শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, চৈত্র ১৪ ১৪৩০, ১৯ রমজান ১৪৪৫

ইসলাম

অধিক হারে আল্লাহর যিকির করা

 প্রকাশিত: ০৮:২০, ১৮ নভেম্বর ২০২০

অধিক হারে আল্লাহর যিকির করা

উৎস:
ইসলাহী নেসাব: হায়াতুল মুসলিমীন
হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদে মিল্লাত, মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (র:)

যত বেশী সম্ভব আল্লাহর নাম নিতে থাকবে। কুরআন ও হাদীসে একদিকে এর নির্দেশ এসেছে, অপরদিকে এর সওয়াব ও ফযীলতও বর্ণিত হয়েছে। তাছাড়া এটি এমন কোন জটিল কাজও নয়। বিধায় এমনতর সহজ কাজকে অগ্রাহ্য করা বা অলসতা করে নির্দেশ অমান্য করা এবং এতবড় সওয়াব হাতছাড়া করে নিজের ক্ষতি করা কেমন অন্যায় ও মন্দ কাজ। উপরন্ত্ত আল্লাহর নাম নিতে না কোন সংখ্যার প্রশ্ন আছে, না সময়ের, না তাসবীহ রাখার, না উচ্চ শব্দে বলার, না ওযু করার, না কেবলামুখী হওয়ার, না কোন বিশেষ জায়গার, না এক জায়গায় বসার। মোটকথা, সবদিক থেকে অবাধ ও স্বাধীন। তাহলে কিসের জটিলতা? তবে কেউ যদি স্বেচ্ছায় তাসবীহ নিয়ে পড়তে চায়- সংখ্যা গণনার জন্য হোক, কিংবা তাসবীহ হাতে না থাকলে স্মরণ হয় না, তাই স্মরণ হওয়ার জন্য হোক-তাহলে তাও জায়েয আছে, বরং উত্তম। একথা মনে করবে না যে, তাসবীহ হাতে রাখলে মানুষকে দেখানো হবে। আসলে দেখানো তো হয় নিয়তের দ্বারা। অর্থাৎ, যখন এ নিয়ত থাকবে যে, মানূষ দেখলে আমাকে বুযুর্গ মনে করবে। আর যদি এরুপ নিয়ত না থাকে তাহলে এটা লোক দেখানো নয়। একে লোক দেখানো মনে করা এবং এ ধারণায় যিকির ছেড়ে দেওয়া শয়তানের ধোঁকা। শয়তান মানুষকে এভাবে প্রতারিত করে সওয়াব থেকে বঞ্চিত রাখতে চায়।

শয়তান আরেকটি ধোঁকা এই দিয়ে থাকে যে, অন্তর যখন দুনিয়ার কাজে বিভোর, তাহলে মুখে আল্লাহর নাম নেওয়ায় কি ফায়দা? খুব ভালো করে বুঝে নাও, এটিও ভ্রান্তি। আন্তরিকভাবে একবার নিয়ত করলে যে, আমি সওয়াবের উদ্দেশ্যে আল্লাহর নাম নিচ্ছি, তারপর অন্তর অন্যদিকে ধাবিত হলেও নিয়ত পরিবর্তিত হয় না। অবিরাম সওয়াব পেতে থাকে। তবে যে সময় অন্য কাজ থাকবে না, তখন অন্তরকে যিকিরের দিকে মনোযোগী রাখারও চেষ্টা করবে। অর্থহীন বিষয়ের দিকে মনোযোগ দিবে না। তাহলে আরো বেশী সওয়াব হবে। এখন যিকির সম্পর্কে কিছু আয়াত এবং হাদীস লেখা হচ্ছে।

আয়াতসমূহ-

১. ‘তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমি তোমাদেরকে (করুণা দ্বারা) স্মরণ করবো।’
(সূরা বাকারা)
২. ‘(প্রকৃত মুমিনগণ এমন যে,) তারা দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে (সর্বাবস্থায়) আল্লাহ তাআলাকে স্মরণ করে।’ (সূরা আলে ইমরান-১৯১)

৩. ‘আর স্মরণ করতে থাকো তোমার রবকে আপন মনে (অর্থাৎ, নিম্নস্বরে) ক্রন্দনরত ও ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় এবং উচ্চস্বরের চেয়ে কম আওয়াজে (একইভাবে ক্রন্দনরত ও ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায়) সকালে ও সন্ধ্যায় (অর্থাৎ, সবসময়) আর গাফেল থেকো না।’ (সূরা আরাফ-২০৫)

ফায়দা: অতি উচ্চস্বরে যিকির করায় কোন সওয়াব নেই। তবে শরীয়তের পাক্কা অনুসারী কোন হক্কানী বুযুর্গ ‍যদি কোন মুরীদকে চিকিৎসা হিসাবে উচ্চস্বরে যিকির করতে বলেন, তবে তা জায়েজ আছে। চিকিৎসা হিসাবে এর অর্থ হলো, উচ্চস্বরে যিকির করার দ্বারা কারো কারো অন্তরে অধিক প্রভাব-প্রতিক্রিয়া হয়ে থাকে। তবে এদিকে খুব খেয়াল রাখবে যে, উচ্চস্বরে যিকির করার দ্বারা যেন কারো ইবাদত বা ঘুমের ব্যাঘাত না ঘটে, অন্যথায় গুনাহ হবে।

৪. ‘(আল্লাহ তাআলা তাদেরকে নিজের নৈকট্য দান করেন এবং প্রিয় বানিয়ে নেন) যারা ঈমান এনেছে এবং আল্লাহর যিকিরে তাদের মনে শান্তি আসে। ভালো করে জেনে নাও! আল্লাহর যিকিরের (এমন বৈশিষ্ট্য রয়েছে যে, তার) দ্বারা শান্তি পায়। (কারণ, আল্লাহর যিকির দ্বারা আল্লাহর সঙ্গে বান্দার সম্পর্ক বৃদ্ধি পায়, আর এই নিবিড় সম্পর্কই হলো ঈমানের শিকড়।’ (সূরা রা’আদ-২৮)

৫. ‘(মসজিদের মধ্যে এমন লোকেরা আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করে) যাদেরকে ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর যিকির, নামায আদায় করা এবং যাকাত প্রদান করা থেকে গাফেল করে না।’
(সূরা নূর-৩৮)
৬. ‘আল্লাহর যিকির অনেক বড় (অর্থাৎ, এর অনেক ফযীলত রয়েছে।’
(সূরা আনকাবুত-৪৫)

৭. ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা খুব বেশী করে আল্লাহর যিকির করো।’ (সূরা আহযাব-৪১)

৮. ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদেরকে যেন তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততি আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল না করে।’ (সূরা মুনাফিকুন-৯)

৯. ‘আপনি আপনার পালনকর্তার নাম স্মরণ করুন এবং যাবতীয় পার্থিব বন্ধন ছিন্ন করে একমাত্র তারঁই হয়ে যান।’ (যাবতীয় পার্থিব বন্ধন ছিন্ন করার অর্থা হলো, সমস্ত সম্পর্কের উপর যেন আল্লাহর সম্পর্ক প্রবল হয়।) (সূরা মুযযাম্মিল-৮)

১০. ‘নিশ্চয় সফলকাম হয়েছে ঐ ব্যক্তি, যে (খারাপ আকীদা এবং খারাপ আখলাক থেকে) পবিত্রতা লাভ করেছে এবং স্বীয় পালনকর্তার নাম স্মরণ করে এবং নামায আদায় করে।’
(সূরা আ’লা ১৪-১৫)

হাদীসসমূহ-

১. হযরত আবু হুরায়রা ও আবু সা’য়ীদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘যে সকল ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার যিকিরের উদ্দেশ্যে উপবেশন করে, ফেরেশতাগণ তাদেরকে বেষ্টন করে নেয়, তাদেরকে আল্লাহ তাআলার রহমত আচ্ছন্ন করে এবং তাদের উপর প্রশান্তি (সাকীনা) অবতীর্ণ হয়।’ (মুসলিম)

২. হযরত আবু মূসা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের যিকির করে, আর যে ব্যক্তি করে না, তাদের অবস্থা হলো জীবিত ও মৃতের ন্যায় (অর্থাৎ, প্রথম ব্যক্তি জীবিতের ন্যায়, আর দ্বিতীয় ব্যক্তি মৃতের ন্যায়। কারণ, আল্লাহর স্মরণণই হলো, আত্মার জীবন। এটি না থাকলে আত্মা মৃত)। (বুখারী ও মুসলিম)

৩. হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-
‘আমি তার (আমার বান্দার) সঙ্গে থাকি, যখন সে আমাকে স্মরণ করে। সে আমাকে মনে মনে স্মরণ করলে আমি তাকে মনে মনে স্মরণ করি, আর সে আমার কথা সমাবেশে আলোচনা করলে আমি তার কথা এমন এক সমাবেশে আলোচনা করি, যা ঐ সমাবেশ থেকে উত্তম।’ (অর্থাৎ, নবী ও ফেরেশতাদের সমাবেশে) (বুখারী ও মুসলিম)

ফায়দা: আল্লাহ তাআলার অন্তর বলতে আমাদের মত অন্তর উদ্দেশ্য নয়। বরং এর অর্থ হলো, এই স্মরণের কথা কেউ জানতে পারে না। যেমন কিনা দ্বিতীয় অবস্থায় সমাবেশের লোকেরা জানতে পারে। আর সেখানকার সমাবেশ এখানকার সমাবেশের তুলনায় উত্তম হওয়ার অর্থ এই যে, ঐ সমাবেশের বেশী সংখ্যক লোক এ সমাবেশের বেশী সংখ্যক লোকের তুলনায় উত্তম হয়ে থাকে। ঐ সমাবেশের প্রত্যেক ব্যক্তি এ সমাবেশের প্রত্যেক ব্যক্তির তুলনায় উত্তম হওয়া আবশ্যক নয়। যেমন, দুনিয়ার মধ্যে যিকিরের কোন সমাবেশে যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপস্থিত থাকেন- যেমন তাঁর জীবদ্দশায় হতো- তাহলে কোন ফেরেশতা বা নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শ্রেষ্ঠ হবে না।

৪. হযরত আনাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘যখন তোমরা বেহেশতের বাগান অতিক্রম করো, তখন তা থেকে ফল ভক্ষণ করো। লোকেরা জিজ্ঞাসা করলো, বেহেশতের বাগান কি? তিনি ইরশাদ করলেন, যিকিরের বৈঠক ও সমাবেশ।’ (তিরমিযী)

৫. হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে-
‘যে ব্যক্তি কোন জায়গায় বসলো, আর সেখানে আল্লাহ তাআলার যিকির করলো না। আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে এটি তার জন্য ক্ষতিকর হবে। এবং যে ব্যক্তি কোন জায়গায় শয়ন করলো এবং সেখানে আল্লাহ তাআলার নাম নিলো না, আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে এটি তার জন্য ক্ষতিকর হবে।’ (আবু দাউদ)

ফায়দা: এ হাদীসের উদ্দেশ্য হলো, কোন ক্ষেত্র এবং কোন অবস্থা যিকির থেকে খালি হওয়া উচিত নয়।

৬. হযরত আবদুল্লাহ বিন বুসর (রাযিঃ) থেকে বর্নিত আছে যে, এক ব্যক্তি আরয করলো, ইয়া রাসূলুল্লাহ! ইসলামী শরীয়তের আমল আমার উপর অনেক হয়েছে। (এর দ্বারা নফল আমল উদ্দেশ্য। কারণ, অবশ্য করণীয় (ফরয-ওয়াজিব) আমল অনেক নয়। তার কথার অর্থ হলোঃ সওয়াবের কাজ অনেক। সবগুলোর কথা মনে রাখা এবং আমল করা কঠিন) তাই আপনি আমাকে এমন কোন জিনিসের কথা বলে দিন, যা আমি নিয়মিতভাবে পালন করবো (এবং তা সবগুলোর জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে)। তিনি ইরশাদ করলেন-
‘(এ আমলকে নিয়মিতভাবে পালন করো যে,) তোমার জিহ্বা সর্বদা আল্লাহর যিকিরে সিক্ত থাকবে।’ (অর্থাৎ, সবসময় যবানে যিকির চলতে থাকবে।) (তিরমিযী, ইবনে মাজা)

৭. হযরত আবু সা’য়ীদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো- মানুষের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ এবং কিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট সর্বোচ্চ ব্যক্তি কে? তিনি ইরশাদ করলেন-
‘যে সমস্ত পুরুষ অধিক হারে আল্লাহর যিকিরকারী এবং যে সমস্ত নারী (একইভাবে অধিক হারে) আল্লাহর যিকিরকারিণী। জিজ্ঞাসা করা হলোঃ হে আল্লাহর রাসূল! আর যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদ করে (যিকিরকারী ব্যক্তি কি) তার চেয়ে (উত্তম)? তিনি ইরশাদ করলেন- যদি কোন ব্যক্তি কাফির ও মুশরিকদের উপর এ পরিমাণ তরবারী চালায় যে, তা ভেঙ্গে যায় এবং (আঘাতে আঘাতে) এ ব্যক্তির সারা দেহও রক্তে রঞ্জিত হয়, আল্লাহর যিকিরকারী ব্যক্তি মর্যাদার দিক থেকে তার চেয়েও শ্রেষ্ঠ।’ (আহমাদ. তিরমিযী)

ফায়দা: এর কারণ সুস্পষ্ট। কেননা জিহাদও নির্ধারিত হয়েছে আল্লাহর স্মরণের জন্যই। যেমন- ওযূ নির্ধারিত হয়েছে নামাযের জন্য। সূরায়ে হজ্জের আয়াতে একথা স্পষ্ট উল্লেখ আছে, বিধায় আল্লাহর স্মরণই হলো মূল। আর মুল জিনিস যে শ্রেষ্ঠ হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

৮. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাযিঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন- তিনি ইরশাদ করেন-
‘প্রত্যেক জিনিসের একটি কালাই (জং দূর করার ব্যবস্থা) রয়েছে। আর অন্তরের কালাই হলো, আল্লাহর যিকির।’ (বাইহাকী)

৯. হযরত ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘শয়তান মানুষের অন্তরে জমে বসে থাকে। যখন সে আল্লাহর যিকির করে, তখন সে সরে যায়। আর যখন (স্মরণ থেকে) গাফেল হয়, তখন সে কুমন্ত্রণা দিতে আরম্ভ করে।’
(বুখারী)

১০. হযরত ইবনে উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘আল্লাহর যিকির ছাড়া অন্য কথা বেশী বলো না। কারণ, আল্লাহর যিকির ছাড়া অন্য কথা বেশী বলা অন্তরে কঠোরতা সৃষ্টি করে এবং আল্লাহ থেকে সর্বাধিক দূরে ঐ অন্তর, যার মধ্যে কঠোরতা থাকে।’ (তিরমিযী)

ফায়দা: শেষোক্ত তিন হাদীসের সারকথা এই যে, আসল পরিচ্ছন্নতা সৎকর্ম দ্বারা হয়, আর আসল কঠোরতা সৃষ্টি হয় মন্দ কর্ম দ্বারা। উভয় কাজের মূল অন্তরের সংকল্প। সংকল্পের মূল হলো, ইচ্ছা। তাই যখন আল্লাহর স্মরণে কমতি হয়, তখন শয়তান মন্দ কাজের ইচ্ছা অন্তরে সৃষ্টি করে। ফলে মন্দ সংকল্পের সুযোগ এসে যায় এবং সৎ সংকল্পের সাহস অবশিষ্ট থাকে না। ফলে নেক কাজ হয় না বরং মন্দ কাজ হতে থাকে। আর যখন অধিক হারে যিকির করা হয়, তখন মন্দ ইচ্ছা অন্তরে সৃষ্টি হয় না। ফলে মন্দ সংকল্পও হয় না এবং গুনাহও হয় না, আর তাই সৎকাজের সংকল্প ও সৎকাজ হতে থাকে। এভাবে অন্তরে পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা সৃষ্টি হয়।

১৩. হযরত ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘এতো অধিক যিকির করো যে, মুনাফিক (বদদ্বীন) লোকেরা তোমাকে রিয়াকার (প্রতারক) বলতে আরম্ভ করে।’ (তাবরানী)

১৪. হযরত মুআয বিন জাবাল (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘বেহেশতবাসীদের কোন কিছুর আফসোস থাকবে না। কিন্ত্ত তাদের যে সময়টি আল্লাহর যিকির ছাড়া অতিবাহিত হয়েছে ঐ সময়ের জন্য তাদের আফসোস হবে।’ (তাবরানী, বাইহাকী)

ফায়দা: তবে এ আফসোসের জন্য দুনিয়ার মত কষ্ট হবে না। তাই এরুপ সন্দেহের কিছু নাই যে, জান্নাতে আবার কষ্ট কেন?

১৫. হযরত আয়েশা বিনতে আবু ওয়াক্কাস (রাযিঃ) তদীয় পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে একজন মহিলার নিকট গেলেন। ঐ মহিলার সম্মুখে খেজুরের বীচি কিংবা ছোট পাথর ছিলো, যেগুলো দ্বারা তিনি সুবহানাল্লাহ, সুবহানাল্লাহ পড়ছিলেন। তিনি তাকে এরুপ করতে নিষেধ করেননি। (আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসায়ী, ইবনে হিব্বান, হাকীম)

ফায়দা: এ হাদীসটি তাসবীহ হাতে নিয়ে গণনা করার দলীল। (শামী এমনই লিখেছেন) এ
পাঁচটি হাদীস তারগীব গ্রন্থের। এ পর্যন্ত সাধারণ যিকিরের আলোচনা ছিলো। বিশেষ বিশেষ কিছু যিকিরের সওয়াবের কথাও বর্ণিত হয়েছে। তার মধ্য থেকে কয়েকটি সহজ ও সংক্ষিপ্ত যিকির নমুনা স্বরুপ বলছি, যেমন-
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ কিংবা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার, লা হাওলা ওয়ালা ক্যুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ, আসতাগফিরুল্লাহা ওয়া আতূবু ইলাইহি, দরুদ শরীফ পড়া। অনেক রকম দরুদ শরীফ রয়েছে।

সারকথা: সারকথা এই যে, যিকির থেকে গাফেল হয়ো না। চাই বিশেষ কোন যিকির করো, চাই সাধারণ কোন যিকির। সবসময় একই যিকির করো, বা একসময় এক যিকির, অন্য সময় অন্য যিকির। অগণিত যিকির করো, চাই আঙ্গুল বা তাসবীহ দিয়ে গুণে। বিশেষ বিশেষ সময়েরও দু’আ আছে। আগ্রহ থাকলে কোন দ্বীনদার আলেমের নিকট থেকে জেনে নাও। আর তা না হলে এখন যেগুলো লিখে দিলাম তাই যথেষ্ট। আল্লাহ তাআলা তাওফীক দান করুন। আমীন।

অনলাইন নিউজ পোর্টাল

মন্তব্য করুন: