বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, বৈশাখ ১০ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

হাদীছের আলো

 প্রকাশিত: ১৭:২৩, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২

হাদীছের আলো

হযরত ছাওবান রা.  হতে বর্ণিত যে, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, খুব দূরে নয় যে, বিভিন্ন সম্প্রদায় তোমাদের বিরুদ্ধে ডাকাডাকি করবে, যেমন মানুষ একে অন্যকে ডেকে আনে খাদ্য-থালার দিকে। কেউ জিজ্ঞাসা করলেন, (এমন কি হবে) তখন আমাদের সংখ্যাল্পতার কারণে? তিনি বললেন, তোমরা তো বরং সেদিন হবে অনেক। তবে কিনা তোমরা (হবে) ঢলে ভেসে আসা খড়কুটোর মত। আর অবশ্যই আল্লাহ্ তোমাদের অন্তরে ‘ওয়াহনপ্রক্ষেপণ করবেন। একজন জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্, ওয়াহ্ন কী? তিনি বললেন, দুনিয়ার মোহ এবং মৃত্যুর অনীহা।

 (আবু দাঊদ, কিতাবুল মালাহিম)

 

ফায়দা

দূর ভবিষ্যতের উম্মতের উদ্দেশ্যে যতগুলো ভয়ের হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তার মধ্যে এটি অন্যতম। বস্তুত উম্মাহর বর্তমান মর্মন্তুদ অবস্থা চিন্তা করলে পরিষ্কার বোঝা যায়, এ যুগের উম্মাহ্কে উদ্দেশ্য করেই যেন তা বলা হয়েছে। জনসংখ্যায় এবং দেশের সংখ্যায় আমরা বিশের একতৃতীয়াংশের কাছাকাছি। কিন্তু দুনিয়ার মোহ এমন যে কারুণকেও যেন ছাড়িয়ে যায়, এই মোহের কারণেই নিজেদের মধ্যে এত বিবাদ-বিরোধ, এত হানাহানি, খুনাখুনি। পক্ষান্তরে মৃত্যুর প্রতি অনীহা এমন যে, বিড়ালের ভয়েও যেন গর্তে লুকোতে চায়! অথচ আমাদের মহান আসলাফ, মৃত্যুকে ধাওয়া করে দুশমনের উপর ঝঁপিয়ে পড়তেন, সংখ্যায় শক্তিতে যারা হতো বহুগুণ। দুশমনের উদ্দেশ্যে তারা বলতে পেরেছেন, ‘যিন্দেগি তোমাদের কাছে যত প্রিয়, মউত আমাদের কাছে তার চেয়ে প্রিয়।

বস্তুত এই ওয়াহ্ন তথা দুনিয়ার মোহ ও মৃত্যুভয় থেকে মুক্ত হওয়ার সাধনাই আজ আমাদের করতে হবে যদি আমরা দুনিয়ার মাহফিলে ইয্যতের যিন্দেগি চাই এবং দুনিয়ার ইমামত ও কিয়াদাত আবার ফিরে পেতে চাই।

এখানে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ একটি শিক্ষা এই যে, দূর ভবিষ্যতের উম্মতের প্রতিও ছাহাবা কেরামের মায়া-মমতা ও একাত্মতা এমন ছিলো যে, তাদের দুর্দশাকে অবচেতনভাবেই যেন নিজেদের দুর্দশা ভেবেছেন। তাই ‘তাদের’না বলে বলেছেন, এমন হবে কি তখন ‘আমাদের সংখ্যাল্পতার কারণে?

রহমাতুল্-লিল আলামীন ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও ছাহাবা কেরামের একাত্মতার অনুভূতিকে অনুমোদন করে বলেছেন, ’তোমরা বরং সেদিন হবে অনেক।

তাহলে বিভিন্ন জনপদের মযলূম মুসলিমীনের প্রতি কেমন দরদ-ব্যথা হওয় উচিত আমাদের অন্তরে! অথচ...

 

তথ্যকণিকা

 

* ২৭৫ হিজরীর শাওয়াল মাসে তিনি ইনতিকাল করেন। তাঁকে দাফন করা হয় হযরত সুফয়ান ছাওরীর পাশে।

* ইমাম আবু দাঊদ একজন পুত্র সন্তান রেখে গিয়েছেন। তিনিও হাদীছ শাস্ত্রের শীর্ষস্থানীয় হাফিয ছিলেন। তিনি হলেন আবু বকর আব্দুল্লাহ্ ইবনে আবু দাঊদ। ২৩০ হিজরীতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন, আর মৃত্যুবরণ করেন ৩১৬ হিজরীতে। তাঁকে বলা হয় ইমাম ইবনুল ইমাম।

* ইমাম আবু দাঊদের হাদীছ সঙ্কলনটি হচ্ছে সুনানশ্রেণীর। মুহাদ্দিছীনের পরিভাষায় সুনান হচ্ছে এমন সঙ্কলন যাকে বিন্যস্ত করা হয়েছে ফিকহের বিভাগীয় ভিত্তিতে, যেমন তাহারাত, ছালাত, যাকাত প্রভৃতি। তবে শর্ত এই যে, তাতে যেন কোন মাওকূফ সনদ না থাকে। কেননা মাওকূফকে সুন্নাহ বলা হয় না, হাদীছ বলা হয়।

* সুনানে আবুদাঊদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ‘কালা আবু দাঊদ। তাতে তিনি বিভিন্ন জটিল বিষয়ের অবতারণা করেছেন।

* ইমাম আবু দাঊদ রহ.-এর জন্ম ২০২ হিজরীতে এবং মৃত্যু ২৭৫ হিজরীতে।

ইমাম আবুদাঊদের সময়কালটি হাদীছের ক্ষেত্রে ছিলো স্বর্ণযুগ। তিনি পেয়েছেন ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল, ইয়াহয়া ইবনে মাঈন, বুখারী, মুসলিম প্রমুখকে।

তাঁর পূর্ণ নাম, আবু দাঊদ সোলায়মান ইবনুল আশআছ, ইবনে ইসহাক, ইবনে বাশীর, ইবনে শাদ্দাদ, ইবনে আমর আলআযদী, সিজিস্তানী।

সিজিস্তান হচ্ছে কাবুলের নিকটবর্তী গ্রাম।

তিনি বছরায় বসবাস করেছেন। বছরা তখন ছিলো আলিম ও তালিবানে ইলমের কেন্দ্র। বাগদাদেও আগমন করেছেন একাধিকবার।

হাদীছ ও ফিকাহ উভয় শাস্ত্রে তিনি ছিলেন উচ্চস্তরের ব্যক্তিত্ব। এমনকি তাঁকে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলের সঙ্গে তুলনা করা হয়। যুহদ ও ধার্মিকতায়ও তাঁর স্থান ছিলো অত্যুচ্চে।

 

বিশ্বনবী সম্পর্কে

আল্লাহ্ তা’আলার বড় মেহেরবানি এই উম্মতের উপর যে, তাদের শ্রেষ্ঠ রাসূলের উম্মতরূপে নির্বাচন করেছেন, যিনি সাইয়েদু উল্দে আদম এবং সারা বিশের জন্য রহমত। উম্মতের ওলামাকে আম্বিয়া কেরামের ওয়ারিছ নির্বাচন করেছেন। আমাদের নবী হলেন, খুলুকে আযীমের অধিকারী। তাহলে উম্মত হিসাবে, আমাদের আখলাক কেমন হতে হবে! আর বর্তমানে আমাদের অবস্থা কী? আল্লাহ্র পেয়ারা নবী তো আখলাক দিয়েই দুশমনের দিল জয় করেছেন। আমাদের আখলাকের মধ্যেও যদি নববী আখলাকের সামান্য ছায়াপাতও ঘটে, দুনিয়ার সমস্ত জাতির দিল জয় করা আমাদের জন্য হবে খুবই সহজ, কিন্তু ...!

মন্তব্য করুন: