মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, বৈশাখ ১০ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

ইসলামের অনুপম সৌন্দর্য

 প্রকাশিত: ১৪:৫৬, ২৭ জুন ২০২১

ইসলামের অনুপম সৌন্দর্য

শান্তির ধর্ম ইসলাম।  ইসলামের শান্তি শুধু মুসলমানদের জন্যই নয়।  বরং জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের জন্য এবং সকল সৃষ্টির জন্য।  একটি বিড়ালকে অভুক্ত বেঁধে রাখার জন্য কঠিনতম নিন্দা জানিয়েছিলেন  আমাদের প্রিয়তম নবী মুহাম্মাদ সাঃ। যার আদর্শকে  জীবনের সকল ক্ষেত্রে উত্তমভাবে অনুসরণ-অনুকরণ করে বেলায়াতের সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছিলেন সাহাবায়ে কেরাম রাঃ।

অর্ধপৃথিবীর খলিফা উমার (রাঃ) যখন বায়তুল মাকদিসের চাবি আনার জন্য যান, তিনি তাঁর একজন চাকরকে সাথে নিয়ে মদিনা থেকে জেরুজালেমের পথে রওনা দেন। উমার (রাঃ)-এর খিলাফতের সময়কালে ইহুদি কিংবা খ্রিষ্টান এমন কেউ ছিল না যাদের উপর কোনো জুলুম হয়েছে। মুসলিম তো দূরের কথা, কোনো ইহুদি, খ্রিষ্টান এমনকি একটা পশুর উপর পর্যন্ত কোনো জুলুম করা হয়নি। উমার (রাঃ)-এর সেই সময়টা যে কী অসাধারণ একটা সময় ছিল, সেটা এই বিংশ শতাব্দীর মানুষজন চিন্তাও করতে পারে না। উমার (রাঃ) ভেড়াদের জন্য পর্যন্ত পথ তৈরি করে দিতেন যেন তারা হোঁচট না খায়। সেই উমার (রাঃ) মদিনা থেকে জেরুজালেমের পথে উটে চড়ে যাচ্ছিলেন, সাথে ছিল তাঁর চাকর। উমর (রাঃ) আর তাঁর চাকর পালা করে উটের পিঠে চড়ছিলেন। একবার উমর চড়েন, একবার তার চাকর উটের পিঠে চড়ে, আর একবার দুজনের কেউই উটে চড়ে না—যেন উটটা কিছুক্ষণের জন্য বিশ্রাম পায়।

হ্যাঁ, এটাই হচ্ছে ইসলামের সৌন্দর্য—এমনকি একটা উটও বিশ্রাম নিত। এভাবে প্রত্যেকে সমান ইনসাফ পায়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমাদের উমার (রাঃ)-এর মতো শাসক দান করুন।

আবু উবাইদা (রাঃ) জেরুজালেমের বাইরে বের হয়ে খলিফার সাথে দেখা করতে এলেন। যখন উমার (রাঃ) জেরুজালেমে এসে পৌঁছালেন, তখন বৃষ্টি হচ্ছিল। ইবনু কাসির (রহঃ) ঘটনাটির খুব খুঁটিনাটি বর্ণনা করেছেন। চোখ বন্ধ করে একবার দৃশ্যটা কল্পনা করে দেখুন! উমার (রাঃ) একটা উটের লাগাম টেনে আনছেন, উটের পিঠে তাঁর চাকর বসা, বৃষ্টিতে চারিদিক কর্দমাক্ত হয়ে আছে। উমার (রাঃ) তাঁর জুতোজোড়া কাঁধে ঝুলিয়ে রেখেছেন। প্রখর সূর্যের তাপ উমার (রাঃ)-এর টাক মাথায় এসে পড়ছে। উমার (রাঃ) -এর মাথায় বা পায়ে কিছুই ছিল না, তাঁর পোশাকের একপাশ ছিল পুরোই ছেঁড়া এবং অন্যপাশটাও অনেক জোড়াতালি দেওয়া।
.
আবু উবাইদা (রাঃ) তাঁর খলিফার দিকে এগিয়ে গেলেন। উমারকে এক পাশে নিয়ে বললেন, “আমিরুল মুমিনীন, আপনি রোমান সর্দারদের (বিশপ এবং পুরোহিতদের) সাথে দেখা করতে যাচ্ছেন। তারা আপনার কাছে আজ চাবি সমর্পণ করবে!” অর্থাৎ তিনি বোঝালেন, আজ তো একটা ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে, আপনার জামাটা পাল্টে নিলে কেমন হয়? উমার (রাঃ) আক্ষেপ প্রকাশ করে বললেন, “আপনি ছাড়া যদি অন্য কেউ আমাকে এ কথা বলত, আমি তাকে নবীজি (ﷺ)-এর উম্মতের জন্য দৃষ্টান্ত করে রাখতাম।” আসলে উমার (রাঃ) বলছিলেন যে, আবু উবাইদা! আপনি তো যেনতেন কেউ নন, আপনি মুসলিমদের ভূমি কত বেশি সম্প্রসারিত করেছেন, আপনি এই উম্মাহর একজন অন্যতম সেরা সেনাপতি! আর আপনি কিনা এ কথা বলছেন! আপনি বাদে অন্য কেউ যদি আজ এ কথা মুখ দিয়ে বের করত, তাহলে আমি তাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতাম যেন এখান থেকে উম্মাহর অন্যরা শিক্ষা নিতে পারে। তারপরই উমার (রাঃ) তাঁর সেই কালজয়ী উক্তিটি করলেন। উমার (রাঃ) বললেন,
“আমরা সেই জাতি, যাদের আল্লাহ ইসলাম দিয়ে সম্মানিত করেছেন। যদি আমরা ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো উপায়ে সম্মান খুঁজি, তাহলে আল্লাহ তাআলা নিশ্চয়ই আমাদেরকে অপমানিত করবেন।”
.
উমার (রাঃ) উম্মাহর ব্যাপারে একেবারে সহজ একটি সমাধান দিয়ে গেছেন। কীভাবে ইযযাহ অর্জিত হবে, তার একটা সূত্র শিখিয়ে দিয়েছেন। জামা বদলে নেওয়ার মতো ছোট্ট একটা উপদেশও উমারকে হতাশ করে তুলেছিল। কারণ ব্যাপারটা তাঁর কাছে এমন যে, তিনি ইসলাম ব্যতিত অন্য কিছুতে সম্মান খুঁজছেন, আর এরকম একটা কথা বলার জন্য তিনি উম্মাহর অন্যতম সেরা একজন সেনাপতিকে শাস্তি দিতে চাচ্ছিলেন! এক শাইখ বলেন, তাঁর বাবা তাঁকে উমার (রাঃ)-এর এই ঘটনাটা মুখস্থ করান, যখন তার বয়স পাঁচ বছরেরও কম ছিল। আপনার সন্তানদেরকে এ ধরণের ঘটনাগুলো শেখান, যেন তাদের অন্তরে ইযযাহর বোধটা গেঁথে যায়। যেন তারা ইসলাম নিয়ে মাথা উঁচু করে চলতে শেখে।

অনলাইন নিউজ পোর্টাল

মন্তব্য করুন: