেখে  (যেভাবে দুআর সময় করা হয়) একবার একবার তিন সূরা-ই পড়বে। এরপর হাতে দম করে উভয় হাত দ্বারা সারা শরীর যতটুকু সম্ভব মুছবে। এভাবে তিনবার করবে।

৫. প্রতি নামাযের পর একবার আয়াতুল কুরসী পড়–ন। শোবার সময়ও আয়াতুল কুরসী পড়–ন। আয়াতুল কুরসী হল সূরা বাকারার ২৫৫ নম্বর আয়াত।

৬. কতিপয় সংক্ষিপ্ত দুআ :

ক. সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার পড়–নÑ 

اللّٰهُمَّ عَافِنِيْ فِيْ بَدَنِيْ، اللّٰهُمَّ عَافِنِيْ فِي سَمْعِيْ، اللّٰهُمَّ عَافِنِيْ فِيْ بَصَرِيْ، لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ، اللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْكُفْرِ، وَالْفَقْرِ، اللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ .

আয় আল্লাহ! আপনি আমাকে শারীরিক সুস্থতা ও নিরাপত্তা দান করুন। আয় আল্লাহ! আমার শ্রবণে সুস্থতা ও নিরাপত্তা দান করুন। আমার দৃষ্টিতে সুস্থতা ও নিরাপত্তা দান করুন। আপনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই।

আয় আল্লাহ! আমি আপনার আশ্রয় গ্রহণ করছি কুফুরী ও দারিদ্র্য থেকে। আয় আল্লাহ! আমি আপনার নিকট পানাহ চাই কবরের আযাব থেকে। আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। Ñসুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৫০৯০; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২০৪৩০; আলআদাবুল মুফরাদ, হাদীস ৭০১

খ. যখন পারেন, যতবার পারেন, এই দুআ পড়–নÑ

لَّاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنْتَ سُبْحٰنَكَ اِنِّیْ كُنْتُ مِنَ الظّٰلِمِیْنَ.

আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। আমি আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। নিশ্চয় আমি অপরাধীদের অন্তর্ভুক্ত। Ñসূরা আম্বিয়া (২১) : ৮৭

এ সময় নিজের অপরাধ স্মরণ করে এবং নিজেকে অপরাধী ভেবে এ দুআ যত বেশি পড়া যায় ততই ভালো।

গ. সকাল-সন্ধ্যা তিনবার পড়–নÑ

بِسْمِ اللهِ الَّذِيْ لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِه شَيْءٌ فِي الأَرْضِ وَلاَ فِي السَّمَاءِ، وَهُوَ السَّمِيْعُ العَلِيْمُ.

আল্লাহ তাআলার নামে, যাঁর নাম সঙ্গে থাকলে যমিন ও আসমানের কোনো বস্তু ক্ষতিসাধন করতে পারে না। আর তিনি সবকিছু শোনেন এবং জানেন। Ñজামে তিরমিযী, হাদীস ৩৩৮৮; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৫০৮৮

ঘ. সন্ধ্যায় তিনবার পড়–ন। (সকালে পড়লেও সমস্যা নেই)Ñ

أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ.

আমি আল্লাহ্র পূর্ণ কালিমাসমূহের সাহায্যে তাঁর সকল সৃষ্টির অকল্যাণ-অনিষ্ট থেকে পানাহ গ্রহণ করছি। Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ২৭০৮

ঙ. সকাল-সন্ধ্যা সাতবার পড়–নÑ

حَسْبِيَ اللهُ لَا إِلূهَ إِلَّا هُوَ، عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ.

আামার জন্য আল্লাহ্ই যথেষ্ট, তিনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। তাঁর উপরই আমি ভরসা করছি। তিনি মহান আরশের রব। Ñসুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৫০৮১

চ. যে কোনো সময় যতবার সম্ভব পড়–নÑ

لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللهِ لاَ مَلْجَأَ وَلاَ مَنْجَأَ مِنَ اللهِ إلاَّ إِلَيْهِ.

আল্লাহর তাওফীক ছাড়া পাপ পরিহার করা এবং নেক কাজ করার শক্তি নেই। তাঁর আশ্রয় ব্যতীত তাঁর পাকড়াও থেকে বাঁচার কোনো উপায় নেই। Ñমুসনাদে বাযযার, হাদীস ৯৬৩৫

ছ. সকাল-সন্ধ্যায় পড়–নÑ

يَا حَيُّ يَا قَيُّوْمُ بِرَحْمَتِكَ أَسْتَغِيْثُ، أَصْلِحْ لِيْ شَأْنِيْ كُلَّهُ، وَلَا تَكِلْنِيْ إِلূى نَفْسِيْ طَرْفَةَ عَيْنٍ.

হে চিরঞ্জীব, হে সৃষ্টিকুলের নিয়ন্ত্রক, আপনার রহমতের দোহাই দিয়ে আপনার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করছি, আপনি আমার সকল বিষয় শুদ্ধ করে দিন, এক মুহূর্তের জন্যও আপনি আমাকে আমার উপর ছেড়ে দিয়েন না। Ñসুনানে কুবরা, নাসাঈ, হাদীস ১০৩৩০; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ২০০০

জ. যে কোনো সময় যতবার সম্ভব পড়–নÑ

ؤرَحْمَتَكَ أَرْجُوْ، فَلَا تَكِلْنِيْ إِلٰى نَفْسِيْ طَرْفَةَ عَيْنٍ، وَأَصْلِحْ لِيْ شَأْنِيْ كُلَّهُ، لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ.

আয় আল্লাহ! আপনার রহমতেরই প্রত্যাশী আমি। তাই আপনি আমাকে আমার উপর ন্যস্ত করবেন না। আপনি আমার সকল বিষয় পরিশুদ্ধ করে দিন। আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। Ñসুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৫০৯০; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২০৪৩০

ঝ. সকাল-সন্ধ্যায় ও আযান-ইকামতের মাঝে পড়–নÑ

اللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَة

اللّٰهُمَّ أَسْأَلُكَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ فِيْ دِينِيْ وَدُنْيَايَ وَأَهْلِيْ وَمَالِيْ

اللّٰهُمَّ اسْتُرْ عَوْرَاتِيْ، وَآمِنْ رَوْعَاتِيْ، وَاحْفَظْنِيْ مِنْ بَيْنِ يَدَيَّ، وَمِنْ خَلْفِيْ، وَعَنْ يَمِينِيْ، وَعَنْ شِمَالِيْ، وَمِنْ فَوْقِيْ، وَأَعُوذُ بِكَ أَنْ أُغْتَالَ مِنْ تَحْتِيْ.

হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে দুনিয়া ও আখেরাতে ক্ষমা ও নিরাপত্ত প্রার্থনা করছি।

হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট ক্ষমা ও নিরাপত্তা চাচ্ছি, আমার দ্বীন, দুনিয়া, পরিবার ও সম্পদে।

হে আল্লাহ! আমার গোপন ত্রæটিসমূহ ঢেকে রাখুন। আমার উদ্বিগ্নতাকে রূপান্তরিত করুন নিরাপত্তায়। আমাকে হেফাযত করুন সামনে থেকে, পেছন থেকে, ডান থেকে, বাম থেকে, উপর থেকে; এবং আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি নিচ হতে হঠাৎ আক্রান্ত হওয়া থেকে। Ñসুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ৩৮৭১

এটা জরুরি নয় যে, সকলকে সবক’টি দুআই পড়তে হবে। বরং যার জন্য যে দুআ সহজ তিনি তা-ই পড়–ন। যার সবগুলো পড়ার তাওফীক হয়, তিনি সবগুলোই পড়–ন। মূলকথা হল, আল্লাহ্র প্রতি মুতাওয়াজ্জেহ হয়ে ও আল্লাহমুখী হয়ে মনের উপলব্ধি জাগরূক রেখে অন্তর থেকে চাওয়া, আল্লাহ্র আশ্রয় গ্রহণ করা।

এছাড়া ইস্তিগফার ও দরূদ শরীফেরও ইহতিমাম করা চাই। আর সময়-সুযোগ করে দু’রাকাত সালাতুল হাজত পড়ে দুআর ইহতিমাম করলে তা অনেক ভালো। আল্লাহ তাআলা বলেনÑ

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوا اسْتَعِیْنُوْا بِالصَّبْرِ وَ الصَّلٰوةِ اِنَّ اللهَ مَعَ الصّٰبِرِیْنَ .

হে ঈমানদারগণ! তোমরা সবর ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চয় আল্লাহ সবরকারীদের সাথে রয়েছেন। Ñসূরা বাকারা (২) : ১৫৩

আসমায়ে হুসনা থেকে কিছু নামের ওযীফা বেশি পরিমাণে আদায় করলেও তা অনেক উপকারী। যেমনÑ

يَا رَحْمূنُ হে দয়ালু মেহেরবান, يَا رَحِيْمُ হে পরম করুণাময়, يَا سَلَامُ হে সালাম (শান্তির ব্যবস্থাকারী), يَا قَوِيُّ হে শক্তির আধার, يَا مُؤْمِنُ হে নিরাপত্তা দানকারী, يَا مُهَيْمِنُ হে রক্ষাকর্তা,  يَا حَفِيْظُ হে হেফাযতকারী, يَا وَدُوْدُ হে প্রেমময়, يَا غَفُوْرُ হে ক্ষমাকারী,  يَاذَا الْجَلٰلِ وَ الْاِكْرَامِ  হে মহিমাময়, মহানুভব, يَا مَانِعُ  হে প্রতিরোধকারী।

যখন যে নামে আল্লাহ তাআলাকে ডাকতে চান ডাকুন। আল্লাহ আপনার ডাক কবুল করতে প্রস্তুত। আল্লাহ তাআলা বলেনÑ

قُلِ ادْعُوا اللهَ اَوِ ادْعُوا الرَّحْمٰنَ اَیًّا مَّا تَدْعُوْا فَلَهُ الْاَسْمَآءُ الْحُسْنٰی.

হে নবী আপনি বলে দিন, তোমরা আল্লাহ নামে ডাক অথবা রহমান নামে ডাক; তোমরা যে নামেই ডাক (একই কথা), কেননা সমূহ সুন্দর নাম তো তাঁরই। Ñসূরা ইসরা (১৭) : ১১০

আরো ইরশাদ হয়েছেÑ

وَ اِذَا سَاَلَكَ عِبَادِیْ عَنِّیْ فَاِنِّیْ قَرِیْبٌ  اُجِیْبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ اِذَا دَعَانِ  فَلْیَسْتَجِیْبُوْا لِیْ وَ لْیُؤْمِنُوْا بِیْ لَعَلَّهُمْ یَرْشُدُوْنَ .

আমার বান্দাগণ যখন আমার সম্বন্ধে তোমাকে প্রশ্ন করে, আমি তো নিকটেই। প্রার্থনাকারী যখন আমাকে ডাকে তখন তার ডাকে আমি সাড়া দিই। অতএব তারাও আমার ডাকে সাড়া দিক এবং আমার প্রতি ঈমান আনুক; যাতে তারা সঠিক পথে এসে যায়। Ñসূরা বাকারা (২) : ১৮৬

এ আয়াতে দুআ কবুল হওয়ার যেমন সুসংবাদ রয়েছে, পাশাপাশি আমাদের কর্তব্যের বিষয়ও বিবৃত হয়েছে। অর্থাৎ যখনই আল্লাহ্র ডাক আসবে তখনই সে ডাকে লাব্বাইক বলা এবং তাঁর বিধানের সামনে সমর্পিত হওয়া আমার কর্তব্য।

রোগ-শোক থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য যেসব দুআ শেখানো হয়েছে মুনাজাতেও সেগুলো বলুন। পাশাপাশি এ বিষয়গুলোও মুনাজাতে চাইতে থাকুনÑ (উাদাহরণস্বরূপ)

اللّٰهُمَّ جَنِّبْنِيْ مُنْكَرَاتِ الْأَخْلَاقِ، وَالْأَهْوَاءِ، وَالْأَعْمَالِ وَالْأَدْوَاءِ.

আয় আল্লাহ! আপনি আমাকে মন্দ স্বভাব, মন্দ প্রবৃত্তি, মন্দ কর্ম এবং মন্দ রোগ-ব্যাধি থেকে দূরে রাখুন। Ñমুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ১৯০৭; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৯৬০

اللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ البَرَصِ، وَالْجُنُوْنِ، وَالْجُذَامِ، وَمِنْ سَيِّئِ الْأَسْقَامِ.

আয় আল্লাহ! আমি আপনার নিকট শে^তরোগ, পাগল হওয়া, কুষ্ঠ রোগ এবং সকল প্রকার জটিল রোগ থেকে আশ্রয় গ্রহণ করছি। Ñসুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৫৫৪; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৩০০৪

পঞ্চম কাজ : পাক-পবিত্র, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, মার্জিত ও পরিপাটি থাকা। এগুলো ইসলামের অনেক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। ইসলামের দৃষ্টিতে এগুলো স্বতন্ত্র গুরুত্বপূর্ণ নেক আমল। পাশাপাশি সুস্থতা ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও এর ভ‚মিকা অপরিসীম। তাই এ বিষয়গুলোর প্রতি সর্বাবস্থায়ই যতœবান থাকা চাই।

ষষ্ঠ কাজ : স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

ইসলাম আল্লাহ তাআলার একমাত্র মনোনীত দ্বীন ও ধর্ম। এ দ্বীন পূর্ণাঙ্গ এবং পরিপূর্ণ। এর বিধানগুলোও পরিপূর্ণ এবং সর্বকালীন। এজন্য এর শিক্ষা ও বিধান খুবই যৌক্তিক, খুবই সহজ এবং খুবই স্বভাবজাত হয়ে থাকে। এ কারণেই ইসলাম চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞদের শরণাপন্ন হওয়ার এবং তাদের পরামর্শ ও সেবা গ্রহণ করার অনুমতি দিয়েছে। তবে দুই শর্তে।

এক. তাদের পরামর্শ শরীয়তের বিধানের সাথে সাংঘর্ষিক না হওয়া।

দুই. বৈধ উপকরণ হিসাবে তা গ্রহণ করা।

নতুবা সুস্থতা, সুরক্ষা ও আরোগ্যের ক্ষেত্রে প্রধান কর্তব্য হল, আল্লাহ্র উপর ভরসা রাখা। তিনিই খালিক, তিনিই মালিক, তিনিই রাব্বুল আলামীন। একমাত্র তিনিই আমাদের মাওলা ও অভিভাবক এবং তিনিই আমাদের সবকিছু।

 

স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞদের সতর্কতামূলক কিছু পরামর্শ

বাংলাদেশ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ হতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে পাঁচ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যা বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে। যথা : এক. ভালোভাবে সাবান-পানি দিয়ে হাত ধুতে হবে। দুই. হাত না ধুয়ে চোখমুখ ও নাক স্পর্শ না করা। তিন. হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় মুখ ঢেকে রাখা। চার. অসুস্থ পশু বা পাখির সংস্পর্শে না আসা। পাঁচ. মাছ-গোশত ভালোভাবে রান্না করে খাওয়া।

এগুলো আসলে শরীয়তের বিধানÑ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, পবিত্রতা, সচেতনতা ও নিয়মানুবর্তিতা ইত্যাদিরই শামিল, নতুন কিছু নয়। যেমন হাত ধোয়ার বিষয়টি প্রতিদিনের পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামাযের ওযু, কুরআন স্পর্শ করার ওযু, সর্বাবস্থায় পাক-পবিত্র থাকার জন্য নফল ওযু ইত্যাদিতে আছে। ঘুম থেকে ওঠার পর, খাবারের আগে-পরে হাত ধোয়ার নিয়ম আছে। ফরয গোসল, সুন্নত গোসলেও শুধু হাত ধোয়া নয়, পূর্ণ ওযুই রয়েছে।

হাঁচির ক্ষেত্রে তো মুখ ঢাকার কথা হাদীস শরীফে পরিষ্কারভাবে আছেÑ

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ: أَنّ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ كَانَ إِذَا عَطَسَ غَطّى وَجْهَهُ بِيَدِهِ أَوْ بِثَوْبِهِ وَغَضّ بِهَا صَوْتَهُ.

আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন হাঁচি দিতেন তখন তিনি হাত দিয়ে বা কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে নিতেন এবং আওয়াজ নিচু করতেন। Ñজামে তিরমিযী, হাদীস ২৭৪৫

হাই তোলার ক্ষেত্রে যথাসম্ভব মুখ বন্ধ রাখার এবং সম্ভব না হলে হাত দিয়ে মুখ আবৃত রাখার আদেশ আছে। ইরশাদ হয়েছেÑ

إِذَا تَثَاءَبَ أَحَدُكُمْ فَلْيَرُدّهُ مَا اسْتَطَاعَ.

তোমাদের কারো যদি হাই আসতে চায় তাহলে যথাসম্ভব দমন করবে। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৩২৮৯)

আরো ইরশাদ হয়েছেÑ

إِذَا تَثَاءَبَ أَحَدُكُمْ فَلْيَضَعْ يَدَهُ عَلَى فِيهِ

তোমাদের কারো যদি হাই আসতে চায় তাহলে সে যেন মুখে (যথাসম্ভব কাপড়সহ) হাত রাখে। Ñজামে তিরমিযী, হাদীস ২৭৪৬

পানি পান করার সময় পাত্রে নিঃশ্বাস না ফেলার নির্দেশনাও হাদীস শরীফে এসেছে। ইবনে আব্বাস রা. বলেনÑ

أَنّ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ نَهَى أَنْ يُتَنَفّسَ فِي الإِنَاءِ أَوْ يُنْفَخَ فِيهِ.

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাত্রে নিঃশ্বাস ফেলতে বা ফুঁ দিতে নিষেধ করেছেন। Ñজামে তিরমিযী, হাদীস ১৮৮৮

ইসলামে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাকে ঈমানের অংশ সাব্যস্ত করা হয়েছে। তাহারাত-পবিত্রতা তো অনেক উপরের বিষয় এবং এটা ইসলামেরই বৈশিষ্ট্য; কিন্তু এর বাইরে ইসলামী শরীয়তে পরিষ্কার-পরিচ্ছনতার প্রতিই অনেক গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। সেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতারই একটা অংশ হল, প্রয়োজন হলে হাত ধোওয়ার সময় মাটি বা সাবান ব্যবহার করা।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, দ্বীন-দুনিয়ার কোনো ফায়েদা ছাড়া অনর্থক ঘুরাঘুরির বিষয়ে নিম্নোক্ত হাদীসে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছেÑ

أَمْلِكْ عَلَيْكَ لِسَانَكَ، وَلْيَسَعْكَ بَيْتُكَ، وَابْكِ عَلَى خَطِيئَتِكَ.

তোমার যবানকে নিয়ন্ত্রণে রাখো, তোমার ঘর যেন তোমার জন্য যথেষ্ট হয় আর নিজের গুনাহের জন্য কান্নাকাটি করো। Ñজামে তিরমিযী, হাদীস ২৪০৬

আসলে আমাদের উদাসীনতা এত বেশি বেড়ে গেছে যে, দৈনন্দিন জীবনের অনেক মাসআলা-মাসায়েল, সুন্নত ও আদব সম্পর্কেও আমরা বেখবর!!

 

এ সময়ে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ

দান-সদকা অনেক বড় নেক আমল। এটি সবসময়েরই আমল। কিন্তু ব্যাপক সংকট-সংকীর্ণতার মুহূর্তে দান-সদকার গুরুত্ব ও ফযীলত আরো বেশি। এতে সওয়াবও বেশি হয় এবং আল্লাহ তাআলারা নৈকট্য লাভ হয়। সাথে সাথে দান-সদকার মাধ্যমে আল্লাহ্র অসন্তুষ্টি-ক্রোধ নির্বাপিত হয়। বালা-মুসিবত দূর হয়।

এই মহামারির সময়ে কাজ হারিয়ে অনেকেই সংকটে পড়বেন। সুতরাং প্রত্যেকেরই উচিত নিজেদের আশপাশে বা অন্য যে কোনো এলাকায় এ ধরনের মানুষ খোঁজ করে করে নগদ অর্থ বা প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী Ñযেখানে যেটা প্রয়োজনÑ তাদের পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া। এর দ্বারা যেমনিভাবে প্রয়োজনগ্রস্তের প্রয়োজন পুরা হবে তেমনি ইনশাআল্লাহ তা এই মহামারি বিদূরিত হওয়ার ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখবে।

একথা প্রমাণিত যে, দান-সদকা দ্বারা বালা-মুসিবত দূর হয় এবং জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। আর হাদীসে এসেছেÑ

إِنّ الصّدَقَةَ لَتُطْفِئُ غَضَبَ الرّبِّ وَتَدْفَعُ مِيتَةَ السّوءِ.

নিশ্চয় দান-সদকা আল্লাহ্র গযব-ক্রোধকে নির্বাপিত করে এবং খারাপ মৃত্যু থেকে রক্ষা করে। Ñজামে তিরমিযী, হাদীস ৬৬৪; শুআবুল ঈমান, বায়হাকী, হাদীস ৩০৮০; সহীব ইবনে হিব্বান, হাদীস ৩৩০৯

শেষ কথা

কুরআনে কারীমে আল্লাহ তাআলা চিন্তাশীল ও সুদৃষ্টিসম্পন্নদের উদ্দেশে হুকুম করেছেনÑ

فَاعْتَبِرُوْا یٰۤاُولِی الْاَبْصَارِ.

সুতরাং হে চক্ষুষ্মানেরা! তোমরা শিক্ষা গ্রহণ কর। Ñসূরা হাশর (৫৯) : ২

বিপদাপদ আসার মধ্যে বড় হেকমত এই থাকে যে, মানুষ এর থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবে। চলমান মহামারি থেকে শিক্ষা গ্রহণের অনেক কিছু আছে। আমরা শুধু কয়েকটি বিষয় আলোচনা করছি। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে এখান থেকে যথাযথ শিক্ষা গ্রহণ করার তাওফীক দান করুনÑ আমীন

১. এক ভাইরাসের কারণে পুরো দেশ নয় বরং পুরো দুনিয়া পেরেশান! আমরা কি কখনো ভেবেছি, একেক কবীরা গোনাহ কত বড় ভাইরাস! আমরা কি তা থেকে বাঁচার সংকল্প করেছি এবং বেঁচে থাকার কর্মপন্থা গ্রহণ করেছি?

২. ভাইরাসের ভয়ে কত মুবাহ (সাধারণ বৈধ) কাজ আমরা কত সহজে ছেড়ে দিচ্ছি। আমরা কি তা থেকে এ শিক্ষা নিয়েছি যে, যেসব অপরাধ ও অশ্লীল কাজের কারণে এই আযাব এসেছে আমরা সেগুলোও ছেড়ে দেওয়ার ইহতিমাম করব?

৩. ভাইরাসের ভয়ে আমরা আমাদের মনের সব চাহিদা বিসর্জন দিতে প্রস্তুত। তো আল্লাহ তাআলার পাকড়াওয়ের ভয়ে, জাহান্নামের আযাবের ভয়ে এবং দোযখের আগুনের ভয়ে কি আমরা  হারাম খাহেশাতগুলো ছেড়ে দেওয়ার ফিকির করব না?

৪. এসময় জনগণের সুস্থতা রক্ষার জন্য আমাদের রাষ্ট্র ও তার অধীনে সকল সংগঠন মাশাআল্লাহ সবদিক থেকে তৎপর। অতএব জনগণের ঈমান-আমল, শান্তি-নিরাপত্তা, তাদের জীবনাচার ও কর্মকাণ্ডের হেফাযতের জন্য রাষ্ট্র কি তার দায়িত্বগুলো স্মরণ করবে না? এক্ষেত্রে রাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হল, কুরআন-সুন্নাহ ও ইসলামী শরীয়াতের বিপরীত সকল নিয়ম-নীতি বাতিল করতঃ আল্লাহ্র মাখলুককে আল্লাহ্র হুকুম মোতাবেক পরিচালনা করা। আল্লাহ প্রদত্ত রাষ্ট্র ক্ষমতা আল্লাহ্র বিধান মোতাবেক পরিচালনা করা। এর জন্য প্রয়োজন কেবল হিম্মত ও দৃঢ় সংকল্প; আর কিছু নয়। আল্লাহ তাআলার নিকট তাওফীক প্রার্থনা করে বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করলে ইনশাআল্লাহ সব সমস্যা দূর হয়ে যাবে।

وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين.হ

 

 

অমূলক ভীতি ও অস্থিরতার নাম সতর্কতা নয় বরং তা বাড়াবাড়ি

সতর্কতা কাম্য বাড়াবাড়ি পরিত্যাজ্য

 

মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক

 

الحمد لله وسلام على عباده الذين اصطفى، أما بعد :

 

 কোনো ভ‚মিকা ছাড়াই বিষয়টি নিয়ে কিছু জরুরি নিবেদন পেশ করার চেষ্টা করছি। আল্লাহ্ই তাওফীকদাতা।

 

প্রথম নিবেদন

সর্বপ্রথম যে বিষয়টি মুসলমানদের মন-মানসে দৃঢ়ভাবে গেঁথে নেয়া উচিত তা হলÑ আল্লাহ তাআলা হক আকীদা ও ইসলামী শরীয়তের মাধ্যমে আমাদেরকে স্বাতন্ত্র্য ও বৈশিষ্ট্য দান করেছেন। অন্যান্য জাতি-গোষ্ঠীর কাছে আছে শুধু চিকিৎসাবিজ্ঞান আর আমাদের মুসলমানদের কাছে চিকিৎসাবিজ্ঞান ছাড়াও আল্লাহ প্রদত্ত আরো দুটি তোহফা রয়েছে; ঈমানী আকীদা ও ইসলামী শরীয়ত। সুতরাং মুসলিমগণ মহামারি বা অন্য কোনো ব্যাধির প্রতিকারে বিজ্ঞানের নামে প্রচারিত সব ধরনের কথা এবং যে কোনো ধরনের কর্মপদ্ধতি ঢালাওভাবে গ্রহণ করতে পারে না; বরং এক্ষেত্রে সে তার ইসলামী আকীদা ও শরীয়তকেও সামনে রাখবে।

 

দ্বিতীয় নিবেদন

ইসলামপূর্ব জাহেলিয়াতের মত নব্য জাহেলিয়াতে আক্রান্ত অনেক মানুষের মাঝেও এ ধ্যান-ধারণা রয়েছে যে, কিছু রোগ এমন রয়েছে, যা নিজ শক্তিবলেই সংক্রমিত হতে পারে। যেন আল্লাহ তাআলার কুদরত ও তাকদীরের বাইরে এ রোগ নিজেই কাউকে আক্রান্ত করার শক্তি রাখে। কোনো সন্দেহ নেই, এটা কুফরি ও শিরকী আকীদা, ঈমান ও তাওহীদ পরিপন্থী আকীদা।

 রোগ-ব্যাধি সব আল্লাহ তাআলারই সৃষ্টি। ওষুধও সৃষ্টি করেছেন তিনি। শিফাও তাঁর হাতে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনÑ

مَا أَنْزَلَ اللهُ دَاءً، إِلّا قَدْ أَنْزَلَ لَهُ شِفَاءً، عَلِمَهُ مَنْ عَلِمَهُ، وَجَهِلَهُ مَنْ جَهِلَهُ.

আল্লাহ যে রোগই সৃষ্টি করেছেন তার জন্য শিফারও ব্যবস্থা রেখেছেন। কেউ তা জানতে পেরেছে। আর কেউ জানতে পারেনি। Ñমুসনাদে আহমদ, হাদীস ৩৫৭৮

إِنّ اللهَ حَيْثُ خَلَقَ الدّاءَ، خَلَقَ الدّوَاءَ، فَتَدَاوَوْا.

আল্লাহ যেমন রোগ সৃষ্টি করেছেন ওষুধও সৃষ্টি করেছেন। তাই তোমরা চিকিৎসা গ্রহণ করো। Ñমুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১২৫৯৬

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেনÑ

لِكُلِّ دَاءٍ دَوَاءٌ، فَإِذَا أُصِيبَ دَوَاءُ الدّاءِ بَرَأَ بِإِذْنِ اللهِ عَزّ وَجَلّ.

প্রত্যেক রোগেরই ঔষধ রয়েছে। তাই মানুষ যদি রোগের (সঠিক) ঔষধ পেয়ে যায় আল্লাহ তাআলার হুকুমে আরোগ্য লাভ হয়। Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ২২০৪

খালিক ও মালিক তো শুধু আল্লাহ রাব্বুল আলামীন। কোনো কিছুই তাঁর কুদরত ও তাকদীরের বাইরে নয়। জীবন-মরণ, কল্যাণ-অকল্যাণ, লাভ-ক্ষতি, উপকার-অপকার সব কিছু তাঁরই হাতেÑ

لَهُ الْخَلْقُ وَالْأَمْرُ.

সৃষ্টি তাঁর, হুকুমও তাঁরই। সুতরাং রোগ-ব্যাধি নিজ শক্তিবলে সংক্রমিত হওয়ার ক্ষমতা রাখেÑ এজাতীয় শিরকী আকীদা-বিশ্বাসের ইসলামে কোনো স্থান নেই।

তবে এটি একটি বাস্তবতা যে, কিছু রোগ-ব্যাধি এমন আছে, তাতে আক্রান্ত ব্যক্তির সংশ্রব আল্লাহ্র হুকুমে কখনো কখনো অন্যের জন্য আক্রান্ত হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এরকম বাহ্যিক কারণপ্রসূত সংক্রমণ, যা আল্লাহ্র হুকুমে হয়ে থাকেÑ পূর্ববর্ণিত আকীদায়ে তাওহীদের পরিপন্থী নয়; বরং আল্লাহ্র সৃষ্ট অন্যান্য বাহ্যিক কারণের মত এটাকেও ইসলামী শরীয়ত একটি কারণ হিসেবে স্বীকার করে এবং এর ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশনা দেয়। সঙ্গে সঙ্গে এ বিষয়ে জোর তাকিদ করে যে, এক্ষেত্রে কোনো অমূলক ধারণা ও ওয়াসওয়াসার পিছে পড়া যাবে না। ইসলামে সতর্কতা কাম্য, কিন্তু অমূলক ধারণা ও ওয়াসওয়াসার অনুগামী হওয়া নিষেধ।

করোনা-মহামারিটি যদিও নতুন, কিন্তু মহামারি তো নতুন কিছু নয়। তাছাড়া আল্লাহ তাআলার হুকুমে নতুন নতুন রোগও মহামারির রূপ ধারণ করতে পারে। মহামারি ও অন্যান্য বিপদ-আপদ-দুর্যোগ বিষয়ে কুরআন সুন্নাহ্য় যে হেদায়েত ও বিধি-বিধান বিদ্যমান, পূর্বসূরী মনীষীগণ নিজ নিজ যুগে সেগুলোর  উপর যেভাবে আমল করেছেনÑ কুরআন-সুন্নাহ্র সে হেদায়েত এবং সালাফের সে কর্মপন্থা আজো সংরক্ষিত আছে, কিয়ামত পর্যন্ত সংরক্ষিত থাকবে এবং সর্বদা নতুন নতুন সব মহামারি-মুসীবতেও পথনির্দেশ করতে থাকবে।

 

তৃতীয় নিবেদন

যে ভয় ও শংকা মানুষকে হতাশ ও হতোদ্যম করে দেয় তা নিষিদ্ধ। মানুষ ভয় ও শংকায় থাকবে তো কবরের যিন্দেগীর ব্যাপারে, হাশরের ভয়াবহ অবস্থার ব্যাপারে। হিসাব-নিকাশের জন্য আল্লাহ তাআলার সামনে দণ্ডায়মান হওয়ার কথা চিন্তা করে। অথচ এখানেই ইসলাম ভারসাম্য রক্ষার হুকুম দিয়েছে। ভয়ের সাথে আশা রাখার তাকীদ দিয়েছে এবং আশার সাথে ভয় রাখার তাকীদ করেছে। যেন ভয়ের নামে নিরাশায় নিপতিত না হয় বা আশার নামে আত্মপ্রবঞ্চনার স্বীকার না হয়।

তো যেহেতু আখেরাতের ভয়ের ব্যাপারেই ইসলামে ভারসাম্য রক্ষা করা কাম্য তাহলে অন্যান্য বিষয়ের ভয়, যা শুধু স্বভাবজাত বিষয় মাত্র, সেক্ষেত্রে সামীলংঘন কীভাবে বৈধ হতে পারে?

ইসলামে আল্লাহ্র উপর ভরসার এত গুরুত্ব এজন্যই যে, যাতে মুসলমানের উপর অন্য কোনো কিছুর ভয় এত প্রবল হতে না পারে, যা তাকে নিরাশ করে ফেলে  বা নিজ দায়িত্ব ও কর্মে উদাসীন করে দেয়।

ইসলামে অমূলক ধারণা ও ওয়াসওয়াসার পিছে পড়া নিষিদ্ধ হওয়ার একটা হেকমত এটাও যে, তা মানুষকে অযথা আতঙ্কগ্রস্ত করে ফেলে। যার প্রতি ভ্রæক্ষেপ না করাই মুমিন বান্দার শান।

 

চতুর্থ নিবেদন

ইসলামী শরীয়তে সতর্কতার বিধান রয়েছে; কিন্তু অমূলক ভীতি ও শঙ্কায় নিপতিত হওয়া নিষেধ। এজন্য সতর্কতামূলক বৈধ উপায়-উপকরণ তো অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে, কিন্তু নিছক ধারণা ও অমূলক ভীতির স্বীকার হয়ে দ্বীনী বা জাগতিক কোনো দায়-দায়িত্ব থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া যায় না।

যেমন, পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামায জামাতের সাথে মসজিদে আদায় হওয়া ওয়াজিব। জুমার নামায জামাতের সাথে আদায় করা ফরয। উভয়টি ইসলামের অনেক গুরুত্বপূর্ণ শিআর (পরিচয়-চিহ্ন)। কিছু কিছু বাস্তব ওযরের কারণে জুমা ও জামাতে শরীক না হওয়ার অবকাশ তো শরীয়তে আছে; সে ছাড় অবশ্যই গ্রহণ করা দরকার। কিন্তু অমূলক ধারণা প্রসূত শংকা ও ভীতির কারণে জুমা ও জামাতের উপর পাবন্দি লাগানো বা মসজিদ বন্ধ করার চিন্তা করাÑ এর কোনো অবকাশ নেই।

ধরে নিলাম, এ ভাইরাসটি এমন যে, আক্রান্ত ব্যক্তির সংশ্রব অন্য ব্যক্তির আক্রান্ত হওয়ার একটি কারণ। গোড়াতেই তো এটি একটি সম্ভাবনা মাত্র অর্থাৎ আক্রান্ত হতেও পারে, নাও পারে। তথাপিও এ সম্ভাবনাকে আমলে নিয়ে, যার মোটামুটিভাবে একটা ভিত্তি আছে, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা নিষিদ্ধ নয়; বরং একটা পর্যায় পর্যন্ত কাম্যও বটে। এ কারণে এ ধরনের রোগে যিনি আক্রান্ত হয়ে গেছেন বা আক্রান্ত হওয়ার প্রবল আশংকা রয়েছে তার ব্যাপারে শরীয়তের বিধান হল, সে নিজেও সতর্কতা অবলম্বন করবে এবং অন্যরাও তার ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করবে। তার সেবা-শুশ্রƒষার দায়িত্ব সতর্কতার সাথেই আদায় করতে হবে। কিন্তু প্রশ্ন তো আসে তখন যখন সম্ভাবনার সীমানা পার হয়ে দলীল-প্রমাণবিহীন ধারণার ভিত্তিতে সতর্কতার নামে বাড়াবাড়ি শুরু হয়ে যায়।  নতুবা সাবধানতা ও সতর্কতা যতটুকু সম্ভবÑ গ্রহণ করা কাম্য ।

এটা তো সবারই জানা যে, নামাযের  জন্য যাওয়ার সময়ই ওযু অবস্থায় থাকা ভালো, অর্থাৎ নামাযের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার আগেই ওযু-তহারাত সেরে নেওয়া এমনিতেই মুস্তাহাব আর এই মুস্তাহাবকে আমলে আনার এটাই উপযুক্ত সময়।  আর এটাও সবাই জানে যে, ফরয নামাযের আগে-পরে যে সুন্নত-নফল নামায রয়েছে সেগুলোতে জামাতের বিধান নেই। একা পড়ার নামায এগুলো। স্বাভাবিক অবস্থায়ও ঘরে পড়লে সমস্যা নেই। একারণে এ বিশেষ পরিস্থিতিতে সুন্নত ও নফল নামায ঘরে পড়ার মাশওয়ারা দেয়া হয়েছে। এমনিভাবে লম্বা দুআ-অযিফা ও যিকির-আযকার, যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আমলÑ নিজ নিজ ঘরে বসেও আদায় করা যায়। এগুলো মসজিদেই আদায় করতে হবেÑ এমন কোনো মাসআলা নেই। তাছাড়া বিশেষ পরিস্থিতিতে নামায সংক্ষেপ করারও অবকাশ আছে; মাসনূন কেরাতের সবচেয়ে কম পরিমাণের উপর আমল করার সময়ই এখন। বলার উদ্দেশ্য হল, শরীয়ত যেসব বিষয়ে রুখসত (ছাড়) দিয়ে রেখেছে তা গ্রহণ করাতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু যেসকল বিষয় ইসলামের শিআর-এর অন্তর্ভুক্ত সেগুলোতে সতর্কতার নামে অমূলক ধারণার ভিত্তিতে বিধি-নিষেধ আরোপ করা বা নিরুৎসাহিত করার সুযোগ নেই। যেমন, সালাম ইসলামের শিআর (পরিচয়-চিহ্ন)। কোনো মুসলিম ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে সালাম দেওয়া সুন্নতে মুআক্কাদাহ। সালামের উত্তর দেওয়া ওয়াজিব। কেউ যদি সংক্রমণের ভয়ে সালাম থেকে বিরত থাকে তাহলে তা হবে অন্যায়। পক্ষান্তরে মুসাফাহা হল একটি ঐচ্ছিক মুস্তাহাব আমল। তাই এ ধরনের বিশেষ অবস্থায় মুসাফাহা থেকে বিরত থাকতে কোনো সমস্যা নেই। তবে মুসাফাহা থেকে বিরত থাকলে এমন নিয়ত করবে না যে, আমি তার কারণে আক্রান্ত হতে পারি; বরং এ নিয়ত করবে যে, আমি যেন তার ক্ষতি বা বিরক্তির কারণ না হই।

উল্লেখ্য, আক্রান্ত বা আক্রান্ত হওয়ার বিশেষ লক্ষণধারী ব্যক্তিরা নামাযের জামাতে যাবেন না। তেমনি বৃদ্ধব্যক্তি, যার রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম, বিশেষত যারা আগে থেকেই জটিল রোগে আক্রান্ত, তাদের জন্য এ ধরনের ক্ষেত্রে মসজিদের জামাতে না যাওয়ার সুযোগ আছে। আর যাদের বাহ্যিক কোনো ওযর নেই এবং যাওয়ার হিম্মতও আছে তারাও সতর্কতা ও সাবধানতার যাবতীয় ব্যবস্থা অবশ্যই গ্রহণ  করবেন।

 

বাড়াবাড়ির আরো কিছু নমুনা

১. নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি এক ব্যক্তি পশ্চিমের কোনো দেশ থেকে দেশে ফিরেছেন। এয়ারপোর্টগুলোতে জায়গায় জায়গায় তার পরীক্ষা নিরীক্ষা হয়েছে। সকল পরীক্ষায় এটাই প্রমাণিত হয়েছে যে, তার মধ্যে ভাইরাস নেই। এভাবে তিনি ঢাকায় পৌঁছেন।

উন্নত রাষ্ট্রগুলো থেকে ভাইরাসমুক্ত হওয়ার সনদ ধারণ করা সত্তে¡ও তার ভাইয়েরা তাকে ঘরে জায়গা দেয়নি।

অবশেষে তাকে কোনো হোটেলে তোলা হয়েছে। হোটেলে উঠতে না উঠতেই হোটেল কর্তৃপক্ষ কীভাবে যেন জানতে পেরেছে যে, এ লোক বিদেশ থেকে এসেছে। ব্যস, তারা পুলিশকে খবর দিয়ে দেয়। পরিস্থিতি টের পেয়ে এ ব্যাক্তি কোনোমতে সেখান থেকে কেটে পড়তে সক্ষম হয়।

এবার বলুন, এটাকে ওয়াসওয়াসা-প্রবণতা না বলা হলে আর কী বলা হবে!!

আরো জানা গেছে যে, এই রোগে আক্রান্ত কোনো মায়্যেতকে সতর্কতা অবলম্বন করে এক কবরস্থানে দাফন করতে নেয়া হলে এলাকার লোকেরা বাধা দিয়েছে। ফলে লাশ অন্য কোথাও নিতে হয়েছে। এটা অপ্রয়োজনীয় ভয় এবং নিছক ওয়াসওয়াসা। এটা হল নিজেদের মওতের ব্যাপারে গাফলত; যেন এদেরকে মরতে হবে না!

২. আমাদের দেশে এখন ঋতু পরিবর্তন হচ্ছে। এ সময় সর্দি, কাশি, ঠাÐ, জ¦র মামুলি বিষয়। ঘটনাচক্রে এগুলোই নাকি করোনা ভাইরাসের প্রাথমিক লক্ষণ। এখন সাধারণ জ¦র-ঠাÐায় আক্রান্ত রোগীদের কত শতাংশের মধ্যে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে এর তোয়াক্কা না করে কেবলমাত্র সর্দি-জ্বর দেখেই যদি ডাক্তারগণ আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এবং চিকিৎসা করতে প্রস্তুত না হন তাহলে বিষয়টি কেমন হবে? এমনিভাবে যেহেতু যেকোনো রোগীর ব্যাপারেই আশঙ্কা থাকে যে, তার মধ্যে হয়ত ভাইরাস আছে; এ কারণে যদি তাকে হাসপাতালে জায়গা না দেয় এবং ডাক্তাররা তার চিকিৎসা না করে তাহলে এসব সতর্কতার নামে বাড়াবাড়ি। এ থেকে বেঁচে থাকা জরুরি। হাঁ, এক্ষেত্রে সরকারেরও দায়িত্বÑ তাঁদের নিরাপত্তার প্রয়োজনীয় সামগ্রির ব্যবস্থা করা।

৩. এক মুসলিমের উপর অপর মুসলিমের একটি হক হচ্ছে, কোনো মুসলিম অসুস্থ হলে তার সেবা-শুশ্রƒষা করা। আরেকটি হক হচ্ছে, তাকে সহায়হীনভাবে নিঃসঙ্গ ছেড়ে না দেওয়া।

এ ভাইরাসে যে আক্রান্ত হয়েছেÑ এ হক তারও প্রাপ্য। প্রয়োজনীয়  সতর্কতা অবলম্বন করত তার এ হক আদায় করাও জরুরি। ভীতি ও শংকার কারণে সংশ্লিষ্ট কেউই তার এ হক আদায় করবে নাÑ এটা জায়েয নেই। আর যদি নিছক ধারণার ভিত্তিতে কোনো মুসলমানের এ হক নষ্ট করা হয় তাহলে তো তা আরো বড় গুনাহ।

৪. আতঙ্ক ও ভয়ের ছুতোয় নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রি মজুত করা, কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা এবং এই বাহানায় মূল্যস্ফীতি ঘটানোÑ সবই না জায়েয। মুসলমানদের এতটা আতঙ্কিত হওয়া উচিত নয়। আখের রিযিকের মালিক তো আল্লাহ্ই। তাছাড়া এটাও তো চিন্তার বিষয় যে, আমি একাই যদি সুখে থাকতে চাইÑ তো সেটা কেমন সুখ হবে!?

৫. যেসকল কার্যকলাপের কারণে মানুষের মাঝে অনর্থক আতঙ্ক বৃদ্ধি পায় সেগুলোও বাড়াবাড়ি। এগুলো পরিত্যাজ্য।

৬. তাউনের (এক প্রকারের মহামারি) ব্যাপারে হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছেÑ

إِذَا سَمِعْتُمْ بِهِ بِأَرْضٍ فَلاَ تَقْدَمُوا عَلَيْهِ، وَإِذَا وَقَعَ بِأَرْضٍ وَأَنْتُمْ بِهَا، فَلاَ تَخْرُجُوا فِرَارًا مِنْهُ.

যখন তোমরা জানতে পারবে কোনো এলাকায় তাউন বিরাজ করছে তখন তোমরা সেখানে যাবে না। আর তোমাদের অবস্থিত অঞ্চলে তাউন আপতিত হলে তোমরা সেখান থেকে পলায়নের নিয়তে বের হবে না। Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ৫৭৩০; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২২১৯

এ হাদীসের ফিতরী ও স্বাভাবিক অর্থ হল, যে নির্দিষ্ট মহল্লা বা এলাকায় বাস্তবেই এ রোগ ছড়িয়ে পড়েছে ওখান থেকে কেউ যেন বের না হয় এবং বাহির থেকেও কেউ যেন ওখানে না আসে। এটা তো স্পষ্ট যে, হাদীসে ‘আরদুন’ বলতে উদ্দেশ্য হল, নির্দিষ্ট এলাকা, যা আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে কেউ কেউ এর ব্যাখ্যা যেন এভাবে করছেন যে, এখানে ‘আরদুন’ অর্থ দেশ-মহাদেশ। আবার কেউ এমন অর্থও করছেন যে, আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় কেউ ঘর থেকেই বের না হওয়ার কথা বলা হয়েছেÑ এই হাদীসে। এটা হাদীসের মর্ম নয়। বাকি চিকিৎসাবিজ্ঞানের দাবিতে এমন করতে হলে  করতে কোনো বাধা নেই; তা তো ভিন্ন প্রসঙ্গ।

৭. অযথা ভয় ও আতঙ্কের একটা প্রকাশ এটাও যে, কিছু লোক এ ধরনের রোগে মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তির গোসল, কাফন দাফন-এর ব্যাপারেও দোদুল্যমান হয়ে পড়েছে। মনে রাখতে হবে যে, মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেয়া, কাফন পরানো এবং নিয়মমত দাফন করা ইত্যাদি বিষয়গুলো জীবিতদের উপর ফরয হক। এ ধরনের রোগে মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তির ক্ষেত্রেও এ হক বলবৎ থাকে। তার বিষয়টি ভিন্ন নয়।

তাদের গোসল দেয়া ও কাফন-দাফনের ক্ষেত্রে যদি বাস্তবেই অন্যদের আক্রান্ত হওয়ার আশংকা থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের তো উপায় আছে। এ ধরনের রোগীর চিকিৎসার ক্ষেত্রে চিকিৎসক ও নার্সরা যে ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন তা গ্রহণ করে গোসল ও কাফন-দাফনের কাজ করতে তো কোনো অসুবিধা নেই।

আল্লাহ না করুন, মুসলিম অধ্যুষিত কোনো এলাকায় যদি মৃতের সংখ্যা বেড়ে যায় সেক্ষেত্রে সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রয়োজনীয় সতর্কতাসহ মৃতের গোসলের জন্য প্রয়োজন-সংখ্যক আলাদা গোসলখানা স্থাপন করা যেতে পারে।

তবুও যেন কোনো মৃত ব্যক্তিকে গোসল-কাফন ও জানাযা ছাড়া দাফন করা না হয়। মৃত ব্যক্তির হক নষ্ট করে আমাদের জীবিত থাকার কী অধিকার আছে? মানুষ জীবিত হোক বা মৃত আল্লাহ্র কাছে সম্মানিত। ভাইরাসের কারণে এ সম্মান খতম হয়ে যায় না। জীবিত মানুষের মধ্যে ভয়-আতঙ্ক এত প্রবল না হওয়া চাই যে, সে এই মানবিক মর্যাদার মূল্যায়ন করতেও অক্ষম হয়ে পড়ে।

স্বাভাবিক অবস্থাতেও মাসনূন তরীকায় মাইয়েতকে গোসল দেওয়ার ক্ষেত্রে এ বিষয়টি বিবেচ্য যে, গোসল যেন সতর্কতার সাথে দেওয়া হয়, যাতে গোসলের পানির ছিটা থেকে বাঁচা সম্ভব হয়। এটাও আদব যে, মাইয়েতের গোসলের পানি যেন যত্রতত্র প্রবাহিত করা না হয়। বিজ্ঞানের উৎকর্ষের এ যুগে এ সুন্নত ও আদবের উপর আমল করা কোনো মুশকিল বিষয় নয়। এজন্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা যত প্রয়োজন অবশ্যই গ্রহণ করুন। তবে মৃত ব্যক্তির গোসল ও কাফন-দাফনের ফরয আদায়ে যেন কোনো শিথিলতা না হয়। অবশ্য একান্ত ঠেকা হলে এ ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত প্রয়োজনে গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুমের অবকাশের কথাও বলেছেন কোনো কোনো আলেমেদ্বীন। 

 

শেষ নিবেদন

এ মহামারি থেকে মানবজাতীর শেখার মতো বিষয় তো অনেক। এ সংক্ষিপ্ত পরিসরে সবগুলোর আলোচনা করাও মুশকিল। তবে একটি বিষয় না বললেই নয়। তা হল, বনী আদম তথা মানব জাতির উচিত, এ থেকে নিজেদের দুর্বলতা, অক্ষমতা ও অসহায়ত্বের উপলব্ধি লাভ করাÑ আল্লাহ তাআলার কুদরতের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নমুনার সামনে দুনিয়ার বড় বড় পরাশক্তিগুলো কতটা অক্ষম, কতটা অসহায়!!

কেউ যদি ঠাÐা মাথায় বিষয়গুলো নিয়ে একটু ভাবে তো নিজ অক্ষমতা, অসহায়ত্ব উপলব্ধি করে সে তার সব ধরনের অহমিকা-অহংকার ও গরিমার চিকিৎসা করতে পারে। কিন্তু বড়ই আফসোস হয়Ñ যখন বিপরীত দৃশ্য সামনে আসে। এ ঘটনা থেকে বিনয়ের শিক্ষা নেয়ার পরবির্তে উল্টো কিছু লোকের যবান থেকে এমন এমন কথা বের হয়, যা থেকে অহংকার টপকে পড়ে। এ ধরনের দাবি আল্লাহ তাআলার পছন্দ নয়। এসব দাবির পরিবর্তে আল্লাহ তাআলার কাছে সাহায্য চাওয়া উচিত। আল্লাহ্র দেয়া উপায়-উপকরণের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে বৈধ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। এ রোগ থেকে বাঁচার জন্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থাও গ্রহণ করা উচিত। আক্রান্ত হয়ে গেলে আল্লাহ্র উপর ভরসা করে এর চিকিৎসা করানো উচিত এবং সর্বাবস্থায় তওবা-ইসতিগফার ও যিকির-দুআর বিষয়ে যতœবান হওয়া উচিত। তো বিষয়টি হচ্ছে সতর্কতা অবলম্বন এবং চিকিৎসা গ্রহণের, শত্রæতা এবং যুদ্ধের নয়!

আল্লাহ তাআলা পৃথিবীকে সব ধরনের মহামারি ও বিশৃঙ্খলা থেকে হেফাজত করুন। বিশেষ করে উম্মতে মুসলিমাকে সকল অকল্যাণ ও পেরেশানী থেকে নিরাপদ রাখুন। সব ধরনের বালা-মসিবত ও মহামারী থেকে আপন হেফাযতে রাখুন। উম্মতের মযলুমানকে যুলুম থেকে নাজাত দান করুনÑ আমীন, ইয়া রাব্বাল আলামীন!

অনলাইন নিউজ পোর্টাল

মন্তব্য করুন: