শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, বৈশাখ ৭ ১৪৩১, ১১ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

আমরা ভাগ্যবান নাকি বেঈমান

 প্রকাশিত: ১০:৩১, ১২ জুন ২০২১

আমরা ভাগ্যবান নাকি বেঈমান

আমার বন্ধু সাজিম।ধর্মপ্রাণ একজন ছেলে বলতে হবেই।কারন ইসলাম নিয়ে তার অনেক চিন্তা ভাবনা।খুবই সহজ সরল জীবন যাপন তার। সে বলে ইসলাম আমার প্রান। ইসলাম নাকি তার অনেক পছন্দ। সে বলে শুধু মুসলিম বলে যে সে এই কথা বলে তা নয়।সত্যিই ইসলাম সারা পৃথিবীর মানুষের জন্য জীবনব্যবস্থা। যদি কেউ ইসলাম অনুযায়ী জীবন যাপন করতে পারে তাহলে দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জাহানেই সে কামিয়াবি হবে।

তার সাথে বসলে এরকম হেদায়েত মুলক ও খুবই মূল্যবান অনেক কথাই শোনা হয়।তার অনেকগুলো গুনের মধ্য একটা বিষয় আমার খুব ভাল লাগে তা হলো সে যাই চিন্তা করুক না কেন তার ডাইরিতে লিখে রাখে। মাঝে মাঝেই তার ডাইরিটা পড়া হয়।পড়ে দেখি ছেলেটা সত্যিই ইসলাম নিয়ে ভাল লেখালেখি করে।এ অভ্যাস আমারও ভালই আছে। ধরতে গেলে দুজন একত্র হলেই নিজ ধর্ম ইসলাম নিয়েই কথা বলি।হটাৎ একদিন আছরের নামাজের পর সাজিম আমাকে প্রশ্ন করে আচ্ছা বন্ধু আমরা বাংলাদেশের মুসলমান কি সত্যিই ভাগ্যবান নাকি বেঈমান? আমি বললাম মানে। সাজিম বলল মানেটা তাহলে শোন---

জানিস রাসেল আমরা কত ভাগ্যবান।আমরা এতই ভাগ্যবান যে আমরা মুসলমান।শুধু তাই নয় আমরা সারা জাহানের নবী, বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ(স:)এর উম্মত।শুধু তাই নয় আমরা বাংলাদেশের মত সুজলা- সুফলা, শস্য -শ্যামলা সবুজ বাংলায়,স্বাধীন বাংলায় অবস্থিত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেছি।শুধু তাই নয় আমরা এমন দেশের মুসলিম যে দেশে হাজার হাজার তলবে এলেম,আলেমে দ্বীন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কুরআন তেলাওয়াত ও আল্লাহর যিকির করে।সারা বাংলায় হাজার হাজার মসজিদ, মাদ্রাসায় একযুগে আযানের ধ্বনি শুনি। কতই না ভাগ্যবান আমরা আমাদের ঈমানের জন্য কাফেরদের জুলুম অত্যাচার সয্য করতে হয় নি। সাহাবিদের মত কষ্ট পেতে হয় নি। বরং আমরা মায়ের কোল থেকেই কালেমার বানী, জন্মের পরেরই আযানের ধ্বনি শুনতে পেরেছি।আল্লাহর কাছে এসবের শুকরিয়া কিয়ামত পর্যন্ত আদায় করে শেষ করা যাবে না।তারপরেও মহান আল্লাহর কাছে কোটি কোটি শুকরিয়া যে আল্লাহ আমাদের এত এত সম্মান ও মর্যাদা দান করেছেন।এ সমস্ত মর্যাদা দান করা সত্বেও আমরা মানুষ এতই বেঈমান হয়ে গেছি যে আল্লহকে ভুলে শত শত পাপাচারে লেগেই আছি।আল্লাহর আদেশ ফরয ইবাদত যথাযত পালন করি না। মুখে বলি আমরা নবীর উম্মত আমরা নবীর প্রেমিক। কিন্ত কাজে তা কোনদিন দেখাই না। নবীর সুন্নতকে আঁকড়ে না ধরে আমরা ইহুদি, খ্রিষ্টান,হিন্দু, বৌদ্ধ, বিধর্মি ও পশ্চিমাদের আদর্শ কে ধরে আছি।ইসলামি সংস্কৃতি না মেনে বিধর্মীদের সংস্কৃতি পালন করি। আমাদের আজ খুবই অধপতন যার জন্য আজ আমরা জুলুমের স্বীকার। পদে পদে আমাদের অপমান। আমাদের নিজেদের মধ্যে বিভ্রান্তি, দলাদলি।এদিকে সারাবিশ্বে অসহায় মুসলমান কাফেরদের স্বীকার। এর কারন কি জানিস রাসেল? আমি ত শুধু অবাক দৃস্টিতে তাকিয়ে ছিলাম ওর দিকে।আজকে ছেলের হলো কি?মাথা নেড়ে বললাম জানি না। সাজিম আবার অনর্গল বলা শুরু করল।এর কারন আল্লাহর শুকরিয়া আদায় না করা।এত নিয়ামত দেওয়া সত্বেও আমরা আল্লাহ থেকে দূরে থাকি। দুনিয়ার রঙ তামাশায় লেগে আছি। তাই আমাদের উপর আল্লাহর লানদ(অভিশাপ)।যার জন্যে মায়ানমারের মুসলমান অসহায় হয়ে নির্যাতিত হয়েছিল।হাজার হাজার মা বোনের ইজ্জত কেড়ে নিয়েছে,মায়ের কোল শূন্য করেছে বর্বর সামরিক বাহিনী। হাজার হাজার শিশু মা হারিয়েছে। শুধু তাই নয়,ফিলিস্তিনের দিকে তাকিয়ে দেখ,কতই না নির্মম বর্বর হত্যাকাণ্ডের স্ট্রিম রুলার চালিয়েছে ঐ ইহুদীরা।ওরা জোরজবরদস্তি করে ফিলিস্তিন দখল করে রেখেছে।জেরুজালেমকে ওদের ঘাঁটি বানিয়ে রেখেছে।ওঁদের গ্রেনেড বোমার হামলায় হাজারো বাবার-মায়ের বুক শুন্য হাহাকার হয়ে গেছে।পঙ্গু হয়েছে তরুণ,শিশু,আবাল বনিতা।মুসলিম মা,বোনদের উপর চালিয়েছে নির্মম নির্যাতন।বলতে গেলে অনেক কিছুই তোকে ধীরে ধীরে সব বিস্তারিত বলার চেষ্টা করব।ইনশাআল্লাহ। অথচ আমাদের পূর্ব পুরুষদের দিকে তাকালে তাদের জীবনি পড়লে তাদের মাথা উচু করে বেচে থাকার দৃশ্য স্পষ্ট হয়।তাদের মধ্যে যে কষ্ট, মুজাহিদা ছিল তা আমাদের মধ্যে নেই।ভাবলে অবাক হতে হয় সেই আরব থেকে আমরা কিভাবে ইসলাম পেলাম। আলেমগন কতটা কষ্ট করে ইসলামকে আমদের পর্যন্ত এনে দিয়েছে তা আমরা কোনদিন ভাবি নি।তাদের রাত দিন অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে লক্ষ লক্ষ হাদিস আমাদের কাছে স্পষ্ট। যখন কম্পিউটার প্রযুক্তি ছিল না তখন তারা আল্লাহর দেওয়া মেধা দিয়ে তা সংরক্ষন করেছেন।কতদিন না খেয়ে কাটিয়েছেন তারা। পরিবারে অভাব থাকা সত্তেও দিশেহারা না হয়ে আল্লাহর কাছে হাত তুলেছেন। অনেক ইতিহাস রে। চেপে রাখা ইতিহাস আমরা কেউ জানি না। আজকে তাদের এই মেহনতের ফলে আজকে হাজার হাজার আলেম দ্বীনী শিক্ষা অর্জন করে নবীর আদর্শকে সামনে রেখে মিল মহব্বতের সাথে সাধারন মুসলমানদের কাছে এসে ইসলাম বুঝাচ্ছে।প্রতিদিন কত না নসিহত মূলক কথা বলছে। কিন্তু আমরা কখনো এতটুকু মানি না।আমরা ভাল মন্দ জানা সত্তেও আল্লাহকে ভয় না করে জিনা -ব্যভিচার, অন্যায়- অত্যাচার,জুলুম-নির্যাতন,হিংসা,অহংকার,মিথ্যা অভিচার কতই না পাপাচার করছি।কোনদিন কি ভেবে দেখেছি আমরা এসব ছেড়ে চলে যাব।সাজিম বুকের ভেতরের কষ্টের অনুভূতি প্রকাশ করে আবার শুরু করল। এই সোনার বাংলায়, স্বাধীন বাংলায় থেকেও যদি আমরা নবীর সুন্নতের মর্যাদা না রাখতে পারি,ইসলাম না মানতে পারি তাহলে আমাদের মত হতভাগা কে আছে বল।আমরা নাকি পারিপার্শ্বিক অবস্থার জন্য,পরিবেশ, সমাজ,রাষ্ট্রের জন্য সুন্নতের আমল করতে পারি না। নবীর সুন্নত দাড়ি, টুপি,ঢিলে ঢালা পোশাক পড়তে পারি না। আমরা যুবকরা নানারকম অযুহাত দিয়েই থাকি।এর জন্য পরিবেশকে দায়ী করি।কেউ কেউ বলে মেয়েরা এসব পছন্দ করে না।আরে যুবক তুমি ভেবে দেখ চোখ বুঝলেই তুমার রঙ্গ শেষ।আখিরাতের হিসাব তখন শুরু।তখন তুমার কি হবে।আবার সাজিম যুবকদের উদ্দেশ্যে বলল আরে যুবক এই সমস্ত বাধা, বিপত্তি, অপমানজনক কথা সয্য করেই ত তুমাকে ঈমানের পরিক্ষায় জয়ী হতে হবে।নবীর জন্য,আল্লাহর খুশির জন্য এই স্বাধীন বাংলায় এতটুকু পরিক্ষা দিতে পারবে না?তোমাকে ত আর সাহাবিদের মত রক্ত ঝড়াতে হবে না, জিহাদ করতে হবে না, জীবন দিতে হবে না। শুধু সুন্নতের পাবন্দি করবে আর আল্লাহর হুকুম পালন করবে তাহলেই অনেক।কথাগুলো বলে সাজিম দীর্ঘশ্বাস নিল।আমি হতবিম্ব হয়ে তাকিয়ে ছিলাম। সাজিম আজকে এত সুন্দর কথা বলবে ভাবতেই পারি নি।বাস্তবতাটা সামনে নিয়ে আসে বলেই সাজিম সবার প্রিয়।আমি পরিশেষে বললাম হ্যাঁরে সাজিম আমরা অনেক ভাগ্যবান কিন্তু কেমন যেন আল্লাহর হুকুম অমান্য করে সত্যিই বেঈমান হয়ে যাচ্ছি। আমাদের কর্মফল আমাদেরই একদিন ভোগ করতে হবে।মহামারি, দূর্যোগ, নানারকম অধপতন আমাদের ঘিরে ধরবে।সবাই যেন নিজেদের ভুল বুঝতে পারে আল্লাহর কাছে এই দুয়াই করি।

অনলাইন নিউজ পোর্টাল

মন্তব্য করুন: