‘শাপলা কলি’তেই রাজি এনসিপি
প্রতীক হিসেবে ‘শাপলা’র জন্য অনড় অবস্থান থেকে সরে এসেছে গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
রোববার বিকালে নির্বাচন ভবনে সিইসির সঙ্গে বৈঠক শেষে এ কথা জানান দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।
তিনি বলেন, “শাপলা, সাদা শাপলা ও শাপলা কলিকে দলের প্রতীক হিসেবে চেয়ে ইসিতে চিঠি দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি।
“শাপলা কলি দেওয়া হলে এনসিপি নেবে। তৃণমূল কলিকে ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছে।”
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সমনে রেখে এনসিপিসহ দুটি দলকে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
এর মধ্যে এনসিপিকে তফসিলে থাকা ৫০টি প্রতীকের মধ্যে থেকে মার্কা বেছে নিতে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয় ইসি।
নির্ধারিত সময়ে প্রতীক বেছে না নিয়ে বিধি সংশোধন করে শাপলা প্রতীকের দাবি তোলে এনসিপি। কিন্তু ইসির তরফে বরাবরই বলা হচ্ছিল, প্রতীক তালিকায় না থাকায় এনসিপিকে শাপলা প্রতীক দেওয়া সম্ভব নয়।
এর মধ্যে এনসিপি নেতারা হুঁশিয়ারি দেন, তারা শাপলা প্রতীকেই ভোট করবেন এবং এই প্রতীক না পেলে তারা নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামবেন।
এনসিপি নেতাদের এমন অনড় অবস্থান এবং রাজপথে নামার হুঁশিয়ারির মধ্যে বৃহস্পতিবার প্রতীক তালিকায় ‘শাপলা কলি’সহ চারটি প্রতীক যুক্ত করে নির্বাচন কমিশন।
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব জহিরুল ইসলাম মুসা সেদিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “এনসিপি শাপলাই চায়। আমরা যখন শাপলা চেয়েছি, তখন নির্বাচন কমিশন বলেছে— ‘তালিকায় নাই তাই, দেওয়া যাবে না’।
“এখন তারা ‘শাপলা কলি’ কীভাবে প্রতীক তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে, তা স্পষ্ট করতে হবে।”
‘শাপলা’ প্রতীক নিয়ে অনড় অবস্থান থেকে সরে আসার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, “এটাকে ইঞ্জিনিয়ারিং কমিশন বলতে পারি। এই ইঞ্জিনিয়ারিং কমিশনে এসেছি, এখানে অনেক কিছু ইঞ্জিনিয়ারিং হচ্ছে।
“সো ইঞ্জিনিয়ারিং কমিশনের জায়গা থেকে আমরা আমাদের ফাইটটা করে যাচ্ছি। এবং সেই ফাইটিংয়ের জায়গায় আমরা শাপলা কলি নিচ্ছি, অ্যাপ্লাই করেছি।”
তিনি বলেন, “আমরা শাপলা কলি নিব। আমরা এখন এখানে একটা বিষয় আপনাদের থাকতে পারে যে, আমরা বলছি শাপলার, কিন্তু আমরা এখনো ব্যাখ্যা পাইনি। নির্বাচন কমিশনের যে স্বেচ্ছাচারী আচরণ; কিন্তু এখন কি তাহলে আমরা প্রতীক নিয়ে পড়ে থাকব, আমরা ইলেকশন ফেজে ঢুকব না? তো সেই জায়গা থেকে আমরা বৃহত্তর স্বার্থ চিন্তা করে এই ডিসিশনটা নিচ্ছি।”
জোটে ভোট করলেও নিজ দলের প্রতীকে নির্বাচন করতে হবে—এমন বিধান সংবলিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন অধ্যাদেশে গত ২৩ অক্টোবর চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় উপদেষ্টা পরিষদ। তবে এ বিধানে আপত্তি তুলে তা বাতিলে ইসিকে চিঠি দিয়েছে বিএনপি। তবে জামায়াতে ইসলামী ওই বিধান বহাল রাখার পক্ষে অবস্থান তুলে ধরেছে। এর মধ্যে রোববার এনসিপিও ওই বিধান বহাল রাখতে সিইসিরি কাছে লিখিত আর্জি জানায়।
এতে বলা হয়, “আমরা মনে করি, প্রতিটি নিবন্ধিত দলকে তাদের নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচন করার যে সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশন নিয়েছে তা একটি ঐতিহাসিক ও নীতিগতভাবে সঠিক পদক্ষেপ।
“পরবর্তীতে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আরপিও'র সংশোধনীর মাধ্যমে উক্ত বিধান অনুমোদিত হয়েছে এবং শুধুমাত্র গেজেট প্রকাশ হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে এখন সরকার বা নির্বাচন কমিশন যদি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি'র রাজনৈতিক চাপে পাশ হওয়া সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার মাধ্যমে সরকার তার অবস্থান পরিবর্তনের উদ্যোগ নেয়, সেক্ষেত্রে শুধু কমিশনের স্বাধীনতার ওপরই আঘাত নয়, বরং পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতা এবং সরকারের কার্যক্রমের ওপরও আঘাত।“
বিএনপির চাপে ইসি অবস্থান পরিবর্তন করলে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটির ‘নিরপেক্ষতা, সক্ষমত ‘ এবং সামগ্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ার ‘বিশ্বাসযোগ্যতা’ সম্পর্কে জনগণের সন্দেহ পাকাপোক্ত হবে বলেও মনে করে এনসিপি।
এদিন সিইসি এএমএম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠকে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ছাড়াও ছিলেন দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক খালে খালেদ সাইফুল্লাহ ও যুগ্ম সদস্য সচিব জহিরুল ইসলাম মুসা। এসময় ইসি সচিব সচিব আখতার আহমেদ ছিলেন।