শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, বৈশাখ ৫ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

রোজা ও রমজান: পর্ব-৩৫: রোজা সম্পর্কে ২২ টি জিজ্ঞাসার জবাব (০১-১১)

মুফতি মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন

 প্রকাশিত: ১২:৩৪, ২৩ এপ্রিল ২০২২

রোজা ও রমজান: পর্ব-৩৫: রোজা সম্পর্কে ২২ টি জিজ্ঞাসার জবাব (০১-১১)

০১ নং প্রশ্নঃ যে সব দেশে প্রায় ছয় মাস রাত এবং ছয় মাস দিন থাকে সেখানে সিয়াম পালনে ইসলামের বিধান কী? এমনিভাবে যেখানে ২৪ ঘন্টা বা তার চেয়ে বেশি সময় রাত বা দিন হয় সেখানে কিভাবে সিয়াম পালন করবে?
উত্তরঃ যে সব দেশে প্রায় ছয় মাস রাত এবং ছয় মাস দিন থাকে, কিংবা যেখানে ২৪ ঘন্টা বা তার চেয়ে বেশি সময় রাত বা দিন হয় সেখানেও নিঃসন্দেহে সিয়াম পালন করা ফরয। তবে সে সব দেশে সিয়াম পালনের ক্ষেত্রে পার্শবর্তী যেই দেশে স্বাভাবিক রাত-দিন হয় সেই দেশের সময় হিসাব করে সিয়াম পালন করবে। অবশ্য এটাও জায়েয আছে যে, নিজ এলাকার যেই মৌসুমে স্বাভাবিক রাত-দিন হয়, সেই মৌসুমের সময় হিসাব করে সিয়াম পালন করবে। (ফাতাওয়া শামী, ১/৩৬৫-৩৬৬; তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম, ৬/৩৮২, সমকালীন জরুরী মাসায়েল, পৃ.-৭৯)
০২ নং প্রশ্নঃ যে সব দেশে ২৪ ঘন্টার মধ্যে দিন-রাত হয়, তবে দিন এতো বড় হয় যে সিয়াম পালম করা প্রায় অসম্ভব। সে সব দেশে সিয়াম পালনের বিধান কী? 
উত্তরঃ সে সব দেশে ২৪ ঘন্টার ভেতরে দিন-রাত হলে, দিন যতই বড় হোক না কেন যেহেতু সেখানে শক্তিশালী লোকদের জন্য সিয়াম পালন করা অসম্ভব নয়, তাই সেখানেও সিয়াম পালন করতে হবে। হ্যাঁ, যদি কোন দুর্বল ব্যক্তির জন্য এতো লম্বা টাইম সিয়াম পালন করা অসম্ভব হয়, তাহলে ছোট দিনগুলোতে তার কাযা আদায় করে নিবে। উল্লেখ্য যে, আল্লামা ত্বকী উসমানী লিখেছেন, এ অবস্থায়ও সময় হিসাব করে সিয়াম পালন করবে। (ফাতাওয়া মাহমূদিয়া, ১৩/১২৯; আহসানুল ফাতাওয়া, ২/১১৩ সমকালীন জরুরী মাসায়েল, পৃ.-৭৯)
০৩ নং প্রশ্নঃ বার্ধক্যজনিত কারণে সিয়াম পালন করতে না পারলে কি করণীয়?
উত্তরঃ এমতাবস্থায় যদি ভবিষ্যতেও সিয়াম পালনের আশা না থাকে, তাহলে প্রতিটি সিয়ামের পরিবর্তে একটি ফিদিয়া দিবে। (সূরা বাকারা, আয়াত- ১৮৪; ফাতাওয়া শামী, ২/৪২৭; ফাতাওয়া রাহমানিয়া, ১/৪৬২
০৪ নং প্রশ্নঃ দেহের অভ্যন্তরীণ রোগ-ব্যাধি নির্ণয় করার জন্য এন্ডোসকপি করলে সিয়াম নষ্ট হবে কিনা?
উত্তরঃ গলা থেকে নিয়ে পেটের ভেতর পর্যন্ত পাইপ কিংবা মেশিনের যে অংশ প্রবেশ করানো হয় তাতে যদি অন্য কোন বস্তু যেমন তৈল অন্য কোনো বস্তু লাগানো না থাকে, তাহলে সিয়াম ভঙ্গ হবে না। পক্ষান্তরে, যদি তৈল বা অন্য বস্তু লাগানো থাকে তাহলে তা ভেতরে যাওয়ার সাথে সাথে সিয়াম ভেঙ্গে যাবে। (রদ্দুল মুহতার, ২/৩৯৭; সমকালীন জরুরী মাসায়েল, পৃ.-৮৩)
০৫ নং প্রশ্নঃ সিয়াম পালনরত অবস্থায় ইনহিলার গ্রহণ করা যাবে কিনা?  
উত্তরঃ কোন ব্যক্তি যদি হাঁপানী বা এজমা কিংবা অন্য কোনো কারণে ইনহিলার গ্রহণে বাধ্য হয়, তাহলে এর দু’টি পদ্ধতি আছে। প্রথমতঃ এই ধরনের রোগ থেকে জীবন বাঁচানোর জন্য ইনহিলার গ্রহণ করতে পারবে। এতে তার সিয়াম ভেঙ্গে যাবে। তবে পরে কাযা করবে। দ্বিতীয়তঃ আর যদি এই ধরনের রোগ থেকে সুস্থ হবার সম্ভাবনা না থাকে এবং পরে কাযা করারও সম্ভাবনা না হয় তাহলেও সে ইনহিলার গ্রহণ করতে পারবে। এতেও তার সিয়াম ভেঙ্গে যাবে। আর যেহেতু কাযা করারও সম্ভাবনা নেই এই জন্য সে ব্যক্তি প্রতিটি সিয়ামের জন্য একটি করে ফিদিয়া প্রদান করবে। (ফাতাওয়া শামী, ২/৩৯৫; ফাতাওয়া দারুল উলূম, ৬/৪১৮; ফাতাওয়ায়ে রাহমানিয়া, ১/৪৪৯ 
০৬ নং প্রশ্নঃ সিয়াম পালনরত অবস্থায় ইনজেকশন গ্রহণ করা যাবে কিনা? এবং কেন? সঠিক হুকুম জানতে চাই।
উত্তরঃ ইনজেকশনের মাধ্যমে ঔষধ শরীরে বা পেটের মধ্যে পৌছলেও সিয়াম ভঙ্গ হবে না। কারণ তা স্বাভাবিক রাস্তা দিয়ে পৌছে না। কিছু মানুষ মনে করে ‘ইনজেকশর দ্বারা ক্ষুধা দূর হয় এবং এর দ্বারা পানাহারের কাজ হয়, সুতরাং এর দ্বারা সিয়াম ভেঙ্গে যাবে।’ কিন্তু তাদের ধারণা সঠিক নয়। কেননা এমন যুক্তিতে যদি সিয়াম ভেঙ্গে যায় তাহলে ইয়ারকন্ডিশনে বসলে পেটের ক্ষুধা কিছুটা দূর হয় এবং ওযূ-গোসলের দ্বারা তৃষ্ণা নিবারণ হয় তাহলেও তো সিয়াম ভেঙ্গে যাওয়ার কথা। কিন্তু এতে তো সিয়াম ভাঙ্গে না। ঠিক তেমনিভাবে ইনজেকশনের দ্বারাও সিয়াম ভাঙ্গবে না। সিয়াম ভাঙ্গতে হলে অবশ্যই পেটে বা মস্তিষ্কের মধ্যে স্বাভাবিক রাস্তা (যেমন মুখ, নাক, কান, গলা এবং পেশাব-পায়খানার রাস্তা) দিয়ে কোনো কিছু প্রবেশ করলে বা করালে তার দ্বারা সিয়াম ভেঙ্গে যাবে। (বাদায়েউস সানায়ে, ২/৯৩; আহসানুল ফাতাওয়া, ৪/৪২২; ফাতাওয়ায়ে রাহমানিয়া, ১/৪৫১-৪৫২  
০৭ নং প্রশ্নঃ রমযান মাসে পূর্ণ ৩০ টি সিয়াম পালনের জন্য মহিলারা ঔষধ সেবন করে হায়েয (মাসিক ঋতুস্রাব) বন্ধ রাখতে পারবে কি না?
উত্তরঃ নিয়মিত হায়েয (মাসিক ঋতুস্রাব) হওয়া শরীরের জন্য উপকারী। অনিয়মিত হওয়া ক্ষতিকর। সুতরাং ঔষধ সেবন করে তা বন্ধ রাখা অনুচিত। এতদসত্ত্বেও যদি কোন মহিলা ঔষধ সেবন করে মাসিক বন্ধ রেখে সিয়াম পালন করে তাহলে তার সিয়াম আদায় হবে। তবে স্বাভাবিক নিয়মের বিপরীত করার দরুন কাজটি ঠিক হবে না। (ফাতাওয়া রাহীমিয়া, ৬/৪০৪; ফাতাওয়ায়ে রাহমানিয়া, ১/৪৬৬ 
০৮ নং প্রশ্নঃ লবণ, সুপারী, মরিচ এবং এ জাতীয় অনাহার্য বস্তু ইচ্ছা করে খেলে সিয়ামের হুকুম কি?
উত্তরঃ শুধু একটু লবণ, শুধু একটু সুপারী অথবা শুধু একটু মরিচ খাওয়ার দ্বারা সিয়ামের কাযা আদায় করা ওয়াজিব হবে। তবে কাফফারা ওয়াজিব হবে না। অবশ্য এমনভাবে খাওয়ার অভ্যাস যার থাকবে সে যদি খায়, তাহলে তার উপর কাযা এবং কাফফারা উভয়টি ওয়াজিব হবে। (ফাতহুল কাদীর, ২/২৬০; আদ-দুররুল মুখতার, ২/৪৫৩; সমকালীন জরুরী মাসায়েল, পৃ.-৮০)

মন্তব্য করুন: