শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, বৈশাখ ৬ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

ইন্তেকালের পর সম্পত্তির হক্বদার কে কে হবেন?

 প্রকাশিত: ১১:২৩, ২২ নভেম্বর ২০২২

ইন্তেকালের পর সম্পত্তির হক্বদার কে কে হবেন?

১৩৩৮: প্রশ্ন
মুমতাজ মিয়া আজ থেকে ২৭ বছর পূর্বে ইন্তেকাল করেন। ইন্তেকালের সময় তিনি ২ ছেলে, ২ মেয়ে ও এক স্ত্রী রেখে যান। তিনি জীবদ্দশায় ২ মেয়েকে বিবাহ দিয়ে যান। মৃত্যুকালে বড় ছেলের বয়স ২২ বছর আর ছোট ছেলের বয়স ১০/১১ বছর ছিল।

মুমতাজ মিয়া ইন্তেকালের সময় অনেক জায়গা-জমি রেখে যান। সাথে দুইটি ট্রাকও রেখে যান। যার একটি বড় ছেলের নামে অপরটি নিজের নামে ছিল।

মুমতাজ মিয়ার মৃত্যুর পর বড় ছেলে গাড়ি এবং জমি-জমা দেখাশুনা করেন। আর ছোট ছেলে ১৯/২০ বছর বয়স পর্যন্ত লেখা-পড়া করেন।

ছোট ছেলে এরপর বাড়িতে এসে নিজের মা, বড় ভাইয়ের পরিবার, সন্তানদের দেখাশোনা এবং জমি-জমা দেখাশুনার সাথে সাথে গ্রামের একটি স্কুলেও মাস্টারি করতেন। আর বড় ভাই ঢাকায় গাড়ি দেখাশুনা করতেন। অর্থাৎ ছোট ভাই বাড়িতে জায়গা-জমি ইত্যাদি দেখতেন আর বড় ভাই ঢাকায় গাড়ি  দেখাশুনা করতেন। এর মধ্যে চারটি ট্রাক তাদের মালিকানায় আসে। দুটি পিতার ইন্তেকালের সময়ের আর দুটি ক্রয় করা হয়েছে আগের দুটির লাভ দিয়ে। মোট চারটি ট্রাকের মধ্যে এখন দুটি বড় ভাইয়ের নামে আর দুটি ছোট ভাইয়ের নামে।

আজ থেকে ছয় বছর পূর্বে ছোট ভাই স্কুলের চাকুরী ছেড়ে দেন। তখন বাড়িতে একটি বিল্ডিং করা হয়। যা ঐ ট্রাকের আয় দ্বারা নির্মিত।

ছোট ভাই চাকুরী ছাড়ার পর থেকে উভয় ভাই পালাক্রমে ঢাকায় ও গ্রামে গাড়ি, জায়গা-জমি দেখাশুনা করেন। এ পর্যন্ত উভয় পরিবার একসাথে ছিল এবং এ পর্যন্ত ট্রাকের আয় থেকে তাদের সংসার চলত।

বর্তমানে দুই ভাইয়ের মাঝে ঝগড়া-বিবাদ এ নিয়ে যে, বড় ভাই বলেন- বাবা আমাকে ভালোবেসে গাড়ি দিয়ে গেছেন। তার লাভ থেকে আমি আরো দুটি ট্রাক ক্রয় করেছি এবং বিল্ডিং বানিয়েছি। সুতরাং এগুলোর মালিক আমি নিজে একাই। একথা বলে তিনি ছোট ভাই, বোন ও মাকে ঘর হতে বের হয়ে যেতে বলেন।

উল্লেখ্য যে, বাবা শেষ বয়সে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। তখন তার সকল ব্যবসা বড় ছেলেই দেখাশুনা করত। বাবা যতদিন হিসাব নেওয়ার মত ছিলেন ততদিন তিনি ব্যবসার সকল হিসাব নিতেন। এমনকি তার নামে যে ট্রাক রয়েছে সেটারও হিসাব নিতেন। এর আয়-ব্যয় সব বাবারই গণ্য করা হত। এরপর বাবা আরো দুর্বল হয়ে পড়লে বাবার পক্ষ হতে সকল হিসাব নিতেন তার এক বন্ধু। এমনকি বাবার মৃত্যুর পরও ঐ বন্ধু সকল হিসাব-নিকাশ নিতেন।

এখন প্রশ্ন হল, উক্ত গাড়ি এবং বিল্ডিং এর হক্বদার কে কে হবেন।

বি.দ্র. এ পর্যন্ত জায়গা-জমি কিছুই ভাগ করা হয়নি।

উত্তর:
প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী যে ট্রাকটি বড় ছেলের নামে রয়েছে তা যেহেতু বাবার জীবদ্দশায় তাকে বুঝিয়ে দেয়া হয়নি এমনকি বড় ছেলে ব্যবসা পরিচালনার সময়ও উভয় ট্রাকের আয়-ব্যয় হিসাবও বাবাই বুঝে নিতেন। তাই তার নামে রেজিষ্ট্রেশন থাকলেও ঐ ট্রাকেরও মালিক বাবা নিজেই। হয়ত আইনগত কোনো সুবিধা হাসিলের জন্যই তার পিতা একটি ট্রাকের রেজিষ্ট্রেশন ছেলের নামে করেছেন। সুতরাং বড় ছেলে বাবার ব্যবসা পরিচালনা করে যা যা উন্নয়ন করেছে তার সব কিছুর মালিক হবেন বাবা এবং তার মৃত্যুর পর তার সকল ওয়ারিশগণ। সুতরাং প্রশ্নোক্ত প্রথম দুই ট্রাক এবং এর আয় থেকে কেনা পরের ট্রাক দুটি ও বিল্ডিং এর মালিক বাবার সকল ওয়ারিশগণ। বড় ছেলে একা এর মালিক হবে না।

-শরহুল মাজাল্লাহ ৪/৩২০, ফাতাওয়া খায়রিয়া ২/২৫২, রদ্দুল মুহতার ৪/৩২৫

মন্তব্য করুন: