শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, বৈশাখ ৬ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

হজ-ওমরা ও যে কোনো সফরের সময় নামাজের বিধান

 প্রকাশিত: ১২:৩৯, ২২ নভেম্বর ২০২২

হজ-ওমরা ও যে কোনো সফরের সময় নামাজের বিধান

ড. মুফতি হুমায়ুন কবির।।
সহযোগী অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

সফর মানুষের কষ্টের বিষয়। তাই কেউ সফরে গেলে তাকে দ্রুত ফিরে আসার কথা বলা হয়েছে। নবী সা. সফরের কষ্টের কারণে সফরে ইবাদতকে হালকা করেছেন। চার রাকাত ফরজকে দুরাকাত আদায় করার অনুমোদন দিয়েছেন। তেমনি সুন্নাতকে নফলে পরিণত করেছেন। আর ফরজ রোজাকে পরে কাযা করার শর্তে ঐচ্ছিক করেছেন। নিম্নে সকল ধরনের সফরে নামাজের বিধান বর্ণনা তুলে ধরা হলো:
১. সফরে সাধারণত চার রাকাত ফরযকে দুই রাকাত পড়তে হবে। তবে কোনো মুকীমের ইকতিদা করলে, তখন চার রাকাত পড়বে। আর ওয়াজিব ঠিকই আদায় করবে। সুন্নাত ফ্রি থাকলে বা মন ভালো থাকলে পড়বে, তাড়াহুড়া থাকলে বা পেরেশানীতে থাকলে ছেড়ে দিবে। তবে ফজরের সুন্নাতকে একটু গুরুত্ব দেবে।

২. মুসাফির হওয়ার জন্য স্থলভাগে ৪৮ মাইল তথা ৭৭ কিলোমিটার অতিক্রম করতে হবে।
৩. মুসাফির নিজের শহরের আবাদীর বাইরে গেলেই সফরের নামাজ পড়তে পারবে।

৪. কোনো মুসাফির যদি দুই রাকাত কসর না করে চার রাকাত নিজে নিজে পড়ে নেয়, তখন তাকে সিজদা সাহু করতে হবে। নতুবা আবার আদায় করতে হবে।

৫. যদি কেউ সফরে কোনো এলাকায় পনের দিন থাকার নিয়ত করে, তখন সে মুকীম হয়ে যাবে। তবে তা একটি স্থানে নিয়ত করতে হবে।
৬. মুসাফির হওয়ার জন্য দুটি শর্ত। এক. কমপক্ষে ৭৭ কিলোমিটার সফর করার জন্য নিয়ত করতে হবে। দুই. নিজ এলাকা ত্যাগ করতে হবে।

৭. সফরে নফল ও সুন্নাত গাড়িতে চলন্ত অবস্থায়ও পড়া যায়, তবে ফরয ও বিতর গাড়ি থেকে নেমে পড়তে হবে। বিমানে সব নামাজ পড়া যাবে। তখন কিবলা বিপরীত হলেও সমস্যা নেই; যদি প্রথমে কেবলামুখী হয়ে শুরু করে। তবে পানি না পেলে সেখানে তায়াম্মুম করে পড়বে। যদি তায়াম্মুমও করতে না পারে, তখন নামাজ মওকূফ রাখবে, পরে নামলে পড়ে নেবে। ইচ্ছে হলে নামাজীর সাদৃশ্য গ্রহণ করতে পারবে।
৮. সফরে জুমা, ঈদ, কুরবানী ওয়াজিব হয় না।

৯. হানাফী মাযহাব মতে কাযা নামাজে মুসাফির মুকীমের ইকতিদা করতে পারবে না।
১০. সফরের কাযা নামাজ ইকামত অবস্থায় আদায় করলে দুই রাকাত পড়তে হবে। আর ইকামতের কাযা সফরে করলে চার রাকাত আদায় করতে হবে। অর্থাৎ, নামাজ যেটা যেভাবে কাযা হয়েছে সেভাবেই আদায় করতে হবে।

১১. মক্কাতে হাজী যাওয়ার পরে যদি পনের দিন মিনায় যাওয়ার পূর্বে অবস্থান করে, তখন সে মুকীম হবে। তাই সে মিনা, মুজদালিফা ও আরাফাতেও মুকীম হিসেবে থাকবে। অতঃপর মক্কায় আসলেও সে মুকীম থাকবে। আর যদি সে আট তারিখ মিনায় যাওয়ার পূর্বে পনের দিন মক্কাতে থাকতে পারেনি, তখন সে মুসাফির হবে এবং মিনা, মুজদালিফা ও আরাফাতেও সে মুসাফির হবে। অতঃপর মক্কায় ফিরলে যদি পনের দিন থাকার নিয়ত করে, তখন সে মুকীম হবে, নুতবা মুসাফির থাকবে।

১২. সাধারণত সৌদি আরবে হজের কারণে কসর করে। তবে তা হানাফী মাযহাব মতে বিশুদ্ধ নয়। তাই তারা রিয়াদ থেকে ইমাম আনে আরাফাতে নামাজ পড়ানোর জন্য, যাতে হানাফী মাযহাবে জটিলতা না থাকে।

১৩. জিদ্দার লোকেরা মক্কায় গেলে বা মক্কার লোকেরা জিদ্দায় গেলে মুসাফির হবে না। কেননা, তাদের মাঝখানে ৭৭ কিলোমিটারের দূরত্ব নেই। কিন্তু জিদ্দার বাসিন্দা যদি মিনা ও আরাফাতে যায়, তখন মুসাফির হবে। তখন দূরত্ব ৭৭ কিলোমিটারের বেশি হয়। তাই জিদ্দার বাসিন্দা ওমরা করতে গেলে মুসাফির হয় না, হজ করতে গেলে মুসাফির হয়।

১৪. আরাফাত ও মুজদালিফা ব্যতীত সফরে কোথাও দুই নামাজ একত্রে পড়া হানাফী মাযহাব মতে বৈধ নয়।

১৫. সফরে যখন বিমানে থাকবে যদি নামার পূর্বে নামাজের সময় কাযা হয়ে যায়, তখন সেখানেই পড়ে নেবে। যদি সেখানে কিবলা ঠিক করে পড়েছেন, তাহলে আর পুনরায় পড়তে হবে না। যদি কিবলা ঠিক রাখা সম্ভব না হয়, তখন আবার পুনরায় পড়ে নেবে। আর যদি বিমান থেকে নামার পরে সময় থাকার প্রবল সম্ভাবনা থাকে, তখন নেমে পড়ার জন্য অপেক্ষা করবে। বিমানে রুকু সিজদা করা সম্ভব না হলে, ইশারা দ্বারা নামাজ আদায় করবে।

১৬. বিমানে যদি অযূ ও তায়াম্মুমের ব্যবস্থা না থাকে, তখন নামাজকে মওকুফ করবে। আর সে সেখানে নামাজীর সাদৃশ্য গ্রহণ করবে।
১৭. মুসাফিরের উপর আবু হানিফার মতে তাকবীরে তাশরীক ওয়াজিব না হলেও ইমাম আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদের নিকট ওয়াজিব। এর উপরই ফতওয়া। (মিনহাতুস সুলুক ফি শরহি তুহফাতিল মুলূক, পৃ. ১৮০)।

১৮. মুকীম বাসায় একা নামাজ পড়লে আযান ও ইকামত দুটিই ছেড়ে দিতে পারবে। মাকরূহ হবে না। আর মুসাফির আযান ছেড়ে দিতে পারবে; তবে ইকামত ছেড়ে দেওয়া মাকরূহ হবে। (তুহফাতুল ফুকাহা, খ. ১, পৃ. ১১৪)।

সারকথ হলো, ইসলাম সহজ ধর্ম। তাতে মানুষের সাধ্যের বাইরে কোনো শরীয়ত নেই। যা মানুষের জন্য সহজ তাই ইসলামে পালন করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন: