শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, চৈত্র ১৫ ১৪৩০, ১৯ রমজান ১৪৪৫

ইসলাম

কাদিয়ানী ধর্ম থেকে ইসলাম গ্রহণের ঈমানদীপ্ত বিবরণ: ‘কাদিয়ানী ধর্ম’ নামে উপস্থাপন হলে এ মিথ্যা ধর্ম কবেই খতম হয়ে যেত!

রানা মুহাম্মাদ রফিক খান

 আপডেট: ১৯:১২, ৯ জানুয়ারি ২০২২

কাদিয়ানী ধর্ম থেকে ইসলাম গ্রহণের ঈমানদীপ্ত বিবরণ: ‘কাদিয়ানী ধর্ম’ নামে উপস্থাপন হলে এ মিথ্যা ধর্ম কবেই খতম হয়ে যেত!

[৪ঠা জুন ২০০৪ তারিখে পাকিস্তানের ফয়সালাবাদ রেলওয়ে কলোনি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে জুমার নামাযে উপস্থিত মুসল্লিদের মজমায় খ্যাতিমান আলেমে দ্বীন, জনাব মাওলানা তারেক মাহমুদ-এর হাতে ইসলাম গ্রহণ করেন কাদিয়ানী ধর্মমত থেকে তওবাকারী রানা মুহাম্মাদ রফিক খান। তার ইসলাম গ্রহণের বৃত্তান্ত ও কাদিয়ানী ধর্মমতের বিভিন্ন দিক সম্পর্কিত এ মূল্যবান সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন জনাব নাসির আহমদ আযাদ। বাংলা ভাষাভাষী মুসলমান এবং বিশেষকরে কাদিয়ানী ফেতনায় আক্রান্ত ভাইদের প্রতি কল্যাণকামিতা থেকে সাক্ষাৎকারটির বাংলা অনুবাদ কিছু প্রয়োজনীয় টীকাসহ এখানে পত্রস্থ করা হল। -অনুবাদক]

 

প্রশ্ন: রানা সাহেব, আপনার পারিবারিক পরিচয় দিন। কীভাবে আপনি কাদিয়ানী ধর্মের প্রতারণার শিকার হলেন?

উত্তর: আমি রাজপুত বংশের সন্তান। ভারত বিভাগের পূর্বে আমার পূর্বপুরুষগণ জালন্ধর জেলার নওয়া শহর থানা এবং কারয়াল অঞ্চলের বাসিন্দা ছিলেন। আমরা জমিদার ছিলাম। আমাদের বংশের দু-তিন জন ব্যক্তি লোকমুখে মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর খ্যাতি শুনে কাদিয়ানে চলে যায়। আল্লাহ জানেন, কেন তারা কাদিয়ানী হয়েছিল। তাদের দেখাদেখি পরিবারের অন্যান্যরাও কাদিয়ানী হয়ে যায়। এখন আমার পুরো পরিবার এবং শ্বশুরালয়ের লোকজন সবাই কাদিয়ানী।

প্রশ্ন: বর্তমানে আপনি কোথায় বসবাস করছেন?

উত্তর: আমার আবাসস্থল বর্তমানে ফয়সালাবাদে। আমি ওয়াসা বিভাগে চাকরি করি।

প্রশ্ন: আপনি কি কাদিয়ানী ধর্মবিশ্বাস এবং মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর দাবি-দাওয়া সম্পর্কে পুরোপুরি অবগত ছিলেন?

উত্তর: মুসলমানের ঘরে জন্মগ্রহণকারী সন্তান যেমন তার ধর্মকে সত্য মনে করে, আমিও তেমনি কাদিয়ানী ধর্মমতকে স্বাভাবিকভাবে সত্যই মনে করতাম। কারণ, আমি ছিলাম জন্মসূত্রে কাদিয়ানী। তবে কাদিয়ানী ধর্মমত সম্পর্কে আমার বিশেষ কোনো পড়াশোনা ছিল না।

প্রশ্ন: তাহলে এ পরিবর্তন কীভাবে হল? আপনি কী কারণে কাদিয়ানী মতবাদের প্রতি বিরূপ হলেন? এবং শেষ পর্যন্ত এ ধর্মমত থেকে তওবা করলেন?

উত্তর: আমি এইমাত্র আরয করেছি যে, কাদিয়ানী ধর্মমত সম্পর্কে আমার বিস্তর পড়াশোনা ছিল না। ব্যস, জুমার নামায পড়তাম আর কাদিয়ানী জামাতের জলসাগুলোতে শরীক হতাম। স্বাভাবিকভাবেই সেখানে তারা শালীন আচরণ এবং সংযত বক্তব্য দিত। কারো বিরুদ্ধে কটুবাক্য ব্যবহার করত না। কারো আক্রমণাত্মক সমালোচনা করত না। ইসলাহী ও তাবলীগী আচরণ এবং উত্তম চরিত্রের পরিচয় দিত। যার ফলে কাদিয়ানী ধর্মমতের ভেতরকার অবস্থার প্রতি উঁকি মেরে দেখার উপলক্ষই আসেনি কখনো।

একবার আমার এক বন্ধু মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর লিখিত একটি বই আমাকে পড়তে দেয়। সেখানে তার এক মারাত্মক দাবি দেখার পর আমার মনে ধাক্কা লাগে। কারণ, মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী, যাকে আমরা ‘হযরত ছাহেব’ নামে স্মরণ করতাম, আমাদের অন্তরে তার জন্য একটি পবিত্রতার আসন ছিল। যখন তার আরো দাবি-দাওয়া সম্পর্কে অবগত হই, শরীরে কাঁপুনি এসে যায়। তারপর যখন নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে তার দাবিগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত চিন্তা-ভাবনা করি, তখন মির্যা সাহেবের ব্যক্তিত্বের প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধার কাঁচের ঘর ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যায়।

প্রশ্ন: মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর সেই দাবি কোনটি, যার কারণে আপনি তার প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়েছেন?

উত্তর: একবার আমার এক কনস্টেবল বন্ধু আমাকে বলল যে, আপনাদের মির্যা সাহেবের ওপর ওহী নিয়ে আগমনকারী এক ফেরেশতার নাম ছিল ‘টিচি-টিচি’। সে মির্যা সাহেবের নিকট বেশি আসা-যাওয়া করত। যেহেতু বিষয়টি আমার কাছে সম্পূর্ণ নতুন ছিল, তাই সঙ্গে সঙ্গে আমি অস্বীকার করে বললাম যে, এটা বানোয়াট মিথ্যা কথা। কেননা, আমাদের মির্যা সাহেব শিক্ষিত মানুষ ছিলেন। এমন বাজে কথা কোনো ফালতু লোকই বলতে পারে।

এই উত্তরে আমার বন্ধু চ্যালেঞ্জ করে বসল। আমি তথ্য-প্রমাণ দাবি করলাম। তখন অন্য একজন অফিসার সালামত খান সাহেব মির্যা কাদিয়ানী রচিত ‘হাকীকাতুল ওহী’ পুস্তিকাটি নিয়ে আসলেন। যার মধ্যে ‘টিচি টিচি’র কথা লেখা ছিল।১  এতে আমি অত্যন্ত লজ্জিত হলাম। অল্পদিনের মধ্যেই আমি হাকীকাতুল ওহীতে মির্যা সাহেবের দাবি-

اللہ تعالی نے مجھے تمام انبیاء کا مظہر ٹھہرایا ہے۔

‘আল্লাহ তাআলা আমাকে সকল নবীর প্রতিরূপ-প্রতিচ্ছবি বানিয়েছেন।’       

এবং-

میں آدم ہوں، میں شیث ہوں، میں نوح ہوں، میں ابراھیم ہوں، میں اسحاق ہوں، میں اسماعیل ہوں، میں یوسف ہوں، میں موسی ہوں، میں داؤد ہوں، میں محمد اور احمد ہوں۔

‘আমি আদম। আমি শীছ। আমি নূহ। আমি ইবরাহীম। আমি ইসহাক। আমি ইসমাঈল। আমি ইউসুফ। আমি মূসা। আমি দাঊদ। আমি মুহাম্মদ এবং আহমদ।’২ 

এসব পড়ে আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম এবং চিন্তা করলাম যে, তাহলে আল্লাহ তাআলার এত নবী পাঠানোর কী প্রয়োজন ছিল? এক মির্যা সাহেব-ই তো যথেষ্ট ছিলেন! এরপর মির্যা সাহেবের অন্যান্য দাবি পড়তে থাকলে আসল বিষয় আমার নিকট স্পষ্ট হতে থাকে।

কুরআন মাজীদের কতিপয় আয়াত মির্যা সাহেব নিজের ওপর প্রয়োগ করেছেন-

وَ مَا رَمَیْتَ اِذْ رَمَیْتَ وَ لٰكِنَّ اللهَ رَمٰی.

-এ আয়াত হুযূর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর নাযিল হয়েছে। যার অর্থ : ‘আর (হে আমার হাবীব!) আপনি যখন শত্রুকে পাথর নিক্ষেপ করছিলেন, তখন তা আপনি নিক্ষেপ করেননি; বরং আল্লাহই নিক্ষেপ করেছিলেন।’ -সূরা আনফাল (৮) : ১৭

কিন্তু মির্যা সাহেব দাবি করেছেন, এ আয়াত নাকি তার উপর নাযিল হয়েছে।

আমি মনে করেছি, মির্যা সাহেব কোনো যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন হয়ত।৩  জিহাদকে তো এমনিতেই তিনি হারাম করে রেখেছিলেন। এ ধরনের উদ্ধৃতি আমার চোখ খুলে দেয়।

মির্যা সাহেব লিখিত ‘এক গলতী কা ইযালা’ নামে একটি ছোট্ট পুস্তিকা পড়েছি। যার ৩ নং পৃষ্ঠায় তিনি লিখেছেন-                                                                          

مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ،  وَ الَّذِیْنَ مَعَهٗۤ اَشِدَّآءُ عَلَی الْكُفَّارِ رُحَمَآءُ بَیْنَهُمْ – اس وحئ الہی میں میرا نام محمد رکھاگیا اور رسول بھی۔

অর্থ : ‘ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ،  وَ الَّذِیْنَ مَعَهٗۤ اَشِدَّآءُ عَلَی الْكُفَّارِ رُحَمَآءُ بَیْنَهُمْ -এ ঐশী বাণীতে আমার নাম মুহাম্মাদ রাখা হয়েছে এবং রসূলও।’৪

মির্যা সাহেব রচিত ‘নুযূূলুল মাসীহ’ কিতাব পড়ার পর আমার আর অতিরিক্ত ব্যাখ্যা খোঁজা বা অধিক চিন্তা-ভাবনা করার প্রয়োজনই বাকি থাকেনি। কারণ তিনি তো আল্লাহর নবী ও রাসূল হওয়ার দাবি করেছেন এবং নিজ ওহীর ব্যাপারে বলেছেন যে, এটা ঐরূপ পবিত্র ওহী, যেরূপ অন্যান্য নবীগণের উপর নাযিল হয়েছে।৫  মির্যা সাহেব কুরআন মাজীদকে নিজের মুখের কথা সাব্যস্ত করেছেন।৬  মির্যা সাহেবের এ কথা কতটা ফালতু যে, কুরআন মাজীদে কাদিয়ানের নাম উল্লেখ আছে।৭ 

এসকল উদ্ধৃতি পড়ে আমার অন্তর জেগে ওঠে। আমি কারো দাওয়াতে বা অনুপ্রেরণায় ইসলাম কবুল করিনি। বরং আল্লাহর ফযল ও করমে অন্তরের তাগিদ এবং বিবেকের তাড়না আমাকে ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করেছে।

প্রশ্ন: কাদিয়ানিয়াত ছেড়ে ইসলামগ্রহণ করার পর এখন আপনার কী অনুভূতি?

উত্তর: আমি বিগত প্রায় দশ মাস যাবৎ নিজেই কাদিয়ানী ধর্মমত সম্পর্কে চিন্তা-গবেষণা করেছি। এখন আমি নিজেকে সত্যিকার মুসলমান মনে করি। যেদিন আমি ইসলাম গ্রহণ করি, সেদিন থেকে নিজেকে হালকা বোধ করছি। বিশ্বাস করুন, আগে অন্তর ভারাক্রান্ত ছিল। এখন আত্মিক প্রশান্তি ও পরিতৃপ্তি অনুভব করছি। দুআ করুন, আল্লাহ যেন আমাকে ইসলামের ওপর অবিচল রাখেন- আমীন।

প্রশ্ন: রানা সাহেব, মির্যা কাদিয়ানীর মিথ্যা দাবি আপনাকে বিচলিত করেছে; ফলশ্রুতিতে আপনি সত্য দ্বীন গ্রহণ করেছেন। অন্যান্য কাদিয়ানীদের কেন এরূপ চিন্তা জাগে না?

উত্তর: আসলে জন্মসূত্রে প্রাপ্ত ধর্ম নিয়ে মানুষ খুব কমই চিন্তা-ভাবনা করে। যে পরিবারে তার জন্ম, তার ধর্মকেই সে গ্রহণ করে, অবলম্বন করে এবং সত্য বলে বিশ্বাস করে। তাছাড়া এখন হচ্ছে যান্ত্রিক যুগ। মানুষের নিকট এত সময় নেই যে, সে নিজ ধর্ম নিয়ে গবেষণা করবে। ধর্মীয় গ্রন্থ খুব কম মানুষ পড়ে।

একই কারণে নতুন প্রজন্মও নামে মাত্র কাদিয়ানী। যদি ধরেও নেই যে, তারা নিজ ধর্ম নিয়ে চিন্তা করে, তবুও যে পরিমাণ সুযোগ-সুবিধা তারা পেয়ে থাকে এবং (পাকিস্তানের) সংখ্যালঘুরূপে তারা এতটাই সুসংগঠিত যে, কোনো কাদিয়ানীর কোনো কাজ থেমে থাকে না। (বাংলাদেশেও এদের অবস্থা কমবেশি একই রকম।) অথচ মুসলমানদের ভোগান্তির শেষ নেই।

প্রশ্ন: কাদিয়ানীদের নতুন প্রজন্ম সম্পর্কে আপনার কী অভিমত?

উত্তর: নতুন প্রজন্ম এসব বিষয়ে মাথা ঘামায় না। তারা ভালো চাকরি, মানসম্মত ক্যারিয়ার, উন্নত জীবনযাত্রা, পার্থিব ভোগ-বিলাস এবং হৈ চৈ-ফূর্তির অভিলাষী। একারণেই কাদিয়ানীদের নতুন প্রজন্ম ইউরোপ, আমেরিকা, পশ্চিম জার্মানী প্রভৃতি উন্নত রাষ্ট্র অভিমুখে ছুটে বেড়ায়। কিন্তু যদি নতুন প্রজন্মকে কাদিয়ানী ধর্মবিশ্বাস এবং বিশেষ করে মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর ভন্ডামি সম্পর্কে অবহিত করা যায় এবং তারা আন্তরিকভাবে বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করে, তবে তাদেরকে ইসলামের ছায়াতলে নিয়ে আসা সম্ভব।

প্রশ্ন: রানা সাহেব, কাদিয়ানী জামাত মানুষের মাঝে এ প্রোপাগান্ডা খুব ছড়ায় যে, দিনদিন আমাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষ কাদিয়ানী মতবাদে দীক্ষিত হচ্ছে। বিষয়টি একটু খুলে বলবেন?

উত্তর: একথা সম্পূর্ণ মিথ্যা। কাদিয়ানী জামাত যেভাবে দাবি করে, সেই হিসাব করলে তো এতদিনে কাদিয়ানীদের সংখ্যা অর্ধ পৃথিবী হয়ে যেত। এটা শুধুই প্রচারসর্বস্ব কথা। বাস্তবতার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।

প্রশ্ন: রানা সাহেব, আপনি তো অবশ্যই কাদিয়ানী জামাতের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম ভালোভাবে লক্ষ্য করেছেন। এ ব্যাপারে আপনার অভিমত কী? 

উত্তর: ‘রয়্যাল ফ্যামিলি’র (কাদিয়ানী পরিবারের) হাতে ক্ষমতা। কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারে না। তারা যা ইচ্ছা করে। কোনো জবাবদিহিতা নেই। জামাতের সাংগঠনিক অবস্থা স্বৈরতান্ত্রিক এবং দমনমূলক। জামাতের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুললে দমন-নিপীড়নের শিকার হতে হয়। এককথায় কাদিয়ানী জামাতের কার্যক্রম হল, চাঁদা আদায় করা আর মুসলমানদেরকে গোমরাহ করা। প্রত্যেক কাদিয়ানী নিজ উপার্জনের দশ শতাংশ জামাতকে চাঁদাস্বরূপ দিতে বাধ্য। এ কারণেই রয়্যাল ফ্যামিলি (রাজ পরিবার) বিলাসিতাপূর্ণ জীবনযাপন করে।

প্রশ্ন: আপনি কি আমাদের জানাবেন, কাদিয়ানীরা মুসলমানদেরকে বিভ্রান্ত করতে কী কী ধরনের কৌশল প্রয়োগ করে?

উত্তর: প্রথম পর্যায়ে তারা টার্গেট করে যে, মুসলমানদের কাকে কাকে ফাঁদে ফেলা যায়। এরপর ধীরে ধীরে তার সাথে সম্পর্ক ও বন্ধুত্ব মজবুত করে। সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও সৌজন্যের পরিচয় দেয়। অবস্থা বুঝে পারিবারিক সুসম্পর্কও কায়েম করে। বিভিন্ন উপলক্ষ্যে দাওয়াত-নিমন্ত্রণ করে। চেষ্টা করে, শিকারকে (পাঞ্জাবের) চনাবনগর মারকাযে নিয়ে আসতে। সেখানে বিনোদনমূলক বিভিন্ন প্রোগ্রামের সঙ্গে প্রীতিভোজের আয়োজন করা হয়।

তারপর তারা তাদের দাওয়াত দিতে শুরু করে এবং বিভিন্ন টোপ ফেলে তাকে বলে যে, আপনি আমাদের বাইআত ফরম পূরণ করে ফেলুন। জামাত আপনার সার্বিক সহায়তা করবে। পরিবারে কোনো বেকার যুবক থাকলে ভালো চাকরি অথবা বিদেশ পাঠানোর প্রলোভন দেয়। এভাবে বিভিন্ন ছল-চাতুরি আর নানা প্রলোভন-প্ররোচনার মাধ্যমে তারা মুসলমানদেরকে পথভ্রষ্ট করার অপচেষ্টা করে।

প্রশ্ন: রানা সাহেব, পথহারা কাদিয়ানীদেরকে কীভাবে ইসলামের পথে ফিরিয়ে আনা যেতে পারে- এ সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন!

উত্তর: এতে সন্দেহ নেই যে, কাদিয়ানী জামাতের হাতে অনেক উপায়-উপকরণ। অঢেল ধন-সম্পদ। কিন্তু ধর্মের প্রসার তো হয় ইখলাস-নিষ্ঠা এবং উত্তম চরিত্রের গুণে। বেদনার বিষয় হল, কাদিয়ানী ধর্মকে ইসলামের নাম দিয়ে প্রচার করা হয়। যদি এ ধর্মকে ‘কাদিয়ানী ধর্ম’ শিরোনামে উপস্থাপন করা হত, তাহলে এ মিথ্যা ধর্ম কবেই খতম হয়ে যেত!

এখন প্রয়োজন, প্রত্যেক মুসলমানের খতমে নবুওতের মুবাল্লিগ হওয়া। নিজ নিজ অফিসে, কার্যালয়ে, নিজেদের এলাকা ও মহল্লায়- যেখানেই কাদিয়ানী আছে, মুসলমানরা তাদের নিকট যাওয়া। মির্যা কাদিয়ানীর কিতাবাদি খুলে উদ্ধৃতিগুলো দেখানো। ইসলামের বিরুদ্ধে, আম্বিয়ায়ে কেরামের বিরুদ্ধে, সাহাবায়ে কেরাম ও নবী পরিবারের বিরুদ্ধে তার বিষোদ্গার এবং মিথ্যা দাবিসমূহ মানুষের সামনে তুলে ধরা। অনেক মেহনতের প্রয়োজন। আশা করি, সাধনা ও ইখলাসের সাথে মেহনত অবশ্যই সুফল বয়ে আনবে।

প্রশ্ন: যেহেতু আপনি কারো তাবলীগে মুসলমান হননি, তাহলে আপনি ইসলাম গ্রহণ করার জন্য এ মারকায এবং বিশেষভাবে মাওলানা তারেক মাহমুদ সাহেবকে কেন নির্বাচন করলেন?

উত্তর: মাওলানা তাজ মাহমুদ মরহুমের নাম-ডাক অনেক শুনেছি। কাদিয়ানীরা তো বলত, এ মওলবী আমাদের জন্য মারাত্মক বিপজ্জনক। ব্যাপার হচ্ছে, আমি অন্তর থেকে যখন মুসলমান হওয়ার সিদ্ধান্ত নেই, তখন ঘটনাচক্রে আমার এক বন্ধু খালেক ডোগর সাহেব জুমা পড়তে আমাকে এখানে নিয়ে আসেন। সাহেবযাদা তারেক মাহমুদ সাহেব সীরাতুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিষয়ে বয়ান করেছিলেন, যা আমাকে অত্যন্ত প্রভাবিত করে। তখনই মনে মনে স্থির করি যে, এ মর্দে মুজাহিদের হাতেই ইসলাম কবুল করব।

সেই মোতাবেক পরবর্তী জুমায় আল্লাহ তাআলা আমাকে এ সৌভাগ্য নসীব করেন যে, কাদিয়ানী কেল্লার ভিতে কম্পন সৃষ্টিকারী মুজাহিদে খতমে নবুওত মাওলানা তাজ মাহমুদ রহ.-এর উত্তরসূরী সাহেবযাদা তারেক মাহমুদ সাহেবের হাতে ইসলাম গ্রহণ করেছি। আমি শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি মাওলানার এবং মুসল্লি ভাইদের, যারা আমার প্রতি এরূপ অপরিসীম ভালোবাসা ও আন্তরিকতার পরিচয় দিয়েছেন এবং যে বিপুল সম্মান ও সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে- আমি সারা জীবন ভুলতে পারব না।

* আপনাকে অনেক শুকরিয়া, আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে আমাদেরকে কাদিয়ানী ফেতনা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদানের জন্য।

* * আপনাকেও অজস্র শুকরিয়া!                               

[ভাষান্তর ও টীকা সংযোজন : মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম]

 

১. দেখুন- হাকীকাতুল ওহী, রূহানী খাযায়েন ২২/৩৪৬.

২. হাকীকাতুল ওহী, রূহানী খাযায়েন ২২/৭৬; তিরয়াকুল কুলুব, রূহানী খাযায়েন ১৫/১৩৪.

৩. এ উদ্ধৃতির জন্য দেখুন মির্যা কাদিয়ানীর গ্রন্থ- তাযকিরাহ [৪র্থ সংস্করণ] পৃ. ৩৫; যমীমায়ে হাকীকাতুল ওহী, রূহানী খাযায়েন ২২/৭০৫; নুসরাতুল হক, রূহানী খাযায়েন ২১/৬৬; ই‘জাযুল মাসীহ, রূহানী খাযায়েন ১৮/২৯.

৪. এক গলতী কা ইযালা পৃ. ৩, রূহানী খাযায়েন ১৮/২০৮; (একটি ভুল সংশোধন পৃ. ৪; -পুস্তিকাটি ঢাকার বকশী বাজারস্থ এদেশীয় কাদিয়ানীদের মূলকেন্দ্র থেকে প্রকাশিত হয়েছে।)

৫. নুযূলুল মাসীহ, রূহানী খাযায়েন ১৮/৪৭৭; হাকীকাতুল ওহী ২২/১৫৪; এক গলতি কা ইযালা, রূহানী খাযায়েন ১৮/২১০.

৬. তাযকিরাহ, [৪র্থ সংস্করণ] পৃ. ৭৭.

৭. ইযালায়ে আওহাম, রূহানী খাযায়েন ৩/১৪০, ১৪১. (উল্লেখ্য, কাদিয়ানীর আরেক উদ্ভট দাবি হল, কুরআন মাজীদে নাকি  إنا أنزلناه قريبا من القاديان - আমি তাকে কাদিয়ানের নিকট পাঠিয়েছি।- বাক্যটি উল্লেখ আছে! ইযালায়ে আওহামের একই পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য।)

মন্তব্য করুন: