শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, চৈত্র ১৫ ১৪৩০, ১৯ রমজান ১৪৪৫

ইসলাম

রোজা ও রমজান: পর্ব-৩৬: রোজা সম্পর্কে ২২ টি জিজ্ঞাসার জবাব (১২-২২)

মুফতি মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন

 আপডেট: ১২:৪২, ২৩ এপ্রিল ২০২২

রোজা ও রমজান: পর্ব-৩৬: রোজা সম্পর্কে ২২ টি জিজ্ঞাসার জবাব (১২-২২)

১২ নং প্রশ্নঃ একাধিক বছরে স্বেচ্ছায় পানাহার করে সিয়াম ভেঙ্গে ফেললে কাফফারা হিসেবে কতটি সিয়াম পালন করতে হবে?
উত্তরঃ একাধিক বছরে সেচ্ছায় পানাহার করে একাধিক সিয়াম ভেঙ্গে ফেললে, একাধিক বছরের জন্য একটি কাফফারাই যথেষ্ট হবে। এর জন্য পৃথক পৃথক কাফফারা দিতে হবে না। তবে সকল সিয়ামের কাযা আদায় করতে হবে। (ফাতাওয়া শামী, ২/৪১৩; বাদায়েউস সানায়ে, ২/১০১; আহসানুল ফাতাওয়া, ৪/৪৩৪; সমকালীন জরুরী মাসায়েল, পৃ.-৮৫)
১৩ নং প্রশ্নঃ সিয়াম পালনরত অবস্থায় স্ত্রী মিলন করলে, কার উপর কাফফারা ওয়াজিব হবে? 
উত্তরঃ রমযান মাসে সুবহে সাদিকের পর থেকে সূর্য ডোবা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে সিয়ামের কথা স্মরণ থাকা সত্ত্বেও সিয়াম পালনরত অবস্থায় স্ত্রীর সঙ্গে মিলন করে এবং তাঁর স্ত্রীরও সিয়ামের কথা স্মরণ থাকে তাহলে উভয়ের সিয়াম ভেঙ্গে যাবে। তাদের উভয়ের উপর সিয়ামের কাযা এবং কাফফারা আদায় করা ওয়াজিব। আর যদি স্ত্রীকে বাধ্য করা হয় এবং তার সাথে জবরদস্তি এবং শক্তি প্রয়োগ করে এমন কাজ করা হয়, তাহলে স্ত্রীর উপর শুধু সিয়ামের কাযা আদায় করা ওয়াজিব হবে। কাফফারা ওয়াজিব হবে না। তবে স্বামীর উপর কাযা এবং কাফফারা উভয়টা ওয়াজিব হবে। (ফাতহুল কাদীর, ২/২৫৪; ফাতাওয়া দারুল উলূম, ৬/৪২৯; ফাতাওয়ায়ে রাহমানিয়া, ১/৪৪৯  
১৪ নং প্রশ্নঃ সিয়াম পালনরত অবস্থায় সিয়ামের কথা ভুলে গিয়ে স্ত্রী মিলন করলে সিয়ামের হুকুম কী?
উত্তরঃ সিয়াম পালনরত অবস্থায় সিয়ামের কথা ভুলে গিয়ে স্বামী-স্ত্রী পরস্পরে মিলন করলে সিয়ামের কোনো ক্ষতি হবে না। তবে মনে হওয়ার সাথে সাথে তা বন্ধ করতে হবে। নতুবা উভয়ের সিয়াম ভেঙ্গে যাবে। তখন কী করণীয়? তা জানার জন্য ১৩ নং প্রশ্নোত্তরে দেখুন।
প্রশ্নঃ সিয়ামরত অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে সিয়ামের কোনো ক্ষতি হবে কি?
উত্তরঃ সাহরী খাওয়ার পর ঘুমে অথবা দিনের বেলায় সিয়ামরত অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে সিয়ামের কোনো ক্ষতি হবে না। (ফাতাওয়া শামী, ৩/৩৯৬; ফাতাওয়ায়ে রাহমানিয়া, ১/৪৫৩  
১৫ নং প্রশ্নঃ সিয়াম পালনরত অবস্থায় সন্তানকে বুকের দুধ পান করালে সিয়ামের কোনো ক্ষতি হবে কি?
উত্তরঃ সিয়াম পালনরত অবস্থায় সন্তানকে বুকের দুধ পান করালে সিয়ামের কোনো ক্ষতি হবে না। কেননা শরীর থেকে কোন কিছু বের হলে সিয়াম ভঙ্গ হয় না। (ফাতাওয়া শামী, ৩/৩৭১; ফাতাওয়া দারুল উলূম, ৬/৪১০; ফাতাওয়ায়ে রাহমানিয়া, ১/৪৫৩
১৬ নং প্রশ্নঃ সিয়ামরত অবস্থায় টুথপেস্ট দিয়ে দাতব্রাশ করলে সিয়ামের কোনো ক্ষতি হবে কি?
উত্তরঃ সিয়ামরত অবস্থায় টুথপেস্ট, নিমের মাজন বা এই জাতীয় কোনো কিছু দিয়ে দাত মাজলে বা ব্রাশ করা নিষেধ। করলে মাকরুহ হবে।। (ফাতাওয়া শামী, ২/১০৬; ফাতাওয়া দারুল উলূম, ৬/৪০৮; আহসানুল ফাতাওয়া, ৪/৪২২; ফাতাওয়ায়ে রাহমানিয়া, ১/৪৫৩
১৭ নং প্রশ্নঃ সিয়ামরত অবস্থায় নিমের (কাচা বা শুকনা) ডাল দিয়ে মিসওয়াক করলে সিয়ামের কোনো ক্ষতি হবে কি?
উত্তরঃ সিয়ামরত অবস্থায় নিমের (কাচা বা শুকনা) ডাল দিয়ে মিসওয়াক করলেও সিয়ামের কোনো ক্ষতি হবে না। (ফাতাওয়া শামী, ২/১০৬; আহসানুল ফাতাওয়া, ৪/৪২২; ফাতাওয়ায়ে রাহমানিয়া, ১/৪৫৩
১৮ নং প্রশ্নঃ (ক) রমযান মাসে ইফতারের জন্য আযানের পর বিলম্ব করলে অসুবিধা আছে কি না? (খ) আযান চলাকালীন সময়ে ইফতার করা যাবে কি না?
উত্তরঃ (ক) ইফতারের নির্ধারিত সময় নিশ্চিত হওয়ার পর অকারণে বিলম্ব করা মাকরূহ। সাথে সাথে ইফতার করা সুন্নত। (খ) আযান চলাকালীন সময়ে ইফতার করা যাবে। এতে কোন দোষ নেই। (ফাতাওয়া রাহীমিয়া, ৩/১০৭; জাওয়াহিরুল ফাতাওয়া, ১/১১-১২
১৯ নং প্রশ্নঃ একজনের কাযা সিয়াম অন্যজনে আদায় করলে আদায় হবে কি না?
উত্তরঃ একজনের কাযা সিয়াম অন্যজনে আদায় করলে আদায় হবে না। (ফাতাওয়া শামী, ২/৪০২; ফাতাওয়া দারুল উলূম, ৬/৪২২; ফাতাওয়ায়ে রাহমানিয়া, ১/৪৫৩)
২০ নং প্রশ্নঃ (ক) ফিদিয়া কী? (খ) এর পরিমাণ কতটুকু? 
উত্তরঃ (ক) ফিদিয়া হচ্ছে, যদি সালাত ও সিয়াম (নামায-রোযা) আদায় না করা হয়ে থাকে এবং তা আর কাযা আদায় করা সম্ভবও না হয়, তাহলে এর পরিবর্তে যে ক্ষতিপূরণ দিতে হয়, তার নাম ফিদিয়া। সালাতের জন্য ফিদিয়া হচ্ছে, প্রতিদিন বিতর সালাতসহ মোট ছয় ওয়াক্ত হিসাব করতে হয়। যত ওয়াক্ত সালাত কাযা হবে এর জন্য একটি করে ফিদিয়া দিতে হবে। সুতরাং বিতির কাযা হয়ে থাকলে এর জন্যও ফিদিয়া দিতে হবে। আর প্রতি সিয়ামের জন্য একটি করে ফিদিয়া দিতে হবে। (খ) একটি ফিদিয়ার পরিমাণ হচ্ছে, ১৬৩৬ গ্রাম (১ কেজি ছয়শত ৩৬ গ্রাম) গম বা তার সমমূল্য। (ফাতাওয়া শামী, ২/৭২; সমকালীন জরুরী মাসায়েল, পৃ.-৬২; ফাতাওয়ায়ে রাহমানিয়া, ১/৪৪৯
২১ নং প্রশ্নঃ ফিদিয়া দেয়ার উত্তম খাত কোনটি?
উত্তরঃ ফিদিয়ার উত্তম খাত হচ্ছে গরীব এবং মিসকিন। সরাসরি এদেরকে মালিক বানিয়ে দেয়া আরো বেশি উত্তম। (ফাতাওয়া শামী, ২/৭২
২২ নং প্রশ্নঃ কাফফারা আদায় করার নিয়ম কী? 
উত্তরঃ কাফফারা আদায় করার নিয়ম এই যে, একটি গোলাম বা দাস মুক্ত করতে হবে। তবে বর্তমানে দাস সিস্টেম নেই। সুতরাং যার উপর কাফফারা ওয়াজিব সে একাধারে দুই মাস সিয়াম পালন করবে। এর মাঝে একটিও ছাড়তে পারবে না। কারো শারীরিক শক্তি না থাকার কারণে তাও যদি সম্ভব না হয়, তাহেলে সে ৬০ জন গরীব বা মিসকিনকে দু’বেলা খানা খাওয়াবে। অথবা একজনকে ৬০ দিন দু’বেলা খানা খাওয়াবে। অথবা খানার পরিবর্তে টাকা দিতে চাইলে, একজন মিসকিনকে একদিনের খানার টাকা বাবদ ১৬৩৬ গ্রাম (১ কেজি ছয়শত ৩৬ গ্রাম) গম বা তার সমমূল্য দিয়ে দিবে। এভাবে ৬০ দিনের হিসেব করে পরিশোধ করবে। (ফাতহুল কাদীর, ২/২৫৪; ফাতাওয়া দারুল উলূম, ৬/৪২৯; ফাতাওয়ায়ে রাহমানিয়া, ১/৪৪৯  
আমরা মাহে রমযান ও সিয়ামের তাৎপর্য শিরোনামে অনেক সুদীর্ঘ আলোচনা করেছি। অনেক কিছু জেনেছি। একথাও জেনেছি যে, সিয়াম পালন শুধু সওয়াবই নয় বরং সিয়াম আমাদের সুস্বাস্থ্য রক্ষায় জোড়ালো ভূমিকা রাখতেও সক্ষম। সিয়াম পালনে যেমনভাবে জান্নাতের পথ সুগম হয় ঠিক তেমনিভাবে সিয়াম পালনের দ্বারা পৃথিবীর পরিবেশ স্বচ্ছ ও সুন্দর হয়। এর দ্বারা শিক্ষা পাওয়া যায় নীতি-নৈতিকতার, উন্নত আদর্শের, ভ্রাত্বের বন্ধনে ধনী-গরীব পরস্পরকে মিলেমিশে চলতে। আরো শিক্ষা পাওয়া যায় মহান আল্লাহর বিধানকে বাস্তব জীবনে প্রয়োগের চরম প্রশিক্ষণ নেবার। সুতরাং আমরা সকল মুসলিম সিয়াম পালন করব স্বতঃস্ফূর্তভাবে। মহান আল্লাহ আমাদেরকে তাওফিক দান করুন। আমীন। 
মুফতি মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন
সাতাউক মধ্যগ্রাম, লাখাই, হবিগঞ্জ
আমলের কথা জানতে ইউটিউবে সার্চ করুন, 01712961470

মন্তব্য করুন: