শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, চৈত্র ১৫ ১৪৩০, ১৯ রমজান ১৪৪৫

অর্থনীতি

রাশিয়ার মুদ্রা রুবলের নাটকীয় উত্থান

 প্রকাশিত: ১৪:৩০, ২২ মে ২০২২

রাশিয়ার মুদ্রা রুবলের নাটকীয় উত্থান

নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রাশিয়ার মুদ্রা রুবলের নাটকীয় উত্থান ঘটেছে। গত ৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থায় এখন রুবল। ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালানোর পর এই মুদ্রার মান দ্রুত নিচে নেমেছিল। কারণ ছিল ইউরোপ আর আমেরিকার নানা অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু যেসব কিছুকে আজকাল গায়েই লাগাচ্ছে না ভ্লাদিমির পুতিনের রুবল।     

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ব্যবসা ও অর্থনীতি বিষয়ক নামী সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, রুবল নিয়ে যে সমস্যায় পড়েছিল রাশিয়া বেশ সাফল্যের সঙ্গে তারা তা কাটিয়ে উঠেছে। 

এখন এক মার্কিন ডলার সমান ৬২ রুবল। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, যেভাবে রুবল এগিয়ে চলেছে তাতে এক ডলার সমান ৫০ রুবল হয়ে যেতে পারে। কিন্তু রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক রুবলকে বেশি শক্তিশালী দেখতে চায় না। কারণ, তেমনটা ঘটলে তেল-গ্যাস রপ্তানি বাবদ তাদের আয় কমে যাবে। 
 
কিন্তু গত ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে আগ্রাসন চালানোর পর পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছিল যে অনেকে ভেবেছিলেন, দ্রুতই রুবল মূল্যহীন হয়ে যাবে। তখন সংকট সামলাতে মস্কোর শেয়ারবাজার দুই সপ্তাহ বন্ধ রাখতে হয়। কারণ, রুবলের দামের পতন হচ্ছিল।  

রুবল মূল্যহীন হয়ে যাবে ভাবার তখন কারণও ছিল। বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলো জোট বেধে  রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মধ্যে মার্চের দিকে রুবল ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে।

কিন্তু প্রশ্ন হলো, কিভাবে এতো দ্রুত রুবল শক্তি ফিরে পেল এবং কয়েক বছরের মধ্যে নিজের সেরা অবস্থানে চলে গেল?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রুবলের ঘুরে দাঁড়ানোর মূল কারণ আসলে দেশটির জীবাশ্ম জ্বালানী। মানে গ্যাস ও তেল রপ্তানি। ইউরোপের দেশগুলো রাশিয়ার কাছ থেকে গ্যাস ও তেল কেনে। এবং চুক্তি অনুযায়ী ইউরোতে এই দাম শোধ করতে হতো আগে। 

কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার কিছুদিন পর নীতি বদলে ফেলে রাশিয়া। তারা জানে, ওই দেশগুলো জ্বালানীর জন্য তাদের ওপর নির্ভরশীল। রাশিয়া ঘোষণা করে, তাদের কাছ থেকে তেল-গ্যাস পেতে হলে রুবল দিয়ে তা কিনতে হবে। মানে ইউরোকে রুবলে কনভার্ট করে দাম শোধ করতে হবে। 

ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এজন্যেই রুবল শক্তিশালী হয়েছে। তাছাড়া তাদের অনেক বৈদেশিক মূদ্রা এসেছে চীন এবং ভারতের কাছে জ্বালানী বিক্রি করে। দেশটির যেসব জিনিস রপ্তানি করা তার মধ্যে ৬০ শতাংশ গ্যাস এবং তেল। তাদের রপ্তানি আয়ের ৪০ শতাংশ আসে এই দুটি পণ্য বিক্রি করে। 

এক হিসেবে দেখা গেছে, গ্যাস ও তেল আমদানি বাবদ ইউরোপের দেশগুলো রাশিয়াকে প্রতিদিন চল্লিশ কোটি ইউরো পরিশোধ করে। এই অর্থকে রুবলে কনভার্ট করলে কি দাঁড়ায় তা তো বোঝা সহজ। ইউরোপের দেশগুলো যেহেতু তেল-গ্যাসের জন্য রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল তাই তারা মূল্য রুবলে শোধ করতে একরকম বাধ্য হয়েছে এবং হচ্ছে। 

ইউরোপ-আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার কারণে অবশ্য রাশিয়ার তেল-গ্যাস রপ্তানির পরিমান কমেছে। কিন্তু বিশ্ব বাজারে এই দুইয়ের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাদের আয় বেড়েছে। 

কারণ আরো আছে, নিষেধাজ্ঞার কারণে অনেক কিছু এখন আমদানি করতে পারে না রাশিয়া। ওখানে তাদের বৈদেশিক মুদ্রার খরচ কমেছে। একই কারণে অনেক মানুষ এখন বিদেশ সফরও করতে পারে না। সুতরাং, ডলার আর ইউরোর মূল্য তাদের কাছে কমেছে।

ঠিক উল্টো দিকে ভিন্ন চিত্র। তেল আর গ্যাসের দাম রাশিয়া রুবলে নিচ্ছে বলে তাদের নিজস্ব মুদ্রার চাহিদা বেড়েছে বিশ্ব বাজারে। আর এই কারণেই মার্কিন ডলারের বিপরীতে হারানো শক্তি ফিরে পাওয়ার পাশাপাশি নতুন শক্তি অর্জন করে রুবল এখন আগের চেয়ে চাহিদাসম্পন্ন মুদ্রা।

এসব কারণ তো মূলে। এর বাইরেও রাশিয়া কিছু নীতি প্রয়োগ করেছে। তাতে তাদের মুদ্রার ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। 

মন্তব্য করুন: