শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, বৈশাখ ৬ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

রোজা ও রমজান: পর্ব -০৩ বিষয়: মাহে রমযানের ঐতিহাসিক কর্মসূচী

মুফতি মুহাম্মদ নাসিরুদ্দীন

 আপডেট: ২৩:০৭, ২৪ মার্চ ২০২৩

রোজা ও রমজান: পর্ব -০৩ বিষয়: মাহে রমযানের ঐতিহাসিক কর্মসূচী

মাহে রমযানের আগমনের পূর্বেই মুমিন আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে উঠেন। অধির আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকেন কখন চাঁদ দেখা যাবে। তারাবীহ কোনদিন শুরু হবে। ছোট-বড় সবার মনে খুশির আমেজ বইতে থাকে। আল্লাহ প্রেমিকগণ রজব এবং শাবান মাস থেকেই প্রস্তুতি গ্রহন করতে থাকেন। অন্য মাসের তুলনায় রজব ও শাবান মাসে একটু বেশী করে আমল করেন। মুমিনগণ বেশি আমল করার উদ্দেশ্যে কর্মসূচী তৈরী করেন। সহজ সরল মুমিনের সফল জীবনের জন্য একটি সুন্দর ও কার্যকরী কর্মসূচী উপস্থাপন করছি। আপনি ইচ্ছা করলে এই কর্মসূচীর আলোকে আমল করতে পারেন। নতুবা কুরআন-সুন্নাহর আলোকে নিজেও একটি কর্মসূচী তৈরী করে আমল করতে পারেন। আমরা মহান আল্লাহর কাছে শতভাগ আশা রাখি যে, আপনি সুন্দর ও সফল জীবনের অধিকারী হবেন যদি আমাদের উপস্থাপিত কর্মসূচী অনুযায়ী সঠিকভাবে আমল করতে পারেন। 


আমরা কর্মসূচীকে সহজে মনে রাখার সুবিধার্তে তিনটি ভাগ করে নিতে পারি। প্রথমত গুনাহ বর্জন করা। দ্বিতীয়ত বেশি করে নেক আমল করা। তৃতীয়ত মাহে রমযানের শিক্ষা গ্রহণ করা।


প্রথম কর্মসূচীঃ গুনাহ বর্জন করা 


যদি গুনাহ বর্জন না করা হয় তাহলে সিয়াম পালন করেও পুরোপুরি লাভ হবে না। কারণ হচ্ছে শুধু পানাহার এবং দৈহিক মিলন থেকে বিরত থাকার নামই আসল সিয়াম নয়, বরং এর সাথে সাথে যাবতীয় গুনাহ থেকেও বেঁচে থাকতে হবে। হাদীসে উল্লেখ আছে, রাসূল (সা.) বলেছেন-
مَنْ لَمْ يَدَعْ قَوْلَ الزُّورِ وَالْعَمَلَ بِهِ فَلَيْسَ لِلَّهِ حَاجَةٌ فِىْ أَنْ يَدَعَ طَعَامَهُ وَشَرَابَهُ
‘যে ব্যক্তি পাপ, মিথ্যা বা অন্যায় কথা এবং কাজ ত্যাগ করতে না পারবে, তার পানাহার ত্যাগ করার মধ্যে আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই।’ সহীহ বুখারী, হাদীস- ১৯০৩ 


অন্য একটি হাদীসে এসেছে, রাসূল (সা.) বলেছেন- 
لَيْسَ الصِّيَامُ مِنَ الْأَكْلِ وَ الشُّرْبِ إِنَّمَا الصِّيَامُ مِنَ اللَّغْوِ وَ الرَّفَثِ
‘শুধু পানাহার বর্জনের নামই আসল সিয়াম নয়, বরং সিয়াম হচ্ছে পানাহার বর্জনের সাথে সাথে যাবতীয় অনর্থক ও অশ্লীল কথা ও কাজকে বর্জন করা।’ আল-মুসতাদরাকু আলাস সাহীহাইন, হাদীস- ১৫৭০; ইমাম মুসলিমের নীতিতে হাদীসটি সহীহ;


সুতরাং আমাদের সকলের জন্য উচিত হচ্ছে, কখনো কোন ধরনের গুনাহ না করা। বিশেষভাবে রমযান মাসে সকল গুনাহ থেকে বিরত থাকা অবশ্যই গুরুত্বপূর্র্ণ দায়িত্ব ও কর্তব্য। আমরা যেন কখনো গীবত বা পরনিন্দা, মিথ্যা, প্রতারণা, সুদ-ঘোষ, অন্যায়, অবিচার, অনাচার, দূরাচার, চাঁদাবাজি, ফাঁকিবাজি, অন্যায় টেন্ডারবাজি, যৌতুক, চুরি-ডাকাতি, খুন-খারাবি, জবর দখল ইত্যাদি গুনাহর কাজ না করি। বিশেষ করে রমযান মাসে গীবত বা পরনিন্দা থেকে বেচেঁ থাকা অত্যান্ত  জরুরী। গীবত হচ্ছে কারো অনুপস্থিতিতে তার দোষকে কারো কাছে বলা। যেমন, লোকটি বদমেজাযী, লোভী, জালিম, ফাঁকিবাজ ইত্যাদি দোষগুলো কাউকে বলা। যদি সত্যিই কারো মাঝে এই দোষগুলো থাকে, আর তার অনুপস্থিতিতে কারো কাছে সেটা বলা হয় তাহলে সেটা গীবত বা পরনিন্দা। আর যদি দোষগুলো তার মাঝে না থাকে আর তার অনুপস্থিতিতে কারো কাছে সেটা বলা হয় তাহলে সেটা তুহমত বা অপবাদ। অপবাদ যেমন মারাত্বক গুনাহ, ঠিক তেমনিভাবে গীবত বা পরনিন্দাও অনেক বড় ধরণের গুনাহ। মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘গীবত করা হলো মৃত ভাইয়ের মাংস খাওয়া।’ এর দ্বারা একথা বুঝানো হচ্ছে যে, মৃত ভাইয়ের মাংস যেমন হারাম, গীবত করাও হারাম। মাংস খেলে যেমনভাবে সিয়াম নষ্ট হয়ে যায়, তেমনিভাবে গীবত করলেও সিয়ামের সওয়াব সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। সুতরাং কখনোই গীবত করা যাবে না। বিশেষভাবে রমযান মাসে।

মন্তব্য করুন: