শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, চৈত্র ১৫ ১৪৩০, ১৯ রমজান ১৪৪৫

সাহিত্য

সংগ্রামী সাধকদের ইতিহাস (১-৭ খন্ড)

 প্রকাশিত: ২২:২২, ১৬ অক্টোবর ২০২০

সংগ্রামী সাধকদের ইতিহাস (১-৭ খন্ড)

সংগ্রামী সাধকদের ইতিহাস (১-৭ খন্ড)
-- সাইয়িদ আবুল হাসান আলী নদভী
---------------------------------------

 

★★★গ্রন্থালোচনা★★★
বইঃসংগ্রামী সাধকদের ইতিহাস১-৭।
লেখকঃ সাইয়িদ আবুল হাসান আলী নদভী।
অনুবাদকঃ আবু সাইদ উমর আলী রহঃ,আবু তাহের মিসবাহ(আদিব হুজুর)ও আব্দুল হালীম হুসাইনী।
প্রকাশনীঃ মাকতাবাতুল হেরা (Maktabatul Hera)।
মূল্যঃ২৯০০(সিরিজের গায়ের মূল্য)


লেখক পরিচিতিঃ লেখক সাইয়িদ আবুল হাসান আলী নদভী রহঃ।তিনি ছিলেন।বিংশ শতাব্দীর ক্ষণজন্মা বিরলপ্রজ ব্যক্তিত্ব। জন্মসূত্রে প্রকৃত সাইয়িদ বংশের সুযোগ্য উত্তরসূরি!যোগ্য ইতিহাসবিদ বাবার সুযোগ্য ইতিহাসবিদ সন্তান ছিলেন তিনি।যিনি বালাকোটের অমর শহীদ সাইয়িদ আহমদ শহীদ রহঃ এর পঞ্চঅধস্তন পুরুষ। ১৯১৪ সালে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।পড়াশুনার শিংহভাগই কেটেছে দারুল উলূম নদওয়া এর নববী উদ্যানে।দাওরায়ে হাদীছ সম্পন্ন করেন মাদারে ইলম দারুল উলূম দেওবন্দের পুষ্প কাননে।পড়াশুনার শেষে কর্মজীবন হিসেবে বেছে নেন শিক্ষকতাকে।বালাকোটের অমর শহীদ সাইয়িদ আহমদ শহীদের ধমনীতে যে খুন প্রবাহিত হতো,বংশ পরম্পরায় তা স্থানান্তরিত হয়ে প্রবেশ করেছিল তার দেহে,আর তা প্রকাশ প্রকাশ পেত কলমের ডগা দিয়ে।তাইতো শিক্ষকতার প্রাথমিক দিকেই তিনি হাতে তুলে নেন কলম।সীরাতে সাইয়িদ আহমদ শহীদ রচনার মাধ্যমে উর্দু সাহিত্যে নিজের অবস্থান তৈরি করে নেন।এরপর পৌনে এক শতাব্দীকাল পর্যন্ত তার কলম অবিশ্রান্তভাবে লেখে যায় উম্মাহর জয়গান।ঘুমে বিভোর জাতির নিদ ভাঙাতে রচনা করেন একের পর এক যুগোপযোগী গ্রন্থ।মা যা খাসিরাল আলামু..... তার এমনি একখানা গ্রন্থ। যা তাকে রাতারাতি প্রাচ্য-প্রাশ্চাত্যে পরিচিত করে দেয়। সীরাত থেকে ইতিহাস, ইতিহাস থেকে দর্শনও সাহিত্য পর্যন্ত ছিলো তার অবাধ বিচরণ। সংগ্রামী সাধকদের ইতিহাস ১-৫, কারওয়ানে জিন্দেগী১-৭, নবীয়ে রহমত, আল মুরতাযা,আরকানে আরবায়া তার অনবদ্য রচনা।
মুফাক্কিরে ইসলামখ্যাত এই মনীষী ১৯৯৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর শুক্রবার সূরা ইয়াসীন তেলাওয়াতরত অবস্থায় মুসলিম উম্মাহকে কাঁদিয়ে পরম মাওলার সান্নিধ্যে পরপারে চলে যান।রাহিমাহুল্লাহু তায়ালা।


.
সিরিজ পরিচিতিঃ

ইসলাম আল্লাহ তায়ালার মনোনীত ধর্ম।এটার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও আল্লাহ পাক নিয়েছেন।তাইতো যুগে যুগে বিভিন্ন সময় ইসলামের উপর পথভ্রষ্টদের নানারকম আক্রমণ এসেছে আর আল্লাহর কিছু বান্দার আবির্ভাব হয়েছে,যারা প্রতিকূল অবস্থান সাথে লড়েছেন এবং তাদের হীন চক্রান্ত ধূলিসাৎ করেছেন,যারা দুঃখী ও মজলুম মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের হতাশ অন্তরে আশা-ভরসার প্রদীপ জ্বালিয়েছেন, যারা নির্লোভ ও নির্মোহ জীবনযাপন করে মানুষের সামনে স্থাপন করেছে অনুপম আদর্শ। ।যারা স্ব-স্ব যুগে নিজ যোগ্যতা মোতাবেক ইসলামের সংস্কার ও পুণর্জাগরণ করেছেন এবং ইসলাম ও মুসলমানদের হেফাজতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন।
যাদের চেষ্টায় ইসলাম ও সংরক্ষিত আকারে এই মুহূর্তেও বিদ্যমান।যাদের প্রচেষ্টায় মুসলিম জাতিও আজ একটি বিশিষ্ট সম্প্রদায় হিসেবে বিদ্যমান।


উম্মাহদরদী,ইসলামের জন্য নিবেদিতপ্রাণ, যুগসংস্কারক ব্যক্তিত্ব যারা নিজেদের যুগের ফেতনা চিহ্নিত করে তা রহিত করেছে,মুসলমানদের সঠিক পথে চলার ব্যবস্থা করেছেন সেইসব ইসলামী রেনেসাঁর সংগ্রামী সাধকদের অবদান ও কীর্তির বিবরনের গুছালো অনবদ্য রচনা এই সিরিজ।ইসলামের প্রাথমিক দিক থেকে নিয়ে সহস্রাধিক বছরের ইতিহাসের অমর ব্যক্তিত্বদের আলোচনা উঠে এসেছে।


এই সিরিজে যেসব ব্যক্তিত্বের আলোচনা এসেছে তাদের প্রকৃত অবস্থা জানতে লেখক যেসব বিষয় প্রাধান্য দিয়েছেন তার সংক্ষিপ্ত নমুনা হল-- তিনি তাদের রচিত বই কিংবা নিবন্ধ পাশাপাশি তাদের সমসাময়িক ব্যক্তি ও ছাত্রদের রচনার সাহায্য নিয়েছে।সে যুগের চিন্তাভাবনা, জ্ঞানের মাত্রা ও কর্মক্ষেত্রের প্রশস্ততা তুলে ধরেছেন।বিশিষ্ট মুবাল্লিগ, গ্রন্থকার, সংস্কারক এবং চিন্তাশীল ব্যক্তিদের বিভিন্নমুখী ও বিস্তৃত উদৃতি দিয়েছেন।তাদের শুধু ইলমী দিক বিশ্লেষণ করেননি বরং তাদের আধ্যাত্মিক দিকও পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করেছেন।তাদের বিভিন্ন চিন্তাধারার উপর আপত্তি কিংবা আপত্তির জবাব দেওয়া হয়ে থাকলেও তার সবিশেষ পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা করেছেন।


এতে করে তাদের যোগ্যতা ও মর্যাদার যথাযথ অবস্থান পরিষ্কার হয়ে পাঠকদের সামনে উত্থাপিত হয়েছে।সবদিক মিলিয়ে এই সিরিজটি একক বৈশিষ্ট্য ও মর্যাদার অধিকার রাখে।
.
আলাদা আলাদাভাবে পরিচিতি


সংগ্রামী সাধকদের ইতিহাস ১:-
এটি এ সিরিজের প্রথম খণ্ড।এখানে প্রথম শতাব্দীর শেষ থেকে নিয়ে সপ্তম শতাব্দীকাল পর্যন্ত আলোচনা করা হয়েছে।বইয়ের প্রথমেই সংস্কার আন্দোলনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা ও ইসলামের ইতিহাসে তার ধারাবাহিতার উপর আলোচনা করা হয়েছে।ইসলামের স্থায়িত্ব ও ধারাবাহিতার জন্য যেমন এ ধর্মে জীবিত ব্যক্তিরা যুগে যুগে বিদ্যমান তেমন অন্যান্য ধর্মে একই সমস্যার কারণে তাদের অস্থায়িত্ব ঘটেছিল। সেদিকেই আলোকপাত করা হয়েছে।এরপর প্রথম শতাব্দীত সংস্কারক উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহঃ ও তার সংস্কারকর্ম নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে।এরপর দ্বিতীয় শতাব্দীর সংস্কারক হাসান বসরী রহঃ এর আলোচনা করা হয়েছে।যখন মুসলিম উম্মাহ নৈতিক ও চারিত্রিক অধঃপতনে নিমজ্জিত ছিল তখন তিনি ইসলামী হুকুমতে নিফাককে চিহ্নিত করে তার সত্যকথন ও নির্ভীকতা দ্বারা শাসনব্যবস্থায় বিপ্লব সাধনের চেষ্টার ইতিবৃত্ত উঠে এসেছে।এরপর আব্বাসীয় খেলাফত ও তার প্রভাব,মুসলিম উম্মাহর হাদীছ ও ফিকাহ সংকলন নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করেছেন।মুতাযিলাদের আবির্ভাব, খলকে কোরআনের ফেতনা ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলের ইচ্ছাশক্তি ও দৃঢ়তা, কৃতিত্ব ও অবদান নিয়ে আলোকপাত করেছেন।মুতাযিলাদের পাণ্ডিত্য, তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তির জবাবে ইমাম আবুল হাসানা আশয়ারি ও তার অনুসারিদের বিচক্ষণতা, জ্ঞান-গরিমার উপরও আলোচনা করেছেন।ইলমে কালামের অধঃপতন থেকে ইমাম গাজালীর সংস্কারসাধন এর মাধ্যমে উত্তরণ নিয়েও আলোচনা করেছেন।এরপরে আব্দুল কাদের জিলানী ও ইবনে কাইয়ুম জাওযীর কৃতিত্ব ও অবদান, তাদের সংস্কার আন্দোলন ও বিপ্লব নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।ক্রুসেডদের আক্রমণ ও ষড়যন্ত্রের মুখে নুরুদ্দীন জঙ্গী ও সালাহুদ্দীন আইয়ুবী রহঃ এর অবদান,জিহাদের প্রতি তাদের অনুরাগ,হিত্তীনের চূড়ান্ত যুদ্ধ,বাইতুল মাকদিস পূণরায় ফিরে পাওয়াসহ তাদের বৃত্তান্ত উঠে এসেছে। এছাড়াও ইযযুদ্দীন ইবনে আব্দুল সালাম,তাতারীদের ফেতনা,জামালুদ্দীন রহঃ জীবন ও কর্ম,কৃতিত্ব ও অবদান,বিপ্লব ও সংস্কারসাধন নিয়েও লেখক আলোকপাত করেছেন।

 

সংগ্রামী সাধকদের ইতিহাস ২:-

এটি এ সিরিজের দ্বিতীয় খণ্ড।এতে শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহঃ এর ব্যাপক কর্মময় জীবনের বর্ণাঢ্য দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।তিনি সেইসব ব্যক্তিদের অন্যতম যারা দ্বীনের ব্যাপারে ছিলেন আপোষহীন। প্রয়োজনে যারা দ্বীনের জন্য নিজের জীবন ফাসির মঞ্চে অকুণ্ঠচিত্তে তুলে দেন,তিনি তাদেরও অন্যতম। যাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি তাগুত শাসকবৃন্দ।তার অসাধারণ স্মৃতিশক্তি ও ইলমে তার পাণ্ডিত্য, ধর্মদ্রোহী-ফিতিনাবাজ ও মদের বিরুদ্ধে জিহাদ,তার সংস্কারকর্ম,তাতারিদের সঙ্গে তার যুদ্ধ,তাগুতের জেলে বন্দিজীবন,বীরত্ব নিষ্ঠা ও দৃঢ়তা,
তার এখলাস যুহদ ও তাকওয়া, তার লেখনীর বৈশিষ্ট্য ,তার সংস্কার ও পুণর্জাগরণমূলক কাজকর্ম,বিভিন্ন ফিতনা,শরয়ী ইলমসমূহের পুনর্জাগরণ,তার রচনাসমগ্র,
বাতিল ফিরকাগুলোর মুকাবিলা ও খণ্ডনসহ তার জীবনের উল্লেখযোগ্য সবদিকই বইয়ে উঠে এসেছে।তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ এমন কোনো দিক নেই যা এতে আলোচনা করা হয়নি।


.
সংগ্রামী সাধকদের ইতিহাস ৩:-

এই বই এ সিরিজের তৃতীয় খণ্ড। এখানে ভারতবর্ষে চিশতিয়া সিলসিলা ও এই সিলসিলার শ্রেষ্ঠ বুজুর্গদের আলোচনার পাশাপাশি সুলতানুল মাশায়েখ খাজা নিজামুদ্দীন আওলিয়া রহঃ এবং মাখদুমুল মুলক শায়েখ শরফুদ্দীন ইয়াহইয়া মুনায়রী রহঃ এর বিস্তারিত জীবন ও কর্ম আলোচিত হয়েছে।


ইসলামী বিশ্বের আধ্যাত্মিক ও মনস্তাত্ত্বিক কেন্দ্র মুসলিম ভারতের স্থপতি, চিশতিয়াদের প্রাথমিক ধারণাসহ আলোকপাত।ভারতবর্ষে আধ্যাত্মিক, নৈতিক ও ঈমনী বিজয় প্রচেষ্টার মূল স্থপতি শায়খুল ইসলাম খাজা মইনুদ্দীন চিশতী রহঃ এর জন্ম থেকে নিয়ে মৃত্যু পর্যন্ত নানা ঘটনা,তার চারিত্রিক গুণাবলী, শত্রুদের প্রতি উদারতা, মানুষদের পরোপকার, তার ফয়েয ও বরকত, ইলমের খেদমত, ইসলামের প্রচার-প্রসার,সংস্কারকাজসহ নানামুখী কাজকর্মের বৃত্তান্ত সুচারুরূপে অঙ্কিত হয়েছে।এপরেই মাখদুমুল মুলকের জন্ম থেকে নিয়ে এযাযত লাভসহ মৃত্যুর আলোচনা, ভারতবর্ষে ফিরদৌসিয়া সিলসিলার আগমন ও বুজুর্গগনের আলোচনা করেছেন।তার প্রশিক্ষণ, মুজাহাদা ও নির্জনবাস, বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলী, রচনাসমগ্র ও দাওয়াতী সংস্কারক কাজসহ তার উচ্চতর জ্ঞানের পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা করেছেন তিনি।


.
সংগ্রামী সাধকদের ইতিহাস ৪:-

এখানে মুজাদ্দিদ আলফে সানী শায়েখ আহমদ সারহিন্দী রহঃ বর্ণাঢ্য কর্ম ও বিপ্লবাত্মক সংস্কার কর্মের উপর আলোচনা করেছেন।
এখানে লেখক রহঃ তার সেই কর্ম ও পদ্ধতি তুলে ধরেছেন যা দ্বারা সহায় সম্বলহীন এক ফকির এক নিভৃত খানকায় বসে দেশ ও সালতানাত এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার গতিধারা বদলিয়ে দিতে সক্ষম হন।হিজরী দশম শতাব্দীতে মুসলিম বিশ্বের অবস্থান, আকবরের শাসনকাল কেমন ছিলো এবং তার পরবর্তী শাসনামল তার আলোচনা অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে তুলে ধরা হয়েছে।এরপর মুজাদ্দিদে আলফে সানীর জন্ম থেকে খেলাফত, জীবনের নানা ঘটনা,তার সংস্কার ও পুনর্জাগরণমূলক অবদান কি ছিলো, ওয়াহদাতুল ওজুদ ও ওয়াহদাতুশ শুহুদ কী ও কেন?,সম্রাট আকবর থেকে নিয়ে সম্রাট জাহাঙ্গীর এর শাসনামল পর্যন্ত অত্যন্ত দক্ষতার সাথে বিজ্ঞ বিচারকের ন্যায় ইতিহাসের অথৈ সমুদ্র থেকে মণিমুক্তা তুলে ধরা হয়েছে।পাশাপাশি তার দুজন খলীফা ও তাদের সংস্কারমূলক কাজকর্মও আলোচিত হয়েছে।


.
সংগ্রামী সাধকদের ইতিহাস ৫:-

এই খণ্ডে উপমহাদেশের অন্যতম মুজাদ্দিদ শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী রহঃ কে নিয়ে আলোচনা হয়েছে।শাহ ওয়ালীউল্লাহ রহঃ এর সংশোধন ও সংস্কারের পরিধি স্বাভাবিকভাবেই ছিলো ব্যাপক ও বিস্তৃত। তাতে শিক্ষা ও চিন্তাগত রূপ ছিলো অগ্রগণ্য। হাতে কলমে শিক্ষাদান, লেখনী, কোরআন -হাদীছের প্রসার,ফিকহী মাযহাবসমূহের মাঝে সামঞ্জস্যবিধান,শরীয়তের সূক্ষ্মতা ও উদ্দেশ্যের বিশ্লেষণ, রাজনৈতিক উত্থান-পতন ও ক্রমবর্ধমান শক্তিগুলোর বাস্তবধর্মী তত্ত্বানুসন্ধান ইসলামী জ্ঞান-গবেষণায় মুজতাহিদসূলভ চিন্তা-গবেষণাসহ আরো অনেক বিষয় নিয়ে তার কর্মময় জীবনের অনুষঙ্গ যার অন্তর্ভুক্ত । লেখক এই খণ্ডে হিজরী বারো শতকের মুসলিম বিশ্বের সামাজিক, নৈতিক ও আন্তর্জাতিক চিত্রের পাশাপাশি ভারতবর্ষের চিত্রও অঙ্কন করেছেন।শাহ সাহেবের বংশ পরিক্রমা, তার জীবনচরিত ও সংস্কারমূলক কর্ম এবং কোরআনের দাওয়াত নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।পাশাপাশি হাদিস-সুন্নতের প্রচার-প্রসারে তার অবদান,ফিকাহ ও হাদীছের সমন্বয়ে তার দক্ষতা ও অবদান নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা উঠে এসেছে।তিনি হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ এর আলোকে শরীয়তের যে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ও হাদীছের মর্মের পর্দা উন্মোচন করেছেন সেদিকও লেখক তুলে ধরেছেন।সে সময়কার রাজনৈতিক বিশৃংখলা,উম্মতের মধ্যে বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্তি নিয়েও আলোচনা তুলে ধরেছেন।তার সময়কালীন প্রসিদ্ধ মনীষী এবং তার রচনাসমগ্র সম্বন্ধে তথ্যসমৃদ্ধ আলোচনা করা হয়েছে এখানে।


.
সংগ্রামী সাধকদের ইতিহাস ৬-৭:-

এই দুই খণ্ড ছিলো মূলত সীরাতে সাইয়িদ আহমদ শহীদ রহঃ এর উপর লেখা।সিরিজের বিষয়বস্তুর সাথে উনার জীবন ও কর্মের মিল থাকায় প্রকাশক মহোদয় এই দুই খণ্ডকে সিরিজের সাথে জুড়ে দিয়েছেন।রিভিউয়ের ব্যাপ্তি দীর্ঘ হওয়া আর উভয় খণ্ড যেহেতু একই ব্যক্তির জীবন ও কর্মের সাথে সম্পৃক্ত তাই উভয় খণ্ডের পরিচিতি একসাথে দিচ্ছি।আমীরুল মূমিনীম সাইয়িদ আহমদ শহীদ রহঃ এর কর্মপরিধি এতো বিস্তৃত যে স্বয়ং লেখক তার জীবনী লেখতে গিয়ে প্রায় ১১৪০ এরও বেশি পৃষ্টা ব্যয় করেছেন।শাহ ওয়ালীউল্লাহ রহঃ এর পরে সাইয়িদ আহমদ শহীদ রহঃ এর মতো ব আল্লাহওয়ালা বুজুর্গ ভারত উপমহাদেশে আর কেউ বোধহয় জন্মগ্রহণ করেন নি। তার জীবনের কোন কোন দিক এই ছোট্ট পরিসরে(রিভিউয়ে) তুলে ধরব?!!
লেখক রহঃ প্রথমেই শত পৃষ্টাব্যাপী আলোচনা করেছেন -তার জীবনী নিয়ে লেখা রচনাসমগ্র ও বংশ পরিচয়।এরপর তার বাল্যকা,আধ্যাত্মিক দীক্ষালাভ ও নবাব আমীর খানের সাহচর্য লাভের উপর আলোকপাত করেছেন।তার একাধিকবার দিল্লী ভ্রমণ, লৌখনো সফর,রায়বেরেলীতে অবস্থান, হজ্বের সংকল্প,মির্যাপুর গমন, সেখান থেকে বেনারস, বেনারস থেকে কলকাতা,কলকাতা থেকে মক্কা,মক্কা থেকে পুনরায় রায়বেরেলী,সেখান থেকে মারোয়াড় সিমান্তে সফর,অতঃপর সিন্ধু ও শিয়ালকোট, সেখান থেকে শাল ও পেশোয়ার,নওশহর ও আকুড়ার যুদ্ধ, সেখানকার বিভিন্ন চিত্তাকর্ষক ঘটনা সহ সংশ্লিষ্ট সব বিষয়ের আলোচনা বিজ্ঞ বিচারকের ন্যায় একজন সত্যানুসন্ধিৎসা ইতিহাসবিদের ন্যায় তুলে ধরেছেন।এছাড়াও তার জীবনের অন্যতম ঘটনা শায়দুর লড়াই,শিখ সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন, আগ্রাউর অঞ্চলে বাহিনী প্রস্তুত, ডামলাগা ও শানকিয়ারীর যুদ্ধ,উতমানজাইয়ের যুদ্ধ,ইসলামী নীতিমালা বাস্তবায়ন ও তার প্রভাব,পাঞ্জতারের চিত্র ও যুদ্ধ,হান্ড অবরোধ ও তাঙ্গীর যুদ্ধ,জায়দার যুদ্ধ ও তাতে কিভাবে ইয়ার মুহাম্মদ খানকে হত্যা করা হয়,উশরা ও আমবের যুদ্ধ, ফুলরার যুদ্ধ, মায়ার যুদ্ধ, শরয়ী হুকুমতের কর্মচারী এবং গাজীদের পাইকারিভাবে হত্যা ও বালাকোটের শাহাদাতগাহসহ তার চরিত্র ও গুণাবলী, দীনী আখলাক,রুহানি ও আধ্যাত্মিক গুণাবলী, তার সংস্কার নেতৃত্ব ও আত্মশুদ্ধির সব বিষয়ই সবিস্তারে চলে এসেছে এই দুই খণ্ডে (৬ও ৭ এ)।

 

.
লেখক, সিরিজ পরিচিতি ও প্রতিটি খণ্ডের আলাদা পরিচিতি পড়তে পড়তে পাঠক হয়তো ক্লান্ত, আর এমনটাই স্বাভাবিক। তাই সংক্ষেপে নিজের অনুভূতি পেশ করেই বিদায় নেব।এই সিরিজ গতানুগতিক কোনো ইতিহাস নয়;বরং ইতিহাসের অতলান্তিক সমুদ্র থেকে সাতার কেটে,ডুব দিয়ে ডুবুরির মতো কুড়িয়ে আনা মণি-মুক্তা,হিরে-মতি-পান্নার সমাহার।এখানকার প্রধান ব্যক্তি তারা যারা ইসলামের প্রচার-প্রসার চরম আতত্মত্যাগের সম্মুখীন হয়েও বিচলিত হননি।এ পথের সকল প্রতিযোগিতা যারা হাসিমুখে মোকাবেলা করেছেন।সেইসব সোনালি মানুষদের বর্ণাঢ্য কর্মধারা ভিন আঙ্গিকে,ভিন্ন আমেজে,হৃদয়গ্রাহী উপস্থাপনায় খুবই উপভোগ্য করে পাঠকদের জন্য পরিবেশন করা হয়েছে। ইতিহাসের দিক থেকে এই বইটি একক ও স্বতন্ত্র।যার উপমা শুধু এই সিরিজই।অনুবাদও অসাধারণ, অতুলনীয়, অবর্ণনীয়। মাকতাবাতুল হেরার প্রচ্ছদও ঝকঝকে যা চোখ জুড়িয়ে নেয়,বিমোহিত করে ফেল। পাশাপাশি বাধাইও উন্নত, মজবুত ।


এমন একটি অসাধারণ গ্রন্থ যারা আজও পড়েন নি তারা অতি শীঘ্রই এই সিরিজ সংগ্রহ করে ফেলুন।

অনলাইন নিউজ পোর্টাল

মন্তব্য করুন: