যুক্তরাজ্যে ট্রেনে ছুরিকাঘাত, হাসপাতালে ১০ জন
যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজশায়ারের হান্টিংডন স্টেশনের অদূরে একটি ট্রেনে ছুরি হামলার শিকার হয়েছেন এক ডজন যাত্রী; এ ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে দুজনকে।
জরুরির সেবা ৯৯৯ এ ফোন পাওয়ার পর স্থানীয় সময় রাত ৯টা ১৯ মিনিটে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ঘটনাটি ঘটেছে ডনকাস্টার থেকে কিংস ক্রসগামী সন্ধ্যা ৬টা ২৫ মিনিটের ট্রেনে। তবে কোনো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।
কেমব্রিজশায়ার লন্ডনের প্রায় ৮০ কিলোমিটার উত্তরে। ইংল্যান্ডের পূর্বাঞ্চলে ক্যামব্রিজ ও পিটারবোরোর মতো এলাকাও এর অন্তর্ভুক্ত।
ব্রিটিশ ট্রান্সপোর্ট পুলিশ জানিয়েছে, কেমব্রিজশায়ারের ট্রেনে ছুরিকাঘাতের ঘটনায় ১০ জনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে; তাদের মধ্যে ৯ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
পুলিশ বলছে, এ ঘটনার তদন্তে সহায়তা করবে সন্ত্রাসবিরোধী ইউনিট।
প্রত্যক্ষদর্শী রেন চেম্বার্স নামের এক ব্যক্তি বলেন, রক্তাক্ত হাতে এক ব্যক্তি কামরার ভেতর দৌড়ে এসে চিৎকার করে বলেন–“তাদের কাছে ছুরি আছে, দৌড়াও।”
রেন ও তার বন্ধু তখন ট্রেনের সামনের দিকে দৌড়ে যান এবং এক ব্যক্তিকে মেঝেতে লুটিয়ে পড়তে দেখেন।
রেন বলেন, তিনি আতঙ্ক অনুভব করছিলেন। তবে তিনি ও তার বন্ধু অক্ষত অবস্থায় ট্রেন থেকে নামতে সক্ষম হন।
টেনটি রাত ৮টার দিকে হান্টিংডন স্টেশনে আসে।
লন্ডন আন্ডারগ্রাউন্ডের কর্মী ডিন ম্যাকফারলেন বলেন, তিনি ট্রেনটি আসতে দেখেন এবং এক যাত্রীকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পান।
“ট্রেন থামার পর একাধিক ব্যক্তি প্ল্যাটফর্মে রক্তাক্ত অবস্থায় দৌড়াতে শুরু করে, একজনের সাদা শার্ট ‘পুরোটাই রক্তে ভেজা’ ছিল।”
ম্যাকফারলেন বলেন, তিনি লোকজনকে স্টেশন থেকে বের হতে বলেন এবং যারা খুব আতঙ্কবোধ করছিলেন, তাদের সহায়তা করেন।
ট্রেন পরিচালনাকারী এলএনইআর যাত্রীদের আপাতত ট্রেনে না চড়ার আহ্বান জানিয়েছে।
এক এক্স পোস্টে এলএনইআর বলেছে, “হান্টিংডন স্টেশনে একটি ঘটনা মোকাবিলা করছে জরুরি সেবাগুলো; বন্ধ রয়েছে সব লাইন। আমাদের পরামর্শ হল ‘ভ্রমণ করবেন না’। যেখানে সম্ভব, আপনার যাত্রা স্থগিত করুন।”
ইস্ট অব ইংল্যান্ড অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের মুখপাত্র বলেন, “আমরা ৭টা ৩৯ মিনিটে একটি কল পাই যে, ট্রেনে একাধিক ব্যক্তিকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে।
“আমরা হান্টিংডন রেলস্টেশনে বড় পরিসরের সাড়াদানকারী দল পাঠাই, যার মধ্যে ছিল বহু অ্যাম্বুলেন্স, ট্যাকটিকাল কমান্ডার, হ্যাজার্ডাস এরিয়া রেসপন্স টিম এবং ক্রিটিক্যাল কেয়ার টিম — এর মধ্যে ইস্ট অ্যাংলিয়ান এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ও এসেক্স ও হার্টস এয়ার অ্যাম্বুলেন্সও ছিল।
“একাধিক রোগীকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী আপডেট ব্রিটিশ ট্রান্সপোর্ট পুলিশ দেবে।”
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাবানা মাহমুদ এক্স পোস্টে বলেন, এ ঘটনায় তিনি ‘গভীরভাবে মর্মাহত’।
“আক্রান্ত সবার প্রতি সহানুভূতি জানাচ্ছি। দুজন সন্দেহভাজনকে সঙ্গে সঙ্গে গ্রেপ্তার করে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। আমি তদন্তের নিয়মিত আপডেট পাচ্ছি। তাৎক্ষণিকভাবে কেউ যেন মন্তব্য বা অনুমান করা থেকে বিরত থাকেন, সেই অনুরোধ জানাচ্ছি।”
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১১ সাল থেকে যুক্তরাজ্যে ছুরিকাঘাতের অপরাধ ‘ক্রমাগত’ বাড়ছে।
বিবিসি লিখেছে, এই সমস্যা এতটাই প্রকট হয়ে দাঁড়িয়েছে যে স্যার কিয়ার স্টারমার একে ‘জাতীয় সংকট’ বলে বর্ণনা করেছেন।
গত এক বছরে সরকারি অভিযানে ৬০ সহস্রাধিক ছুরি বাজেয়াপ্ত বা জমা নেওয়া হয়েছে।
জনসম্মুখে ছুরি বহনের অপরাধে সর্বোচ্চ চার বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।
সবশেষ হান্টিংডন ট্রেনের ছুরিকাঘাত এবং গত মাসে ম্যানচেস্টারের সিনাগগে দুইজন নিহত হওয়ার ঘটনা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে বড় শিরোনাম হয়েছে।