বেগম রোকেয়াকে ‘কাফির-মুরতাদ’ বললেন রাবি শিক্ষক
নারী জাগরণের পথিকৃৎ বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনকে ‘কাফির-মুরতাদ’ বলে মন্তব্য করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক; যা নিয়ে সমালোচনা তৈরি হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খন্দকার মাহমুদুল হাসান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকে একটি পোস্ট শেয়ার করে ক্যাপশনে লেখেন, “আজ মুরতাদ কাফির বেগম রোকেয়ার জন্মদিন।”
বেগম রোকেয়া দিবসে মঙ্গলবার দুপুরে তিনি এই পোস্টটি শেয়ার করেন। পোস্টটি ছড়িয়ে পড়ার পরই সমালোচনা তৈরি হয়।
সাবেক শিক্ষার্থী এস এম আতিক মন্তব্য করেন, “৫ অগাস্ট আমাদের বাকস্বাধীনতা এনে দিয়েছে। এর সুবাদে পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষকও এখন ফতোয়া দিতে পারেন।”
রাকসুর সাংস্কৃতিক সম্পাদক জায়িদ হাসান জোহা বলেন, “সবারই নিজস্ব দর্শন থাকে, আর তার মাপকাঠিও আলাদা। তবে এ ধরনের মন্তব্য প্রকাশ্যে না বলাই উত্তম বলে মনে করি। এর বেশি কিছু বলতে চাই না।”
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহিন বিশ্বাস এষা বলেন, “বেগম রোকেয়া পুরো উপমহাদেশেই নারী জাগরণের অগ্রদূত হিসেবে স্বীকৃত। তার কারণেই আমাদের নারীরা বর্তমানে পড়াশোনা, রাজনীতিসহ সব ক্ষেত্রে নিজেদের যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখছে। তাকে নিয়ে এই ধরনের মন্তব্য করা মানে গোটা নারী সমাজকেই হেয় করা। তার এই বক্তব্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সহযোগী অধ্যাপক খন্দকার মাহমুদুল হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যে পোস্টের ক্যাপশনে আমি এটি লিখেছি, সেই পোস্টেই বিস্তারিত সব ব্যাখ্যা আছে। আমার বক্তব্যের সত্যতা যাচাই করতে চাইলে কোনো ভালো আলেমের কাছে জানতে পারেন।”
নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকীতে প্রতিবছর রোকেয়া পদক দেয় বাংলাদেশ সরকার।
১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বেগম রোকেয়া। ১৯৩২ সালের একই তারিখে কলকাতার সোদপুরে তার মৃত্যু হয়।
রাষ্ট্র, সমাজ ও পরিবার ব্যবস্থায় নারীর সমান অধিকারের জন্য আমৃত্যু লড়াই করেছেন মহিয়সী এই নারী।
বাল্যবিয়ে, যৌতুক, পণ প্রথা, ধর্মের অপব্যাখ্যাসহ নারীর প্রতি অন্যায় আচরণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন রোকেয়া। মতিচূর, সুলতানার স্বপ্ন, পদ্মরাগ, অবরোধবাসিনী ইত্যাদি কালজয়ী গ্রন্থে ধর্মীয় গোঁড়ামি, সমাজের কুসংস্কার ও নারীর বন্দিদশার স্বরূপ উন্মোচন করেছেন তিনি।