বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, চৈত্র ১৪ ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫

স্পেশাল

বঙ্গবন্ধু ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘরে ব্যাপক সাড়া

 প্রকাশিত: ১৪:১৫, ৩ আগস্ট ২০২২

বঙ্গবন্ধু ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘরে ব্যাপক সাড়া

জাদুঘর সাধারণত নিদিষ্ট একটি স্থানেই প্রতিষ্ঠিত হয়। মানুষ সেখানে গিয়ে জাদুঘর পরিদর্শণ করে বিভিন্ন জ্ঞান অর্জন করেন। বাংলাদেশ রেলওয়ে মুজিব জন্মশত বর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে নতুন প্রজম্মের কাছে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানান দিতে ব্যতিক্রমী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর দেশব্যাপী প্রদর্শণের আয়োজন করে।

গোপালগঞ্জ রেল স্টেশনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর সোমবার থেকে প্রদর্শণের সূচনা করেন রেলমন্ত্রী মোঃ নুরুল ইসলাম সুজন এমপি। এরপর থেকে বিভিন্ন্ বয়সের নারী-পুরুষ গোপালগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে ভিড় করছেন। তাদের পদচারণায় রেল স্টেশন মুখরিত হয়ে উঠেছে। আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত এ প্রদর্শণী চলবে। এরপর রেলের পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায়  ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর প্রদর্শণ করা হবে।

গোপালগঞ্জ রেল স্টেশনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর প্রদর্শণের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পল্লব কান্তি বিশ্বাস বলেন, উদ্বোধনের পর থেকেই এ জাদুঘর নিয়ে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত জাদুঘর খোলা থাকে। সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত ভিড় থাকছে। বিভিন্ন বয়সের মানুষ এটি দেখতে আসছেন।

তারপর বিকেল ৫ টা থেকে রাত ৯ পর্যন্ত মানুষ এটা দেখতে আসছেন। এখানে ১৯২০ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ১২ টি গ্যালারীর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিটি গ্যালারীতে ডিসপ্লের পাশাপাশি হেডফোনে তৎকানীন প্রেক্ষাপটের ধারা বর্ণনা দেয়া হচ্ছে। ভিডিও চিত্রের সাথে ধারা বর্ণনা শুনে নতুন প্রজন্ম এ সম্পর্কে জানতে পারছে। জাদুঘরের শোপিচে টুঙ্গিপাড়া বঙ্গবন্ধুর আদি পৈতৃক বাড়ি, সমাধিসৌধ, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমর্পণ,বঙ্গবন্ধুর ব্যহৃত প্রতিকী চশমা, মুজিব কোট পাইপ, মুজিব নগর স্মৃতিসৌধ, জাতীয় শহীদ মিনার, কারাগারের রোচনামচা, বিজয়স্তম্ভ কমলাপুর ও মুজিব শতবর্ষের লোগো প্রদর্শণ করা হচ্ছে।

ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, নতুন প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধুকে তুলে ধরতেই রেল ওয়ের অতিরিক্ত মহা পরিচালক মঞ্জুর উল আলম চৌধূরী এ পরিকল্পনা করেন। এছাড়া প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে জাদুঘর পৌঁছে দিতেই তিনি এ উদ্যোগ নেন। বঙ্গবন্ধুর জন্মস্থান গর্বিত গোপালগঞ্জ থেকে  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর যাত্রা শুরু করেছে।

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বাঘাজুড়ি গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা অটল কুমার মজুমদার বলেন, ১৯২০ সালে বঙ্গবন্ধু জন্ম গ্রহণের পর বাবা মায়ের কাছে ছিলেন প্রিয় খোকা। তারপর তিনি আমাদের কাছে ছিলেন মুজিব ভাই। ১৯৬৯ এর গণ আন্দোলনের পর তিনি হন বঙ্গবন্ধু। দেশ স্বাধীনের পর তিনি আমাদের জাতির পিতা। এসব প্রেক্ষাপট ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘরে তুলে ধরা হয়েছে। এখানে যথার্থভাবেই বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশকে উপস্থাপন করা হয়েছে। রেলে একটি বগির মধ্যে ভ্রাম্যমাণ জাদুঘর করে বঙ্গবন্ধুকে চমৎকারভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এটি আমার কাছে ভালো লেগেছে।

দর্শনার্থী প্রকৌশলী কৃষ্ণ সরকার (২৪) বলেন, জাদুঘরের বাইরের অংশে ভাষা আন্দোলন, ৬৬ এর ৬ দফা আন্দোলন, ৬৯ এর গণ আন্দোলন, ৭০ এর নির্বাচন ও ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতার ঘোষণা, ১৭ এপ্রিল মুজিব নগর সরকার, যুদ্ধকালীন দিন ও ১৬ ডিসেম্বরের বিজয়ের চিত্র প্রস্ফুটিত হয়েছে। এছাড়া জাদুঘরের মধ্যে ১৯২০ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্ম থেকে শুরু করে ১৯৭৫ সালে মৃত্যু পর্যন্ত তাঁর জীবন কর্ম স্থান পেয়েছে। এখানে বঙ্গবন্ধুর ব্যবহৃত জিনিসপত্র রাখা হয়েছে। এছাড়া জাদুঘরের ১২ টি কর্ণারেই ভিডিও, ছবি প্রদশর্ণের পাশাপাশি হেডফোনে ধারা বর্ণনা শোনা যাচ্ছে। এ থেকে আমরা বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে নতুন নতুন অনেক কিছুই জানতে পারেছি। বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ সৃষ্টি সম্পর্কে জানতে পেরে নিজেদের সমৃদ্ধ করতে পারেছি। রেলওয়ে এ ধরণের প্রদর্শনীর আয়োজন করায় তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার বাথানডাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সাথী মিত্র বলে, পাঠ্য বইতে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে পড়েছি। এখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘরে এসে বঙ্গবন্ধুকে আরো নতুন করে জানতে পেরেছি। তার ত্যাগ, সাহস ও প্রতিবাদের ভাষা আমাকে অণুপ্রেরণা জুগিয়েছে। আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারণ করে বড় হতে চাই। তাঁর স্বপ্নের উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গড়তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সহযোগিতা করব।

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার দূর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর ছাত্র ছামিউল মোল্লা  বলেন, রেল জাদুঘরে আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এটি আমার কাছে ভালো লেগেছে। হেডফোনে ধারা বর্ণনা শুনে ছবি ও ভিডিও দেখে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে অজানা অনেক কিছুই জেনেছি।

মন্তব্য করুন: