বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৈশাখ ১১ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি

পদ্মা সেতু দক্ষিণবঙ্গের অর্থনীতি বদলে দেবে 

 আপডেট: ১১:১৫, ২৫ জুন ২০২২

পদ্মা সেতু দক্ষিণবঙ্গের অর্থনীতি বদলে দেবে 

আজ বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে ব্যাপক অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের দুয়ার খুলতে যাচ্ছে। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা  যানবাহন চলাচলের জন্য বহুল প্রত্যাশিত ৬.১৫ কিলোমিটার পদ্মা সেতু খুলে দেবেন। এই সেতুর মাধ্যমে  রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য বড় শহরের সঙ্গে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার সড়ক যোগাযোগে ব্যাপক অগ্রগতি  ঘটাবে। 

সেতুটির আশেপাশের বিস্তীর্ণ এলাকায় অসংখ্য সরকারি ও বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনের মাধ্যমে বিশাল অর্থনৈতিক সুযোগ তৈরি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী নেতা, অর্থনীতিবিদ ও সুশীল সমাজের সদস্যদের মতে  এই  সেতুর কারেণ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ইতোমধ্যে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড শুরু হয়েছে এবং এর ফলে দেশ-বিদেশের অনেক শিল্পপতি বেশ কয়েকটি জেলা, বিশেষ করে ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, বরিশাল ও খুলনায় জমি ক্রয় করছে। 

বেকারদের নতুন চাকরির সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে শেখ হাসিনা নকশিপল্লী, পোশাক কারখানা, কোল্ড স্টোরেজ, গ্যাস স্টেশন ও শিল্প পার্ক নির্মাণের কাজ পুরোদমে চলছে। স্থানীয় ব্যবসা ও বাণিজ্য সম্প্রসারনের মাধ্যমে  সেতুটি জাতীয় অর্থনীতিকে উল্লেখযোগ্যভাবে চাঙ্গা করবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে  পদ্মা সেতু দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশকে সংযুক্ত করবে এবং যোগাযোগ, বাণিজ্য, শিল্প, পর্যটনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রগতিতে  ব্যাপক অবদান রাখবে। 

এই সুবিধা যথার্থভাবে কাজে লাগাতে বিশেষ করে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জন্য বিশেষজ্ঞরা একটি ‘সঠিক কৌশল’ রূপরেখা প্রনয়নে সরকারের  প্রতি আহবান  জানান। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানিয়ে পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও গতিশীল নেতৃত্বে দেশের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। শরীয়তপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শামীম বলেন, সেতুটি দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি দ্বিগুণ অঙ্কে বৃদ্ধিতে অবদান রাখবে।

বিশেষজ্ঞ মতামত :

বিশেষজ্ঞদের মতে সড়ক ও রেলপথসহ ডবল-ডেক পদ্মা সেতু বার্ষিক জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে প্রায় ১.৩ থেকে ২ শতাংশ অবদান রাখবে, দারিদ্র্য হ্রাস করবে এবং অবহেলিত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বৃদ্ধি পাবে ।

পদ্মা সেতু নির্মাণকে বাংলাদেশের জন্য একটি ‘অসাধারণ অর্জন’ উল্লেখ করে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, সেতুটি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাশাপাশি সমগ্র দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য বিমোচন ও শিল্পায়নে বিরাট ভূমিকা রাখতে শুরু করেছে। তিনি আরও বলেন, আগামীকাল বাংলাদেশের জন্য দারুণ মুহূর্ত। আমরা দেশের উন্নয়নের পথে এক নতুন যুগের সূচনা করতে যাচ্ছি।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, বহুবিধ  কারণে অর্থনৈতিক সুফল শুধু দক্ষিণাঞ্চলেই নয়, সারা দেশেই প্রবাহিত হবে।

আনুমানিক  জিডিপি ২ শতাংশ (কেউ কেউ বলে ১.২৬ শতাংশ) এবং আঞ্চলিক জিডিপি ৩.৫ শতাংশ বাড়তে পারে।

প্রকল্পের সম্পূর্ণ ব্যয় ৩১ বছর বা তারও আগে আদায় করা  সম্ভভ বলেও উল্লেখ করেন তিনি। 

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশিষ্ট ফেলো ডক্টর মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, পদ্মা সেতু হচ্ছে জাতীয় আকাক্সক্ষার প্রতীক। তাই এই সেতুকে শুধু পণ্য পরিবহন ও যাত্রীবাহী যানবাহন নয়, অর্থনৈতিক করিডোর হিসেবেও ব্যবহার করা উচিত।

পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে প্রায় ১৭টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এগুলো প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং শেষ পর্যন্ত এগুলো জাতীয় অর্থনীতি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অবদান রাখবে।

বিশিষ্ট এ অর্থনীতিবিদ বলেন, সেতুটির বড় সুফল হচ্ছে কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং বরগুনা ও পিরোজপুরসহ বিশেষ করে অতি-দরিদ্র অঞ্চলের ২১টি জেলার দারিদ্র্য বিমোচন করবে।

তিনি ওই অঞ্চলে শিল্প স্থাপনে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করার জন্য বিদ্যুৎ ও গ্যাসসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা যথাযথভাবে নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

মোস্তাফিজুর  রহমান পরিবেশ রক্ষা করে এ অঞ্চলের উন্নয়ন কর্মকান্ড বেগবান করতে একটি সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

আমাদেরকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সুফল পেতে  একটি সঠিক পরিকল্পনা নিতে হবে ... বেসরকারি অংশীদারিত্বের সঙ্গে সরকারের উচিত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে কৃষিভিত্তিক শিল্পের উপর জোর দেওয়া।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রহমান বলেন, পদ্মা বহুমুখী সেতু শিল্পায়নের জন্য সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় বিদ্যুৎ নিয়ে আসবে এবং এইভাবে এই অঞ্চলে বিভিন্ন আকার ও মাত্রার শিল্প বিকাশে সহায়তা করবে।

মহাগুরুত্বপুর্ণ  এ সেতুকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে ইতোমধ্যে অনেক অর্থনৈতিক কর্মকান্ড শুরু হয়েছে।

তিনি বলেন, পদ্মা সেতু সর্ববৃহৎ বাজারের (ঢাকা শহরের) সঙ্গে যোগাযোগের জন্য শক্তিশালী পদ্মা নদীর উপর একটি মসৃণ এবং স্থায়ী বা সর্ব-আবহাওয়ায় সড়ক সংযোগ নিশ্চিত করতে যাচ্ছে। বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটির সাবেক সভাপতি শেখ মোশাররফ হোসেন জানান, দেশ-বিদেশের অনেক বিনিয়োগকারী সেখানে শিল্প স্থাপনের জন্য জমি ক্রয় করায় তাদের এলাকায় জমির চাহিদা দ্রুত বাড়ছে।

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সেতুটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে শুরু করেছে। এছাড়া এই সেতুর মাধ্যমে ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি হতে পারে। সেতুটি আঞ্চলিক জিডিপিতে কমপক্ষে ২ থেকে ২.৫০ শতাংশ অবদান রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন মোশাররফ।

মন্তব্য করুন: