শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, বৈশাখ ৭ ১৪৩১, ১১ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

হাদীসের আলো

 প্রকাশিত: ০০:০৪, ৩ মার্চ ২০২২

হাদীসের আলো

হযরত আবু হোরায়রা (রা) হইতে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেন-

মুনাফিকের আলামত তিনটি, যখন সে কথা বলে তখন মিথ্যা বলে, আর যখন ওয়াদা করে তখন ওয়াদাখেলাফী করে, আর যখন তাহার নিকট আমানত রাখা হয় তখন সে আমানতের খেয়ানত করে।

(বুখারী ও মুসলিম)

 

অন্য বর্ণনায় আছে, যদিও সে রোযা রাখে এবং নামায পড়ে এবং নিজেকে মুসলমান বলিয়া দাবী করে।

ফায়দা-

কোন কোন বর্ণনায় আছে মুনাফিকের আলামত চারিটি। চতুর্থটি হইল, যখন বিবাদ করে তখন সে শালীনতার সীমা লঙ্ঘন করে (বা ন্যায়ের সীমা লঙ্ঘন করে।) ঐ বর্ণনায় স্পষ্ট করিয়া বলা হইয়াছে যে, এই চারিটি দোষ যাহার মধ্যে একত্র হইবে সে হইল খাঁটি মুনাফিক, পক্ষান্তরে যাহার মধ্যে কোন একটি পাওয়া যাইবে, বলা হইবে যে, তাহার মধ্যে নেফাকের একটি খাছলত রহিয়াছে।

মিথ্যাচার হইল সর্বাধিক ঘৃণ্য বিষয়, তাই উহাকে সর্বাগ্রে উল্লেখ করা হইয়াছে। আফসোস, বর্তমান সমাজে তো এমন মানুষ পাওয়াই কঠিন যে মিথ্যা বলে না। এমনকি বিনা প্রয়োজনেও মানুষ মিথ্যা বলিতেছে, আরও জঘন্য বিষয়, আল্লাহর নামে কসম করিয়াও মিথ্যা বলিতে বাধে না। আল্লাহ আমাদিগকে হিফাযাত করুন, আমীন।

মুনাফিকের দ্বিতীয় আলামত হইল ওয়াদা করিয়া ওয়াদা রক্ষা না করা। ইহাও বর্তমান মুসলিম সমাজের ভয়াবহ ব্যাধি। ওয়াদা রক্ষা করার গুরুত্ব কত তাহা নিম্নের বর্ণনাটি দ্বারা সুস্পষ্ট হইবে- বদরযুদ্ধে শরীক হইবার উদ্দেশ্যে দুইজন ছাহাবী আসিতেছিলেন, পথে তাহারা কাফিরদের হাতে ধৃত হইলে ওয়াদা করিলেন যে, আমরা বদরের যুদ্ধে শরীক হইব না। কাফিররা তাহাদিগকে ছাড়িয়া দিল। পরে রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিষয়টি জানিতে পারিয়া বলিলেন, তোমরা যুদ্ধে শরীক হইয়ো না। আমরা ওয়াদা রক্ষা করিব। (অথচ তখন মুসলমানদের লোকবল ছিলো অতিসামান্য, ফলে দুইজন যোদ্ধারও গুরুত্ব ছিলো বিরাট।

তৃতীয় আলামত হইল আমানতের খেয়ানত করা। আমানত মালের হইতে পারে, কথার হইতে পারে, ইজ্জত-আবরুর হইতে পারে। আবার পরামর্শের হইতে পারে এবং সাক্ষী প্রদানেরও হইতে পারে। পরামর্শ চাওয়া হইলে সঠিক পরামর্শ দান করা এবং প্রয়োজনের সময় সাক্ষ্য প্রদান করা আমানতের দাবী। তুমি সাক্ষ্য না দেওয়ার কারণে যদি হকদার হক হইতে বঞ্চিত হয় তবে তুমি আমানতের খেয়ানত করিলে। চতুর্থ আলামত হইল বিবাদকালে অশালীন কথা বা আচরণ। সুতরাং ইহা অবশ্যই পরিত্যাজ্য। বস্তুত কোন মুসলমান কখনো অশালীন কথা বলিতে বা অশালীন আচরণ করিতে পারে ইহা কল্পনাও করা যায় না। এই হাদীছ বড়ই গুরুতর। কারণ মুনাফিক সম্পর্কে বলা হয়েছে যে তাহারা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে থাকিবে, যদিও আলিমগণ হাদীছটির ব্যাখ্যা দিয়া বলিয়াছেন, এখানে আকীদাগত মুনাফিক উদ্দেশ্য নহে।

বিশ্ব নবী সম্পর্কে 

 নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমানতের বিষয়ে এত বিশ্বস্ত ছিলেন যে, মক্কার মুশরিকরাও তাদের নেতাদের পরিবর্তে তাঁর কাছেই নিজেদের আমানত গচ্ছিত রাখতো। বর্ণিত আছে যে, হিজরতের সময় তিনি শুধু মানুষের আমানত যথাযথভাবে ফেরত দেয়ার জন্য হযরত আলী (রা)কে যিনি তখন বয়সে তরুণ ছিলেন, মক্কা শরীফে রেখে গিয়েছিলেন। আর তিনি সবাইকে যার যার আমানত বুঝিয়ে দিয়ে তারপর হিজরত করেছেন।

মন্তব্য করুন: