শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, চৈত্র ১৫ ১৪৩০, ১৯ রমজান ১৪৪৫

স্পেশাল

পদ্মা সেতু: সহজ হবে মেহেরপুর অনেক কিছুর পরিবহন

 প্রকাশিত: ১০:৫৭, ১৯ জুন ২০২২

পদ্মা সেতু: সহজ হবে মেহেরপুর অনেক কিছুর পরিবহন

মেহেরপুর জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন পূরণ করতে চলেছে পদ্মা সেতু। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মেহেরপুরের গবাদি পশু, মাছ, আম, লিচুসহ সবজি পরিবহন করা সহজ হবে।
 
পদ্মা সেতু এখন আর স্বপ্ন নয়, চোখের সামনে বাস্তব অবকাঠামো। পদ্মা সেতু শুধু শিল্প ক্ষেত্রে নয়, কৃষি, মৎস্য, প্রাণী সম্পদ বিভাগও ব্যাপক সফলতা পাবে। নৌ পথের ঝুঁকি, ফেরি পারাপারে জটিলতা ও সড়কে যানজট ছাড়াই কম সময়ে পণ্যবাহী পরিবহন দ্রুত সময়ের মধ্যে পৌঁছে যাবে।

এতোদিন দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে রাজধানী থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল তীব্র খরস্রোতা পদ্মা। এই সেতুর কারণে মেহেরপুর থেকে গোয়ালন্দ হয়ে ঢাকা, বরিশাল, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যেতে হতো। এখন মাত্র ৫ ঘন্টায় ঢাকায় পৌঁছানো সম্ভব হবে। যোগাযোগের ক্ষেত্রে সূচিত হবে নতুন অধ্যায়। ভোগান্তি ও সময়ের অপচয় কম হবে যাত্রীদের। মাত্র ৪-৫ ঘণ্টার মধ্যে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে ঢাকা পৌঁছে যাবে যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী ট্রাক। ফলে, সারাদেশের সঙ্গে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের সামাজিক ও অর্থনৈতিক বন্ধন সুদৃঢ় হবে। কৃষি, শিল্প ও পর্যটন খাতে সাধিত হবে ব্যাপক উন্নয়ন। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে খুলবে নতুন দুয়ার। সম্প্রসারিত হবে শিক্ষা ও চিকিৎসার সুযোগ। মানুষের আয় বৃদ্ধি পাবে। ফলে, চাঙ্গা হবে স্থানীয় ও জাতীয় অর্থনীতি। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে উপকৃত হবে সারাদেশের মানুষ।

শাকসবজি ও মসলাজাতীয় ফসল উৎপাদনের জন্য যেমন মেহেরপুরের জমি খুব উপযোগী। এই মেহেরপুরের আম, কীটনাশকমুক্ত সবজি ইউরোপ মহাদেশে তার মহাত্ম ছড়িয়েছে। সেই আম, সবজি ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ উন্নত হওয়ায় এখানে ফসলের পঁচনশীলতা হ্রাস পাবে। বিভিন্ন শাকসবজি এবং মসলা ফসলের, বিশেষ করে পেঁয়াজ ও রসুনের উৎপাদন বাড়বে। এখানকার গুরুত্বপূর্ণ ফসল পাটচাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়বে। বৃদ্ধি পাবে পাটের উৎপাদন। গড়ে উঠবে পাটভিত্তিক শিল্প। 

মেহেরপুরের কৃষক ডাবলু হোসেন প্রতিবছর দেড়শো বিঘা জমিতে বিভিন্ন ধরণের সবজি চাষ করেন। তিনি জানান- স্থানীয়ভাবে দাম ভালো না পাওয়ায় ট্রাকে করে ঢাকাসহ সারাদেশে এখন বাজারজাত করা যাবে। আর লোকসানের আশংকা করবো না। ফেরি পারাপারে প্রায় ১৮ ঘণ্টা সময় লেগে যায় রাজধানীতে পৌঁছাতে। ট্রাক ভাড়া দিতে হয় দেড়গুণ।  পদ্মা সেতু চালু হওয়াতে পরিবহন খরচ ও সময় দুটোই বেঁচে যাবে। চার ঘণ্টায় ঢাকায় এসে পণ্য বিক্রি করে আবার ফিরে যেতে পারবেন।

মেহেরপুরের সমাজিক ব্যক্তিত্ব বলেছেন- কোরবানীর ঈদে গরুর ট্রাকের দীর্ঘ লাইন পড়ে পাটুরিয়া গোয়ালন্দ ঘাটে। এই পরিস্থিতিতে পদ্মসেতু দিয়ে পারাপারের বিকল্প ভাববেন লরি চালকরা। তাতে ফেরিডুবি ও বড় ধরণের যানজট মুক্ত হয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে অল্প সময়ে পৌঁছে যাবে গরুবাহী লরিগুলো। এই পর্যায়ে অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে অবশ্যই সেতুতে টোল আদায় সহনীয় মাত্রায় রাখতে হবে। নাহলে সমস্যা তিমিরেই থেকে যাবে। 

ঢাকা প্রবাসী মেহেরপুরের এম এ মুহিত বলেন- মেহেরপুর থেকে ব্যবসায়ীরা ঢাকার ইসলামপুর, চকবাজার, বাবু বাজার, গুলিস্থান, বংশাল, পুরান ঢাকাসহ মোকাম এলাকাগুলোতে ব্যবসায়ীরা অবস্থান করে দ্রুত সময়ের মধ্যে মাল কিনে ফিরে আসতে পারবে। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মেহেরপুরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. সামসুল আলম জানান, জেলায় এ বছর  ৭১৬ বর্গ কিলোমিটারের মেহেরপুর জেলায় ১১ লাখ ১ হাজার ১’শ হেক্টর জমি চাষ যোগ্য। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক জমিতে বিভিন্ন ধরণের সবজি চাষ হয়। উৎপাদিত সবজির সিংহভাগ ঢাকা ও বরিশালে বিক্রি হয়। ট্রাকে করে পদ্মা পাড়ি দিয়ে রাজধানীতে নিতে হয়। এতে সময় ও অর্থ দুটোই বেশি ব্যয় হয়। কিন্তু পদ্মা সেতু চালুর পর সবজির বিপণনও সহজ হবে, কৃষকরাও পর্যাপ্ত দাম পাবেন। আগামীতে আর সবজি পচবে না বলে তিনি আশা করেন।

মেহেরপুর জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মো. সাইদুর রহমান জানান- জেলায়  প্রায় ১ লাখ ৮৭ হাজার গরু 
কোরবানীযোগ্য গবাদিপশু চলতি বছর প্রস্তুত হয়েছে। জেলার জন্য চাহিদা ৮৯ হাজার। উদ্বৃত্ত পশু সারাদেশে সহজেই বাজারজাত করা যাবে পদ্মা সেতু চালু হওয়ায়। পদ্মা সেতু চালুর ফলে মেহেরপুরের গবাদি পশু, মাছ, আম, লিচুসহ সবজি ঢাকাসহ অন্যান্য অঞ্চলে রপ্তানি করতে সহজ হবে।

জেলা মৎস কর্মকর্তা মো. রোকনুজ্জামান জানান, সাড়ে ৬লাখ জনসংখ্যার মেহেরপুর জেলা একটি পকেট জেলা। ফলে এই জেলায় হয়ে অন্য জেলায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বেশ ব্যয় বহুল। মেহেরপুরে প্রবেশ পথেই ফিরে যেতে হয় পকেট জেলার কারনে। পদ্মাসেতু চালু হওয়াতে এখন অল্প সময়ে এই জেলায় আসতে আগ্রহী হবে ব্যবসায়ীরা। মেহেরপুর জেলায় বার্ষিক মাছের চাহিদা ১৪ হাজার টন। উৎপাদন হয় সাড়ে তের হাজার টন। ফলে চাহিদার ঘাটতি পূরণ হয় না। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হবার কারনে অন্য জেলার মৎস্য ব্যবসায়ীরা এখন সহজেই মেহেরপুরের বাজার দখল করবে। ফলে মাছের চাহিদা পূরণ হবে।

মন্তব্য করুন: