বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, বৈশাখ ৫ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের ছয় হাতিয়ার

 প্রকাশিত: ০৯:৪৪, ১৩ জুলাই ২০২১

আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের ছয় হাতিয়ার

জন্মসূত্রেই মুসলমান হই অথবা পরবর্তীতে ইসলাম গ্রহণ করিনা কেন, কখনো কখনো আমরা সবাই আল্লাহর সাথে নিজের সম্পর্কহীনতা অনুভব করতেই পারি। কিন্তু আল্লাহর সাথে সম্পর্ক তৈরি ছাড়া আমাদের জীবনযাত্রায় আমরা কেউ টিকতে পারিনা। একাগ্রতার অভাবেই আমরা এই সম্পর্কহীনতা অনুভব করি।

কুরআনে আল্লাহ বলেছেন,

“আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে সুদৃঢ় হস্তে ধারণ কর; পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।” (সূরা আলে-ইমরান, আয়াত: ১০৩)

সুতরাং আল্লাহর রজ্জু তথা আল্লাহর নির্দেশনাকে যদি আমরা শক্তভাবে আঁকড়ে ধরতে পারি, তবে আমরা আল্লাহর সাথে নিজেদের সম্পর্কের বন্ধনকে দৃঢ় করতে পারি। 

এখানে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের সহায়ক ছয়টি হাতিয়ার সম্পর্কে আলোচনা করা হল।

১. মৌলিক ইবাদতকে দৃঢ়ভাবে ধারন করা
ফরজ তথা মৌলিক ইবাদত সমূহকে আমাদের দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ফরজ ইবাদত ছেড়ে আপনি যতই নফল ইবাদত করুন, আপনার সাথে আল্লাহর পূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হবেনা।

প্রতিদিন পাঁচ বার আল্লাহ আপনাকে তার সাথে ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাতের সুযোগ দিয়েছেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মাধ্যমে প্রতিদিন আপনার অবস্থা ও চাহিদা সম্পর্কে আল্লাহকে জানানোর আপনি সুযোগ পাচ্ছেন। এই সুযোগ যদি অবহেলা করা হয়, তবে কি করে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক তৈরি হতে পারে?

কুরআনে আল্লাহ বলেছেন,

“তোমরা আমাকে ডাক, আমি সাড়া দেব। যারা আমার এবাদতে অহংকার করে তারা সত্বরই জাহান্নামে দাখিল হবে লাঞ্ছিত হয়ে।” (সূরা গাফির, আয়াত: ৬০)

২. বিনয়ী হওয়া
কুরআনে বলা হয়েছে,

“অহংকারবশে তুমি মানুষকে অবজ্ঞা করো না এবং পৃথিবীতে গর্বভরে পদচারণ করো না। নিশ্চয় আল্লাহ কোন দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না।” (সূরা লুকমান, আয়াত: ১৮)

কখনোই নিজেকে বড় কিছু মনে করে অন্য মানুষকে হেয় ভাববেন না। এই ধারায় চিন্তা করতে থাকলে আল্লাহর সাথে আপনার সম্পর্ক ক্রমশই দুর্বল হতে থাকবে।

সুতরাং আপনার চিন্তা ও আচরণে সর্বদা বিনয়ী হন এবং আপনার জীবনে আল্লাহর দেওয়া নেয়ামতের জন্য তার প্রশংসা করুন। কেননা, আপনি জীবনে যাই অর্জন করেছেন, তা একান্তই আল্লাহর দান।

৩. গতানুগতিকতার পরিবর্তে আন্তরিকতা অবলম্বন করা
ইবাদত ও যাবতীয় কাজে গতানুগতিকতা তথা করার জন্য করার পরিবর্তে সচেতনতা ও আন্তরিকতার সাথে ঐ কাজটি করুন। আপনার সচেতন ও আন্তরিক ইবাদত আল্লাহর সাথে আপনার সম্পর্ককে গভীর করবে।

 ৪. নফল ইবাদত ও আল্লাহর স্মরণ বৃদ্ধি করা
কুরআনে বলা হয়েছে,

“আপনি আপনার প্রতি প্রত্যাদিষ্ট কিতাব পাঠ করুন এবং নামায কায়েম করুন। নিশ্চয় নামায অশ্লীল ও গর্হিত কার্য থেকে বিরত রাখে। আল্লাহর স্মরণ সর্বশ্রেষ্ঠ। আল্লাহ জানেন তোমরা যা কর।” (সূরা আনকাবুত, আয়াত: ৪৫)

শুধু ফরজ ইবাদতই নয়, বরং যথাসাধ্য নফল ইবাদত এবং যিকির তথা আল্লাহর স্মরণকে বৃদ্ধি করুন। আল্লাহর সাথে আপনার সম্পর্ককে দৃঢ় করতে অতিরিক্ত এই নফল ইবাদত এবং আল্লাহর যিকির সহায়তা করবে।

৫. আল্লাহর উপর ভরসা করা
আপনার সাধ্যের যাবতীয় প্রচেষ্টাকে সম্পন্ন করে ফলাফলের জন্য আল্লাহর উপর ভরসা করুন। আপনি যদি যথাসাধ্য চেষ্টা করে আল্লাহর উপর ভরসা করতে পারেন, আল্লাহ আপনার চেষ্টাকে সফলতা বা অধিক উত্তম পরিণতি দান করতে পারেন।

কুরআনেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আল্লাহর উপর ভরসার,

“আপনি বলুন, আমাদের কাছে কিছুই পৌঁছবে না, কিন্তু যা আল্লাহ আমাদের জন্য রেখেছেন; তিনি আমাদের কার্যনির্বাহক। আল্লাহর উপরই মুমিনদের ভরসা করা উচিত।” (সূরা তওবা, আয়াত: ৫১)

আল্লাহর উপর ভরসা একইসাথে আল্লাহর সাথে আপনার সম্পর্ককে দৃঢ় করতে সহায়তা করবে।

৬. কাছে থাকা
আল্লাহ আমাদের জন্য প্রতিনিয়ত তার সাথে যোগাযোগের সুযোগ করে রেখেছেন। আমরা যদি তা অবহেলা করি, তবে তা আমাদের জন্যই ক্ষতিকর। 

সুতরাং সকল সময় আল্লাহর প্রদান করা সুযোগগুলোকে কাজে লাগিয়ে আল্লাহর সংস্পর্শে থাকুন।

কুরআনে বলা হয়েছে,

“আর আমার বান্দারা যখন তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে আমার ব্যাপারে বস্তুত, আমি রয়েছি সন্নিকটে। যারা প্রার্থনা করে, তাদের প্রার্থনা কবুল করে নেই, যখন আমার কাছে প্রার্থনা করে। কাজেই আমার হুকুম মান্য করা এবং আমার প্রতি নিঃসংশয়ে বিশ্বাস করা তাদের একান্ত কর্তব্য। যাতে তারা সৎপথে আসতে পারে।” (সূরা বাকারা, আয়াত: ১৮৬)

 এই সকল হাতিয়ারসমূহ কাজে লাগানোর মাধ্যমে আল্লাহ আমাদেরকে তার সাথে দৃঢ় সম্পর্ক তৈরি করার সুযোগ দান করুন।

অনলাইন নিউজ পোর্টাল

মন্তব্য করুন: